somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রাভেলারস ডায়েরি: ট্রেনের ছাদে রোমাঞ্চকর যমুনা যাত্রা

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজকের দিনটা কে 'অসাধারন' বিশেষনে বিশেষায়িত করলে ভুল হবে। শুধু ভুলই না। একেবারে ক্রাইমের পর্যায়ে পড়বে।

ইচ্ছা ছিল ভৈরব যাব। ট্রেনে করে। উঁহু, ট্রেনের ছাদে করে! কিন্তু বিধি চাচ্ছিলেন অন্যকিছু। তাই ভৈরবের বদলে একেবারে যমুনা নদী লিখে দিলেন! ভৈরব যাওয়ার ট্রেন মিস করে খুলনা যাওয়ার ট্রেনের ছাদে চেপে বসলাম।
ট্রেনের স্পীড বাড়তেই বাতাসের তোড়ে প্রায় উড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। চোখ খুলে রাখা যায় না এমন বাতাস।
বাতাস বেশিক্ষন কপালে জুটল না। জয়দেবপুর স্টেশনে পুলিশের চোখ রাঙ্গানি, "ওই ছাদে কী? নীচে নাম!"
কোনো ভাবেই ছাদে থাকতে দিবে না। ড্রাইভারের কাছে ধরনা দিলাম। তাকে কোনো ভাবেই বুঝাতে পারলাম না যে ট্রেনের ছাদে উঠা দূষনীয় কিছু না। এগুলো স্টুডেন্ট লাইফের এডভেঞ্চার। অগত্যা কোনো উপায় না পেয়ে একটা বগিতে উঠে পড়লাম।



সেখানে আবার টিটি ব্যাটার বাগড়া। টিকেট দেখতে চায়! কোনো রকম একশ টাকার "চা-পানি" খেতে দিয়ে মামলা ডিসমিস করলাম।
কিন্তু মাথায় তো ছাদে উঠার পোকা কিলবিল করছে। দরজার কাছে বসে তো আর সেই আনন্দ পাওয়া যায় না! তাই টাঙ্গাইলের মৌচাক স্টেশনে ট্রেন থামতেই আমাদের আর কে পায়! সুড় সুড় করে ইঞ্জিন বেয়ে সোজা ট্রেনের ছাদে!

ট্রেন যাচ্ছিল বন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে এঁকে বেঁকে যাচ্ছিল। মাঝে মাঝে দুই দিকে বিস্তীর্ণ ক্ষেত। কোথাও আবার স্বচ্ছ পানি। চোখ জুড়িয়ে যাবার মতো দৃশ্য। সাথে ঝড়ের গতিতে বাতাস। ট্রেনের ভিতর থেকে এসব কিছুই উপভোগ করা যায় না।



ট্রেন যমুনা সেতু পূর্ব স্টেশনে থামতেই নেমে পড়লাম। সেখান থেকে ভ্যানে করে যমুনা নদী। বসে পড়লাম পা ঝুলিয়ে। কিছু দূর যেতেই নদী চোখে পড়ল। প্রমত্তা যমুনা! ভ্যান থেকে নেমে কিছুক্ষন মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলাম। বিশাল বিস্তৃত জলরাশি থৈ থৈ করছে। দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত অথৈ পানি। পানি স্বচ্ছ না। বানের টানে কাদা মাটি টেনে নিয়ে আসছে।

পানি দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। নিজের ভিতরে লুকিয়ে থাকা মাছ টা লাফিয়ে উঠে। তাছাড়া
"আমার যমুনার জল দেখতে কালো,
স্নান করিতে লাগে ভাল।
জৈবন মিশিয়া গেল জয়লে।" এই গানে আমি বিশেষ পারদর্শী। তাই শরীরে আর কাপড় ধরে রাখা গেল না। সব ছেড়ে ছুড়ে 'শর্ট হাফ প্যান্ট' টা পরে পানিতে নেমে পড়লাম। প্রচন্ড স্রোত। দাঁড়িয়ে থাকাই কঠিন। বিপরীতে সাঁতার কাটার বোকামি করলাম না। ব্যাপার টা বানরের তেল দেয়া বাঁশ বেয়ে উঠার মতো হবে।
স্রোতের দিকে সাতরাতে গিয়ে বুঝলাম এই নদীর সাথে নো হাংকি পাংকি। এটা এদেশের সবচেয়ে গভীর, সবচেয়ে প্রশস্থ নদী। স্রোতের দিকে সাঁতার কেটে আরাম। কিন্তু সাঁতার থামাতে গিয়েই বিপত্তি। কোনো ভাবেই স্রোতের তোড়ে আর থামতে পারি না। কোনো রকম একটা জলজ কঞ্চি শ্রেনীর উদ্ভিদ ধরে রক্ষা। নিজেকে ধরে রাখতে না পারার যে ভয় তার চেয়ে বেশি ভয় পরনের শর্ট হাফ প্যান্ট ধরে রাখা নিয়ে। না জানি কখন কী দুর্ঘটনা ঘটে যায়! একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না।
বেশিক্ষকন থাকা গেল না। অনেকেই কলেজ ফাঁকি দিয়ে এসেছে। দ্রুত ঢাকা ফিরতে হবে। উঠে এলাম যমুনার কোল থেকে।

পেটে তখন এক রাজ্য ক্ষুধা। সকাল থেকে পানি ছাড়া কিচ্ছু খাইনি। তাছাড়া পকেটে খুব টান। তাই কোনো দোকানে ঢুকে খাওয়ার সাহস হয়নি। তাতে কি? প্রকৃতি মুক্ত হস্তে চারিদিকে তার নিদর্শন ছিটিয়ে রেখেছে। ক্ষুধা মিটাতে টিউবওয়েল চেপে দুই মগ পানি এক নিঃশ্বাসে খেয়ে ফেললাম। মূহুর্তে ক্ষুধা উধাও! ঢাকায় ফিরে তবেই পেট পূজা।

আজকের দিন টা ভুলবার মতো না। অনেক দিন মস্তিষ্কের ভাঁজে ভাঁজে লেখা থাকবে স্মৃতি গুলো। আমার শরীরও হয়ত সেটা ভুলতে চাচ্ছে না। বসে থাকলে ট্রেনের দোলুনি অনুভব করতে পারছি। আমার হাফ প্যান্টও কম যায় না। সেও যমুনার স্পর্শ ভুলতে চায় না। সেজন্যই বুঝি সে এখনও জবজবে হয়ে ভিজে বারান্দায় ঝুলছে!





১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৩১
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×