somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানবতা

২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেইন রাস্তার সাথে সরাসরি অথবা পরোক্ষে সংযূক্ত রাস্তাগুলোর একটা দিয়ে হাটছিলাম । দু’পাশে দালান, অট্টালিকাগুলি দাঁড়িয়ে পাশাপাশি । রাস্তার পীচ ছাড়িয়ে মাটির অংশের ১০/১২ ফিট দূরে দাঁড়িয়ে বাড়িগুলো । মাটির অংশে অবস্থিত যে গাছগুলো, সেগুলির একটির ছায়ার নীচে বসে চা বিক্রী করছেন তিনি । একটি ইটের উপর বাজারের ব্যাগ বিছিয়ে বসে আছেন, সামনে বড় একটা ফ্লাক্স । ফ্লাক্সের গলায় বাধা একটা দড়ি, সেই দড়ির সাথে বাধা তিনটি পলিথিন । একটায় বড় বড় টোষ্ট বিস্কুট, একটায় পান এবং আরেকটায় সিগ্রেট আর কিছু শুকনা সুপারি । নীচে বালুর উপরে ছোট্ ছোট দুইটা পলিথিন পাতা, একটার উপরে কিছু কাচা সুপারি এবং আরেকটায় তিনটা ছোট কৌটা, একটায় চুন, একটায় জর্দা এবং আরেকটায় কি যেন । তার সামনে বামে পাচ লিটারের একটা বড় বোতল পানিভরা, বোতলের মাথায় উপুড় করে রাখা একটা গ্লাস । পানি খেতে কেউ চাইলে বাম পায়ের পাতার উপরিভাগ এবং বাম হাতের ব্যবহারে বোতলটা উচু করে ডান হাত দিয়ে গ্লাস ধরে গ্লাসে পানি ঢালেন তিনি । ফ্লাক্সটার মাথায় একটা সিগ্রেট-লাইটার ।সিগ্রেট কেউ ধরালে পরে আবার ঐখানটাতেই রেখে দিচ্ছেন তারা লাইটারটা ।
রিক্সাওয়ালারাই দোকানের মূল খরিদ্দার, বলাই বাহূল্য । বহূদুর ঘুরে ক্লান্ত হয়ে এসে বসেন তারা ।না, বসার মত কোন জায়গা নেই এখানে তাদের । দু’পায়ের উপর ভর করে বসে কেউ টোষ্ট খান, পানি খান, লাল চা খান এবং শেষে হয়ত একটা সিগ্রেট অথবা একটা পান । আবার কেউ শুধুবা একটা লাল চা, তারও আগে এক গ্লাস পানি এবং শেষে একটা সিগ্রেট ।
নাম জিজ্ঞেস করা হয়নি তার, খুব কি প্রয়োজন আছে সেটার ? পাশে দাঁড়িয়ে লাল ঐ চা খেতে খেতে দেখা হয় দৃশ্যগুলো আমার । রাজধানীজুড়ে এরকম দোকানের বিস্তৃতি অনেক । অনেকে আবার ভ্রাম্যমান দোকান করে থাকেন, তবে এতো জিনিস নিয়ে নয় । যেমন পানের আইটেমটা তারা রাখেননা । কারন পানে অনেকরকম জিনিস লাগে, ভার না হলেও গুছিয়ে যেগুলি বহন করতে কষ্ট হয় । খরিদ্দারেরই কাছে যান তারা ।
শ্যামলী শিশুমেলার মোড়ে বিরাট এক ১৫-তলা ভবন, নাম ‘আশা ভবন’ । পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পরিপাট্টি করে অফিসিয়াল ড্রেস পরিহিত গার্ডদের দেখে একটু দাড়ালাম । বাথরুমের দোহাইয়ে ভিতরে ঢুকলাম । প্রায় কিছুই না দেখে বের হবার সময় নিরাপত্তাকর্মীদের একজনের সাথে কথা বললাম । মনে স্বভাবতঃই প্রশ্ন জাগে, কি এটা ? জিজ্ঞেস করি এবং উত্তর পাই, এটা ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি । এমন নয় যে আশা ইউনিভার্সিটির নাম শোনা হয়নি । বছর দুই আগে পত্রিকা মারফত জেনেছিলাম, ওখানে কিছু পদে নিয়োগ-সংক্রান্ত জটিলতা হয়েছিল । সে-সম্পর্কে জানতে চাই । উনি যা বলেন, সার-সংক্ষেপ করলে তা দাঁড়ায়, ওটা হয়েছিল পদসংখ্যার তূলনায় চাকরীপ্রার্থীর বিপুল সংখ্যার কারনে । আরো শুনেছিলাম, চাকরীপ্রার্থীদের কাছ থেকে অনর্থক বিপুল পরিমান টাকা জোর করে এবং কৌশলে আদায় করা হয়েছিল ।
এই বিরাট বিল্ডিংযের সবই কি আশা ইউনিভার্সিটি ? উপরের দিকে তাকিয়ে জানতে চাই ।
উত্তর আসে, দু’টি ফ্লোর বাদে সবই আশার । ১২/১৩ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর বিশাল পদচারনা এই আশা ইউনিভার্সিটির ফ্লোরগুলোতে ।
আমাদের দেশে তরুন প্রজন্মের সংখ্যার বর্ধিত হারের সাথে সাথে তাদের শিক্ষার সুযোগগুলি বাড়ার পথ যখন পাচ্ছিলনা, যখন সংকূচিত হয়ে পড়ছিল তাদের উচ্চশিক্ষার সুযোগগুলো, ঠিক সেই সময় থেকেই আমাদের দেশে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু । সামগ্রিক মূল্যায়ন হোল, আমাদের অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী গ্র্যাজুয়েশন পাচ্ছে এগুলি থেকে । মানের প্রশ্ন তোলেন অনেকে, তোলাটা উচিতও ।
ঢাকা শহরে আশার মত আরো অনেক বেসরকারী ইউনিভার্সিটি আছে, আছে অনেক ছাত্র-ছাত্রীও । মজিদ মিয়াদের ওরকম চায়ের দোকানে তারা যায়না, গেলেও বেনসনের খোজে হয়তোবা কেউ যায়, যারা জানেনা যে ওখানে শুধু রিকশাওয়ালাদের শেখ অথবা স্টার ছাড়া আর কোন সিগ্রেট পাওয়া যায়না । একটু তাচ্ছিল্লের প্রচ্ছন্নভাব কি থাকে তাদের আচরনে তখন ? আসলে শিক্ষার মানের বিষয়টা জানতে না চেয়ে আমরা যদি জানতে চাই, তারা মানবিক কি-না, অথবা যদি জানতে চাই যে, কষ্ট করে দিন এনে দিন যারা সংসার চালায়, অভাবী সেই মানুষগুলোর প্রতি তারা সহানুভূতিশীল কি-না, তাদের দুঃখে তারা বেদনাবোধ করে কি-না, সেটাই ভাল । কারন শিক্ষার মানের চেয়ে এই বিষয়গুলি, এই বোধগুলি অর্জন করা উচিত আগে । জীবনের শিক্ষাই হচ্ছে এগুলি ।
বেসরকারী বিশ্ব-বিদ্যালয়ের মাননীয় শিক্ষকবৃন্দকে সবিনয়ে বলবো, আপনারা আপনাদের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মানবিক শিক্ষা প্রদান করুন । বলবেন এবং কটাক্ষও হয়ত করবেন, উপদেশ দেওয়া মানুষের স্বভাব । কিন্তু কি করবো বলুন, এভাবে সুনিদ্দৃষ্টভাবে বলে যদি কিছু হয় এবং কমপক্ষে একজনও যদি জীবনের এসকল আসল শিক্ষা পায়, তবুওতো আমার মত অতি ক্ষুদ্র এক ব্যক্তির শ্রম কিছুটা হলেও স্বার্থক হয় । আমার
নৈতিকতার চর্চা-ই পারে শুধু তাদেরকে এসমস্ত পরিত্যাগ করে ন্যায়ের পথে আনতে । আমাদের সাথে কোন না কোনভাবে সম্পর্কিত তারা । ছোট্ট এই ভূখন্ডে তারা আমাদের আত্মীয়তার সূত্রেই বাধা কোন একভাবে । অনেকের এদের পরিবারে নৈতিকতার চর্চা হয়, আবার অনেক পরিবারে হয়ইনা । অনেকে সঙ্গদোষে পরিবর্তিত হয় । অনেকে আবার পরিবারে নৈতিকতার চর্চা না হওয়ার কারনে নষ্ট হয়ে যায় । বিরাট-বিশাল এই শিক্ষার্থী এই তরুন সমাজকে আমরা কাছে টেনে নিতে চাই, তাদের আমরা মানবিক নাগরিকে পরিনত করতে চাই ।
বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকাদেব্রকে এই বিশাল দায়িত্ব নিতে হবে । তাঁরা না নিলে আর কে নিবে এ-দায়িত্ব ? দেশ-সমাজের পাঠ এই ছাত্রদের যে দিতে হবে তাঁদেরই । সহনশীলতা, মানবিকতা, উদার মনোভাবের শিক্ষা, মানুষ কেন দরিদ্র হয় এবং অহায়, হতাশ মানুষগনকে কোন দৃষ্টিতে, কোন ভাবাদর্শে দেখতে হয়, সে-পাঠদানের ভারতো তাঁদেরই উপর ন্যস্ত । আগেকার আমলের স্কুল ও কলেজের কিছু মহান শিক্ষকের কথা আমরা শুনেছি । তাঁরা বাড়ীতে বাড়ীতে খালি পায়ে হেঁটে গিয়ে পাঠ দিয়ে আসতেন, অনেকেই বিনে-পয়সায় । শুধু তা-ই নয়, আদর্শ ও নৈতিকতার শিক্ষাও তাঁরা অকাতরে বিলিয়ে যেতেন । অনেক শিক্ষার্থীর নৈতিকতার শিক্ষা লাগতোইনা, ঐসমস্ত শিক্ষকদের দেখে তাঁদের অনূকরনের চেষ্টা করত তারা । তার সুফল আমরা পেয়েছি; বিগত শতকের ছাত্রনেতাদের কর্মকান্ডের দিকে যদি আমরা দৃষ্টি দেই, তবেই বুঝব তা পেয়েছি আমরা । তাঁরাইতো এখন শিক্ষক, নিজেদের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান তাঁরা তাঁদের শিক্ষার্থীদেরকে দিবেন, এই আশা আমরা করে যেতে চাই । অবশ্য নষ্টের দ্বারপ্রান্ত, বাংলাদেশী এই যুগে কতদুর সম্ভব হবে এটা, তা ভবিব্যই বলতে পারবে । তবে আমরা বেসরকারী স্কুল-কলেজের মাননীয় শিক্ষক-শিক্ষিকাগনকে এরকম আহ্বান জানিয়ে যাব । এসমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও আহ্বান জানাই মানবিকতার এসকল পাঠ গ্রহন করতে অতি নিবিষ্ট মনে । উদারতা, মহানূভবতা, সহনশীলতা এসমস্ত গুন অর্জন করলে কিন্তু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারনে কম মানের শিক্ষা গ্রহনের দুর্নাম, অপবাদ তাদের আর থাকবেনা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ১২:১০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×