somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আওয়ামী লীগ, তাদের আদর্শ ও অন্যান্য

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ আওয়ামী লীগ ও তাদের আদর্শ এবং ৭৪ সালে সে আদর্শের ফলাফল বাংলাদেশের জনগণ কেমন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল সে সম্পর্কে বলার চেষ্টা করবো। দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাপারে আমার আপত্তি নেই। তবে সে আদর্শ যখন তারা দেশবাসীর উপর চাপিয়ে দিতে চায় তখন অবশ্যই তা মারাত্মক আপত্তিকর বিষয়। জরুরী সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারা প্রায়ই ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার জন্য তারস্বরে চেঁচাচ্ছে। ৭২ এর সংবিধানেই রয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। মজার ব্যাপার হচ্ছে ১৯৪৯ সালে দলটি প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে ৭২ এর পূর্ব পর্যন্ত তাদের আদর্শ যে অন্ততপক্ষে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ছিল না তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। হঠাৎ করেই তারা সংবিধানে এ বিষয়টির যোগ করে আর দাবী করে স্বাধীনতা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এ আদর্শকে ধারণ করে। তাদের এ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রীতির ইতিহাস ক্ষাণিকটা দেখে নেয়া যাক।
১৮৪৬ সালে জর্জ জেকব হোলিওকের ব্যবহৃত 'ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ' এর অস্তিত্ব ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশে ছিল না। ১৯ মার্চ ১৯৭২ সালে মুজিব-ইন্দিরার মধ্যে সম্পাদিত ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি’ তে সর্বপ্রথম ধর্মনিরপেক্ষতার অবতারণা করা হয়। ১০ এপ্রিল ১৯৭২ সালে জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রেও এ বিষয়টির উল্লেখ ছিল না। এমনকি ৬৬’র ছয় দফাতেও এর উল্লেখ ছিল না। এ ব্যাপারে তৎকালীণ বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদের লেখা ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ গ্রন্থ থেকে একটি উদ্বৃতি তুলে ধরলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।

তিনি লিখেছেন, “(সংবিধানের) প্রস্তাবনায় তাঁরাও (সংবিধান রচয়িতারা) বলিয়াছেন: ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মহান আদর্শই আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি-সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল।’ তথ্য হিসেবে কথাটা ঠিক না। আওয়ামী লীগের ছয়-দফা ও সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এগারো দফার দাবিতেই আমাদের মুক্তি-সংগ্রাম শুরু হয়। এইসব দফার কোনটিতেই ওইসব আদর্শের উল্লেখ ছিল না। ওই দু’টি ‘দফা’ ছাড়া আওয়ামী লীগের একটি মেনিফেস্টো ছিল। তাতেও ওসব আদর্শের উল্লেখ নাই। বরঞ্চ ওই মেনিফেস্টোতে ‘ব্যাংক-ইন্স্যুরেন্স পাট-ব্যবসা ও ভারি শিল্পকে’ জাতীয়করণের দাবি ছিল। ওই ‘দফা’ মেনিফেস্টো লইয়াই আওয়ামী লীগ ৭০ সালের নির্বাচন লড়িয়াছিল এবং জিতিয়াছিল। এরপর মুক্তি-সংগ্রামের আগে বা সময়ে জনগণ, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের প হইতে আর কোনো ‘দফা’ বা মেনিফেস্টো বাহির করার দরকার বা অবসর ছিল না। আমাদের সংবিধান রচয়িতারা নিজেরা ওই মহান আদর্শকে সংবিধানভুক্ত করিবার ইচ্ছা করিয়াছিলেন।[ তাই জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামে ওই ভুল তথ্য পরিবেশন করিয়াছেন।”

আরো বিস্তারিত জানতে- View this link

এবার তাদের সমাজতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড দেশবাসীকে কি রকম বিপদের মধ্যে ফেলেছিল সে বিষয়ে আলোকপাত করা যাক। ১৯৭৪ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ মানুষ অসহায়ভাবে মারা যায়। তাদের ভাগ্যে কাফনের কাপড় তো দূরে থাক, সামান্য কলাপাতাও জোটে নি। কারণ, কলাপাতাও তখন দুর্লভ খাদ্য বস্তু ছিল। তবে আওয়ামী লীগ তাদের এ অমার্জনীয় ব্যর্থতাকে কখনোই স্বীকার করে নি। তারা এ ব্যাপারে দু’টি খোঁড়া যুক্তি দেখায়- ১. যুদ্ধবিদ্ধস্ত অবস্থা ২. মার্কিন ষড়যন্ত্র।
কিন্তু তা ধোপে টেকে না। কারণ জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১২০০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৭২ সালের আগস্টেই আওয়ামী সরকার ৯০০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য হিসেবে পেয়েছিল। বাকি ৩০০ মিলিয়ন ডলারও এসেছিল বছর শেষ না হতেই। এর বাইরেও প্রতি বছর বিপুল অর্থ ও পণ্যের সাহায্য পাওয়া গেছে এবং এদিক থেকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য পাওয়া গিয়েছিল ৭৪-৭৫ অর্থবছরে। এ সময় প্রাপ্ত সাহায্যের পরিমাণ ছিল ৯১৯.২ মিলিয়ন ডলার। ১৯৭৩-৭৪ এবং ৭৪-৭৫ অর্থবছরে শুধু খাদ্য ক্রয়ের জন্য যে ১০৯ ও ১৭১ মিলিয়ন ডলার ঋণ (অনুদান বাদে) পাওয়া গিয়েছিল তার বেশির ভাগই দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া সাহায্যের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৪৯ ও ১৫০ মিলিয়ন ডলার। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের বিষয়টিও মিথ্যা। শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫ মাসের শাসনের (একদলীয় বাকশালসহ) সীমাহীন ফ্রি স্টাইল দুর্নীতি, যথেচ্ছ লুণ্ঠন, জনগণের প্রতি মমত্বের অভাবের কারণেই স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশকে সব দিক থেকে ধ্বংস ও সর্বনাশ কবলিত হতে হয়েছিল। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশ পেয়েছিল এক অনবদ্য খেতাব ‘তলাবিহীন ঝুড়ি।’

আরেকটি বিষয়ের অবতারণা করেই ইতি টানবো। বিশ্বব্যাপী ব্যপকভাবে নিন্দিত ও ঘৃণিত ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠার তাণ্ডবের কথা আমরা জানি। সেদিন ঢাকার রাজপথে প্রকাশ্যে মানুষকে পিটিয়ে মেরে লাশের উপর নৃত্য করে উল্লাস করার দৃশ্য আমরা বিভিন্ন চ্যানেলে দেখেছি। তাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন চট্টগ্রামের এক সমাবেশে বলেছিলেন, ‘আর যদি একটি লাশ পড়ে তার পরিবর্তে দশটি লাশ ফেলে দেয়া হবে।’ তিনি তো তখন শুধু একটি দলেরই প্রধান ছিলেন না, পুরো দেশবাসীর দায়িত্ব তার উপর ছিল। রাষ্ট্রের কর্ণধারই যদি লাশ ফেলে দেয়ার হুমকি প্রদান করেন তাহলে সাধারণ নাগরিক বেচারাগণ তার প্রতি কতটুকু আস্থা রাখতে পারে? এরকম আরো অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যাবে। স্বাধীনতাপূর্ব ৯৮% সমর্থন পাওয়ার ৩০ বছর পর তা কমে ৪৩% এ এমনিতেই নেমে আসে নি। নতুন প্রজন্মকে আওয়ামী লীগ নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজন রয়েছে। স্বাধীনতা অর্জন করে দেয়াটাই (তাও আবার নিজেদের দাবিকৃত, অন্যরা তা মানুক বা না মানুক। এ ব্যাপারে পরবর্তীতে লেখার ইচ্ছা রইল) শেষ দায়িত্ব নয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তাদের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৪৯
১৮টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×