somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কপিল: প্রাচীন বাংলার যে দার্শনিকটি লালনের গানে কবি আল মাহমুদের কবিতায় এবং ফরহাদ মজহার-এর প্রবন্ধে আজও বেঁচে আছেন

১৫ ই নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Everything exists in the world, produces some kind of suffering and sorrow. Kapila
সাংখ্য দর্শন বিশ্বের সুপ্রাচীন দর্শনের একটি। এই দর্শনের প্রবক্তা কপিল প্রাচীন বাংলার অধিবাসী ছিলেন। প্রাচীনকালে যশোরের কপোতাক্ষ নদের পাশে কপিলমুনি গ্রামে এই দার্শনিকের জন্ম হয়েছিল-অনেকেই এরকম অনুমান করেন। কপিলের শেষ জীবন কেটেছিল বর্তমান পশ্চিম বাংলায় । এ প্রসঙ্গে একটি ভারতীয় পন্ডিতের মন্তব্য: .... Sagara an island on the bank of Ganga 90 miles form Calcutta spend later life and meditated.
প্রাচীন ভারতে ছটি দার্শনিক মত ছিল। সাংখ্য, যোগ, মীমাংশা, বেদান্ত, ন্যায়, এবং বৈশেষিক। এর মধ্যে কপিল-প্রবর্তিত সাংখ্যই সবচে প্রাচীন দর্শন । যে কপিলের মেধা আজও বিশ্বের দার্শনিক পরিমন্ডলে কে বিস্ময়াভূত করে রেখেছে। কপিলের অগ্রসর মনন সম্বন্ধে জার্মান ভারততত্ত্ববিদ অধ্যাপক Richard Garbe লিখেছেন, `In Kapila’s doctrine, for the first time in the history of the world, the complete independence and freedom of the human mind, its full confidence in its own powers were exhibited. একজন দার্শনিক হিসেবে কপিল যথার্থই বিশ্বাস করতেন মানবজীবনে দর্শনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, জীবন দুঃখময়। দুঃখের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে দর্শন চর্চা জরুরি।
জার্মান অধ্যাপক Richard Garbe তাঁর Die Sāmkhya-Philosophie বইতে কপিলের সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতক বলে নির্ধারণ করেছেন। (কিন্তু উল্লেখ করতে ভুলে গিয়েছেন যে কপিলের জন্ম প্রাচীন বাংলায়!) যাই হোক। দার্শনিক বলেই কপিল নিরেশ্ববাদী এবং বেদ বিরোধী। সে জন্য উত্তর ভারতের আর্য ব্রাহ্মণ্যবাদীরা কপিলের ঘোর বিরোধীতা করেছে এবং কপিলের মূল রচনাবলী নষ্ট করে ফেলেছে। তাহলে আমরা কি ভাবে সাংখ্যদর্শন সম্বন্ধে জানতে পারলাম? প্রাচীন ভারতীয় দার্শনিক মহলের একটি বৈশিষ্ট্য হল এই যে-কোনও মত খন্ডন করার আগে সেই মতের পূর্ণ উল্লেখ করা। কাজেই কপিলের মতবাদ খন্ডন করার আগে আর্যপন্ডিতেরা কপিল-এর সাংখ্যদর্শনের পূর্ণাঙ্গরূপে উল্লেখ করেছিলেন। এ ছাড়া খ্রিষ্টীয় ৩০০ শতকে ইশ্বরকৃষ্ণ নামে একজন পন্ডিত সাংখ্যদর্শনের ওপর ‘সাংখ্যকারিকা’ নামে একটি গ্রন্থরচনা করেছেন। যাতে কপিলের বহু উক্তি রয়েছে। ওই গ্রন্থটি কপিলের সাংখ্যদর্শনের ওপর একটি মূল্যবান তথ্যের উৎস।
কপিলের দর্শনকে বলা হয় সাংখ্য দর্শন। সংস্কৃত ‘সংখ্যা’ শব্দটি থেকে ‘সাংখ্য’ শব্দের উৎপত্তি। কখনও -কখনও সাংখ্য দর্শনকে বলা হয় "সংখ্যার দর্শন।" তার কারণ আছে। সাংখ্য দর্শন বস্তুর প্রকৃত রূপ এবং প্রাকৃতিক ও আধ্যাত্মিক বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে । সাংখ্য দর্শনের বিচার্য হল বিশ্বজগৎ। সাংখ্য দর্শন যৌক্তিক বিশ্লেষনের মাধ্যমে মহাজাগতিক নীতিমালা গননা করে কিংবা বলা যায় এক এক করে বিশ্বজগতের বস্তুর নাম (সংখ্যা) উল্লেখ করে। সাংখ্য দর্শন বিশ্বজগতের পঁচিশটি নীতি বা ক্যাটাগরির কথা উল্লেখ করেছে।
সাংখ্যদর্শনের ভিত্তিতে রয়েছে অস্তি¡ত্বের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল পুরুষ ও প্রকৃতি। পুরুষ ও প্রকৃতি হল চিরন্তন বাস্তবতা। পুরুষ হল চৈতন্যের আধার। পক্ষান্তরে প্রকৃতি হল যাবতীয় বস্তুর উৎস। পুরুষ ও প্রকৃতি ভিত্তিক সাংখ্যদর্শনটি দ্বৈতবাদী । এ প্রসঙ্গে একজন পন্ডিত লিখেছেন:Hence the Samkhya system is based on dualism wherein nature and conscious spirit are separate entities not derived from one another. Samkhya is essentially atheistic because it believes that the existence of god cannot be proved. Generally, the Samkhya system classifies all objects as falling under one of the two categories: Purusha and Prakriti. Metaphysically, Samkhya maintains a revolutionary duality between spirit and matter.
কিন্তু, কি ভাবে বিশ্বজগতের উৎপত্তি হল?
এ প্রসঙ্গে কপিল বলেন: যখন অচেতন জড় প্রকৃতি সচেতন পুরুষের সংস্পর্শে এল তখনই বিস্ময়কর ও বিশাল ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিশ্বজগতের বিবর্তন আরম্ভ হল। কপিল বলেন, পুরুষ ও প্রকৃতি যেন অন্ধ ও পঙ্গুর মতো একে অন্যকে জড়িয়ে ধরল। প্রকৃতি চিরন্তন, অশেষ এবং আরম্ভহীন। মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু প্রকৃতি থেকে নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়। তবে প্রকৃতির নিজস্ব চেতনা নেই। চেতন এবং বুদ্ধিশীল পুরুষের সংস্পর্শে এলেই তবে প্রকৃতির মধ্যে সচেতন গুণাবলী প্রকাশের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কপিলের একটি বিখ্যাত উক্তি হল: ‘প্রকৃতি ত্রিগুণাত্মক, চঞ্চলা। পুরুষ অপ্রধান।’ প্রকৃতির এই তিনটি গুণ হল: স্বতঃ, তমঃ এবং রজঃ। যতক্ষণ এই তিন গুণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে-প্রকৃতি তখন নিজস্বরূপে থাকে। অর্থাৎ তখন বিবর্তন কিংবা সৃষ্টি সম্ভব হয় না। যখনই পুরুষের সংর্স্পশে এই ত্রিবিধ গুণের ভারসাম্য বিনষ্ট হয় তখনই বিবর্তন আরম্ভব হয়। তারপর সূক্ষ্ম এবং বস্তুর প্রকাশিত হতে থাকে। এই প্রসঙ্গে কপিল বলেন,When the Purusha contacts the Prakriti, the pure consciousness of the Purusha is transformed into Buddhitattva or the state of mind. কিন্তু, কপিলের এই কথার মানে কী ভাবে বুঝতে পারব? ধরা যাক - প্রকৃতি হল নৃত্যরতা নর্তকী। সে মঞ্চে নাচছে। দর্শকের সারিতে পুরুষ বসে আছে। প্রকৃতি নাচছে। পুরুষ তাকে দেখছে। পুরুষ যখন নাচটা বুঝতে পারল এবং আর নাচ দেখল না। নর্তকী আর তাকে বিমোহিত করতে পারল না।
সাংখ্য বাংলার দর্শন বলেই কবিতা হয়ে গেছে ...
রামকৃষ্ণ মঠের স্বামী অভেদানন্দ সাংখ্যদর্শন সম্বন্ধে লিখেছেন:The ultimate object of this process of evolution is to make the Purusha realize his true nature and glory, and this Purusha is the real spirit and the true nature of every individual. We should know that all these do not exist in Purusha, but exist in Prakriti, and when that is done, the Purusha begins to manifest its true nature and glory, and that is emancipation where all senses cease and all sense objects are transformed.
আজও বাংলার ভাব-দর্শনে, কবিতায়, সাধুসঙ্গে এবং বাউলগানে কপিলের ‘প্রকৃতিপুরুষ’ তত্ত্বটি আলোচিত হয়। কেন আলোচিত হয়? কপিলের সাংখ্য দর্শন বাংলায় উদ্ভূত দর্শন বলেই আলোচিত হয়। কবি আল মাহমুদ লিখেছেন:

আমার তো কপিলে বিশ্বাস/
প্রেম কবে নিয়েছিল ধর্ম কিংবা সংঘের শরণ?

ফরহাদ মজহার তাঁর ২০০৮ সালে প্রকাশিত ‘ভাবান্দোলন’ বইতে লিখেছেন,‘... এটাও তাহলে পরিস্কার প্রাকৃতিক পুরুষ তার শারিরীকতার কারণে ‘কর্তা’ নয়, কর্তাসত্তা (সাবজেক্ট) নয়। কর্তা হচ্ছেন প্রকৃতি। (মনে থাকার কথা কপিলের একটি বিখ্যাত উক্তি হল: ‘প্রকৃতি ত্রিগুণাত্মক, চঞ্চলা। পুরুষ অপ্রধান।’) ... তিনিই একমাত্র কর্তা। এবং তাঁরই বিশেষ মুহূর্তে বা বিশেষ মহাযোগে ‘পুরুষ’ নামক সেই অধরার আবির্ভাব ঘটে। সেই অধরাকে ধরাই ফকির লালন শাহের ‘করণ’। এই পুরুষই সহজ মানুষ। কিন্তু তাকে শুধু তন্ত্রমূল ‘করণ’ দিয়ে ধরলে চলবে না। ধরতে হবে ‘দিব্যজ্ঞানে’। ( পৃষ্ঠা ২৩৩) অধরা পুরুষকে ধরার অনুভূতি লালন প্রকাশ করেছেন তাঁর এক বিখ্যাত গানে:

সহজ মানুষ/ ভজে দেখ না রে মন/ দিব্যজ্ঞানে/
পাবি রে অমূল্য নিধি বর্তমানে।


(আনুশের কন্ঠে গানটির ডাউনলোড লিঙ্ক। জানি যে এই গানটি তরুণ প্রজন্মের কাছে অনেকই জনপ্রিয়। তবে গানের মানে বোঝা যে মুশকিল, সেটিও জানি! গানটি কপিলবাদী দর্শনে আচ্ছন্ন বলেই গানের মানে সহজে বোঝা যায় না! দর্শন চর্চা না করলে বাংলার লোকগানের মানে সহজে বোঝা সম্ভব না! )

পুরুষ ও প্রকৃতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অন্য একটি গানে লালন বলেছেন:

মায়েরে ভজিলে হয় সে বাপের ঠিকানা।
নিগূঢ় বিচারে সত্য গেল তাই জানা।

পুরুষ পরওয়ারদিগার
অঙ্গে ছিল প্রকৃতি তার
প্রকৃতি প্রকৃতি সংসার
সৃষ্টি সবজনা।

নিগম খবর নাহি জেনে
কে বা সে মায়েরে চেনে।
যাহার ভার দীন দুনিয়ার
দিলেন রাব্বানা।

ডিম্বু মধ্যে কেবা ছিল
বের হয়ে কারে দেখিল
লালন কয় সে ভেদ যে পেল
ঘুচল দিন-কানা।


এভাবে প্রাচীন বাংলার দার্শনিক কপিল আজও বাংলার তত্ত্বদর্শী লোকগানকে আচ্ছন্ন করে রেখেছেন। সে যাই হোক। বেদবিরোধী কপিল ছিলেন নিরেশ্বরবাদী। তিনি বিশ্বাস করতেন বিশ্বজগতের উদ্ভব ব্যাখ্যা করার জন্য একজন সৃষ্টিকর্তাকে কল্পনা করার প্রয়োজন নেই। কেন নেই? কেননা ... As everything is explained by the process of evolution of one substance. কপিল আরও বলেছেন: There are places, where we feel as though we had come to heaven. But all these are included in the different stages of evolution, and so we need not think of any heaven as a place outside the universe.
এ কথা কটি পড়ার সময় লালনের একটি গানের কথা মনে পড়ে। যে গানে লালন শ্লেষের সুরে বলেছেন:

শুনি ম’লে (মরলে) পাব বেহেস্তখানা/
তা শুনে তো মন মানে না।
বাকির লোভে নগদ পাওনা/
কে ছাড়ে এ ভূবনে ...


প্রকৃতি ও পুরুষতত্ত্বের প্রবক্তা ছাড়াও কপিলকে বিবর্তনবাদের জনক মনে করা হয়। তিনিই প্রথম এই বিবর্তনবাদী তত্ত্বের সমর্থনে যৌক্তিক বিশ্লেষন উপস্থাপন করেন। গ্রিক দার্শনিক প্লেটো ও পিথাগোরাসেরও পূর্বে কপিল বেঁচেছিলেন । (আবারও উল্লেখ করি যে ...জার্মান অধ্যাপক Richard Garbe তাঁর Die Sāmkhya-Philosophie বইতে কপিলের সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতক বলে নির্ধারণ করেছেন।) ... কাজেই কোনও কোনও পাশ্চাত্য পন্ডিতের মতে- গ্রিক দর্শন কপিলের (তথা বাংলার) দর্শনের কাছে ঋনি। মানবসমাজে বিবর্তন সম্বন্ধে ধারণাটি যদিও কপিলের পূর্বেই ছিল- তবে কী ভাবে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিশ্বজগতের রহস্যের কিনারা করা যায় সে পথ কপিলই প্রথম দেখিয়েছেন। কপিল অনেকটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতেই বস্তুর বিবর্তন লক্ষ করেছেন এবং একই সঙ্গে বিশ্বজগতের উৎপত্তির কারণ বোঝার চেষ্টা করেছেন এমন একটা সময়ে যখন কপিলের পরিমন্ডলে বৈদিক কুসংস্কার ছাড়া অগ্রসর চিন্তার অস্তিত্বই ছিল না। যে সময় বস্তুর অভ্যন্তরে পরমানুর অস্তিত্বের কথা ভাবা ছিল অকল্পনীয়, কপিল সে সময় পরমাণুর কথা অনুমান করেছিলেন।
যাই হোক। এই পোস্টে কপিল, কপিল-প্রবর্তিত সাংখ্য দর্শন, দর্শনটির পরিচয় এবং কপিলের সঙ্গে বাংলার ভাবদর্শনে সম্পর্কটি অনুধাবন করা গেল। কথা কিন্তু এখানেই শেষ নয়। কপিলের সাংখ্যদর্শনটি বৈরাগ্যপ্রবল এবং দুঃখবাদী। যে কারণে দুঃখবাদী সাংখ্য দর্শনের সঙ্গে বাংলার লোকগানের দুঃখবাদের সম্পর্ক গভীর। এখন দেখা যাক কপিল কেন দুঃখবাদী। কপিল সেই প্রাচীন বাংলায় বেঁচে থেকে অনুভব করেছিলেন যে: Everything exists in the world, produces some kind of suffering and sorrow. কপিলের এই বক্তব্যটি বৌদ্ধধর্মকে প্রবাহিত করেছে। বুদ্ধের দু-জন শিক্ষক অড়ার ও কলাম ছিলেন সাংখ্য দার্শনিক। সাংখ্যদর্শনের প্রভাবেই বুদ্ধ বলেছেন জগৎ দুঃখময়। যা হোক। কপিল বলেছেন: জীবনে বেঁচে থেকে মানুষ ত্রিবিধ দুঃখ ভোগ করে। কি এই ত্রিবিধ দুঃখ? (ক) আধ্যাত্মিক; (খ) আধিভৌতিক; এবং (গ) আধিদৈবিক। নিজের দেহ ও মন থেকে যে দুঃখ আসে, তাই আধ্যাত্মিক দুঃখ। কাম ক্রোধ ও লোভ থেকে উদ্ভূত দুঃখই আধ্যাত্মিক দুঃখ। কেউ যখন অসুখেবিসুখে ভোগে-সেটিও আধ্যাত্মিক দুঃখ। আর, আধিভৌতিক দুঃখ হল বাইর থেকে আসা দুঃখ। মানুষ কিংবা পশু থেকে যে দুঃখ সেসব আধিভৌতিক দুঃখের পর্যায়ভূক্ত। মামলা-মোকদ্দমা বা পশুর আক্রমন (যেমন সর্পাঘাত) কিংবা শক্রর হাতে নিপীড়ন হল আধিভৌতিক দুঃখ । আধিদৈবিক দুঃখও বাইরে থেকে এলেও মূলে দৈব ঘটনা। যেমন বন্যা খরা মহামারী ভূমিকম্প। কপিল এ কারণে বলেছেন: জীবনে বেঁচে থেকে মানুষ ত্রিবিধ দুঃখ ভোগ করে। পুরুষ যখন প্রকৃতিকে স্পর্শ করে তখন এই দুঃখের উদ্ভব হয়।

যেমন আমরা কখনও-কখনও ভাবি যে ... ঈশ্বর পৃথিবী সৃষ্টি না-করলে মানুষ দুঃখভোগ করত না। পৃথিবী নামক এই ‘শঙ্খনীল কারাগারে’ আমরা বন্দি। কিংবা বেঁচে আছি ‘নন্দিত নরকে’! সভ্যতার যে কোনও যুগের কবি কিংবা লেখককে কপিলের মর্মান্তিক ভাবনাটি ছুঁয়ে যেতেই হয় ...


সে যাই হোক। দুঃখ থেকে আসে বৈরাগ্য। বাঙালির রক্তে বৈরাগ্যপ্রবল। বাঙালি জাত বৈরাগী। (সাধের লাউ বানাইল মোরে বৈরাগী-নইলে এই গানটি দু-বাংলায় এত জনপ্রিয় কেন?) উদাস বাঙালি দুঃখবাদী বাঙালির গানে দুঃখের প্রসঙ্গটি বারবার এসেছে। সেই গানেও রয়েছে কপিলের দুঃখবাদ। আমরা যখন বাংলার মাঝির কন্ঠে ভাটিয়ালি গান শুনি

দুঃখ-সুখের দুইটি ধারায় বইছে নদীর জল/
সুখে বাইব তোমার ডিঙা করিয়া কোন ছল?
তাই তো বলি ওরে ও মন এ যে কঠিন ঠাঁই/
কোনখানে পাঠাইয়া দিলেন মওলা মালিক শাঁই রে ....

তখন যেন টের পাই এ গানের আড়ালে রয়েছেন প্রাচীন বাংলার সেই মেধাবী দার্শনিকটি ...

তথ্যনির্দেশ:

নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য: ধর্ম ও সংস্কৃতি: প্রাচীন ভারতীয় প্রেক্ষাপট।
কনকপ্রভা বন্দ্যোপাধ্যায়: সাংখ্য-পাতঞ্জল দর্শন।
ফরহাদ মজহার: ভাবান্দোলন।
Click This Link
Click This Link
Click This Link
http://www.iep.utm.edu/sankhya/
http://en.wikipedia.org/wiki/Samkhya
Click This Link
Click This Link
http://www.class.uidaho.edu/ngier/sankhya.htm

মায়েরে ভজিলে হয় সে বাপের ঠিকানা। এই গানটি নিয়েছি আবুল আহসান চৌধুরীর ‘লালন শাঁইয়ের সন্ধানে’ বইটি থেকে।

উৎসর্গ: তৌফিক জোয়ার্দার। বাংলার ইতিহাস-দর্শন সম্বন্ধে যার আগ্রহ অত্যন্ত প্রবল।
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×