somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছিন্নমূল মানুষদের পরিত্যক্ত চরে পুনর্বাসন করে তাদের রপ্তানিযোগ্য শিল্পে সম্পৃক্ত করা সম্ভব...

১৯ শে এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে ছিন্নমূল মানুষের দুঃখ-দুর্দশা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এদেশের বড় বড় শহরের ভাসমান মানুষগুলির কঙ্কালসার জীর্ণশীর্ণ শরীর জাতি হিসেবে আমাদের চরম ব্যর্থতাটাকেই যেন চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয়। এই নিদারুণ ব্যর্থতার হাত থেকে রক্ষা পেতে দীর্ঘদিন ধরেই ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসনের কথা ভাবা হচ্ছে- পুনর্বাসন কোথাও কোথাও করা হচ্ছেও। বাংলাদেশের ভাসমান হতদরিদ্র মানুষের পুনর্বাসনের বিষয়টি এ কারণেই গুরুত্বপূর্ন যে-এদেশের কোটি কোটি ছিন্নমূল মানুষের যথাযথ পুর্নবাসন একদিকে যেমন মানবতার পুনঃপ্রতিষ্ঠা -অন্যদিকে সমৃদ্ধির দিকে দেশটির কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়াও বটে।
দেশের বড় বড় শহরের ভাসমান মানুষদের নতুন করে বাঁচার সুযোগ করে দিতে পরিত্যক্ত চরে পুনর্বাসনের ধারণাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া যেতে পারে বলে আমি মনে করি। সে লক্ষ্যেই- এই কিছুকাল আগেও “চরায়ন” বলে একটি শব্দের কথা আমরা শুনেছি। পরিত্যক্ত চর বলতে - এমন কোনও দূরবর্তী বিরান অঞ্চলকে বোঝায় -যেখানে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে স্থানীয় অধিবাসীদের (যদি থাকে) উৎখাত না-করেই ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন সম্ভব। সে রকম পরিত্যক্ত চরের যাবতীয় তথ্যাদি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কাছে নিশ্চয়ই রয়েছে।
ছিন্নমূল মানুষেরা এক পুরুষ আগেও কোনও না কোনওভাবে গ্রামাঞ্চলের কৃষিকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল-তারপর নদী ভাঙ্গন কি অন্যসব দুর্ভাগ্যজনক কারণে তারা উৎখাত হয়ে গেছে। এখন এদেরই আবার পরিত্যক্ত চরে পুনর্বাসন করে কৃষিজীবনে ফিরিয়ে নিয়ে রপ্তানিযোগ্য শিল্পে সম্পৃক্ত করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি রপ্তানিযোগ্য শিল্প বলতে আমরা কি বুঝব? নিশ্চয়ই চা, চামড়া কিংবা পোশাকশিল্প নয়-এদের জন্য পৃথক বৃহৎ খাত রয়েছে। উপরোন্ত -বর্হিঃবিশ্বে এসব পন্যের বাজার ক্রমেই সংকুচিত হয়ে উঠছে । কাজেই সেই বাজারে ভাগ বসাতে যাওয়া হবে হঠকারী সিদ্ধান্ত। তা ছাড়া এসব খাতে বিনিয়োগও বেশি ।
তা হলে? ক’দিন আগে কোন্ এক টিভি চ্যানেলে দেখলাম: টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ি থেকে জাপানে মিস্টি রপ্তানী শুরু হয়েছে। লক্ষ করে থাকবেন- দেশের বাইরে দেশিও মিস্টির চাহিদা- রিসেসন সত্ত্বেও- দিন দিন বেড়েই চলেছে। কাজেই, পরিত্যক্ত চরে দেশিও ও বৈদেশিক বাজারের জন্য গড়ে উঠতে পারে মিষ্টান্নশিল্প । কুমিল্লার রসমালাই কি নাটোরের কাচাগোল্লা- বাংলাদেশের যে কোনও স্থানের মিস্টান্নই উন্নতমানের এবং দেশবিদেশে প্রশংসিত। মুক্তাগাছা, গৌড়নদী কিংবা বগুড়ার প্রখ্যাত ময়রারা চরের নতুন অধিবাসীদের মিষ্টান্ন তৈরির কলাকৌশল শিখিয়ে দিতে পারে।
এভাবেই গড়ে উঠতে পারে মিস্টির চর।
মিস্টান্ন শিল্প ছাড়াও পরিত্যক্ত চরে গড়ে উঠতে পারে রাজহাঁস ও কুমিরের ফার্ম ।
বৈদেশিক বাজারে কুমিরের চামড়ার ব্যাপক চাহিদার কথা আমরা জানি- বাংলাদেশি জীববিজ্ঞানীদের ব্যাপক তাগাদা সত্ত্বেও সেভাবে আজও এদেশে কুমিরের ফার্ম গড়ে ওঠেনি। এই আক্ষেপ। কাজেই, পরিত্যক্ত চরে কুমিরের ফার্ম গড়ে উঠতে পারে। আর, রাজহাঁসের মাংস আজও সেভাবে বাঙালির খাদ্য তালিকায় উঠে এল না। চিকেন ছাড়া আমরা কিছু চিনি না। অথচ, পিকিং ডাক খেয়ে ঠিকই প্রশংসা করি। সে জন্যই বাঙালির খাদ্য তালিকায় রাজহাঁসের মাংস উঠে এলে পুস্টির সঙ্গে বৈচিত্রও বাড়বে। এবং পরিত্যক্ত চরে ছাগল পালন হতে পারে। শুনেছি ছাগলের দুধে পুস্টি বেশি -তদুপরি এটি অ্যাজমা রোগীদের জন্যও নাকি অতীত উপকারী। সেই তুলনায় ছাগলের দুধ তুলনামূলকভাবে এদেশের বাজারে সহজে পাওয়া যায় না । তা ছাড়া ছাগলের মাংসের দামও বেশ চড়া-দেশের গরীব শিশুদের পাতে সহসা ওঠে না। কাজেই, পরিত্যক্ত চরে ব্যাপক আকারে ছাগল পালনের ফলে দেশিও বাজারে ছাগলের মাংসের দাম কমে আসার কথা।
শুঁটকি মাছ এদেশে দারুণ জনপ্রিয় হলেও ক্যানজাত দেশিও মাছের কথাও আমরা ভাবতে পারি। আর ডাব। ক্যানজাত ডাবের পানির কথাও আমরা ভাবতে পারি। সে রকম করা গেলে -বিদেশি অনেক কোমল পানীয় প্রস্তুতকারক কোম্পানি এদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেবে। সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে সফল হয়েছেন শুনেছি । ক্যানজাত ডাবের পাশাপাশি আমরা ভাবতে পারি ক্যানজাত চিরতার কথা। সুস্বাস্থের কথা বলে চিনেরা জেনসেং গাছের শিকড় বিশ্ববাজারে অনেক বেচেছে-এবার আপনি আপনাদের বিদেশি বন্ধুদের চিরতার যাদুকরি গুণের কথা বলতে শুরু করুন। চিরতার গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। বহুমূত্রসহ অনেক রোগ নিয়ন্ত্রনে রাখে চিরতা। কালিজিরার গুণও কম না-বিশেষ করে দূর্বল হার্টের জন্য এতে রয়েছে উপকারি ওমেগা থ্রি । পরিত্যক্ত চরে কালিজিরার আবাদও হতে পারে। কালিজিরার দাম কিছু হলেও চড়া-নিু আয়ের মানুষের কাছে এটি পৌঁছে দিতে হলে এই স্বর্গীয় তৈলবীজটির ব্যাপক চাষের বিকল্প নেই। কালিজিরার পাশাপাশি হতে পারে মেথির চাষও। এই উপকারি বীজটি -এক ধরনের পেটের ভয়ানক পীড়া- ইরিটেবল বাওয়ালস্ সিনড্রোম বা আই বি এস নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী।
এভাবে পরিত্যক্ত চরগুলি হাজারও মানুষের কর্মকোলাহলে মূখরিত হয়ে উঠলে একদা পরিত্যক্ত চরটি পরিনত হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র।
কিংবা, নির্জন বৃদ্ধাশ্রমে ...
অনেকেই হয়তো বলবেন- পরিত্যক্ত চরে ছিন্নমূল মানুষদের পুনর্বাসন করে রপ্তানিযোগ্য শিল্পে সম্পৃক্ত করাটা একটি মিলিয়ন ডলারের উচ্চাভিলাষী প্রোজেক্ট।তা হলে বলব-মানুষ কি তার চেয়েও বড় নয়? আর, মিলিয়ন ডলার আমার-আপনার না-থাকতে পারে; অনেক বাঙালিরই আজ আছে। যমুনা ফিউচার পার্ক ও সোনার গাঁওয়ের তাজমহলের মতো অনুৎপাদনশীল খাতে কোটি কোটি টাকা অনর্থক ব্যয় না করে সেই অর্থ দিয়ে কয়েক লক্ষ ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন সম্ভব ছিল! এই সত্যটি উপলব্দি করার জন্য কি অর্থনীতিবিদ্ হওয়ার প্রয়োজন আছে?
বিত্তশালী মানুষের বিবেকবুদ্ধি বিকল হয়ে পড়লে আপনি কি করবেন!


লক্ষ করুন-

বাংলাদেশের কোথাও না কোথাও পরিত্যক্ত চর বা জমি আছে। লক্ষ লক্ষ ছিন্নমুল মানুষ শহরে ঘুরছে। তারা, মানবেতর জীবনযাপন করছে, নানা অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে।পরিত্যক্ত চর বা জমিতে এরাই নতুন করে জীবন শুরু করে সম্পৃক্ত হতে পারে রপ্তানিযোগ্য শিল্পে। প্রয়োজন কেবল কমিউনিকেশন ...আর, পুঁজি? শুনেছি, প্রবাসীদের হাজার হাজার কোটি টাকা অলস পড়ে আছে। সে টাকা কি খাটতে পারে না এই রকম মহৎ ও মানবিক উদ্যেগে? আজকাল অনেক প্রবাসীর রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছের কথা শুনছি-সেরকম হঠকারী সিদ্ধান্ত না নিয়ে-তারা ছিন্নমূল মানুষের সাহায্যে এগিয়ে এসে ‘মানুষ, মানুষের জন্য’ কথাটা সার্থক করে তুলতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৫৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×