সাইকেলের প্রতি ছেলেবেলায় আমার তীব্র আকর্ষন ছিল। কিন্তু আমার আইনজীবি পিতা জিনিসটা আমায় উপহার দেওয়ার বিষয়টি বরাবরই অতি সুকৌশলে এড়িয়ে গেছেন । একমাত্র ছেলে সাইকেলশুদ্ধ ট্রাকের নীচে ঢুকে পড়লেই সর্বনাশ- এই রকম একটি আতঙ্কিত কল্পদৃশ্য থেকেই সম্ভবত ওই প্রাজ্ঞ আইনজীবির ওই রকম অনঢ় সিদ্ধান্ত । তবে একটা যুৎসই দ্বিচক্রযান জুটিয়ে নিতে আমার তেমন সমস্যা হয়নি। ১৯৮৩ সাল। ঢাকার কাকরাইলের উইলস লিটিল ফ্লাওয়ারে ক্লাস টেন-এ পড়ি। রুক্সার (নূর খান) ছিল আমার অন্তরঙ্গ শ্রেণিবন্ধুদের মধ্যে সবচে কাছের । মালিবাগে থাকত রুক্সাররা এবং প্রায়শ ও আমাকে ওর নীল রঙের ছোট্ট ইন্ডিয়ান সাইকেলটা চালাতে দিত । ওদের মালিবাগের বাড়ি থেকে আমি সাইকেলটা চালিয়ে আমাদের শান্তিনগরের বাড়িতে নিয়ে আসতাম ।
ভোরের ফাঁকা রাস্তায় সাইকেলে বন বন প্যাডেল মেরে যেনবা আমি এক শহুরে বলগা হরিণ। আমিনবাগের গলি থেকে বেরিয়ে বাঁয়ে টার্ন নিয়ে শান্তিনগর মোড়ে পৌঁছে আবার বাঁয়ে টার্ন নিয়ে সাঁই সাঁই করে হাতের বাঁয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইন ফেলে সোজা মতিঝিল কলোনি পেরিয়ে হাতের বাঁয়ে গোত্তা খেতে- খেতে কমলাপুরের কবি জসীমউদ্দীন রোডের এবড়োখেবড়ো গলিটায় ঢুকে পড়তাম। ফাঁকা গলিতে সাঁই সাঁই করে বেপরোয়া সাইকেল চালাতাম। আমি তখনও জানতাম না যে ওই কবি জসীমউদ্দীন রোডেরই একটা টিনসেডের বাড়িতে থাকতেন পপ সম্রাট আজম খান। যে বাড়িতে আমি আরও ৫ বছর পর যাব ... পপ সম্রাট আমায় সস্নেহে এক কাপ চা খাওয়াবেন ...
ওই ১৯৮৩ সালেই রকেট ভাইয়ের কাছে আমার গিটারে হাতেখড়ি হয়েছিল। রকেট ভাই ছিলেন আজম খানের লিড গিটারিস্ট; থাকতেন সিদ্ধেশ্বরী গালর্স স্কুলের পিছনের গলিতে । ওই সিদ্ধেশ্বরী গালর্স স্কুলেই আমার মা পড়াতেন । রকেট ভাইয়ের মা, মানে ফিরোজা আন্টিও ওই একই স্কুলে পড়াতেন । সেই সূত্রেই রকেট ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয়। মুখচেনা অবশ্য অনেক আগে থেকেই ।
রকেট ভাই সন্ধ্যার পর শান্তিনগর মোড়ের মধুমিতা মিষ্টিঘরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন । ওই বিখ্যাত মিষ্টির দোকানে চট্টগ্রাম থেকে এসে সোলস-এর নাসিম আলী আইয়ূব বাচ্চু প্রমূখ উঠতি মিউজিশিয়ানদের আমি রকেট ভাইয়ের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি । আমার ছেলেবেলার বন্ধু ছিল চামেলিবাগের পার্থ গৌতম শাকিল আর মঞ্জু; ওরা ‘আমরা রকেট ভাইকে চিনি’ বা ‘রকেট ভাই আমাদের পাড়ার গিটারিষ্ট ’ বলে নাসিম আলীদের খসিয়ে ম্যালা দইমিষ্টি খেত। তবে তখন আমি ঠিকই বুঝতাম যে রকেটে ভাইয়ের সান্নিধ্যের জন্য নাসিম আলীদের এই যে গভীর কাতরতা আসলে তা আজম খানের প্রতি তাদের গভীর ভক্তিরই প্রতিফলন ... যে ভক্তি আজও আইয়ূব বাচ্চুর চোখেমুখে স্পস্ট বলেই প্রতীয়মান হয় আমার ...
সে যাই হোক । গিটার জিনিসটা যে এই যুগে শেখা অত্যন্ত জরুরি সেটি আমার সংস্কৃতিমনা মা কে বোঝাতে আমার তেমন বেগ পেতে হয়নি। আমার রবীন্দ্রভক্ত মা-ই তাঁর প্রাজ্ঞ আইনজীবি স্বামীর কঠোর অনুশাসন থেকে সর্বক্ষণ তার ছেলেটিকে আড়াল করে রাখতেন। মায়ের কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে একদিন সন্ধ্যায় রকেট ভাইয়ের সঙ্গে রিকশাযোগে সায়েন্স ল্যাবরেটরি উদ্দেশে রওনা হলাম ।
১৯৮৩/৮৪ সালে ৫০০ টাকায় সায়েন্স ল্যাবরেটরির ‘সুর নিকেতনে’ দেশি গিটার পাওয়া যেত। যদিও সে সব দেশি গিটারের নেক এ ‘টাস রড’ থাকত না। যখন গিটার বাজাতাম না তখন ‘টিউনিং’ ঢিলে করে রাখতে হত। নইলে নেক বেঁকে যেত। একটা ইয়ামাহা অ্যাকুয়েস্টিক গিটারের জন্য বুকের মধ্যে কেমন হাহাকার করত। ইন্ডিয়ান গিবসন গিটার বাংলাদেশে সুলভ হল আরও পরে। সম্ভবত ১৯৮৭/৮৮ সাল থেকে।
রিকশায় যেতে যেতে রকেট ভাই আমাকে গিটারের অনেক সিক্রেট জানালেন। আমার তখন কিশোর বয়েস। ক্ষণে ক্ষণে আমি শিহরণ বোধ করছিলাম। এরই এক ফাঁকে রকেট ভাই বললেন, ভাল করে গিটার শিখবা, বুঝছো। গিটারে শান্তিনগরের একটা আলাদা ইজ্জত আছে বাংলাদেশে। শান্তিনগর অনেক ভালো ভালো গিটারিষ্ট পয়দা করছে। জান তো আজম ভাইয়ের গিটারিষ্ট নয়ন মুন্সিও শান্তিনগরের ছেলে?
জানি । বলে আমি মাথা নাড়লাম। নয়ন মুন্সির এক ভাই আমাদের উইলস লিটিল ফ্লাওয়ারে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াতেন (স্যারের নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।) নয়ন মুন্সির আরেক ভাই আলমগীর। তিনি পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিল্পী। একবার বাংলাদেশে এসে ফোক গান গেয়ে পুরো বাংলাদেশ কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন।
আমাদের তৎকালীন প্রজন্মের গিটারের হাতেখাড়ি হত ওই ‘আসি আসি বলে তুমি আর এলে না ’ দিয়ে । আমারও কলেজ জীবনের প্রায় পুরোটাই কেটেছিল বন্ধুদের সঙ্গে আজম খানের ‘আসি আসি বলে তুমি আর এলে না’ গানটা গেয়ে আর বাজিয়ে । আমাদের কৈশরে, অর্থাৎ আশির দশকে ‘এ মাইনর’ কর্ড ভীষণ পপুলার ছিল। তার অন্যতম কারণ ‘আসি আসি বলে তুমি আর এলে না ’ গানটি শুরু হত ‘এ মাইনর’ কর্ড দিয়ে।
নব্বুয়ের দশকের শুরুতে অবশ্য ‘এ মাইনরের’ বদলে ‘ই মাইনর কর্ড’ পপুলার হয়ে উঠতে থাকে এবং বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতে রুচির পরিবর্তনহেতু আজম খানের জনপ্রিয়তায় ভাঁটা পড়তে থাকে ( এই সংগীতরুচির পরিবর্তনের বিষয়টি আজকের প্রথম আলোয় (০৬/০৬/২০১১) ফারুক ওয়াসিফ অত্যন্ত চমৎকার ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন) ... ১৯৮৮ সালেই আমি বিজয় নগরে অবস্থিত সারগাম স্টুডিওর লাউঞ্জে রকেট ভাইকে কোণঠাসা হয়ে বসে থাকতে দেখেছি। স্টুডিওর ভিতরে তখন ফিডব্যাকের রের্কডিং চলছিল। বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিকের এরিনায় তখন ফুয়াদ নাসের বাবু জেমস আর চাইমের টুলু ভাইরা হয়ে উঠছিলেন নতুন আইকন ...তখনই শোনা যাচ্ছিল যে মাইলস নাকি বাংলা অ্যালবাম বের করবে ...আর কিছু কাল পর তরুণ হৃদয় কাঁপাতে আর্বিভূত হবেন অপ্রতিরোধ্য আইয়ূব বাচ্চু ...
যা হোক। এসব অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ ...
নাঃ, আমি রকেট ভাইয়ের সঙ্গে আজম খানের কবি জসীমউদ্দীন রোডের বাড়িতে যাইনি ...
রকেট ভাই ছিলেন আমার গুরু। সকাল বেলায় রকেট ভাইদের সিদ্ধেশ্বরীর আস্তর ওঠা দোতলা বাড়িতে গিয়ে গিটারের লেসন নিয়ে আসতাম। দুপুরে কি রাত্রে কোলে গিটার নিয়ে বসে ‘ডি মেজর’ কর্ড ধরে কলেজের অর্থনীতির পড়া মুখস্ত করতাম। গুরুর সঙ্গে বেশি মেলামেশার সাহস ছিল না আমার ।
আমি আজম খানের বাড়ি গিয়েছিলাম বাবুর সঙ্গে।
আপনাদের অনেকেরই হয়তো মনে থাকতে পারে যে আশির দশকের মাঝামাঝি হঠাৎই ‘চাইম’ নামে একটি ব্যান্ড বাংলাদেশে খুব হইচই ফেলে দিয়েছিল। ওই ব্যান্ডেই ড্রাম বাজাত বাবু। বাবুরা নাখালপাড়ায় থাকত । বাবুর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল আমার স্কুলের সহপাঠী পার্থর মাধ্যমে। পার্থ ছিল ওস্তাদ বারীণ মজুমদারের ছেলে এবং বাপ্পা মজুমদারের বড় ভাই। যা হোক। ১৯৮৭/৮৮ সালে কত যে আড্ডা দিয়েছি বাবুদের নাখালপাড়ার হলুদ রঙের বাড়ির লাল অক্সাইডের সিমেন্টের বৃত্তাকার বারান্দায় বসে। আজম খানের সঙ্গেও ড্রাম বাজাত বাবু। আজ অদ্ভূত শোনালেও এটাই সত্যি যে - নব্বুই দশক অবধি ঢাকার সংগীতমহলে এমন একটা কথা প্রচলিত ছিল: কবি জসীমউদ্দীন রোডের আজম খানের বাড়িতে না - গেলে ব্যান্ড মিউজিশয়ান হওয়া সম্ভব না । যেহেতু গিটার বাজাতাম - আমার চোখেও গোপন স্বপ্ন ছিল । আমারও একবার পপ গুরুর বাড়িতে যাওয়ার সাধ হল। বাবুকে বললামও সেকথা ...
আজম খানের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাতের মুহূর্তের স্মৃতি আজ আর আমার মনে নেই । তবে মানুষটি যে ছিলেন ভীষণই অমায়িক আর সাদাসিদে, সেটুকু আমার ঠিকই মনে আছে। বস্তুত পপগুরু ছিলেন খুবই সহজ সরল মানুষ। কবি জসীমউদ্দীন রোডের টিনসেডের সেই ছোট্ট ঘরের ভিতরে খালি গায়ে লুঙ্গি পরা অবস্থায় ওঁকে দেখেছি বলে আমার আবছা মনে পড়ছে। আমার চোখের উপর দু-মুহূর্ত গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন তিনি। ফরসা মুখটায় সারাক্ষণ লেগে থাকত মিটিমিটি হাসি । আর তার উজ্জ্বল দুটি চোখজুড়ে ছিল রাজ্যের কৌতুক ...কী কারণে মানুষটাকে আমার প্রকৃত সাধক বলেই মনে হয়েছিল। যে সাধকের কাছে যেন কিছুই লুকনো যায় না। যেন সবই তিনি জানতেন।
এই ঘটনার অনেক বছর পরে ... ২০০৩ সালের দিকে আজম খানের বড় ভাই বিশিষ্ট সংগীত পরিচালক আলম খানের ছেলে আদনান খানের সঙ্গে আমর পরিচয় হয়েছিল। সম্পর্কে আজম খানের ভ্রাতুস্পুত্র আদনান নিজেও প্রতিভাবান মিউজিশিয়ান (পার্কাসানিস্ট) ... আদনানের স্বভাবে প্রবল বৈরাগ্য আমি টের পেয়েছিলাম । যে কারণে আদনানও ওর কাকার স্বভাবের ‘বাউলা’ দিকটি ঠিকই উদঘাটন করতে পেরেছিল। সচরাচর আমার সঙ্গে মিউজিশিয়ানের সঙ্গে দেখা হলেই আমি আমার সঙ্গীতজ্ঞান ঝালাই করে নিই। তবে আমি আদনানের সঙ্গে মিউজিক নিয়ে আলোচনা না-করে সাধু আজম খানকে নিয়েই দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছিলাম ...
১৯৮৭/৮৮ সালে আবার ফিরে যাই ...
সন্ধ্যার পর কবি জসীমউদ্দীন রোডে গলির মুখে একটা একটা সাদা রঙের মাইক্রোবাস এসে থামত। আমরা সেই মাইক্রোবাসে উঠতাম। কনসার্ট যেতাম। কখনও পুরনো ঢাকায়, কখনও তীতুমীর কলেজ। মাইক্রোবাসের ভিতরে গিটার ড্রামস কিবোর্ডের পাশাপাশি গাদাগাদি করে আমরা বসতাম। আমরা মানে আজম খান, বাবু, দুলাল ভাই, পার্থ, আমি, সাউন্ড সিস্টেমের লোক এবং আরও অনেকে । প্রত্যেক মিউজিশিয়ান সঙ্গে দু-একজন গেস্ট আনত। তাতে পপ গুরু কে কখনও বিরক্ত হতে দেখিনি। যেন এটাই স্বাভাবিক। এই অপরিচিত মানুষের ভিড় ... অপরিচিত মানুষের ভিড়ে যেন পরম স্বস্তি পেতেন তিনি । গভীর শান্তি পেতেন ...আর এভাবেই আমি যেন সেই বিবাগী মানুষটির প্রকৃত স্বরূপটিকে অল্প অল্প করে ঠিকই চিনতে পারছিলাম। আমি তখনই বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি এমন একজন মহৎ মানুষের সান্নিধ্যে এসেছি যিনি মানুষকে ভালোবাসেন এবং মানুষের মাঝে থাকতে ভালোবাসেন । এবং আমি এও বুঝেছিলাম যে এরকম মহৎ মানুষের সান্নিধ্য আমি আমার জীবনে খুব বেশি একটা পাব না। যা হোক। কনসার্টে আজম খানকে নিয়ে দর্শকশ্রোতার প্রকান্ড উন্মাদনা দেখেছি। তবে সে সব কথা এই লেখায় উল্লেখ করা জরুরি বোধ করছি না ।
...আমার মনে আছে। একবার পুরনো ঢাকায় আজম খানের কনসার্ট শুরুর আগে দুলাল ভাইয়ের গিটারের স্ট্র্যাপ ছিঁড়ে গিয়েছিল । এক্সট্রা স্ট্র্যাপ ছিল না। দুলাল ভাই অত্যন্ত রসিক মানুষ। তিনি গিটার গলায় ঝোলাতে মেয়েদের চুলের ফিতা কিনবেন বলে ঠিক করলেন। আমি পার্থ আর দুলাল ভাই চুলের ফিতা কেনার জন্য পুরনো ঢাকার সরু গলিতে অনেক ক্ষণ ধরে হাঁটলাম। পরে গোলাপী রঙের ‘ফুলবানু’ মার্কা চুলের ফিতা কেনা হল। ফিতা কিনে স্টেজে ফিরে আসার পথে আমরা চা খেলাম। সিগারেট টানলাম। আমার তখন সতেরো-আঠারো বছর বয়েস। বন্ধুদের সঙ্গে হাঁটতে, চা খেতে কিংবা সিগারেট টানতে বড় সুখ পেতাম। কিন্তু কখনোই আমি বিস্মৃত হইনি যে এই গভীর সুখের কেন্দ্রেও রয়েছে এমন একজন গায়ক মুক্তিযোদ্ধা- যিনি উনিশ ’শ একাত্তর সালে ত্রিপুরার মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প গান গেয়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন ...
একদিনের কথা আমার আজও স্পস্ট করে মনে পড়ে।
সকাল এগারোটার মতো বাজে। আমি আর বাবু আজম খানের বাড়িতে এসেছি। বাবু বাইরে কোথাও গিয়েছিল। ঘরে আমি, আজম খান আর আযম খানের মেয়ে ইমা। ইমার বয়েস তখন এই ৫ কি ৬ বছর হবে। কি সুন্দর পরীর মতো ফুটফুটে ছোট্ট সুন্দর মেয়ে ইমা! বিছানার ওপর বসেছিল ইমা । আমিও বিছানার ওপর জড়োসরো হয়ে বসে রয়েছি। ইমার সামনে ইত্তেফাক পত্রিকার খোলা পৃষ্ঠা ছড়িয়ে আছে। পাতাজুড়ে সিনেমার বিজ্ঞাপন। ইমা একটা বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আমাকে জিগ্যেস করল, আপনি কি এই বইটা দেখছেন?
আমি কিছু না-বলে হাসলাম।
আজম খান মেঝের ওপর বসে চা বানাচ্ছিলেন । কন্যার প্রশ্ন শুনে মুখ তুলে তাকালেন। যেন ভীষণ মজা পেয়েছেন। মিটমিট করে হাসছিলেন। আমার দিকে একবার গভীর চোখে তাকালেন। জানালায় রোদ। জানালার বাইরে একটা পেয়ারা গাছ । সেই গাছে কাক পাখির ডাকাডাকি। দেওয়ালের ওপাশে কবি জসীমউদ্দীন রোডের গলি; যে গলি থেকে সাইকেল-রিকসার টুংটাং শব্দ ভেসে আসছিল । ছেলেবেলায় আমিও ওই গলিতে কত বার যে ক্লাসমেট রুক্সারের নীল রঙের ছোট্ট ইন্ডিয়ান সাইকেলটা চালিয়ে গেছি। চকিতে সেই স্মৃতিও একবার মনে পড়ে গেল আমার।
ইমা কি যেন বলল।
সে কথা আজ আর আমার মনে নেই।
তবে আজম খান যে আমার দিকে সস্নেহে এক কাপ চা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সে কথা আমি আজও ভুলিনি, কোনও দিন ভুলব না ...
আজকের প্রথম আলোয় আজম খানকে নিয়ে ফারুক ওয়াসিফের অনবদ্য লেখাটির লিঙ্ক
Click This Link