somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরমান আনোয়ারের একটি কবিতা

০১ লা এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৩:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

না। আরমান আনোয়ারকে আপনারা চিনবেন না। তবে সে একসময়ে কবিতা লিখত। অবশ্য শখের বশে লিখত। যা লিখত, বুঝতাম, অসম্ভব গভীর। এ জন্য ওকে, সমবয়েসি হলেও ভারি শ্রদ্ধার চোখে দেখতাম আমি। সখের বশে লিখলেও আরমান ছিল আমার চোখে আপাদমস্তক এক কবি।
রুখু চুল, শ্যামলা, চশমা পরা, শান্তশিষ্ট, মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আর কথা কম বলত আরমান। ওর অবয়ব ঘিরে ছিল কেমন এক শান্ত নির্জনতা। ওকে দেখে আমার শাল গাছে ঘেরা ময়নামতীর নির্জন বৌদ্ধবিহারের কথা মনে পড়ত। কী এক গভীর দুঃখ ছিল আরমানের মনের ভিতরে। যে দুঃখ লুকিয়ে রাখার কৌশল সে জানত ঠিকই।
আরমান এখন কোথায় আছে আমি জানি না। ১৯৯৫ সালের পর থেকে ওর সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি। আমরা একসঙ্গে পড়তাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আরমান অবশ্য পড়ত পাবলিক এড-এ। আমি ইতিহাসে।
সে সময় হূমায়ূন রেজা, আমাদের এক কবিবন্ধু, সেও পাবলিক এড-এ পড়ত -‘অর্জুন’ নামে একটা সাহিত্য পত্রিকা বার করত। আরমান সেই লিটিল ম্যাগ এ কবিতা লিখত। ওর কবিতা আমার খুব ভালো লাগত। বুঝতাম-আমি প্রকৃত কবিতার কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। প্রকৃত একজন কবির কাছেও। সেই কবির নাম: আরমান আনোয়ার। আপাদমস্তক দুঃখী এক কবি।
আরমানের কবিতা টলিরও ভালো লাগত। টলি ছিল আমার ক্লাসমেট। মেয়েটি ছিল ভীষনই সাহিত্যের পোকা। গল্পও লিখত। টলির লেখা একটা গল্পের শিরোনাম আজও মনে আছে আমার:‘রিক্তা তুমি রিক্ত নও।’ টলির সঙ্গে ভারি বন্ধুত্ব হয়েছিল আমার। ওর জন্মদিনে বুদ্ধদেব গুহর ‘মাধুকরি’ গিফট করেছিলাম। মাধুকরি পড়ে ভারি মুগ্ধ হয়েছিল টলি।
একদিন টলি আমাকে বলল, কবির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দে না ইমন।
লাইব্রেরির সামনে টলির সঙ্গে আরমানের পরিচয় করিয়ে দিলাম। আরমানের কী লজ্জ্বা। লজ্জ্বায় একেবারে জড়োসরো। অবশ্য আরমানের দুটি চোখে ক্ষণিকের দূত্যি দেখেছিলাম আমি। এমনিতেই বেদনায় জর্জর হয়ে থাকে আরমান-এখন টলির মতন কাব্যপ্রেমিক উচ্ছ্বল এক তরুণীর দৃষ্টি আকর্ষন করতে পেরে প্রশান্তি বোধ করছিল বোধহয়।
আরমানের সঙ্গে টলি এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াতে চেয়েছিল। আমার তাতে সায় ছিল। কেননা, তখনই আমি টের পেয়ে গেছি যে আমি ভবিষ্যতের মানুষ! আমি কেবলি ভাবতাম-একজন কবির হাত ধরে একটি উচ্ছ্বল তরুণী যদি সোরহ্ওয়ার্দী পার্কে নাই যায়-তা হলে পার্কের গাছগুলি ঘাসগুলির কী মানে! কেন তবে নীলাকাশ? ফুটপাতের ঝরা পাতা? বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রান।
টলি আরমানের সঙ্গে দূর একটা নদীর পাড়ে যেতে চেয়েছিল।
না। তা সম্ভব হয়নি।
অনেকে এ ভাবেই বন্দি।
টলির ওপর কতজনের চোখ। কত নজরদারি। সিনিয়র ভাইদের চোখ। তরুণ শিক্ষকদের চোখ। ছাত্র লীগের চোখ। ছাত্রদলের চোখ। টলির প্রেমিকের চোখ। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন্ গেট দিয়ে কবির সঙ্গে পালাবে আরেক কবি? টলি দীর্ঘশ্বাস ফেলত। সামান্য আশা- তাও পূরণ হচ্ছে না। অথচ, নিরব হোটেল সরগরম। বুড়িগঙ্গা পাড়ে মরে যাচ্ছে বিকেলের রোদ। আমি সবই বুঝতাম। তখন ১৯৯৩ সাল। তসলিমা নাসরীন একের পর এক কলাম লিখে যাচ্ছেন। বিচিন্তায়। যায় যায় দিনে।
আরমান খানিকট মুষড়ে পড়েছিল। ও ভেবেছিল টলি ওর দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়াবে। কথা বলে বলে ওর ভিতরকার দুঃক খানিকটা ভুলিয়ে দেবে। না। টলি পারেনি। অসহায় টলি আরমানের বেদনাকে আরও গাঢ় করে তুলেছিল।
আমার কেবলি মনে আছে-১৯৯৩ সালের এই পৃথিবীতে একটি উচ্ছ্বল তরুনী ওর প্রিয় এক কবিকে নিয়ে দূরের কোনও নদী পাড়ে যেতে পারেনি। আমার কেবলি মনে আছে-১৯৯৩ সালে সভ্যতার টায়ার পোড়া গন্ধ পেয়েছিলাম। এবং আমি বিলাপ করিনি। আমি ক্রর হেসেছিলাম। আমি কেবল ভেবেছিলাম-সমাজসভ্যতা সত্য হলে আমি মৃত!
এই ঘটনার পরপরই -আমার মনে আছে- আরমানের একটা কবিতা ছাপা হল কোনও এক ছোট কাগজে। সম্পূর্ন কবিতাখানি আজ আর মনে নেই। যতটুকু মনে আছে সেটুকুই আমার স্মৃতিতে চিরস্মনীয় হয়ে রয়েছে।

ভরা নদী মরে গেছে, ক্যাকটাসে ছেয়ে গেছে বন।
এই সব কেমন জীবন।
বিপরীত আশার মতন ভুল ট্রেন সিটি দিয়ে যায়
আমাদের চেতনায় কাঁচা রোদ ...


আরমান এখন কোথায় আছে আমি জানি না ... ১৯৯৫ সালের পর থেকে ওর সঙ্গে ... আমার আর দেখা হয়নি ...আমরা একসঙ্গে পড়তাম ...ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ...

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:০৮
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×