somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেন আমাদের মনে হয় ‘শুধু আমরাই ঠিক’?

১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজকের আম্পায়ার একটা হারামজাদা। মুশফিকের এলটবিটা মোটেও হয় নাই, তাও আউট দিছে। কিন্তু গত কালকের আম্পায়ার, যে তামিমের ক্যাচ-এন্ড-বোল্ডের সময় নো-বল দিছে, সে মোটেও আমাদের কাছে হারামজাদা নয়। সে হারামজাদা ছিল ইন্ডিয়ানদের কাছে। আমাদের কাছে কেন এমন মনে হয়? কেন গত কালকের আম্পায়ারকে আমাদের কাছে হারামজাদা মনে হয় না?

এটি গড়ে উঠেছে মিলিয়ন বছর ধরে মানুষের সার্ভাইবাল মেকানিজম হিসেবে। আমাদের (মানুষের) রায়/সিদ্ধান্ত/বিবেচনা অনেকাংশেই নীর্ভর করে আমাদের মাইন্ডসেটের উপর। আমাদের মাইন্ডসেটকে মোটাদাগে দুই ভাগে ভাগ করা যায়ঃ (১) সোলজার মাইন্ডসেট এবং (২) স্কাউট মাইন্ডসেট। সোলজার মাইন্ডসেট চায় শত্রু পক্ষ থেকে আমাদের রক্ষা করতে। আর স্কাউট মাইন্ডসেট চায় সত্য উদঘাটন করতে।

আমাদের সোলজার মাইন্ডসেট যেহেতু ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিমকে আমাদের ক্রিকেটীয় অস্তিত্বের জন্য শত্রু মনে করে, তাই সে সবসময় চায় তাদের হারাতে। সেটা করতে গিয়ে কতটা ফেয়ার হল তা নিয়ে সে মাথা ঘামায় না। এখানে টিকে থাকাটাই মূল বিষয়। একই কারনে আমাদের দেশে যত সমস্যা হোক তার জন্য আমরা পশ্চিমাদের দুষি। যদি তাদের দোষ থাকেতো আছেই, না থাকলেও আছে। আবার পশ্চিমারা মনে করে সব আমাদের মত ভুখা-নাঙ্গাদের দোষ। যে বিএনপি করে তার কাছে মনে হয় সব আওয়ামীলীগের দোষ। যে আওয়ামীলীগ করে তার কাছে মনে হয় সব বিএনপি দোষ।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তি যতই আমাদের কাছে হাস্যকর মনে হোক, কিন্তু আমিরিকানরা সেটা বিশ্বাস করছে। লোকজন ভোটে তাকে এগিয়ে রাখছে। রিপাবলিকান সব ক্যান্ডিডেটকে হারিয়ে সে নমিনেশন ভাগিয়ে নিয়েছে। সে আমিরিকানদের বুজিয়েছেঃ বিদেশিরা এসে তাদের সব জব নিয়ে যাচ্ছে, ম্যাক্সিকানরা এসে রেপ করছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমেরিকানদের সাইকোলজিতে ঢুকিয়ে দিয়েছে যে তাদের অস্তিত্বের সংকট তৈরি হয়েছে। তাই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য, ট্রাম্পের যুক্তি যতই হাস্যকর আর অন্তসার শূন্য হোক না কেন, তারা ট্রাম্পের যুক্তিই বিশ্বাস করছে এবং ট্রাম্পকেই ভোট দিচ্ছে। সাইন্টিস্টরা একে বলে ‘মটিভেটেট রিজনিং’। রায়/সিদ্ধান্ত/বিবেচনা কি হবে সেটা আগেই মটিভেটেট হয়ে আছে, মূল বাস্তবতা যাই হোকনা কেন। আমাদের মনের ভয়-আকাঙ্ক্ষা এসব আমাদের সিদ্ধান্তকে প্রতিনিয়ত নিয়ন্ত্রন করে।

আমরা কোন পক্ষে আছি, বা কোন পক্ষকে জিতাতে চাই, তার উপর ভিত্তি করে আমাদের সাবকনশাচ মাইন্ড আমাদের সিদ্ধান্তকে ভীষনভাবে প্রভাবিত করে। আমরা যতই মনে করিনা কেন আমরা নীরপেক্ষ, আমাদের সাবকনশাচ মাইন্ড আমাদের নীরপেক্ষ থাকতে দেয় না। পক্ষাপতদুষ্ট হয়ে আমরা কত নীরপরাধীকে দোষী সাভ্যস্ত করি, কত অন্যায়কে নীরবে লুকিয়ে রাখি।

আবার পশ্চিমাদের মাঝেও কিছু ‘নোয়াম চমস্কি’ থাকে, কিছু ‘বার্নি স্যান্ডার্স’ থাকে। এরা পশ্চিমা হয়েও পশ্চিমাদের সমালোচনা করে। প্রত্যেক সমাজেই কিছু এমন মানুষ থাকে। এরা স্কাউট মাইন্ডসেটের। এরা সত্য উদঘাটন করতে চায়। এরা পরীক্ষা করে দেখতে চায়ঃ যাকে আমরা দোষী বলছি সেকি আসলেই দোষী, যা আমরা ভাল মনে করছি তা কি আসলেই ভাল? একই মাইন্ডসেটের হয়েও এরা সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কোন পক্ষ জিতলো আর কোন পক্ষ হারলো এই নিয়ে এদের মাথা ব্যাথা নেই। সত্য উদঘাটন করাই এদের প্রধান বিবেচ্য বিষয়---সেই সত্য যত তীক্তই হোকনা কেন। এদের নিজেদের হয়ত কোন মাইন্ডসেট থাকতে পারে, কিন্তু যখন সত্য বেরিয়ে আসে তখন সেই সত্যকেই তারা গ্রহণ করে এবং নিজের ভুলকে স্বীকার করে নেয়। এরা আমাদের সমাজে হয়ত হিরো নয় কিন্তু, আমি মনে করি, এরাই সত্যিকারের মানুষ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৪৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×