ক্লাস সিক্সে যখন পড়ি, আমার এখনো মনে আছে আমাকে বলা হলো আমার প্রিয় মানব এর নামে রচনা লিখতে। অনেকে অনেক বিখ্যাত মহামানবদের নামে রচনা লিখেছিলো।
আমি শুরু করেছিলাম হুমায়ুন আহমেদ এর নাম দিয়ে। এই মানুষটা এতো সুন্দর করে বই লিখে, কিভাবে যেনো ক্লাস ফোরে পড়ার সময়ই উনার লেখার প্রতি একটা তীব্র ভালো লাগা টের পাই। রচনা লিখতে গিয়ে দেখলাম হাত চলছে না, লিখতে পারছি না কিছুই। তেমন কিছুই জানিনা উনার সম্পর্কে। শুধু উনার লেখা পড়ি। খুব খারাপ লাগলো। এই বই সেই বই এর প্রচ্ছদ দেখে, বড় ভাই দের জিজ্ঞেস করে জানার খুব চেস্টা করলাম হুমায়ুন আহমেদ সম্পর্কে। জানলাম।
ততদিনে বড় হয়ে গেছি টের পাইনি। তোমার প্রিয় মানব টাইপ রচনা লেখার প্রয়োজনীয়তাও ফুরিয়েছে ততদিনে। শেষ হয়ে গেছে উনার লেখা সবগুলো বই পড়া। খুব খারাপ লাগতো। উনি নতুন কিছু লিখেনা কেনো? কি পড়বো? কখন নতুন একটা বই আসবে? পড়বো। বছরে দু-একটা বইই আসতো। আবার সেই পুরনো বইগুলোই পড়তাম। কি যে সেই ভালো লাগা। অনেক বই পড়ার অভ্যাস থাকার কারণে প্রায় সব লেখকের বইই পড়া হয়েছে আমার, যারা কিনা বাংলা সাহিত্যের অন্তত নামি দামী ২০ জনের মাঝে থাকার যোগ্যতা রাখেন। কই? তারা তো পারেন নি আমার দু-চোখে জল এনে দিতে। তাদের বই পড়ে তো আমার বুকটা হু হু করে কেঁদে উঠেনি। তাদের বই তো আমার মুখে একটা বাঁকা হাসি এনে দিতে পারেনি। তাদের বই তো পারেনি আমাকে স্বাধীনচেতা হতে শেখাতে? একই সাথে লজিক্যাল এবং এন্টি লজিক্যাল হতে শেখাতে? বাঁচতে শেখাতে?
কই আজ তারা যাদের কাছে হুমায়ুন আহমেদ বাজারি লেখক? এই বাজারি লেখকটা যদি আজ শুধু ডাক দিতো যে শুধু হিমুর ভক্তদের মহাসম্মেলন, তবে পল্টন তো পল্টন, পুরো ঢাকা শহরে পা-ফেলার যায়গা পাওয়া যেতো না। এই সস্তা মানুষগুলোর একটা অংশ হতে পেরে আজীবনই গর্বিত অনুভব করে যাবো নিজেকে।
সেই সস্তা বইগুলোর স্রষ্টা আজ আর নেই আমাদের মাঝে। খবর পেলাম তিনি আমাদের মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন।হঠাত করেই ভিজে উঠলো দু-চোখ। আজ আর থাকবেনা তাকে নিয়ে কোন ব্লগীয় লম্বা ভাষণ। কোন নোংরা তর্ক। সকল তর্কের উর্ধে চলে গেছেন তিনি। মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন উনাকে বেহেশত নসীব করুন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১:৪৫