১. ১৯৭১-এর পর বঙ্গবন্ধু জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন পরে জিয়াউর রহমান জামায়াতকে রাজনীতি করার অধিকার দেন। এ নিয়ে এখনো আওয়ামী লীগ তথা বামপন্থীরা জিয়াউর রহমানের নিন্দা করে।
২. নতুনভাবে রাজনীতিতে এসে জামায়াত প্রথমেই গোলাম আজম, আব্বাস আলী খানের মত চিহ্ণিত পাকিস্তানপন্থীদের দ্বারা দল চালানো শুরু করে। হয়তো তারা ভেবেছিল, শেখ মুজিবুরের পুরো পরিবারের(২ মেয়ে ছাড়া) মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগও আর বাংলাদেশের রাজনীতিতে দাঁড়াতে পারবে না। তখন এমনিতেই বাকশাল, রক্ষী বাহিনী এবং ‘৭১ পরবর্তী অপশাসনের কারণে আওয়ামী লীগ নিন্দিত একটা দল। তাই তারা কমন সেন্স খাটিয়ে ‘৭১ এর ভুলের জন্য ক্ষমা চায়নি। বরং প্রতিবারই বলেছে, পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে তারা ভুল করেনি। তবে তারা বাংলাদেশ সৃষ্টির পর বাংলাদেশের আইন কানুন মেনেই রাজনীতি, ব্যবসা সব কিছু করেছে। আরেকটু হলে গোলাম আজমের ছেলে সেনাপ্রধান হইতে রইছিল! সময় সুযোগ মত রঙ পাল্টে বিগ থ্রি’র সাথে রাজনীতিও করেছে। গোলাম আজম, নিজামীর মত স্বীকৃত পাকিস্তানপন্থীর হাতে দলের ভার থাকার পরও জামায়াতের নেতা কর্মীরা সবসময় একতাবদ্ধ ছিল। শুনতে খারাপ লাগলেও জামায়াতই বাংলাদেশে একমাত্র গণতান্ত্রিক দল!
৩. ক্ষমা তো চায়নি বরং জামায়াত নেতারা অনেক সময় উদ্ধত আচরণ করেছে। গোলাম আজম বলেছিলেন একবার, রাজাকার মানে হলো সাহায্যকারী, আর রাজাকার বললে তাদের গায়ে লাগে না। অন্যদিকে ঘাদানিকরা গোলাম আজমের নাগরিকত্ব নিয়ে মামলা করে হেরে গিয়ে গোলাম আজমকে আরো পাকাপোক্ত ভাবে রাজনীতিতে এনে দেয়। তবু সুযোগ সবসময় ছিল ’৭১-এর ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া। পাকিস্তানের জেনারেল মোশাররফও এসে দুঃখ প্রকাশ করে গিয়েছিলেন তবু জামায়াত নেতারা এসবের ধারে কাছে যাননি। তারা আরো বলতো রাজাকার, আল বদর, আল শামসের সাথে তারা জড়িত নয়। সর্বশেষ মুজাহিদ বলে বসেন, বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই(তিনি হয়তো বা পাকিস্তানের ১৯৫ জনকে বুঝিয়েছেন)। তবে এটা দেশের সাধারণ জনগণের সেন্টিমেন্টের সাথে যায়নি। কারণ, তখনকার সংগ্রাম পত্রিকাতে সব আছে। তারা পাকিস্তানের পক্ষে ছিল সিম্পলি এসব স্বীকার করলেও আজকের মত এত দুর্যোগ হতো না।
৪. এত বড় কলংক, এত অভিযোগ নিয়েও জামায়াতে ইসলামি হলো বাংলাদেশের প্রধান ইসলামিক দল। অন্য দলগুলো বেশীর ভাগ পীর, হুজুরদের মুরীদ, অনুসারি নির্ভর। বাংলাদেশের অনেক সাধারণ মুসলমান ইসলামিক দলকে সমর্থন করতে চায়। কিন্তু যখনই ‘৭১-এর ভূমিকার কথা মনে পড়ে তখনই তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় জামায়াত থেকে। তবু তাদের বিশাল এক ভোট ব্যাংক আছে। আর জামায়াতের মধ্যে একটা নীরব গ্রুপ আছে জামায়াতের সংস্কারের পক্ষে(সংস্কার মানে ‘৭১-এ যারা পাকিস্তানপন্থী ছিল তাদের বাদ দিয়ে দল গড়া), কিন্তু তারা দলীয় একতাবদ্ধের জন্য কখনোই মুখ খুলে না।
৫. জামায়াতের সবচেয়ে বড় ‘বেদনা’ গোলাম আজম মারা গিয়েছেন। নিজামী’র ফাঁসি না হলেও বয়স বিবেচনায় আজীবন কারাদন্ড ভোগ করতে হবে হয়তো বা। কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, মুজাহিদের ফাঁসি হলো। সাঈদী আজীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত। আর ৭/৮ জন আছে যাদের হয়তো ফাঁসি হবে। এরপর জামায়াত নিষিদ্ধ হবে অচিরেই। তখন আর পাকিস্তানপন্থী কোন নেতাও থাকবে না, আবার ‘জামায়াতে ইসলামী’ নামটাও থাকবে না। আওয়ামী লীগ, বামপন্থীরা আর জামায়াতকে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের দল বলে গালি দিতে পারবে না, বি এন পি-কে আর কথা শুনতে হবে না জামায়াতের সাথে জোট করার কারণে। আওয়ামী লীগের বিরাট একটা রাজনৈতিক ইস্যুর মৃত্যু ঘটবে(ফাঁসি আর জামায়াত নিষিদ্ধ না করলে আরো অনেকদিন এই ইস্যু নিয়ে মাঠ গরম করতে পারত তারা)। ইমরান এইচ সরকারকে আর শাহবাগ দখল করতে হবে না। জামায়াত সমর্থকদের আর কটু কথা শুনতে হবে না।
৬. ’৭১-এর জন্য ক্ষমা না চাওয়ার মত বড় ভুল করা ছাড়া জামায়াত একটা বিচক্ষণ রাজনৈতিক দল। তারা ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল করে বিশাল একটা অর্থনীতি একাই নিয়ন্ত্রণ করে। নাম বদল করে আবার একটা দল করতে তাদের বেশী সময় লাগবে না। বরং নতুন দলে অনেক ইসলামপন্থী যোগ দিবে কোন কলংক না থাকার কারণে। নতুন দল আগের জামায়াতের চাইতেও বেশী শক্তিশালী হয়ে যাবে। প্রাকৃতিক ভাবে এরশাদ বিদায় নিলে জাতীয় পার্টির অবস্থা হবে জাসদের মত। প্রাকৃতিক বা রাজনৈতিক ভাবে শেখ হাসিনারও সময় ফুরাবে। তাঁর আমলে ’নতুন জামায়াত’(হয়তো নতুন নামে) কাজ করতে না পারলেও এক সময় ‘নতুন জামায়াত’ বড় একটা ইসলামিক দলে পরিণত হবে। আর এর জন্য শেখ হাসিনাকে ’নতুন জামায়াত’র নেতা কর্মীরা ধন্যবাদ জানাবে......