somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, মুক্তি পাইনি: ওয়াসফিয়া নাজরীন

৩০ শে মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, মুক্তি পাইনি: ওয়াসফিয়া নাজরীন

এভারেস্টের সর্বোচ্চ শিখরে পা ফেলেছেন আরো এক বাংলাদেশি নারী৷ নিশাত মজুমদারের পর মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে চূড়ায় ওঠেন ওয়াসফিয়া নাজরীন৷ এভারেস্ট বেসক্যাম্প থেকে ডয়চে ভেলেকে শিখর জয়ের গল্প বললেন ওয়াসফিয়া৷
ফেসবুকে অত্যন্ত সক্রিয় ওয়াসফিয়া নাজরীন৷ বাংলাদেশের অন্য তিন পর্বতারোহীর খবর পেতে যেমনটা হিমশিম খেতে হয়েছিল, ওয়াসফিয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি সেরকম নয়৷ ক্যাম্প-৩'এ তুষারধসের কারণে ভেঙ্গে গেছে ওয়াসফিয়ার তাঁবু৷ ১৮ মে তারিখে এই খবর ফেসবুকে ওয়াসফিয়া নিজেই দিয়েছিলেন৷ এরপর ২০ মে ‘সামিট পুশ'-এর ঘোষণা দিয়ে চূড়ার দিকে রওয়ানা হলেন তিনি৷ আমরাও সেটা ছবিসহ জানলাম ফেসবুকের কল্যাণে৷
উৎকণ্ঠা বেড়ে গেল এরপরই৷ সময় পার হচ্ছে, কিন্তু ওয়াসফিয়ার কোনো খবর নেই৷ মাঝে একদিন জানা গেল, প্রকৃতির বিরুপ আচরণের কারণে এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে দেরি হচ্ছে ওয়াসফিয়ার৷ অবশেষে ২৬ মে, স্থানীয় সময় সকাল ৬.২৫ মিনিটে সফল হলেন ওয়াসফিয়া৷ পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখরে দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারী হিসেবে পা ফেললেন তিনি৷
ইতিমধ্যে ওয়াসফিয়া ফিরে এসেছেন এভারেস্ট থেকে৷ ২৯ মে ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে বেসক্যাম্প থেকে কাঠমান্ডুর পথে রওয়ানা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি৷ এভারেস্ট জয়ের পর অনুভূতি জানতে চাইলে ওয়াসফিয়া বলেন, ‘‘আমি অনেক কৃতজ্ঞ বোধ করছি৷ আপনি হয়ত শুনেছেন ২০১২'র মৌসুমটি অনেক ভয়ানক ছিল কারণ, এভারেস্ট অনেক জীবন্ত ছিল৷ অনেক ধরনের দুর্ঘটনা যেমন তুষারধস, পাথর ভেঙ্গে পড়ার ঘটনা ঘটছে৷ এবছর যে পরিমাণ মানুষ নিহত এবং আহত হয়েছে, এরকম নাকি এভারেস্টের ইতিহাসে খুব কম হয়েছে৷ সুতরাং আমি যে সুস্থ আছি, সবল আছি এবং আমার হাত-পা যে ঠিকমত চলছে, সেজন্যই আমি কৃতজ্ঞ৷''

বাংলাদেশ অন সেভেন সামিটস’এর ফেসবুক পাতা
তিনি বলেন, ‘‘আমি যেদিন সামিট পুশ করছিলাম, সেদিন আমার পাঁচটি মরদেহ পার হয়ে সামিট পিকে উঠতে হয়৷ এই পাঁচজন সামিট করার পরে মারা গেছেন৷ এটা খুবই দূর্ভাগ্যজনক ছিল৷ সেদিক থেকে চিন্তা করলে বেঁচে ফেরায় কৃতজ্ঞতা বোধ করছি৷''
‘সামিট পুশ' শুরু করার পর অনেক জটিলতায় পড়েছিলেন ওয়াসফিয়া৷ একদিকে প্রকৃতির বিরুপ আচরণ, অন্যদিকে পরিচিতদের পড়ে থাকা মৃতদেহ৷ এসব কাটিয়ে এভারেস্টের সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহণ অনেক কঠিন হয়ে উঠেছিল৷ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সাউথ কোল এবং সাউথ সামিটের মাঝখানের ব্যালকনিতে পাথর ভেঙ্গে পড়ছিল, আমার ডানদিকের কাঁধে তিনবার আঘাত লাগে৷ তবে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি৷ এছাড়া আমরা ‘ট্র্যাফিক জ্যাম'-এ পড়ি৷''
তিনি বলেন, ‘‘এবার সামিট পুশ করার জন্য দিন অনেক কম ছিল৷ আমার কিন্তু প্রথম চেষ্টা ছিল ১৮ তারিখ৷ তারপর সেটা শিফট হয় ২৫ তারিখ এবং ২৬ তারিখ সবশেষে সর্বোচ্চ শিখর জয় করলাম৷''
ত্রিশ বছর বয়সি ওয়াসফিয়া বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়৷ উইকিপিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ‘‘ছাত্রজীবনে তিনি (ওয়াসফিয়া) যুদ্ধবিরোধী এবং মানবতার পক্ষে বিভিন্ন বৈশ্বিক ইস্যুতে সক্রিয় আন্দোলনকর্মী ছিলেন৷ তিনি উন্নয়নকর্মী হিসেবেও কাজ করেছেন৷ এখন তিনি বাংলাদেশ অন সেভেন সামিটস কর্মসূচিতেই সময় দিচ্ছেন৷'' ওয়াসফিয়া মনে করেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং সেটা করতে পারে বর্তমান তরুণ প্রজন্মই৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখন যে যেখানেই আছি, যে যেখানে কাজ করি বা যার সঙ্গে জড়িত, তাই নিয়েই এগিয়ে যাওয়া উচিত৷ আমাদের মধ্যে এত প্রতিযোগিতা থাকা উচিত নয়৷ কারণ বাংলাদেশকে আমাদেরই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে৷''


ওয়াসফিয়া মনে করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পার হলেও সেদেশের নারীদের এখনো মুক্তি মেলেনি৷ এখনো স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে না নারীরা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও তাদের স্বাধীনতা নেই৷ এই অবস্থার পরিবর্তন জরুরী৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের নারীদের কিন্তু স্বাধীনতা নেই৷ ঢাকা শহরে হাঁটতে গেলে দশজন পুরুষ মানুষের ‘গুতা' খেয়ে হাঁটতে হয়৷ আমাদের এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে৷ কিন্তু এই পরিবর্তনটা আমরা শুধু নারীরা করতে পারবো না. এজন্য পুরুষদের এগিয়ে আসতে হবে৷ বাংলাদেশ অন সেভেন সামিটস ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আমরা এই বিষয়টি সবাইকে জানাতে চাই যে, নারীদেরকেও মুক্তি দিতে হবে৷ আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, মুক্তি পাইনি৷''
উল্লেখ্য, পৃথিবীর সাত মহাদেশের সাতটি চূড়া জয় করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছেন ওয়াসফিয়া নাজরীন৷ ২০১১ সালে তিনি আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বত কিলিমানজারো এবং দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ পর্বত অ্যাকোনকাগুয়া জয় করেছেন৷ এভারেস্ট জয় করলেন ২৬ মে৷ আগামী সপ্তাহেই ওয়াসফিয়া তাঁর পরবর্তী লক্ষ্য সম্পর্কে জানাবেন৷

ছবিটা ফেইসবুক থেকে নেয়া।

সূত্রঃ ডয়েসে ভেলে
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×