somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই কোরিয়ার বিভাজনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

২৯ শে নভেম্বর, ২০১০ সকাল ১১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিশ্ববাসীকে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতে ঠেলে দিয়ে কোরিয় উপদ্বীপে আজ বেজে উঠেছে যুদ্ধের দামামা । যে যুদ্ধ ইতিহাসের অন্য যে কোনও যুদ্ধের সঙ্গে তুলনীয় নয়- কেননা, বিবাদমান দু’পক্ষের কাছেই পর্যাপ্ত পারমানবিক অস্ত্র মজুদ রয়েছে। তার ওপর, মড়ার উপর খাড়ার ঘা-র মতো যুদ্ধবাজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোরিয় সঙ্কটে নাক গলিয়েছে। তার একটি পারমানবিক অস্ত্রবাহী এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার এরইমধ্যে পৌঁছে গেছে কোরিয় উপদ্বীপের পশ্চিমে অবস্থিত ইয়েলো (পীত) সাগরে। গত রোববার চার দিনের যৌথ সামুদ্রিক-মহড়া শুরু হয়েছে। এই রকম ভয়াবহ এক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সংক্ষেপে আমরা দুই কোরিয়ার বিভাজনের ইতিহাসটির দিকে একবার চোখ ফেরাব।



কোরিয় উপদ্বীপের মানচিত্র। ১৯১০ থেকে ১৯৪৫ সাল অবধি কোরিয় উপদ্বীপটি ছিল জাপান-নিয়ন্ত্রিত। জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবিভক্ত কোরিয়া লড়াই করছিল।

২য় মহাযুদ্ধের সময় জাপান কোরিয় উপদ্বীপটিতে তার দখলদারিত্ব বজায় রেখেছিল। যুদ্ধের পর পরাজিত জাপানি সৈন্যরা কোরিয় উপদ্বীপ ত্যাগ করে। এক ধ্বংসপ্রাপ্ত বিশৃঙ্খল অবস্থায় ১৯৪৫ সালে প্রশাসন পরিচালনার জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক কোরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং দক্ষিণে মার্কিন যুদ্ধরাষ্ট্র দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৪৮ সালে কোরিয় উপদ্বীপে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয় । কোরিয়ার উত্তরে জাতীয়রতাবাদীরা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের জন্য লড়ছিল। সোভিয়েতরা সৈন্যরা তাদের নির্মূল করে। কিম ইল সুং ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ধ্যানধারণার বিশ্বাসী। তিনি আগে থেকেই জাপানিদের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন। সোভিয়েতরা এঁকে সমর্থন করে। পরবর্তীকালে কিম ইল সুং এর নেতৃত্বে উত্তর কোরিয়া সমাজতান্ত্রিক বিনিমার্ণের দিকে ঝুঁকেছিল।




উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ং (বর্তমান ছবি)


অন্যদিকে ওই একই সময়ে মার্কিন সাহায্যপুষ্ট জাতীয়তাবাদীরা কোরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে বামপন্থি আন্দোলন দমন করে । স্নিনমান রি ছিলেন জাতীয়তাবাদী নেতা, তিনিও জাপানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত জীবন যাপন করছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে সমর্থন দেয় এবং ১৯৪৮ সালে তাদের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে) পৃষ্টপোষকতায় এক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘ নির্বাচনটি পর্যবেক্ষণ করেছিল। যা হোক। নির্বাচনের পর কোরিয়ার দক্ষিণে রিপাবলিক অভ কোরিয়া উদ্ভব হয় এবং তারা এবং জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ পুঁজিবাদের পথ বেছে নেয়।



দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সৌল (বর্তমান ছবি)


অবশ্য সাধারণ কোরিয় জনগন একত্রীকরণের জন্য অপেক্ষা করছিল।
কিন্তু, তা সম্ভব হয়নি তৎকালীন বিশ্ব পরিস্থিতির কারণেই।
পঞ্চাশের দশকে স্নায়ূযুদ্ধের (কোল্ড ওয়ার) তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। ১৯৫০ সালের জুন মাসে সোভিয়েত প্ররোচনায় উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আগ্রাসর শুরু করে । তাদের মূল শক্তি ছিল সোভিয়েত ট্যাঙ্ক বহর ও অন্যান্য সোভিয়েত নির্মিত সমরাস্ত্র। চিনও উত্তর কোরিয়াকে সমর্থন দিয়েছিল। বলা বাহুল্য, আজকে মতো দক্ষিণ কোরিয়াকে মদদ দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ।



কোরিয় যুদ্ধের ছবি।

কোরিয় যুদ্ধ ৩ বছর স্থায়ী হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারমানবিক বোমা প্রয়োগ করবে- এই হুমকিতে যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়। কোরিয় যুদ্ধে লক্ষাধিক মানুষ নিহত হয়েছিল। ধ্বংস হয়েছিল বহু শহর । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে ১ লক্ষ ২৫ হাজার যুদ্ধবন্দি ছিল ।




মানচিত্রে কোরিয় উপদ্বীপের বিভাজন।

১৯৫৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিপি (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) ছিল আফ্রিকার দরিদ্রতম রাষ্ট্র ঘানারও নীচে। ২০০৮ সালে যা হয়ে ওঠে ঘানার চেয়ে ১৭ ভাগ বেশি। বর্তমানে বাজার অর্থনীতির দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্বের জিডিপি-দিক থেকে অবস্থান পঞ্চদশ তম। জি-টোয়েনটির অন্যতম শরীক রাষ্ট্রটি ষাটের দশক থেকেই দ্রুত বর্ধনশীল দেশে পরিনত হয়েছিল। রপ্তানী নির্ভর দেশটি ২০০৯ সালে অষ্টম বৃহৎ রপ্তানীকারক দেশের স্বীকৃতি লাভ করেছে।



খরা আক্রান্ত মানুষের পোস্টারের পাশে হেঁটে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়ার নাগরিক। উত্তর কোরিয়ায় ১৯৯৫ সালে প্রচন্ড খরার মুখোমুখী হয়। উত্তর কোরিয়ার পাবলিক সিকিউরিটি মিনিস্ট্রির তথ্যনুযায়ী প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়।

দেশজুড়ে অনাহার সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া মোট ২ দুবার পারমানবিক অস্ত্র পরীক্ষা করে। ২০০৬ সালের ৯ অক্টোবর প্রথম নিউক্লিয়ার ওয়েপন পরীক্ষা করে, দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করে ২৫ মে ২০০৯ সালে। বর্তমানে দেশটিতে ৬ থেকে ৮টি পারমানবিক অস্ত্র মজুদ আছে বলে ধারণা করা হয়। মিজাইল রেঞ্জ ২,৫০০ কিলোমিটার। উত্তর কোরিয়া নিউক্লিয়ার নন-প্লোরিফেরাশন চুক্তিতে সই করলেও ২০০৩ সালে প্রত্যাহার করে নে।
ভয় এখানেই।



হিরোসীমার কালো মেঘ। সম্প্রতি আবার কোরিয় উপদ্বীপে যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবার কি ইতিহাস তার বিভৎস রূপটি দেখাতে চলেছে?



একটি কোরিয় শিশু। শিশুটি উত্তর কোরিয়ার না দক্ষিণ কোরিয়ার-সেটি বড় কথা না। আমরা শিশুটির মৃত্যু দেখতে চাই না!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৩৪
৩৭টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×