somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সোহানী
হাজার হাজার অসাধারন লেখক+ব্লগারের মাঝে আমি এক ক্ষুদ্র ব্লগার। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া লেখালেখির গুণটা চালিয়ে যাচ্ছি ব্লগ লিখে। যখন যা দেখি, যা মনে দাগ কাটে তা লিখি এই ব্লগে। আমার ফেসবুক এড্রেস: https://www.facebook.com/sohani2018/

আমার নিকটতম প্রতিবেশীরা - পর্ব-২

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আমার বৃদ্ধা প্রতিবেশী:


এখানে কুকুরদেরকে পরিবারের সদস্য হিসেবে দেখে অথবা বলে মাই ফ্রেন্ড। তো ওই ফ্রেন্ডদের প্রাকৃতিক কর্ম সাধনের জন্য বেছে নেন বাসার আশে পাশের খোলা মাঠ ময়দান। এবং মালিক ফ্রেন্ডরা হাতে রাখেন পলিথিন ব্যাগ, যেখানে সেখানে পু করার পর তা হাত দিয়ে উঠিয়ে গার্বেজ করেন তা দিয়ে। তবে সাধারন কালচার সবাই তা করেন তবে কেউ যদি তা পরিস্কার না করে তার জন্য কোন জেল জরিমানা নেই..... তাই যখন ওই হাগু পাড়ায়ে চলতে হয় তখন কেমন লাগে তা আর বলতে চাচ্ছি না!!!!!! আর প্রতিদিন বিকেলে হাগু + এক্সারসাইজ করানো জন্য ওনাদের বের করানো হয়। সে কারনে আমার হয়েছে মরন !!! বিকেলে পারতপক্ষে লিফটে উঠি না.... ৩/৪ টা যাওয়ার পর কনফার্ম হই যে আশে পাশে কোন কুকুর ভ্রাতা নেই .... ছোট খাটো হলে মাইন্ড করি না কিন্তু দু:খের বিষয় বেশীরভাগেরই সাইজ সিংহ মার্কা। এদেরকে প্রায় আমার নেকড়ে বলে ভুল হয় !!!!! তাই এ নেকড়ে সাইজের কুকুরের সাথে একই লিফটে উঠা কি যে কঠিনতম কাজ.... তা বলে বোঝানো যাবে না। প্রানটা প্রায় যায় যায়... পারলে লিফটের হাতলে পা ঝুলিয়ে রাখি। আমার এ দূরাবস্থা দেখে ওদের মালিকরা প্রায় আমাকে অভয় দেয়, দে আর ফ্রেন্ডলি... ডোন্ট বি স্কেয়ার্ড। কিন্তু আমার আত্মা কি আর এ অভয় বাণীতে ভরসা পায়!!!!!

বৃদ্ধার বয়স কম করে হলেও ৭৫ এর কাছাকাছি হবে। তাঁর আছে ঠিক নেকড়ে সাইজের ৩ কুকুর, প্রথমতো ভেবেছিলাম সত্যিই বোধ হয় নেকড়ে.... আমার ছেলে আমাকে অভয় দিল যে ওগুলা আসলে কুকুর । ভরসা, আমার ছেলে আবার আমার থেকে সাহসী। যাহোক মহিলা খেয়াল করেছে আমি তাঁকে দেখলে লিফটে উঠি না ...... তাই একদিন বললো, তুমি আমার বাসায় এসো, দেখবে ওরা কতটা ফ্রেন্ডলি। তো একদিন কুকুর ছাড়া লিফটে দেখা তার সাথে, দেখি চোখ লাল ও মুখে স্ক্রেচ। জিঙ্গাসা করতেই বললো যে তার কুকুর ফ্রেন্ডরা একটু দুস্টুমি করেছে ...মানে একটু আচড়ে দিয়েছে চোখে মুখে। বুঝলাম কেমন ফ্রেন্ডলি তার ফ্রেন্ডরা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যাইহোক, কদিন ধরে তাঁর সাথে দেখা হয় না, তাঁর হাজবেন্ড দেখি কুকুর নিয়ে বের হয়।

একদিন দেখি লিফটের সামনে নোটিশ, সে বৃদ্ধার ছবি, জেনি মারা গেছে দু'দিন, তাঁর অন্তষ্তক্রিয়া বিকেলে গির্জায়। থতমত খেয়ে গেলাম, কেউই জানে না যে সে লাস্ট পনেরদিন হসপিটালে মৃত্যুর সাথে লড়ছিল.... কোন খবর নেই....কোন শোকতাপ নেই, নেই কোন আত্মীয়- অনাআত্মীয়র মাতম, কেউই তাঁকে দেখতে যায়নি.... কেউই তাঁকে মাথায় হাত বুলিয়ে অভয় দেয়নি, '' মা, আমি আছি, চিন্তা করো না''। এ রোবটিক জীবনে কারোই সময় নেই সময় দেবার.... হাজবেন্ড তাঁকে সময় দিলে কুকুরগুলো কে দেখবে..... একটি মেয়ে আছে সে অন্য স্টেট এ থাকে, তার ও সময় নেই নিজের কাজ, সংসার ছেড়ে সময় দেবার ...... এরা ১৮ বছর বয়স থেকে শিখে একা সার্ভাইব করার, মা-বাবা থেকে আলাদা থাকার, কাজ, কাজ আর কাজ... ........ এ রোবটিক আধুনিক জীবন থেকে আমাদের এ আধাপেট খেয়ে মা-বাবা-ভাই-বোন নিয়ে থাকাটাই যে অর্থপূর্ণ, কতটা আনন্দের তা কি প্রথম বিস্ব জানে !!!!!!!!!!... চাই না এ আধুনিক জীবন, চাই না এ নি:শব্দ মৃত্যু..... চাই আমার মৃত্যুতে প্রিয়জনের শোক, চাই আমার লাশে আপনজনের ছোয়া, চাই আমার মৃত্যু পথে চারপাশে সবার উদ্বিগ্ন মুখ, চাই হসপিটালে আত্মীয়- অনাআত্মীয়র ভীড়, চাই অঝঢ় ধারার বৃষ্টির কান্না, চাই না এ নি:শব্দ মৃত্যু.... চাই না.....চাই না।


সে মেয়েটি:



ছেলেকে নিয়ে বের হয়েছি লাইব্রেরীতে যাবো বলে....বন্ধের দিন, শনিবারে বাস ৩০ মিনিট পরপর। স্টপেজ এ এসে দেখি বেঞ্চ এ একটা মেয়ে একটা পলিথিন হাতে সমানে বমি করছে আর চিৎকার দিয়ে কাঁদছে, বয়স বড়জোর ২৫ হবে । পাশে যেয়ে কাঁধে হাত রাখলাম, ডু ইউ নিড এনি হ্যাল্প?
সে বললো, নো থ্যাংস্ আ'ম ওকে..... ।
কিন্তু তোমার অবস্থাতো ভালো মনে হচ্ছে না, আমি কি ৯১১ এ কল দিব ?
সে বললো, না ধন্যবাদ, লাগবে না। আমি একাই সামলে নিতে পারবো।
অর মে আই কল সামওয়ান টু এ্যাটেন্ড ইউ।
সে বললো, আই ডোন্ট হ্যাব এ্যানি ওয়ান।
মানে কি ??? ইন্টারভিউ নিতে লাগলাম... কারন বাস আসতে অনেকক্ষন, তারউপর কম করে ২টা বাস চেইন্জ সাথে সাবওয়েতে যেয়ে তবেই হসপিটাল, যা ওর পক্ষে এ অবস্থায় যাওয়া কঠিন।

বাংলাদেশ হলেতো কথা ছিল না, কোন পথচারী বা যেকোন রিক্সাওয়ালা বা সিএনজি ভাইয়েরা ঢাকা মেডিকেলের বারান্দা পর্যন্ত দিয়ে আসতো কিন্তু এখানে ব্যাক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের বাইরে যাওয়া যায় না... যতক্ষন পর্যন্ত আপনার সাহায্য সে এক্সেপ্ট না করবে ততক্ষন কিছুই করতে পারবেন না।

তোমাকে কিভাবে হ্যাল্প করবো?
নো নিড ডিয়ার, আ উইল টেক কেয়ার মাইসেল্ফ।
মে আই রিচ ইউর প্যারেন্টস্ অর এ্যানি ফ্রেন্ডস্?
আই হ্যাব বয় ফেন্ড বাট হি ইজ বিজি...।
আমি কি এ্যাম্বুলেন্স ডাকতে পারি....?
নো, আই ডোন্ট নিড সো।
আমি কি ট্যাক্সি ডাকতে পারি....? কারন পরের বাস আসতে এখনো ২০ মিনিট লাগবে ততক্ষন তোমার কষ্ট হবে।
আ ডোন্ট হ্যাব মানি টু পে।
মানে কি ১৫/২০ টাকা নেই!! .... এরা সারা সপ্তাহ যা আয় করে শুক্রবার আর শনিবার রাতে সারারাতে তা শেষ করে, সপ্তাহে পেমেন্টের এক জ্বালা......

বুঝতে পারছিলাম না কি করবো, ট্যাক্সি ডেকে ভাড়া দিয়ে উঠিয়ে দিব নাকি নিজে নিয়ে যাবো, ৯১১ কল দিব, এ্যাম্বুলেন্স ডাকবো, নাকি কাউকে ডাকবো সাহায্যের জন্য....... নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল।

এমন সময় এক ব্যাক্তি এলো বাসস্টান্ডে, এ অবস্থা দেখে আমাকে জিগ্ঞেস করলো কি হয়েছে, আমি ওর পরিচিত কিনা কারন মেয়েটি ততক্ষন কথা ও বলতে পারছিল না..... ভদ্রলোক মেয়েটির পাশে এসে ওর হাত ধরলো, বললো, তোমার যে অবস্থা তুমি হসপিটাল যেতে পারবে না তাই তুমি অনুমতি দাও আমি ৯১১ এ কল দেই। মেয়েটি তার কথায় শেষ পর্যন্ত রাজি হলো .....

জাস্ট ২ মিনিট... ভদ্রলোক ৯১১ এ কল দিল, এড্রেস বললো, কল এর কারন বললো.. এখানে সব ফোনের সাথে ৯১১ ট্রেক করা থাকে. সাথে সাথে হাজির হলো মেডিকেল এ্যাটেনডেন্ট ও একজন নার্স সহ এ্যাম্বুলেন্স.... কি পরম যত্নে স্ট্রেচারে করে মেয়েটিকে নিয়ে গেল। মেয়েটির বমি ও পরিস্কার করে দিয়ে গেল........ যাবার সময় আমাদের সাহায্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ দিয়ে মেডিকেল এ্যাটেনডেন্ট চলে গেল যেন নিজের কাছের কাউকে নিয়ে যাচ্ছে........ একটা দীর্ঘ নি:স্বাস বুক থেকে বেরিয়ে এলো, কবে আমাদের দেশে এমন ব্যবস্থা হবে। রিক্সাওয়ালা বা সিএনজি ভাইয়েরা না, সরকারী এ্যাম্বুলেন্স এসে নিয়ে যাবে পথে পড়ে থাকা লোকটিকে.... রাস্তায়/জলে মরে পড়ে আছে আর দুই থানার ওসি যুদ্ধ করছে ওদের সীমানায় পড়েনি বলে, ততক্ষনে লাশ পচেঁ গেছে........... হায়রে দেশে কেউ কি নেই একটু তাকানোর। শুধু তাকিয়ে আছি ভবিষ্যতের দিকে... যদি কেউ আসে.............

আগের পর্ব-
আমার নিকটতম প্রতিবেশীরা............
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ৯:৩৯
৩৫টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×