somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সোহানী
হাজার হাজার অসাধারন লেখক+ব্লগারের মাঝে আমি এক ক্ষুদ্র ব্লগার। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া লেখালেখির গুণটা চালিয়ে যাচ্ছি ব্লগ লিখে। যখন যা দেখি, যা মনে দাগ কাটে তা লিখি এই ব্লগে। আমার ফেসবুক এড্রেস: https://www.facebook.com/sohani2018/

আপনি যদি চাকুরীজীবি মেয়ে হোন তাহলে লিখাটি আপনার জন্য..... আপনার সাথে মিলে যেতেও পারে (পর্ব ৩)

০৯ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অফিসে চাকুরিরত মেয়েদের সাথে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে বাস্তবতার আলোকে আমার এ পর্বগুলো সাজিয়েছি যা সাধারন দৃস্টিতে হয়তো তেমন কিছুই নয় কিন্তু একটি মেয়ের প্রেক্ষাপটে অনেক কিছু .......

পর্ব ৩


সিড়িটার পাশটা খুব ছোট, দু'জন পাশাপাশি ক্রস করতে হলে ধাক্কা খেতে হয়। আস্তে আস্তে মেয়েটার পিছনে উঠছি কারন তার পাশ দিয়ে বা তাকে ধাক্কা দিয়ে উঠতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। মেয়েটি এডভান্স স্টেজ প্রেগনেন্ট, অনেক কস্টে পা'দুটো টেনে টেনে আস্তে আস্তে নিজের বিরাট শরীরকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে... এ অবস্থায় শরীরকে পাহাড় থেকে ও বড় মনে হয়। তিন তলায় উঠে মেয়েটি একটু হাফাচ্ছিল ... ক্রস করে যেতে যেতে পিছন ফিরে মুখের দিকে তাকালাম... ক্লান্ত, অবসন্ন চিরাচরিত একটা মুখ।

দু'দিন পর লম্বা মিটিং থেকে বের হয়ে রুমে বসতেই একটা স্লিপ। ভেতরে আসার অনুমতি দেয়ার পর দেখি সেই একই মুখ। বলুন, কি চাই?

ম্যাডাম আমি শরিয়তপুরের হ্যাল্থ্ এডুকেটর। আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই ..... আগামী সাপ্তাহে আমার ডেলিভারী ডেট কিন্তু এখনো মেটারনিটি লিভ এর অর্ডার পাইনি... গত ৪ মাস আগে এপ্লাই করেছি লিভ এর জন্য। আমি গত জুনে জয়েন করেছি, প্রায় আট মাস হলো এখানে।

তুমি এইচ আর সেকশানে এ যোগাযোগ করো.... এপ্লিকেশান করো। লিভ পলিসি অনুযায়ী তুমি লিভ পাবা।

কিন্তু এইচ আর সেকশানে বলেছে চাকরীতে জয়েন করার ৯ মাস না হলে মেটারনিটি লিভ পাওয়া যায় না। ওরা উল্টা আমাকে কেন পেগনেন্ট অবস্থায় জয়েন করেছি তার জন্য বকা দিচ্ছে। বলেন ম্যাডাম, জয়েনিং লেটার ফর্মে কোথাও পেগনেন্ট কিনা তার কোন ঘর পূরণ করার অপশান ছিল না। তাহলে আমি কিভাবে জানাবো। আমি ৩ দিন ধরে ঢাকায় আছি আর এখানে ছুটাছুটি করছি, ঢাকায় কোন আত্মীয় নেই... অনেক দূ:সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাসায় আছি..... এইচ আর বলেছে লিভ উইদাউট পে দিতে পারে কিন্তু ম্যাডাম তাহলে খাবো কি? আমার স্বামী ও সিভিল সার্জেন অফিসের হ্যাল্থ্ এডুকেটর জয়দেবপুরে। দু'জনের টাকায় কোনরকমে চলে শাশুড়ি ননদ সহ ৭ জনের সংসার.... এর মাঝে বেতন না পেলে খাবো কি বাসা ভাড়া দিব কি????

এইচ আর পলিসির বাইরে আমার ক্ষমতা নেই তারপর ও তুমি এপ্লাই করলে আমি বিশেষ বিবেচনার জন্য রিকোয়েস্ট পাঠাবো যাতে তোমার বিষয়টি কনসিডার করে।

কিন্তু ম্যাডাম, আমার হাটার ক্ষমতা ও নেই এ মূহুর্তে, কেউই আমার শারিরীক কস্টটা বুঝে না। শরিয়তপুরের অফিস থেকে বলে দিয়েছে কিভাবে অফিস চলবে তারা জানে না বা অামার রিপ্লেসমেন্ট এর ব্যাপারে তারা হেড অফিসের সাথে ও যোগাযোগ করবে না .... উল্টা ঠিকভাবে কাজ করতে পারছি না বলে অসম্ভব দূর্ব্যবহার করে। তাই এখানে আসলাম যদি কিছু করতে পারি কিন্তু এইচ আর উল্টা ধমক দিচ্ছে। ৩ দিন ধরে টেবিলে টেবিলে ধর্না দিচ্ছি কেউই কিছু হেল্প করতে পারছে না। তাই আপনার কাছে আসলাম... একজন মেয়ে হিসেবে অন্তত আমার কস্টটা বুঝবেন... কোন পথ বাতলে দিবেন।

যথারীতি এইচ আরকে ডাকলাম। কিছু করা যায় কিনা তার রিকোয়েস্ট করলাম... তারা এক কথায় উড়িয়ে দিল। আরো বললো, শরিয়তপুরের অফিস থেকে ফর্মাল রিকোয়েস্ট না এলে রিপ্লেসমেন্ট প্রসেস সম্ভব নয়। আর ও নিজের অফিসের সাথেই সম্পর্ক ভালো না.... কে তার জন্য ছোটাছুটি করবে !!!!!

ঠিক আছে কি করা যায় দেখছি বলে মেয়েটিকে ও এইচ আর কে বিদায় দিলাম... শরিয়তপুরের অফিসে ফোন দিলাম। অফিস প্রধানকে ফর্মাল রিকোয়েস্ট এর জন্য রিকোয়েস্ট করলাম। স্পস্ট বিরক্ত মনে হলেও কাজটা করার প্রতিশ্রতি দিল। হেড অফিসের একজনকে টেম্পোরারী পোস্টিং এর জন্য ফাইল প্রসেস করালাম। তারপর মেয়েটির ছুটি বিশেষ বিবেচনার জন্য রিকোমেন্ড করলাম.......

পরিশেষে; এইচ আর এর বিগ বস্ এসে বললো... আমাদের আর দরকার কি আপনিই যখন সব করতে পারেন.......... হাঁ করতে পারি, আমরা সবই করতে পারি.. যখন দেখি কিছু অথর্ব লোকজন সবকিছুকে অফিসিয়াল ফর্মেটে ফেলে দেখে... রুলস্ রেগুলেশান দেখে.... ঘটনার মানবিক দিক ও যে দেখা উচিত এটা বুঝেই না বা বুঝতে চায় না।

আজ এটুকু... পরবর্তিতে আসছি আরেকটি ঘটনা নিয়ে... ততদিন ভালো থাকুন....

আমার আগের পর্ব যদি পড়তে চান.....
আপনি যদি চাকুরীজীবি মেয়ে বা মা হোন তাহলে লিখাটি আপনার জন্য... আপনার সাথে মিলে ও যেতে পারে (পর্ব ২)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০১
৩৬টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×