আমি সাধারনত খুব আনন্দ নিয়ে লিখি কিন্তু এ লিখাটার সময় অঝঢ়ে কেঁদেছি......আপনাদের কাছেই আজ বিচারের ভার ছেড়ে দিলাম.....(লিখাটা অনেক বড় হয়েছে বলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি)।
কিছুদিন যাবত আমর মা ডায়বেটিস জনিত কারনে চোখে ডাবল ভিশন দেখছিল, যদিও আমার ফেমিলির সবাই ডাক্তার তবুও আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যেহেতু ডায়বেটিস এর রোগী তাই প্রাথমিক ভাবে বারডেমে চোখ দেখিয়ে তারপর উন্নত চিকিৎসায় যাবো। সে মোতাবেক আমি গত ১৮ জুন এ বারডেমের বর্হিবিভাগে যাই। অনেক লাইন ঘাট অনেক চেকের পর প্রফেসর আশরাফ সাইদ, হেড অফ অপথোমলজি দেখার পর বললেন এটি সিরিয়াস কেইস। তারপর একজন মহিলা এ্যসিসট্যান্ট (নাম জানতে চাইনি) আমার মাকে বসতে বলে বললেন আপনার সাথে কে আছে। আমি এগিয়ে আসতেই বললো আপনার মাযের চোখে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে, এই মূহূর্তে হসপিটালে এডমিসন নিতে হবে এবং কালকের মধ্যে অপারেশন না হলে আপনার মাযের চোখ বাচানো যাবে না। আমার মা এবং আমি মারাত্বক ভয় পেয়ে গেলাম। আমি সময় চাইলাম কিন্তু প্রফেসর এবং তার এ্যসিসট্যান্ট বললো এই মূহূর্তে হসপিটালে এডমিট না নিলে আর সম্ভব হবে না কারন এখানে সিট দূর্লভ, জেনারেল ওয়ার্ডে একটি মাত্র বেড খালি আছে। আমি বললাম, আমার ভাই বোন সবাই ডাক্তার ওদের সিদ্ধান্ত ছাড়া কিভাবে এডমিট করাবো? প্রফেসরের এ্যসিসট্যান্ট বললো আপনার মা এখানে বসুক আপনাকে ৫ মিনিট সময় দেয়া হলো বাইরে যেয়ে ফোন করে আসুন। ছুটে বাইরে যেয়ে ফোন করতেই সবাই ভয় পেয়ে গেল, সবাই একবাক্যে বললো যেহেতু উনি প্রফেসর আর বারডেমে অনেক ভালো জায়গা তাই তাদের উপর ভরসা করা যেতে পারে আমার এসোসিয়েট প্রফেসর(গাইনি) বড় বোন আর বাবার তীব্র আপত্তি সত্বেও আমরা সবাই তাদের হাতে আমাদের প্রিয় মাকে ছেড়ে দিলাম। আমার পকেটে প্রায় ৫০০০/- টাকা ছিল তা দিয়ে ভর্তি করার পর বেডে এসে দেখি জেনারেল ওয়ার্ডের প্রায় বেড খালি........ঘন্টা তিনেক বেডে অপেক্ষার পর প্রফেসররে এ্যসিসট্যান্ট বললো কাল এক চোখ এবং তার পরদিন আরেক চোখ অপারেশন হবে। দ্রুত ভাই বোনদেরকে ফোন দেয়ার পর সবাই তাদের কাজ ফেলে চলে এলো।
পরদিন সকালে বলা হলো ২০০০০/- টাকা জমা দেন তারপর অপারেশন হবে। আমরা ২০০০০/- টাকা জমা দেয়ার পর দেখলাম আম্মুর সিরিয়াল ১১ তে থাকলেও ৬ এ অপারেশন হবে কারন বাকীরা টাকা জমা দিতে পারেনি, এখানে টাকা জমা না হলে ডাক্তার সাহেব অপারেশনে হাত দেন না। যাহোক পরদিন সকালে আরেক কাহিনী.....আম্মুর সিরিয়াল ৬ তে ছিল কিন্তু বাকীরা টাকা জমা দিতে পারেনি তাই তাদের অপারেশন হবে না আম্মুরটা প্রথমে হবে। আম্মু বাথরুমে যেতে চেয়েছিল কিন্তু প্রফেসররে এ্যসিসট্যান্ট টানাটানি শুরু করলো...বললো বাথরুমে যেতে হবে না, স্যার দাড়িয়ে আছেন, অপারেশনের পরে বাথরুমে যান। কোন প্রস্তুতি ছাড়াই তারা মাকে ওটিতে নিয়ে গেল। অপারেশন এর আগ মূহূর্তে আমার বোন গ্লকোমিটারে মেপে দেখে ব্লাড সুগার ১৮, প্রফেসররে এ্যসিসট্যান্টকে জানানোর পর বললো, এটা কোন সমস্যা না (এবং তারা নিজেরাও ব্লাড সুগার মাপেনি)। আসলে আমরা তাদের কথায় এত বেশি নার্ভাস ছিলাম যে আমাদের পরিচিত চোখের ডাক্তারদের সাথে ও কোন পরামর্শ করিনি।
অপারেশনের ২দিন পর বাসায় নিয়ে আসি এবং তার ৩দিনের মাথায় আমার মা কিছুই দেখছিলোনা, তীব্র ব্যাথা বলছিল। দ্রুত পরিচিত ডাক্তারদের কাছে নেয়ার পর ডাক্তাররা বললো চোখে মারাত্বক ইনফেকশন হয়েছে যা ইন্সট্রুমেন্ট স্টারালাইজ করা না বলে ইনফেকটেড হয়েছে এবং আনকোন্ট্রলড্ ডায়বেটিস থাকায় তা মারাত্বক আকার ধারন করেছে যাতে অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনাই বেশি এবং ডাক্তার আরো বললো যে আম্মুর চোখ এমন কোন খারাপ অবস্থায় ছিল না যে এত তাড়াহুড়া করে দুচোখ অপারেশন করতে হবে (বুঝতে পারলাম শুধুমাত্র টাকার জন্য প্রফেসর আশরাফ সাইদ আমাদেরকে মিথ্যা বলে অপারেশনে ঠেলে দিয়েছে)। পরিচিত ডাক্তারদের পরামর্শে আবার গেলাম প্রফেসর আশরাফ সাইদ এর কাছে..........তিনি এবং প্রফেসর হযরত আলি, বিভাগীয় প্রধান , বারডেম অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আবার মাকে হসপিটালে এডমিট হতে বললো তখনি। ততক্ষনে প্রফেসর সাহেব আমাদের ফেমিলি ব্যাকগ্রাউন্ড আঁচ করতে পেরেছেন পরবর্তীতে আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন বাংলাদেশ আই হসপিটালে ডাঃ নিয়াজের কাছে যেতে বললেন এবং পরোক্ষ ভাবে স্কীকার করলেন উনাদের আর কিছু করার নেই। আমরা যখন প্রশ্ন করলাম এত হাই সুগারে কেন পর পর দুই চোখ অপারেশন করলেন? এবং ইন্সট্রুমেন্ট স্টারালাইজ কনফার্ম না করে কিভাবে অপারেশনে গেলেন? তার জবাব তিনি এড়িয়ে গেলেন।................... আমরা বুঝতে পারলাম আমাদের দূর্ভাগ্য, ভাই বোনরা সবাই ডাক্তার হয়েও একজন লোভী ডাক্তারের কাছে ধরা খেলাম।
আরো খবর হলো একই দিনে বাংলাদেশ আই হসপিটালে ৬ জন রোগী বারডেমে হাসপাতাল থেকে ভর্তি হয়েছে প্রত্যেকেরই একই অবস্থা.....
আমার প্রশ্ন আপনাদের কাছে...... আমাদের মত ডাক্তার ব্যাকগ্রাউন্ড ফ্যামিলির যদি এ অবস্থা হয় তাহলে সাধারন জনগনের কি অবস্থা???? কোথায় গেলে সঠিক চিকিৎসা পাবে সাধারন মানুষ???? ২০,০০০/- টাকা কি একটি চোখের চেয়ে বেশি মূল্যবান ????
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১২ সকাল ১১:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




