অনেকের সাথে চমৎকার সময় কাটিয়ে ফেরার পথে ঘটে যাওয়া অনাকাংখিত ঘটনা থেকে আপনি আপনার নারীত্বের উপর দোষ চাপিয়ে কিছুটা ক্ষোভ ঝারলে ও ব্যাপারটা আরও অনেক ঠান্ডা মাথায় ভাবার অবকাশ আছে বৈকি !!! আমরা সুযোগ পেলে পুরুষদের একগাদা গালি দিয়ে শান্তি পাই, জগতের সব নস্টের গোঁড়া এই পুরুষরা, এই পুরুষদের জন্যই জগতের সব নারী বিপদ সংকুল পথ পাড়ি দিচ্ছে !!!!!
আদিম মানব সভ্যতার আজকের যে বিবর্তন তার মূলে বাকী সব কারন গুলোকে ইগনোর করলেও দুটো কারনকে আমরা কখনো ইগনোর করতে পারবনা- এর একটা হচ্ছে যৌনতা আর অন্যটা হচ্ছে ক্ষুধা । এদুটো না থাকলে পৃথিবী আজকের এই অবস্হানে কখনো আসতনা।
যৌনতার পেছনে রয়েছে অন্য কারন। বংশ বিস্তার ও বংশ রক্ষাই শুধু নয় যোগ্যতম বংশ বিস্তার । ভলগা থেকে গঙ্গা- মানব সভ্যতার এই বিশাল বিবর্তনের শুরুর দিকে নারীই নিজের সঙ্গী খুজে নিত- যোগ্যতম বংশ বিস্তারের জন্য । ধীরে ধীরে নানা বিধ কারনে এই ক্ষমতা পুরুষের হস্তগত হয়, যদিও প্রণী জগতের অন্যকূলে এই ভূমিকা এখনও স্ত্রী প্রজাতিরাই পালন করে।
পুরুষ যখন এই সিলেকশনের দায়িত্ব নিজে নিয়ে নিল- তখন থেকে সে ও শুরু করল যোগ্যতম মা খুজে বেড়ানো। বিত্তবান পরিবারের মেয়ে এবং ছেলেরা কেন দেখতে সুন্দর হয় এই নিয়ে ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল একটা মজার থিউরি দিয়েছেন- তারা এত বেশী ফিল্টার হওয়ার মাধ্যমে এই পৃথিবীতে এসেছেন যে সুন্দর না হয়ে উপায় নেই।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখবেন রাজপুত্ররা সব রাজকন্যাদের সাথেই বন্ধনে আবদ্ধ হন। যায় হউক এখানে ইস্যু সেটা না-ইস্যু হচ্ছে যুগ যুগ ধরে আমরা জেনেটিকালি যে ধারা বহন করে চলেছি তা হচ্ছে যোগ্যতম সঙ্গী খুজে নেবার প্রবনতা ।
জেনেটিকালি বহন করা এই প্রবনতার ফল হচ্ছে মেয়ে দেখলেই ছেলেদের ফেলফেল করে তাকিয়ে থাকা, আর সমাজ বিবর্তনের ধারায় মেয়েরা যেহেতু চালকের আসনে নেই তাই তাদের তাকানোটা সরাসরি না হলেও বেশীর ভাগ সময় আঁড়চোখে তাকানোটা তারা মিস করেনা।
ছেলে মেয়ের সম্পর্ক বিবেচনায় প্রেম ভালবাসা বা অন্য যত নামই তাকে দিতে চান না কেন প্রকৃতির কাছে সেসবের তেমন মূল্য নেই। মূল হচ্ছে আদর্শ যৌন সঙ্গী নির্বাচনের মাধ্যমে প্রজাতির ধারা অব্যাহত রাখা , যোগ্যতম প্রজাতির বিকাশ। তাই দেখবেন যেসব পুরুষ আড্ডায় বড় গলায় বলে আরে বাতি নিভিয়ে দিলে সব মেয়েই এক- বিয়ে করার বা সঙ্গী নির্বাচনের সময় তারা কিন্তু অত সরল সমীকরনে পথ হাঁটেন না । মেয়েরাও একই- একটা ছেলে হলেই হবেনা, তাকে অনেক গুনধারন করতে হবে এই নীতিতেই চলেন -আফটার অল প্রজাতির ধারা গুলোত অব্যাহত রাখতে হবে।
শিক্ষা জ্ঞান বিজ্ঞানের বিকাশের সাথে সাথে যৌনতা , যৌন সঙ্গী নির্বাচন শব্দটায় কেমন যেন খারাপ একটা তকমা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই এটি নিয়ে আলোচনায় আমরা স্বস্তি বোধ করিনা । সো একে ভালবাসা টার্মস এ রেখে দেয়ায় ভাল।
এবার ছেলেদের কিছু বিষয় বলি- আপনি যেসব ছেলেদের সাথে পরিচিত, যাদের সাথে সুন্দর আড্ডার সময় কাটান, মোর অর লেস তারা সবাই আপনার চোখে স্বজ্জন, মেয়েদের প্রতি তাদের অগাধ শ্রদ্ধা , নারী স্বাধীনতায় অগাধ সমর্থন গলে গলে পড়ে। আপনি শ্রদ্ধায় অবনত হন, এমন সুন্দর সম্পর্ক হতে পারে ভেবে মুগ্ধ হন। ভাল লাগায় সময় কেটে যায়।
ব্যাপারটা অত সরল সমীকরনে স্হান দেয়া ঠিকনা । অপরিচিত যে ছেলেটি রাস্তায় এক নজরে আপনার সর্বাঙ্গে দৃস্টি বুলিয়ে নেয় অশ্লীলভাবে, আপনার সাথের প্রিয় বন্ধুটির ঐ অশ্লীলদৃস্টি আপনার চোখে পড়েনা- এক্ষেত্রে সে ছেলেটির শিক্ষা, বিবেকবোধ তার আচার আচরন একটা শালীনতার মুখোশে ঢাকা থাকে, তাই আপনি দেখতে পাননা । মা আর বোন ছাড়া অন্যকোন নারীই ছেলেদের কাছে মহৎ দৃস্টি পেতে পারেনা -এটা সম্ভব না।
আজকের সমাজের অতি উচ্চ আসনে আসীন অনেককেই চিনি অবসরে প্রিয় বান্ধবীটির শরীর নিয়ে দুটো মুখরোচক কথা বলতে দ্বিধা করেনা , এমন অনেকেই আছে-ক্যাম্পাসের শুরুর জীবনে যে নারীর আকর্ষনীয় ফিগার নিয়ে উহু আহা করত বন্ধুমহলে, সময়ের ফেরে সে নারী যখন তার ঘনিস্ঠ বন্ধু হয়ে যায়, আপনি কি মনে করেন ঐ চোখ তখন ফেরেশতা হয়ে যায় !!!! কিন্তু তারা খুব ভাল বন্ধু থাকতে পারেন এতে কোন প্রবলেম আমি দেখিনি । মেয়েদের দিকে ছেলেরা , তা সরাসরি হউক আর বাঁকা চোখে হউক তাকাবেই- এটা ঠেকানোর উপায় নেই, আকর্ষনীয় ফিগার হলে তার মাঝে যৌন কামনা আসবেই এটা নিশ্চিত, অন্তত যৌন সঙ্গী হিসেবে এই মেয়ে ভাল হবে এটা সে ভাববেই, জীবন সঙ্গী হিসেবে না ভাবলেও । মাফ করবেন আমি সুশীল হতে পারলামনা, আমি আমার ভাবনায় যা আসে তা বলে দিলাম, আমার বন্ধুমহল-যারা সবাই এই দেশের বেশ ভাল ভাল অবস্হানে আছে এবং যাদের চরিত্র নিয়ে এক ফোঁটা কালীমাও কেউ দিতে পারবেনা, তাদের অনুভূতিও এর ব্যতিক্রম নয়।
আমরা আমাদের অশিক্ষিত সমাজের উপর ও এর দায়ভার চাপিয়ে দিই অনেকক্ষেত্রে । সুশিক্ষিত পাশ্চাত্যেই বা নারী কতটুকু স্বাধীন বলুন। ধর্ষকামীতায় লন্ডন ,আমেরিকা কেউ কারো থেকে পিছিয়ে নেই, পিছিয়ে নেই নারীর অবমাননায়। নারীকে নিয়ে কত অশালীন হওয়া যায় এই ক্ষেত্রে তারাইত আমাদের শিক্ষক। আমরা যতই শিক্ষিত হইনা কেন- নারীর দিকে আমাদের দৃষ্টিতে যৌনতা থাকবেই, স্বার্থকটা হচ্ছে নিজের শিক্ষা, পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় মূল্যবোধ দিয়ে আমরা এটাকে কতটুকু চাপিয়ে রাখতে পারছি । জেনেটিকালি যৌনসঙ্গী নির্বাচনের ইস্যুতে যত বেশী মুখোশ পরে থাকা যায় ততই সাধুতা । দেখতে সুন্দরী, ভাল স্বাস্হ্য তথা ফিগার, ভাল বংশ- সব কিছুর ফলাফল আসলে আরেকটি যোগ্য জেনারেশন !!!!
মেয়েদের ভাবনা কি ,কেমন আমি ঠিক জানিনা , ছাত্রী হলের আড্ডায়ত যাওয়ার সুযোগ হয়নি- তবে ব্যক্তিগত ভাবনা খুব বেশী ব্যতিক্রম হওয়ার কথা না, যৌনতা সেখানে থাকবেই-অন্তত একান্ত ভাবনাতেইত অবশ্যই থাকবে।
যারা আমরা আপনার প্রতি এই অশালীন আচরনে মর্মাহত, ঐ অশিক্ষিত ড্রাইভারের গোষ্ঠী উদ্ধার করে ফেলছি, সেই আমাদের অত সাধু ভাবার কোন দরকার নেই। সুযোগ পেলেই আমরা সবাই পুরুষ, ভাব ধরে লাভ নেই। ড্রাইভারের দাঁত ফেলে দিতে বলা অনেক সহজ, সে আমরাই সুযোগ পেলেই প্রিয় বান্ধবীর গা ঘেষে বসতে দ্বিধা করিনা, শুধু মুখোশটা আছে বলেই বাঁচোয়া ।
এবার একটু আপনাদের কথায় আসা যাক। ছেলেরা সব বদমাশ, এটা একেবারে একপেশে হয়ে যায়..........।
{ শুধুতো এই অশিক্ষিত সিএনজিওয়ালাই নয়, খুব ভদ্রবেশী মুখোশপরা শিক্ষিত ভদ্রলোকও সুযোগ পেলে একি কাজ করছে। সুযোগ পেলে না, বলা যায় সুযোগ করে নিচ্ছে। কি তার চোখের দৃষ্টিতে, কি কথায়, সামনাসামনি অথবা ফোনে... }
মাঝরাত্রিতে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া অলীক কল্পনায় শুধু ছেলেরাই ছুঁতে চাওয়া অধরা নারীকে অথবা আশে পাশের নারীকে নিয়ে স্বপ্নীল ভাবনায় মেতে উঠে এটা আমি বিশ্বাস করিনা। কামনা বাসনা মেয়েদেরও কম নেই । অন্তত বিজ্ঞান তাই বলে , যৌন কামনা ছেলে মেয়ে কারোরই কমনা । অধরা চলচ্চিত্রের নায়ক থেকে শুরু করে আশে পাশের সুপুরুষটি নিয়ে মেয়েরাও স্বপ্নীল ভাবনায় হারায় -এটাকে অত দোষের ও কিছু বলার দরকার নাই।
শিক্ষিত নারীরাও যৌনতা বহিঃপ্রকাশে কোন অংশে পিছিয়ে নেই। আজকালকার কর্পোরেট জগৎ যার খুব ভাল উদাহরন । শুধু শিক্ষিত বসটি বেলেল্লাপনায় মেতে উঠে , সুযোগ নেয়, এটা ঠিক নয়, তাকে সুযোগ করে দেয় এমন মেয়ের ও অভাব নেই। সমমর্যাদার সহকর্মীর সব কথায় যার বিরক্তি ঝরে পড়ে, সেই মেয়েরই বসের রুমে হাসতে হাসতে ওড়না ঝরে পড়ে- উঠানোর খেয়াল থাকেনা - শিক্ষা আর রুচীর কি সুন্দর সমন্বয়, দারুন মুখোশে ঢেকে থাকি আমরা সবসময়।
এই বাজারে যেমন সুযোগ না নিতে চাওয়া লোকের অভাব নেই, শিক্ষা বিবেক যার পথে বাঁধা, তেমনি সুযোগ নিতে চাওয়া লোকের ও অভাব নেই। একই কথা সত্য মেয়েদের বেলায় ও।
ফোনে শুধু ছেলেরাই সুযোগ নেয় এই কথা বললে ছেলেদের প্রতি অবিচার হয়ে যাবে। অমন মেয়ের ও অভাব নেই। দুপক্ষই এই কাজ করে।
একটা জিনিস খেয়াল করবেন ছেলে আর মেয়েদের যত ফোনালাপ তার বেশীরভাগই ঘটে রাত্রিতে !!! কেন বলুনতো ??
সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর একমাত্র যে অপ্রাপ্তিটা থাকে দুপক্ষের তা ঐ যৌনতা !!! যৌনতা -এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। আমাদের শিক্ষা, মূল্যবোধ হয়ত বেশীরভাগ সময়ই আমাদের এটা প্রকাশ করতে বাঁধা দেয় , তাই আমরা কথা বলেই ক্ষান্ত হই , যৌনতার ব্যাপারটা বালিশের সাথে চাপা দিয়ে দিই । কেউ কেউ অতি আবেগে বাঁধ ভেঙ্গে ফেলে, আবার হয়ত ফিরে ও আসে মুল্যবোধের জগতে অথবা চালিয়ে যায়।
পুরুষদের এক তরফা দোষ দেয়ার মধ্যে তেমন কোন স্বার্থকতা নেই। তার শারীরিক শক্তি বেশী থাকায় তার প্রকাশটা দৃস্টিকটু ভাবেই ফুটে উঠে । সে যত বেশী শিক্ষিত হবে , শুধু মাত্র তার প্রকাশ ভ্ঙ্গীতেই সে পার্থক্যটা ফুটে উঠবে এর বেশী কিছু নয়। আর নারীরা শারীরিক ভাবে একটু পিছিয়ে থাকায় এবং সামাজিক বিবর্তনে লজ্জা তাদের একটি অংশ হয়ে যাওয়াই তাদের প্রকাশটা চোখের আড়ালেই থেকে যাবে- এর বেশী আর কিছু না !!!! একে অন্যের প্রতি আকর্ষন কারোরই কম না ।
আমরা সবাই শিক্ষিত হয়ে উঠি আর সুন্দর মুখোশে যত বেশী নিজেদের আবদ্ধ করতে পারব সমাজটা ততই সুন্দর হবে। যৌনতা (আজকাল এটা বিনোদন ও বটে ) তথা বংশ ধারা রক্ষা প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম। এর ব্যত্যয় হলে জগতে নারী পুরুষ কেউ কারো ধার ধারত বলে মনে হয়না ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



