somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবা আলাউদ্দীন

০৩ রা নভেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি এর আগে দু’জন বাঙালি সঙ্গীত পরিচালককে নিয়ে যৎসামান্য লিখেছি। একজন সলিল চৌধুরী ও অন্যজন অনন্দশঙ্কর। আজ এমন একজনকে স্মরণ করছি যিনি এক কথায় বাংলাদেশের র্গব। প্রখ্যাত সরোদবাদক আলাউদ্দীন খান। আমরা ভালোবেসে বলব বাবা আলাউদ্দীন। তাঁর শিষ্যদের নাম শুনলে গা ছমছম করে। রবিশঙ্কর, নিখিল বন্দোপাধ্যায়, বসন্তরাজ, পান্নালাল ঘোষ।
বাবা আলাউদ্দীনের জন্ম ১৮৬২ সালে। বর্তমান বাংলাদেশের ব্রাহ্মনবাড়িয়ার শিবপুর গ্রামে। বাবার নাম সবদর হোসনে খান। বড় ভাই ফকরি আফতাবউদ্দীন বেহালা বাজাতেন। ছেলেবেলায় বড় ভাইয়ের কাছেই গানের হাতেখড়ি।
গানের এমনই নেশা যে দশ বছর বয়েসে বাড়ি থেকে পালিয়ে যোগ দিলেন যাত্রাদলে। বাংলার লোকসঙ্গীতের অপার ঐশ্বর্যর সঙ্গে পরিচিত হলেন।
তারপর এক সময় কোলকাতা পৌঁছলেন কিশোল আলাউদ্দীন।
গায়ক হিসেবে তখন গোপালকৃষ্ণ ভটচাযের ভারি নামডাক। ইনি নুলু গোপাল নামেও পরিচিত। কিশোল আলাউদ্দীন তাঁকেই গুরু হিসেবে পেল। ১২ তালিম নেওয়ার শপথ করল। বিধি বাম। সাত বছর পর প্লেগ রোগে মারা গেলেন নুলু গোপাল।
সেই সময়টায় কোলকাতায় স্বামী বিবেকানন্দর ভারি নামডাক।তাঁরই এক ঘনিষ্ট সহচর ছিলেন অমৃতলাল দত্ত। কোলকাতা স্টার থিয়েটারের সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন অমৃতলাল দত্ত। আলাউদ্দীন তাঁর শিষ্যত্ব বরণ করে যন্ত্রসংগীতে তালিম নিতে লাগলেন। সেই সময়টায় কন্ঠের চেয়ে যন্ত্রই বেশি টানছিল।
তখন কোলকাতা ইংরেজ রাজত্বের রাজধানী। ভারতবর্ষের নানাস্থান থেকে লোকে কোলকাতায় আসত। সেরকম মিস্টার লোবো এসেছিলেন গোয়া থেকে। ভায়োলিন বাজালেন। ইউরোপের ক্ল্যাসিকাল মিউজিক সম্বন্ধে মিস্টার লোবোর কাছ থেকেই জানলেন। ভায়োলিন শিখতে শুরু করলেন।
শেখার জন্য কত কিছুই না করেছিলেন বাবা আলাউদ্দীন। আর আমরা ...
মুক্তাগাছার জমিদার ছিলেন জগৎ কিশোর আচার্য। তাঁর কোলকাতায় বিশাল বাড়ি ছিল। নিয়মিত গানের আসর বসত সে বাড়িতে। একদিন আলাউদ্দীন কার সঙ্গে যেন গেলেন সে বাড়িতে। সে রাতে সরোদ বাজাচ্ছিলেন আহমেদ আলী খান।
আলাউদ্দীন মুগ্ধ। আসর শেষে পায়ে পড়লেন আহমেদ আলী খানের। ভালো মানুষ ছিলেন আহমেদ আলী খান। পূর্ববঙ্গে তৃষ্ণার্ত তরুনকে পায়ে ঠেললেন না।
পাঁচ বছর সরোদের কঠোর সাধনা করলেন আহমদ আলীর কাছে।
তারপর শুরু হল অন্য এক জীবন।
রামপুর শহরটি উত্তর প্রদেশে। ওয়াজির খান বিনকার ছিলেন রামপুরের নবাবেরর দরবারের সঙ্গীতশিল্পী। স্বয়ং তানসেনের বংশধর ছিলেন ওয়াজির খান বিনকার।
তানসেন সেনিয়া ঘরানা সৃষ্টি করেছিলেন। gharānā is a system of social organization linking musicians or dancers by lineage and/or apprenticeship, and by adherence to a particular musical style. A gharana also indicates a comprehensive musicological ideology. This ideology sometimes changes substantially from one gharana to another. It directly affects the thinking, teaching, performance and appreciation of music.
আলাউদ্দীন সেনিয়া ঘরানার অর্ন্তভূক্ত হলেন। সেনিয়া ঘরানা ছিল উত্তরভারতের সঙ্গীতের অন্যতম কেন্দ্র।
১৯১৮। ওয়াজির খান বিনকারের কাছে তালিম শেষ।
জীবিকার সন্ধানে বেরুলেন আলাউদ্দীন।
মধ্যপ্রদেশের মাইহার। মহারাজা ছিলেন ব্রিজনাথ সিং। তাঁরই দরবারে কাজ জুটল।
যদিও মাইহার ঘরানার সৃষ্টি উনিশ শতকে-মাইহার ঘরানার নবরুপ দান করলেন বাবা আলাউদ্দীন। তাঁকেই মাইহার ঘরানার জনক বলা হয়। This was a period of rapid change for Hindustani instrumental music, thanks not least to Khan, who infused the beenbaj and dhrupad ang, previously known from the been, surbahar (bass sitar) and sur-sringar (bass sarod), into the playing of many classical instruments.
গানের আসরে সরোদ বাজালেও আরও অনেক বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারতেন বাবা আলাউদ্দীন। ১৯৩৫/৩৬ সালে প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী উদয়শঙ্করের নৃত্যদলের সঙ্গে ইউরোপ গেলেন। শোনা যায় সেই সময় যুগোশ্লাভিয়ায় বাবার সরোদ শুনে একটি মেয়ে কেঁদে ফেলেছিল।
১৯৫২। সঙ্গীত নাটক একাডেমীর পুরস্কার পেলেন।
১৯৫৫। মাইহারে গড়ে তুললেন মাইহার কলেজ অভ মিউজিক।
১৯৫৮। এবার পেলেন পদ্মভূষন পুরস্কার।

তাঁর রহস্যময় এক দিক

ধর্মপ্রাণ মুসলিম ছিলেন বাবা আলাউদ্দীন।
যদিও জীবনভর দেবী স্বরসতীর ভজনা করেছেন। মাইহার পাহাড়ি অঞ্চল। সেরকম একটি পাহাড়ে ছিল সারদা দেবীর মন্দির। সারদা দেবী ছিলেন আসলে দেবী স্বরসতীরই এক রুপ। বাবা নিয়মিত সারদা দেবীর মন্দিরে নিয়মিত যেতেন। ওই মন্দিরের জন্যই তিনি কখনও মাইহারের বাইরে গিয়ে বাস করেননি। এমন কী হাসপাতালেও না। মরলে তিনি দেবীর কাছেই মরবেন। দূরে কোথাও না।
বিয়ে করেছিলেন মদনমঞ্জরী দেবীকে। ১৮৮৮ সালে। পুত্র সন্তান একটিই। প্রখ্যাত সরোদবাদক আলী আকবর খান। তিনি মেয়ে। শাহাজিয়া, জাহানারা ও অন্নপূর্ণা। জাহানারার বিয়ের পর ওর শ্বাশুড়ি নাকি তানপুরা পুড়িয়ে ফেলেছিল। শিল্পের চেয়ে জীবন বড়। কাজেই, মেয়েদের আর তালিম দেননি। অবশ্য অন্নপূর্ণার সঙ্গীতপ্রতিভা ছিল। পরে রবিশঙ্করের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল অন্নপূর্ণা। সে বিয়ে অবশ্য টেকেনি।
অর্জুন ভগবতী ভীম ভুবনেশ্বরী ...প্রভৃতি রাগ সৃস্টি করেছিলেন বাবা আলাউদ্দীন।
১৯৭১ সালে পেলেন পদ্মবিভূষন খেতাব।
ভারি রাগী ছিলেন বাবা। একবার নাকি মাইহারের রাজাকে তবলা টিউন করার হাতুরি ছুঁড়ে মেরেছিলেন। কেন? রাজা নাকি পঙ্গু ভিখিরিদের তেমন সাহায্য করছেন না।
আসলেই ভারি রাগী ছিলেন বাবা।Nikhil Banerjee said that the tough image was "deliberately projected in order not to allow any liberty to the disciple. He always had the tension that soft treatment on his part would only spoil them".
ভীষন জ্ঞানতৃষ্ণা ছিল বাবার। সময় পেলেই বই পড়তেন।
১৯৭২ সালে এই অসাধারণ সঙ্গীতপ্রাণ মানুষটি আমাদের ছেড়ে অন্যলোকে পাড়ি জমান।
বাবার ঘরের জানালাটি দিয়ে দেখা যেত সারদা দেবী মন্দির।
যে মন্দিরের জন্য বাবা কখনও মাইহার ছেড়ে যাননি।
বাবার মাজার ওই মাইহারেই।
কখনও সময় পেলে যাব।



সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:৩৫
১০টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×