রোমান মিথ: পাইরামাস ও থিসবি-র করুণ উপাখ্যান
ওভিদ। (৪৩ খ্রিস্টপূর্ব-১৭ খ্রিস্টপূর্ব) বিশিষ্ট রোমান কবি।
ওভিদ গ্রিক ও রোমান উপকথা অবলম্বনে ১৫ খন্ডে লিখেছিলেন Metamorphoses নামে একটি বিখ্যাত আকর গ্রন্থ। ওভিদের সরস রচনার কারণে গ্রিক ও রোমান উপকথায় নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়েছিল । পাইরামাস ও থিসবি-র উপাখ্যানটিও ওভিদের রচনায় রয়েছে।
ব্যাবিলন নগরের মানচিত্র । পাইরামাস ও থিসবি-র ট্যাজিক উপাখ্যানটির সূত্রপাত মেসোপটেমিয়ার বিখ্যাত ব্যাবিলন নগরে।
সুদর্শন তরুণ পাইরামাস ও রূপসী তরুণি থিসবি। তারা ব্যাবিলন নগরের দু-জন তরুণ-তরুণি। পাশাপাশি বাড়ি। ছোটবেলা থেকেই একে অপরকে দেখছে। কৈশরে উপনীত হয়ে তারা একে অন্যকে ভালোবেসে ফেলেছিল। কিন্তু, সমস্যা ওখানেই। পাইরামাস ও থিসবি-র মাবাবা ওদের বিয়েতে মত দেয়নি। শুধু তাই না-দুটি বাড়ির মাঝখানে সীমানাপ্রাচীর তুলে দিল তারা! প্রতিটি ট্যাজিক ঘটনায় এক বা একাধিক খলনায়ক বা ভিলেন থাকে । এ ক্ষেত্রে পাইরামাস ও থিসবির সংকীর্ণমনা অভিভাকই খলনায়ক।
প্রাচীরের দু’পাশে দুটি উষ্ণ আর কাতর হৃদয়। কাতরায় ... কাঁদে ... গুমরায় ...
থিসবি একদিন ফুঁসে উঠে বলল, পাষান-প্রাচীর, পাষান-প্রাচীর তোর কি দয়া হয় না?
পাষান প্রাচীরের দয়া হবে কি ভাবে? সে যে মূক! প্রাচীরের মাঝখানে একটি ছোট ছিদ্র তৈরি কলল পাইরামাস । ওই ছিদ্র দিয়েই লুকিয়ে কথা বলে পৃথক যুগল।
থিসবি। জন উইলিয়াম ওয়াটার হাউজের আঁকা।
পাইরামাস লুকিয়ে থিসবির জন্য একটি আকাশি রঙের ওড়না কিনেছিল।
সে ওড়না প্রাচীরের ওধারে ছুড়ে ফেলল সে । ওড়না পেয়ে ভারি খুশি হল থিসবি।
কিন্তু, এভাবে আর কত দিন! এভাবে কথা বলে কি আর মন ভরে? যদি না তার স্পর্শের সুখ নাই পাওয়া যায়?
একদিন থিসবি কথাটা বলেই ফেলল। বলল, এভাবে আর কত দিন প্রিয় পাইরামাস?
পাইরামাস দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আমিও তো তাইই ভাবছি থিসবি।
চল, আমরা নিনেভ নগরে পালিয়ে যাই। বিয়ে করি। থিসবি ফিসফিস করে বলল।
পাইরামাস বলল, আমিও তাইই ভাবছি।
থিসবি প্রাচীরের ওধারে শ্বাস টানল।
পাইরামাস জিজ্ঞেস করল, তুমি কি রাজা নিনাসের সমাধিসৌধ চেন থিসবি?
হ্যাঁ, চিনি। রাজা নিনাসের সমাধিসৌধ পিছনে দেবী ইশতারের গুহায়। গত বসন্ত উৎসবে মার সঙ্গে গিয়েছিলাম।
পাইরামাস মাথা ঝাঁকাল। সে জানে রাজা নিনাসের সমাধিসৌধ পিছনে ঘন সিডার বন। ওখানেই দেবী ইশতারের গুহা। ব্যাবিলন নগরের কুমারী মেয়েদের একবার যেতে হয় ওই দেবী ইশতারের গুহায়।
পাইরামাস চাপাস্বরে বলল, কাল খুব ভোরে তুমি রাজা নিনাসের সমাধিসৌধ অপেক্ষ করবে । সমাধিসৌধের প্রাঙ্গনে একটা মালবেরি গাছ আছে। তার তলায়। আমি আসব।
ঠিক আছে। থিসবি ফিসফিস করে বলল।
ওর বুক কাঁপছে।
১৯০৬ সালে পাইরামাস ও থিসবির এই ছবিটি এঁকেছেন চিত্রকর স্যার লরেন্স আলমা-টাডেমা।
কুয়াশাময় ভোর। ঘুমন্ত ব্যাবিলন নগরটি নির্জন হয়ে রয়েছে। থিসবিদের বাড়িটা দেবতা শামাশ-এর উপাসনালয়ের পাশের গলিতে। লুকিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে গলিতে হাঁটছিল থিসবি; পরনে আপাদমস্তক কালো পোশাক। পাইরামাস-এর উপহার সেই আকাশি রঙের ওড়নাটি বুকে জড়িয়ে নিয়েছে। গতরাতে এক ফোঁটা ঘুম হয়নি থিসবির। সারারাত ভোরের অপেক্ষায় ছটফট করেছে। পাইরামাস-এর সঙ্গে মিলনের স্বপ্ন উত্তেজিত ছিল। আবার কান্নাও পাচ্ছিল। চিরকালের মতো বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে বলে ... গলিতে পাতলা কুয়াশা ছড়িয়ে আছে। সতর্ক হয়ে হাঁটছিল থিসবি। উলটো দিক একটি রথ আসছিল। থিসবি চটজলদি বাঁ পাশে একটি থামের আড়ালে সরে যায়। ওর বুক কাঁপছে। বুক কাঁপলে চলবে কেন? অনেক দূর যেতে হবে। থিবসি নিজেকে সান্ত¦না দেয়। রাজা নিনাসের সমাধিসৌধটি এনলিল দরওয়াজার কাছে।
ব্যাবিলন নগরে রাজা নিনাসের সমাধিসৌধ। রাজা নিনাসের প্রাচীন নিনেভ নগরের প্রতিষ্ঠাতা মনে করা হয়।
রাজা নিনাসের সমাধিসৌধের প্রাঙ্গনে পৌঁছল থিসবি। প্রাচীন সমাধিসৌধটির প্রাঙ্গন ভাঙাচোরা। বহুকাল হল পরিত্যক্ত। প্রাঙ্গনে একটি মালবেরি গাছ । কিন্তু কই, পাইরামাস কে তো দেখা যাচ্ছে না। ও তো আমাকে এখানে আসতে বলল। কি হল ওর? এখনও ঘুমিয়ে আছে বুঝি?
...অভিমানে অভিমানে ভরে ওঠে থিসবির মন।
হঠাৎই মৃদু জান্তব গর্র্জনে চমকে উঠল থিসবি। ধূসর কুয়াশায় একটা সিংহের আবছা অবয়ব চোখে পড়ল। হিংস্র পশুটা এদিকেই আসছে। তখনই কুয়াশা ফুঁড়ে রোদ উঠল। থিসবি স্পস্ট দেখল সিংহটার মুখে রক্ত লেগে আছে। শিকার ধরে খেয়েছিল বুঝি। থিসবির শরীরে আতঙ্ক স্রোত বয়ে গেল। পায়ে পায়ে পিছিয়ে যেতে থাকে ও। সমাধিসৌধের পিছনে নিবিড় সিডার বন। সে নিবিড় সিডার বনে দেবী ইশতারের গুহা। সে গুহায় আশ্রয় নিতে পিছন ফিরে প্রাণপন ছুটল থিসবি। আগে সিংহটা চলে যাক। তার পরে আসব ...
যাওয়ার সময় সমাধি সৌধের প্রাঙ্গনের ওপর থিসবির ওড়নাটা পড়ে গেল।
সমূহ শিকারটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় সিংহটি ক্রদ্ধ গর্জন করে উঠল ... থিসবির ফেলে যাওয়া ওড়নাটি ছিঁড়ে ফালা ফালা করে ফেলল। ওড়নার ওপর সিংহের মুখ থেকে ঝরে পড়ল রক্ত। ওড়না ছিঁড়ে ছিন্নভিন্ন করার পর গর্জন করতে করতে চলে গেল সিংহ।
পাইরামাস তখনই সমাধি সৌধের প্রাঙ্গনে এল।
সিংহের গর্জন শুনতে পেয়েছিল সে। অজানা আশংকায় তার মন ছেয়ে যায়। থিসবি কি এসে গেছে? থিসবির কিছু হল না তো? থিসবি কোথায় তুমি? মনে মনে বলল পাইরামাস।হঠাৎ চোখ আটকে গেল আকাশি রঙের ওড়নার ওপর । থিসবি তাহলে এসেছে? ছুটে এসে ওড়াটি বুকে তুলে নিল পাইরামাস । কিন্তু...কিন্তু ওড়নাটা এভাবে কে ছিঁড়ল ? একি ! ওড়নায় রক্ত কেন? হায়! ক্ষুধার্ত সিংহ আমার থিসবিকে হত্যা করেছে ... হায়, আমি থিসবিকে এখানে আসতে বলেছিলাম। ওর মৃত্যুর জন্য আমি দায়ি।
আর্তনাদ করতে করতে তরবারি বের করে বুকে বসিয়ে দিল পাইরামাস ।
রক্ত ছিটকে লাগল মালবেরি গাছে ...
ওদিকে দেবী ইশতারের গুহায় দাঁড়িয়ে থিসবি ভাবছিল: সিংহ হয়তো এতক্ষণে চলে গেছে। আর পাইরামাস বুঝি আমায় অপেক্ষা করে আছে। ও পাইরামাসকে এক নজর দেখার জন্য উতলা বোধ করে। পায়ে পায়ে রাজা নিনাসের সমাধিসৌধের দিকে যেতে থাকে থিসবি ।
দূর থেকে দেখল পাইরামাস মালবেরি গাছের নীচে শুয়ে আছে।
একি! পাইরামাস মাটিতে শুয়ে আছে কেন? ওকি আমার ওপর অভিমানী করেছে? শায়িত পাইরামাস-এর কাছে ছুটে আসে থিসবি।
একি! পাইরামাস-এর বুকে বিদ্ধ তরবারি কেন! ... এত রক্ত কেন! আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে আর্তনাদ করে উঠল থিসবি।
সে আর্তনাদে রাজা নিনাসের সমাধিসৌধের প্রাচীন খিলান -কপাট -অলিন্দ কেঁপে কেঁপে ওঠে ... কেঁপে কেঁপে ওঠে ।
মালবেরি গাছের পাতারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ভোরের বাতাসে মালবেরি পাতারা বিষন্ন মর্মর ধ্বনি তোলে ...
হায়, পাইরামাস! তোমার বুকে বিদ্ধ তরবারি কেন! ... এত রক্ত কেন!
খানিকটা ধাতস্থ হওয়ার পর রক্তমাখা আকাশি রঙের ওড়নাটি দেখে যা বোঝার বুঝে নিল থিসবি ।
ক্ষানিক ক্ষণ স্তব্দ বিষন্ন হয়ে রইল মেয়েটি । কি যেন ভাবছে ...
যখন পাইরামাস মৃত
তখন আমার বেঁচে থাকা অর্থহীন ...
পাইরামাস বুক থেকে রক্তাক্ত তরবারি নিয়ে খুলে নিল থিসবি।
তারপর মুহূর্তে নিজের বুকে আমূল বসিয়ে দিল তরবারি ।
রক্ত ছিটকে লাগল পাশ্ববর্তী মালবেরি গাছে ...
সেই থেকে ... মালবেরি ফল লাল ।
দুটি বিশুদ্ধ আত্মার প্রেমিক-প্রেমিকার পবিত্র রক্ত মালবেরি গাছের শিকড় স্পর্শ করেছিল বলে ...
মালবেরির লাল ফল।
ছবি: ইন্টারনেট।
তথ্যসূত্র:
Click This Link
Click This Link
Click This Link
http://thanasis.com/thisbe.htm
সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো
রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন
যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে
ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মসজিদ না কী মার্কেট!
চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷
আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন