somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুক রিভিউ ।। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর "চাঁদের পাহাড়"

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বইয়ের নামঃ চাঁদের পাহাড়
লেখকঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রকাশনীঃ প্রপা প্রকাশন
মুদ্রিত মূল্যঃ ১৫০ টাকা মাত্র

“মানুষের আয়ু মানুষের জীবনের ভুল মাপকাঠি।”

কথাটা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর “চাঁদের পাহাড়” উপন্যাস হতে নেয়া। সত্যি তাই, মানুষের আয়ু কখনো তার জীবনের মাপকাঠি হতে পারে না। হাজার কিংবা শত বছর বেঁচে থেকেও অনেকে কিছুই করতে পারেনা,আবার অল্প কিছুকালের জন্য পৃথিবীতে আসা কিছু মানুষ আজও আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন।অমর হওয়ার জন্য জীবনের বৈচিত্র্যতা অর্জন করতে হয়,আর সেজন্য স্বপ্ন থাকতে হয়, ত্যাগ থাকতে হয়।

উপন্যাসের নায়ক শঙ্কর তেমনি এক স্বপ্নবাজ যুবক। যার মন উড়ে যেতে চায় পৃথিবীর দূর, দূর দেশে- শত দুঃসাহসিক কাজের মাঝখানে।

সময়কাল ১৯০৯, সদ্য এফ এ পাশ করে গ্রামে এসেছে শঙ্কর।বাবার অসুখ আর সংসারের দারিদ্রের মাঝে মায়ের অনুরোধ পাটকলে চাকরি নেয়ার জন্য। ফুটবলের নামকরা সেন্টার ফরওয়ার্ড, জেলার হাই জাম্প চ্যাম্পিয়ন, নামজাদা সাতারু শঙ্করকে হতে হবে পাটকলের বাবু? হ্যারি জনস্টন, মার্ক পোলো, কিংবা রবিন্সন ক্রুসোর মত জীবন কাটানোর স্বপ্ন কি তবে দুরাশা?
না, স্বপ্নবাজদের স্বপ্ন কখনো পুরোপুরি শেষ হয়ে যায় না।

ঘটনাক্রমে কিংবা সৌভাগ্যক্রমে শঙ্করের চাকরি জুটে রহস্য, এডভেঞ্চার আর রোমাঞ্চের দেশ আফ্রিকার উইগান্ডার রেলওয়েতে। আর সেই চাকরি জীবনেই ঘটতে থাকে যতসব লোমহর্ষক ঘটনা! সেই লোমহর্ষক গল্পের শুরু হয় আফ্রিকার অদম্য সিংহের নরমাংস ভক্ষনের ভীতিকর অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। শঙ্করের কর্মস্থল থেকে এক এক করে অনেক মানুষকেই ধরে নিয়ে যেতে থাকে নরমাংস খেকো সিংহ। এরপর বদলি হয়ে এক ছোট্ট স্টেশনে স্টেশন মাস্টার হিসেবে যোগ দেয় সে। স্টেশন ঘরটা খুব ছোট, প্ল্যাটফর্ম আর স্টেশন ঘরের আশপাশ কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা। আগের জায়গার তুলনায় এই জায়গাটা অনেক নিরাপদ, তাই না?

না, মোটেই নিরাপদ না! কারন এবার সিংহের সাথে যোগ হল সাপের উপদ্রব।তাও যেনতেন সাপ না- আফ্রিকান কালো মাম্বা। ভাবুনতো, অন্ধকার মাঝ রাতে আপনার বিছানার পাশে উদ্যত ফণা তুলে দাড়িয়ে আছে হিংস্রতম ব্ল্যাক মাম্বা! যেটার প্রতি ছোবলে ১৫০০ মিলিগ্রাম তীব্র বিষ শিকারের শরীরে ঢুকিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে।

একসময় শঙ্করের দেখা হয় ডিয়েগো আলভারেজ এর সাথে। লাল দাড়ি আর বড় বড় চোখের এ মানুষটি ১৯৮৮/৮৯ সালের দিকে কেপ কলোনির উত্তর পাহাড়ের জঙ্গলে খুজে বেরিয়েছেন সোনার খনির সন্ধানে। একসময় খনির সন্ধান পেয়েও তা আর জয় করতে পারেন নি।তাই আবার বেরিয়েছেন নতুন করে। শঙ্কর কে সহযাত্রী হওয়ার প্রস্তাব করে সে, শঙ্করও রাজি হয় সাথে সাথে।

গল্পের মূল কাহিনির শুরু এখান থেকেই। এরপর রুদ্ধশ্বাস অভিযান, লোমহর্ষক ঘটনাক্রম, কষ্ট, সাহস, বীরত্ব আর বন্ধুত্বের নানা উদাহরণ সৃষ্টির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে থাকে উপন্যাসের কাহিনী! শেষ পর্যন্ত কি পরিনতি হয়েছিল তাদের?

শুধু এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য আপনাকে এই বইটি পড়তে অনুরোধ করবোনা বরং অনুরোধ করব আর অনেক কারনে। আমার মতে, সাহিত্যের সার্থকতা হল গল্পের চরিত্রের মাঝে পাঠককে প্রবেশ করানো। এদিক দিয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় শতভাগ সফল। যিনি কখনো আফ্রিকায় যান নি, কেবলমাত্র বই পত্র পরে আর ম্যাপ ঘেঁটে অর্জিত অভিজ্ঞতা দিয়ে এক অসাধারণ লেখনির মাধ্যমে আপনাকে নিয়ে যাবে আফ্রিকার গভীরে, সাভানা আর নিঝুম অরণ্যের গোলক ধাঁধার ভেতর দিয়ে।মাঝ রাতের আকাশে তারাদের ঝকমকে সৌন্দর্য কেবল শঙ্করকে না, আপনাকেও মুগ্ধ করবে!

সিংহ,বেবুন,বুনিপ নামের হিংস্র জন্তু, বৃষ্টি, অগ্ন্যুৎপাত কে উপেক্ষা করে আকাশচুম্বী পর্বতমালা “রিখটারসভেল্ড রেঞ্জ” পাড়ি দিয়ে সেই হীরার খনির সন্ধানে ডিয়েগো আলভারেজ আর শঙ্করের সঙ্গী হতে আপনাকে সাদর আমন্ত্রন!

হ্যাপি রিডিং!

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:০৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইরান ইসরাইলের আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ আর আমাদের সুন্নী-শিয়া মুমিন, অ-মুমিন কড়চা।

লিখেছেন আফলাতুন হায়দার চৌধুরী, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩০

(ছবি: © আল জাযীরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক)

শ্রদ্ধেয় ব্লগার সামিউল ইসলাম বাবু'র স্বাগতম ইরান পোষ্টটিতে কয়েকটি কমেন্ট দেখে এই পোষ্ট টি লিখতে বাধ্য হলাম।
আমি গরীব মানুষ, লেখতে পারিনা। তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯




আমরা পৃথিবীর একমাত্র জাতী যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য, নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য প্রাণ দিয়েছি। এখানে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান চাকমা মারমা তথা উপজাতীরা সুখে শান্তিতে বসবাস করে। উপমহাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×