somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলুন ঘুরে আসি ব্লাক হোলের ভিতরে (পর্ব-১)

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ হিসাবে আমার ঘুরতে খুবই পছন্দ করি। সময় পাইলেই ঘুরতে যাই সময় না পাইলেও সময় বাইর কইরা তার পরে ঘুরতে যাই। এমন কোন স্থান নাই যেখানে আমরা ঘুরতে যাই না। শুধু নাম শুনলেই হইলো আমরা সেটারে ঘুরার যায়গা বানাইয়া ফেলি।


তাই আমি ভাবলাম কেননা আমরা একটা ব্লাক হোল এর ভিতরে ঘুরে আসি। দেখে আসি এবং জেনে আসি কি এই জিনিষ ব্লাক হোল আর কি হতে পারে এর ভিতরে ঘুরতে গেলে। বিশেষ করে যারা ইন্টারস্টেলার মুভিটা দেখছি তাদের জন্য অবশ্যই কিছু প্রশ্ন থেকে যায় যে কি হতে পারে যখন একটা মানুষ একটা ব্লাক হোলের মধ্যে দিয়ে যাবে। চলুন দেখি।

প্রথমত প্রশ্ন হচ্ছে ব্লাক হোল কি?? এটা কিভাবে সৃস্টি হয়? এইটা না জানলে তো ব্লাক হোলের মধ্যে ঘুরতে গিয়া অযথা লাভ নাই।


গানিতিক ভাবে যে কোন কিছু ব্লাক হোল হইতে পারে। ব্লাক হোল কি সেটা বুঝতে হলে আপনাকে দুইটা জিনিষ বুঝতে হবে সবার আগে।

১) আমাদের এই মহাবিশ্বের যত জিনিষ আছে(মানুষ, পৃথিবী, গ্রহ নক্ষত্র) সবকিছুই একটা বিন্দু থেকে সৃস্টি হয়েছে। তার মানে আমরা দুনিয়াতে যা দেখি কোন কিছুই নতুন করে সৃস্টি হয়নি। সবকিছুই আগে থেকে ছিল শুধু মাত্র চারিদেকে ছরিয়ে পরেছে বৈকি।

২) আর একটা জিনিষ জেনে রাখেন যে প্রত্যেকটা জিনিষের নিজস্ব অভিকর্ষ বা গ্রাভিটি রয়েছে। সেটা হতে পারে খুব কম অথবা অনেক বেশি। সে আপনি হোন বা একটা আস্ত গ্রহ হোক। সাইজের উপর শক্তি ডিপেন্ড করবে। তার মানে এইযে আপনি, আমি সহ আমাদের চারপাশে সবকিছুরই আকর্ষন শক্তি আছে। তবে সেটা এতটাই ক্ষুদ্র যে তা গনায় ধরার মতন না।

এখন মনে করেন মহাবিশ্বের শুরুতে সেই বিন্দু থেকে ছরানো জিনিষ গুলো থেকে যোকোন একটা জিনিষ "সে হতে পারে একটা কাগজের টুকরো বা একটা জাহাজ অথবা একটা গ্রহ বা একটা তারা বা নক্ষত্রকে সংকুচিত করতে করতে একেবারে এমন একটা ব্যাসার্ধে নিয়ে আসা হল যে সেটার ভিতরে বস্তুর ঘনত্ব এত বেশি হবে যে অভিকর্ষ বল বা গ্রাভিটি বা এর আর্ষন শক্তি বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌছলো যে সেই আকর্ষন থেকে কোন জিনিষ তো দুরের কথা আলোর কনিকা গুলো পর্যন্ত বের হতে পারেনা তখনই সেটা একটা ব্লাক হোল।


এখানে যে ব্যাসার্ধের কথা বলা হয়েছে এটা সকল বস্তুরই আছে। মানেই প্রত্যেকটা বস্তুরই এমন একটা ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্রতম ব্যাসার্ধ আছে যেটাতে উক্ত বস্তুকে সংকুচিত করা হলে সেটা একটা ব্লাক হোলে রুপান্তরিত হয়ে যাবে। এই ব্যাসার্ধকে schwarzschild radius বলা হয়। অসম্ভব মেধাবি এবং কিছুটা পাগলা বিজ্ঞানি Karl Schwarzschild এই ব্যাসার্ধের আবিস্কর্তা।

কি এখনো ব্লাক হোল বুঝতে পারতেছেন না? আচ্ছা বাদ দেন উপরের খামচা খামচি কথা বার্তাগুলো। ব্লাক হোল কিভাবে তৈরি হয় সেটা দেখি।


মনে করেন আপনি একটা কাগজের বক্স বানালেন। কিছুক্ষন পরে মনে হল না পছন্দ হচ্ছে না আপনি কাগজের বক্সটা হাতের ভিতরে নিয়ে দুমরানো শুরু করলেন। কি হবে??
কাগজের বক্সটা ছোট হতে হতে অনেক ছোট হয়ে যাবে। কিন্তু সেটার ওজন কি চেঞ্জ হবে?? কখনই না। অনেক বড় বক্সআকারে যেই ওজন ছিল সেটাই আপনার হাতে মধ্যে দুমরানো অবস্থায়ও থাকবে। এখন পানিতে ভিজিয়ে কাগজটাকে চাপ দিয়ে যদি কোন ভাবে সম্পুর্ন পানিটাকে বের করে ফেলেন তাহলে সেটা আরো ছোট হয়ে যাবে কিন্তু ভর সেই আগের টাই থাকবে।


এখন মনে করেন হাজার টন ওজনের বিশাল জাহাজকে যদি কোন ভাবে কাগজের বক্সের মতন করে ছোট একটা চিনির দানার মধ্যে এনে ফেলা যায় এবং সেটার ভর যদি সেই জাহাজরে ভরই থাকে তবে সেটা কেমন হবে। কিংবা যদি মাউন্ট এভারেস্ট যেটা পৃথিবীর সবচেয়ে উচু পর্বত সেটাকে যদি যদি সংকুচিত করা হয় অথবা আর একটু বড় করে ভাবলে যদি আমাদের এই পুরো পৃথিবী নামক গ্রহটাকে একটা ছোট চিনাবাদামের অভ্যন্তরে যদি ঢুকিয়ে ফেলা যায় কেমন হবে??

কিন্তু আসলে তো এধরনের কোন কিছু করার জন্য কোন উপায় আমাদের জানা নেই।

তাই চলুন


এবার আরে একটু বড় ভাবে চিন্তা করি। আমরা সবাই জানি আমাদের সুর্য অনেক বড় একটা তারা। কিন্তু আমাদের এই গ্যালাক্সি যেটাতে আমাদের সৌরজগত আছে সেটাতে সুর্যের চেয়ে আরো বিশাল বিশাল তারা আছে। এই তারাগুলোর আবার বেশ জটিল একটা গঠন প্রনালি আছে। তারাগুলো যদিও গ্যাসের তৈরি কিন্তু এগুলো পৃথিবীর মতন একটা কেন্দ্র বা কোর আছে যেখানে গ্যাস অত্যান্ত ঘন আবার মাঝখানে গ্যাস কিছুটা পাতলা এবং বাহিরে গ্যাস একেবারে বায়বিয় অবস্থায় আছে। এখন এই ধরনের একটা তারাকে জ্বলতে হলে এর ভিতরে যথেস্ট পরিমান গ্যাস এর জ্বালানি থাকতে হয়। এবং এদের একটা লাইফ টাইম আছে আমাদের মতন। মানে এরাও জ্বলতে জ্বলতে কোন একসময় ভিতরের জ্বালানি শেষ হয়ে যায়। এবং সোজা কথায় বলতে গেলে মারা যায়।


মজার বিষয় হচ্ছে যখনই একটা তারা তার ভিতরকার জ্বালানি খুইয়ে ফেলে(সেটা সুপারনোভা বা বৃহৎ বিস্ফোরনের ফলে হতে পারে) ফলে সে আর জ্বলতে পারে না। তখন সে আস্তে আস্তে নিজেই নিজের ভিতরে ঢুকে পরতে শুরু করে। এটাকে বলে Gravitational singularity। এর ফলে গ্যাসের বেলুনে চুপসে গেলে যেটা হয় সেরকমই আস্তে আস্তে তারাটি নিজের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে থাকে। এতে যেটা হয় তারাটি নিজের কেন্দ্রের দিকে আস্তে আস্তে যেতে যেতে এক সময় সে তার নিজস্ব schwarzschild radius এর ভিতরে চলে যায়। এইটা আবার সাইজে অনেক বড়। তো এই সাইজে আসার পরে ওই তারাটি আর আমাদের চোখের দৃশ্যতার মধ্যে ধরা পরে না। কারন এর আকর্ষন শক্তি বা গ্রাফিটেশনাল ফিল্ড এতটাই বেশি হয় যে সে আর কোন আলো তার ভিতর থেকে বের হতে দেয় না। ফলে আমদের চোখ সেই জিনিষ কে আর দেখতেও পারে না। (আমাদের চোখ তখনই কোন জিনিষ দেখে যখন সেটা থেকে কোন ফোটন কনা বিচ্ছুরিত হয়ে চোখের মনিতে এসে আঘাত করে)


আমরা ব্লাক হোল বুঝতে পারি যখন দেখি যে আকাশে কোন ধুলোর মেঘ বা কোন তারার কো বর্ধিতাংশ তার পাশে কোন একটা অদৃশ্য বস্তুর মধ্যে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে এবং আলো সেটার মধ্যে ঢুকছে কিন্তু আর বের হচ্ছে না তখনই আমরা বুঝতে পারি ওখানে একটা ব্লাক হোল আছে। এছারা ব্লাক হোল বুঝার বা দেখার কোন উপায় নাই।

এতক্ষন ধরে খুবই হাস্যকর ভাবে আপনাদেরকে ব্লাক হোল কি বুঝাইলাম। আমার মনে হয় এর মাথা মুন্ডু আমি নিজেও ভালো করে বুঝি না। তাই যতটুকুন বুঝেছি সেটারে সোজা সাপটা ভাবে বুঝাইতে চেস্টা করলাম।


এবার প্রথম পর্বটা একটা মজার তথ্য দিয়ে শেষ করি। ছবিতে আপনারা আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির দিকে তাকালে দেখতে পাবেন পুরো গ্যালাক্সির লক্ষকোটি তারা ঠিক একটা কেন্দ্রবিন্দুকে সেন্টার করে ঘুরতেছে। প্রশ্ন আসতে পারে এটা কেন হইতেছে। বা এর কেন্দ্রে কি আছে। ওইটা দেখা যাইতেছে না কেন।


জি জ্বনাব এটি একটি Supermassive black hole। প্রত্যেকটা গ্যালাক্সির কেন্দ্রে একটা করে Supermassive black hole আছে। এর সাইজ এতটাই বিশাল এবং এর শক্তি এতই বেশি যে লক্ষ কোটি তারা সে একাই টানতেছে তার কেন্দ্রের দিকে। ফলে পুরো গ্যালাক্সি একটা বৃত্তাকার পথে তারে কেন্দ্র করে ঘুরতেছে। এই শালার টানের শক্তি এতটাই বেশি যে আমাদের সুর্য ব্যাটা তাকে কেন্দ্র করেই ঘুরতেছে। আর আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলো (পৃথিবী সহ) সুর্যের টানে ঘুরতেছে সুর্যের চারিদিকে। আবার পৃথিবী নিজেই নিজের চারিদিকে চক্কর মারতেছে তার গ্রাভিটিশেনাল শক্তির কারনে। আর আমরা পৃথিবীর মানুষ এত বিশাল টানাটানি থেকেই একটাই চমৎকার জিনিষ পাইতেছি।


আর সেটা হচ্ছে সময়।


কি মাথায় ঢুকে নাই। বাদ দেন। আইনস্টাইন যেই জিনিষ নিয়া মাথা ঘামাইছে সেইটা নিয়া আমাদের মাথা না ঘামাইলেও চলবে। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করেন সেখানে অসম্ভব মজার সব জিনিষ পাবেন।


২৮টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×