৫) Shanghai World Financial Center
গনচীনের সাংহাই শহরে অবস্থিত। অন্যরকম একটা ডিজাইন। পুরো ভবনটি হোটেল কাম অফিস হিসাবে ব্যবহ্রত হয়। ডিজাইন এর কাজ শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। আর কন্সট্রাকশন শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। সময়ের বিচারে এটা সবচেয়ে বেশি সময় নিয়ে বানানো আকাশ চুম্বি ভবন গুলার মধ্যে একটা। আর একটা ব্যপার হল চিনের এই মুহুর্তের সবচেয়ে উচু ভবন হল এইটা।
আর্কিটেকচারাল ডিজাইন করেছে Kohn Pedersen Fox Associates । তিন বসের ফার্ম। আর স্ট্রাকচারাল ডিজাইন করেছে Leslie E. Robertson Associates । এই ফার্মটাই ওয়ার্লড ট্রেড সেন্টার ডিজাইন করেছে। যেটা লাদেন ভাঙল।
ভবনটির উচ্চতা ১৬১৪ ফিট। আর মোট ফ্লোর এরিয়া হল ৪,১০৭,৫০৮ স্কয়ার ফিট। মাটির উপর ১০১ টি ফ্লোর আছে। আর নিচে মানে বেইজমেন্ট আছে ৩টি। ৯১ টি লিফট ১০ মিনিট/ সেকেন্টে গতিতে উপর নিচে চলচলে সহযোগিতা করে। গাড়ির জন্য রয়েছে ১১০০ টি কার পার্কিং সুবিধা।
ভবনটির সবচেয়ে চমৎকার দিক হল এর টপে হাতলের মত বিশাল এই লবিটা তৈরি করা। হঠাৎ করে ফ্লোর শেষ করে আবার এত উপরে মাত্র দুইটা সাপোর্ট এর উপর এতবড় একটা লবি তৈরি করা ডিজাইনারের মুন্সিয়ানা বলতে হবে। কারন বাতাসের প্রচন্ড চাপ উপেক্ষা করে এত বড় বড় স্টিল ফ্রেম এত উপরে তোলা আমারদের চিন্তার বাইরে।
৪) Taipei 101
এটা তাইওয়ানের তাইপেই তে অবস্থিত। ভবনের নামও সে অনুসারে রাখা হয়েছে। ১০১ নামের মাহাত্ম মাহাত্ম বুঝেছেন?? জি এটা ১০১ তলা। তাই এই নাম। ১৯৯৯ সালে নির্মান কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ২০০৪ সালে। অত্যান্ত দ্রুত গতিতে কাজ করা হয়। এশিয়াতে এই মুহুর্তে সর্বোচ্চ ভবন হল এইটা। পুরোটা বিভিন্ন কোম্পানির অফিস হিসাবে ব্যবহ্রত হয়।
তাইওয়ান এর কাছে এটি একটি গর্বের বিষয়। আর্কিটেকচারাল ডিজাইন করেছে C.Y. Lee & Partners Architects/Planners আর স্ট্রাকচারাল ডিজাইন করেছে Thornton Tomasetti । এই ফার্মটা আরও একটা স্কাইস্ক্রাপার এর ডিজাইন করেছে। বলেন তো কোনটা??
ভবনটির উচ্চতা ১৬৬৭ ফিট। আর সর্বোমোট ফ্লোর এরিয়া ২,০৮১,৭৫০ স্কয়ার ফিট। ভুমি থেকে উপরে ১০১ টি ফ্লোর আছে। আর নিচে আছে ৫ টি। লিফট আছে ৫১ টি। যাদের গতি ১৬.৫ মিনিট/সেকেন্ট। প্রায় ২০০০ গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা আছে।
এই জিনিষ টা এই ভবনের ডিজাইনকে একটা ইউনিক ডিজাইন হিসাবে উপস্থাপন করেছে। এটা একটা ৬৬০ টনের গোলক যেটা একটা পেন্ডুলামের মত কাজ করবে। কেন? তাইপেইতে ঘন ঘন বেশ ভাল রকমের ভুমিকম্প হয়। তো এই ভুমিকম্পে এতবড় একটা দালান রক্ষার জন্য ডিজাইনাররা চিন্তা করলেন এমন একটা সিস্টেমের যেটা ভুমিকম্পের সময় ভবন যেই দিকে দুলবে সেটা ঠিক তার উল্টা দিকে দুলে ভবনটিকে স্থির করে রাখতে সাহায্যকরবে। পেন্ডুলামটিকে নারানোর জন্য বিশাল একটা হাইড্রোলিক সিস্টেমের ব্যবহার করা হয়েছে।ভবনটিতে আরো কিছু চমৎকার ব্যপার স্যপার আছে। পোস্ট বড় হবে বলে লিখলাম না।
৩) One World Trade Center
লাদেন আম্রিকার দুইটা বিল্ডিং ভাইঙ্গা ফালাইছিল মনে আছে?? জি এই দুইটার উপর এই দালানটা বানানো হইতাছে। এখনো শেষ হয় নাই। তবে আগামি বছর শেষ হবে বলে ঘোষোনা দিয়েছে নির্মান কারি প্রতিষ্ঠান। এর আর একনাম ফ্রিডম টাওয়ার। ২০০৫ সালে প্রস্তাবনা আর ডিজাইন এর কাজ শুরু হয়। মুল নির্মান কাজ শুরু হয় ২০০৬ সালে। পুরাটাই অফিস হিসাবে ব্যবহ্রত হবে।
ভবনটির আর্কিটেকচারাল ডিজাইন কেরেছে skidmore owings & merrill এবং স্ট্রাকচারাল ডিজাইন কেরেছে WSP Cantor Seinuk ।তবে পুরো কমপ্লেক্স টা ডিজাইন করেছেন Daniel Libeskind । তিনি কিন্তু বেশ ভাল একটা প্রতিদন্দিতা করে এটার ডিজাইনার হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
ভবনট ভুমি থেকে ১০৪ টি ফ্লোর রয়েছে আর বেইজমেন্ট আছে ৫টি। এছারা এর সর্বোমোট ফ্লোর এরিয়া হচ্ছে ৩,৫০১,২৭৪ স্কয়ার ফিট। টাওয়ার সহ এর উচ্চতা ১৭৭৬ ফিট। ৭৩ টি লিফট রয়েছে যাদের প্রতি সেকেন্টে গতি ১০ মিটার।
মজার ব্যপার হচ্ছে এটার এন্টেনা টি। এত উপরে তিনটি ধাপে এটির কাজ করা হয়। মুলত ভবনটির উচ্চতা বেশি হওয়ার একটি মুল কারন হচ্ছে এই এন্টেনাটি। তবে আমার কাছে এর সম্পর্কে বেশ ভাল তথ্য নেই। পরে এক সময় দেয়ার চেষ্টা করা হবে।
২) Makkah Royal Clock Tower Hotel(Abraj Al Bait)
পবিত্র হারাম শরিফের পাশেই এই ভবটি অবস্থিত। অনেকেই বিষয়টি জানেননা যে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম ভবন। এছারা এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চ ক্লক টাওয়ার(ঘরি যুক্ত টাওয়ার), সবচেয়ে বৃহৎ ঘড়ি এবং সর্ববৃহৎ ফ্লোর এরিয়া সহ হোটেল কমপ্লেক্স। মুলত হজ করতে আসা হাজিদের একসাথে এবং কাবার খুব কাছাকাছি থাকার সুবিধা করে দেয়ার জন্য এটি নির্মান করা হয়। ভবনটি নির্মান করার জন্য অটোমন সম্রাজ্যের আমলের অনেক পুরানো মসজিদ আর বাড়ি ( আজাদ দুর্গ সহ) ভেঙ্গে ফেলা হয়। যা নিয়ে তুরস্ক আর বেশ কিছু ইসলামি দেশের সাথে আল সৌদ এর কুটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে।মুল ভবনটি ছারাও এখানে আরো ৬টি আলাদা ভবন রয়েছে যাদের প্রত্যেকে ৪০ তলার উপরে।লিস্ট টা নিচে দেয়া হল।
Tower Height Floors Completion
Hajar 260 metres (850 feet) 48 2011
ZamZam 260 metres (850 feet) 48 2011
Maqam 250 metres (820 feet) 45 2012
Qibla 250 metres (820 feet) 45 2011
Marwah 240 metres (790 feet) 42 2008
Safa 240 metres (790 feet) 42 2007
২০০২ সালে এটার প্রস্তাবনা আর ডিজা্ইন এর কাজ শুরু হয়। নির্মান কাজ শুরু হয় ২০০৪ সালে আর শেষ হয় ২০১২ সালে। পুরো কমপ্লেক্সটির মালিক বিন লাদেন গ্রুপ। কি চেনা চেনা লাগে। এটা সম্পর্কে পরে আসতেছি। আর্কিটেচারাল, স্ট্রাকচারাল সহ যাবতীয় ডিজাইন এবং সুপারভিশন এর কাজ করেছে Dar al-Handasah Shair & Partners নামক লেবানন ভিত্তিক বিশ্বের শীর্ষ স্থানিয় এই ফার্মটি। মুল ডিজাই করেছেন আর্কিটেক্ট Mahmoud Bodo Rasch ।নির্মানকারি প্রতিষ্ঠান, মালিক, এবং ডেভলপার হল বিন লাদেন গ্রুপ। জ্বি এরাই ওসামা বিন লাদেন এর নিকটাত্বিয় স্বজন। এদের সাথে আল সৌদ পরিবারের দহরম মহরম সম্পর্ক। আবার আল সৌদ এর কাছে আমেরিকা তেলের বিনিময়ে অস্ত্র বেচত। এবার বুঝা গেল লাদেন সন্ত্রাসী করার জন্য এত অর্থ এবং অস্ত্র কোথায় পেত??
ভবনটির উচ্চতা ১৯৭২ ফিট। মূভবনটিতে ভুমি থেকে ১২০ টি ফ্লোর আছে। আর বেইজমেন্টে আছে ৩টি। সর্বোমোট ফ্লোর এরিয়া আছে ৩,৩৪৩,৬৬০ স্কয়ার ফিট। ৯৬ টি লিফট ব্যবহৃত হয় মুল ভবনটিতে। এখানে একটি মসজিদ আছে যেখানে একসাথে ১০,০০০ লোক নামাজ পরতে পারে। এক সাথে ১০০০ এর উপর গাড়ি পার্কিং করতে পারবে। একটি ২০ তলা শপিং শল আছে। এছারা এখানে পুরো কমপ্লেক্সটিতে একসাথে ১,০০,০০০ লোক থাকার ব্যবস্থা আছে।
এবার আসি এটির সবচেয়ে মজার বিষয় টি নিয়ে। এই ঘরিটি এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঘরির মর্যদা নিজের করে নিয়েছে। কেন??
কারন এর আকার, আয়তন এবং অবস্থান। ১৪১ ফিট বাই ১৪১ ফিট এটির আকার। চারদিকে মুখ করে এটি তৈরি করা হয়েছে। আর একদম উপরের চাদ যুক্ত মিনারটি ২৭১ ফিট লম্বা। সৌদি সরকারি হিসাব মতে এটি নির্মান করতে ব্যায় হয় সর্বোমোট ১৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার।
১) Burj Khalifa
এইটা সম্পর্কে সবাই কমবেশি জানি। ইউনাইটেড আরব আমিরাতের দুবাই শহরে অবস্থিত। ২০০৩ সালে এটার প্রস্তাবনা এবং ডিজাইন এর কাজ শুরু হয়। নির্মান কাজ শুরু হয় ২০০৪ সালে। ২০১০ সালে এসে মাত্র ৬ বছরে এর নির্মান কাজ শেষ হয়। পৃথিবিতে যত ভবন আছে উচ্চতার দিক দিয়া একটাও এটার ধারে কাছেও নাই। মুল মালিক হচ্ছে Emaar Properties নামক একটি দুবাই ভিত্তিক কোম্পানি।
পুরো কমপ্লেক্স টি প্রায় ৩০,০০০ এর উপর ঘরবাড়ি নির্মান করেছে। এছারা এখানে প্রায় ৯ টি হোটেল কোম্পানি রয়েছে। ৭.৫ একর জমির উপর একটি পার্ক আছে, আছে কমপক্ষে ১৯টি আবাসিক টাওয়ার ভবন, এছারা ১২০০+ দোকান নিয়ে আছে The Dubai Mall । আছে ৩০ একর জায়গার উপর মানুষ্য নির্মিত এতটি কৃত্তিম লেক।
মুল ভবনটি ২৭১৭ ফিট উচু। ভুমি থেকে উপরে ১৬৩ টি ফ্লোর আছে। নিচে মানে বেইজমেন্ট আছে ১টি। প্রায় ৩০০০ গাড়ি পার্কিং এর সুব্যবস্থা আছে। আর্কিটেকচারাল এবং স্ট্রাকচারাল ডিজাইন করেছে (ডিটেইলিং) Skidmore Owings & Merrill । চিনছেন?? মুল আর্কিটেক্ট হচ্ছেন Adrian Smith (এই লোকের ক্যরিয়ারে ছোটখাট কোন বিল্ডিং নাই)। আর স্ট্রাকচারাল ডিজাইন করেছেন William F. Baker (আর এক বস)। কন্সট্রাকশন কন্ট্রাকটর হচ্ছে Samsung C&T Corporation ।
মজার ব্যপার হচ্ছে এত উপরে যখন উঠা হয়। সবচেয়ে বড় প্রবলেম হয় বাতাস। তার উপর মরুভুমির দেশ। তো এ সমস্যা ডিজাইনাররা কিভাবে
সমাধান করলেন?? তারা যেটা করলেন তা হল পুরো ভবন টাকে একটা তিনকোনা আকারে ডিজাইন করলেন। কারন এতে বাতাস খুবসুন্দর ভাবে পাস করে যেতে পারবে। কিন্তু তার পরও যে চাপ থাকে তাতে যেকোন সাধরন গ্লাস ভাঙার জন্য যথেস্ট। তো এই সমস্যার সমাধান দেখতে হলে আপনাদের কে মিশন ইম্পসিবল ৪ দেখতে হবে। উত্তর পেয়ে যাবেন।
প্রথম পোস্টের প্রথমেই আপদের যে ওস্তাদরে দেখাইছিলাম উনি কিন্তু একটা স্কাইস্ক্রাপার ডিজাইন করছেন। এবং সেটাই প্রথম। আগের পোস্টের ৯ নাম্বার যে ভবনটা দেখসেন সেইটা। এখন পর্যন্ত উনাকে স্কাইস্ক্রাপার ডিজাইনের জনক মানা হয়। এবং ওই ভবনটার সাথে উনার নাম ওতোপ্রতো ভাবে জরিত। পৃথিবির সকল স্কাইস্ক্রাপার আার্কিটেক্টরা উনাকে ওস্তাদ এবং নিজেদেরকে শিষ্য মেনেনেন এক কথায়। দুঃখের ব্যপার হল আমরা একটা প্রযন্ম তৈরি হচ্ছি যারা এই সব লোকদের সম্পর্কে একদমই জানিনা। আমার এই পোস্ট টিকে এই সফল বাঙালি আর্কিটেক্ট কে উৎসর্গ করলাম
প্রথম পোস্ট এখানে
পৃথিবীর সবচেয়ে উচা দালান গুলা ১০-৬
পোষ্ট শেষ। কমেন্টস নিচের দিকে। কমেন্ট না করলেও লাইক বাটনে অন্তত একটা চাপ দিয়েন দয়া করে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




