১. মিজানের সাথে রুমা'র প্রথম সরাসরি কথা হয় বিয়ের স্টেজে। দেখা হয়েছিল বিয়ের এক মাস আগে রুমা-কে দেখতে গিয়ে। সেদিন কোন কথা হয়নি। মুরুব্বীরাই কথা বলেছিল। এরপর আর দেখা হয়নি, কথা হয়নি। ভাবা যায় এই ২০১৩ তে এসেও ঠিক যেন ২০ বছর আগের মত এরেঞ্জড ম্যারেজ। এখন তো বিয়ে ঠিক হওয়ার পর এক সাথে বাজার করা, দেখা করা, মোবাইলে কথা বলা খুবই সাধারণ ব্যপার। অথচ মিজানের বেলায় তা হয়নি। মিজান চাকুরি করতো ঢাকায় আর রুমা থাকতো চট্টগ্রামে। তাই এক সাথে বিয়ের বাজার করাটা হয়নি। আর ঘটনাচক্রে মিজান বা রুমা'র পরিবারের কেউ মিজান-রুমার মোবাইল নম্বরও বিনিময় করেনি! মিজানও মেয়েদের সামনে চিরকালীন লজ্জার কারণে আগ বাড়িয়ে নম্বর চায়নি। যদিও কোন এক পক্ষ চাইলেও কোন বাধা দেয়া হত না। মিজান বন্ধুদের প্রায়ই বলে আমাদের সম্পর্ক পুরোনো দিনের দম্পতিদের মতই। প্রথম সাক্ষাৎ স্টেজে, গাড়ি এরপর বাসর ঘরে...
২. দিন চলে যায়। সুখের সংসার চলতে থাকে। দুই বছরের মাথায় একটা বাচ্চাও আসে। কিন্তু রুমা'র মধ্যে একটু পরিবর্তন আসতে থাকে। এটা শুরু হয় প্রেগনেন্সি শুরু হওয়ার পর থেকে। মিজান জানতো এগুলো 'বেবি ব্লুস সিনড্রোম'(বাচ্চা হওয়ার আগে ও পরে মহিলাদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন)। মিজান ভেবেছিল বাচ্চা হওয়ার পর কেটে যাবে। কিন্তু বাচ্চা হওয়ার পরও তার এই মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি। যৌথ পরিবারে মিজানের ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে দ্বন্দ্ব আর মিজানের মায়ের দোষ বের করাটাও রুমার মধ্যে চলে আসে। সব মিলিয়ে গতানুগতিক পারিবারিক ঝামেলা। এর মধ্যে মিজান আবার ভালো চাকুরির প্রস্তাব পেয়ে চলে যায় দেশের বাইরে...
৩. রুমার মধ্যে ক্ষোভ জন্ম নেয়। মাত্র পাঁচ মাসের বাচ্চা রেখে কীভাবে মিজান পারলো তাকে একা রেখে বাইরে যেতে? বাস্তবতা মেনে নেয় রুমা। সব আবার স্বাভাবিক হয়। মিজান-রুমা দিনের বেশীরভাগ সময় ব্যস্ত থাকে ইমো, হোয়াটসআ্যাপ বা ম্যাসেঞ্জারে ভয়েস কিংবা ট্যাক্সট চ্যাটে। দূরে থাকলেও আর দূরে মনে হত না। এক বছরের মাথায় মিজান ছুটি নিয়ে দেশে আসে মাত্র পঁচিশ দিনের জন্য। মিজান আবার ফেরত আসে বিদেশে। প্রমোশান হয়। আরো বেশী কথা হয়...
৪. ওদিকে রুমার মধ্যে আবার হতাশা পেয়ে বসে। রুমা ভাবতে থাকে এই কী জীবন? বছরে একবার দেখা হবে ২০/২৫ দিনের জন্য? এভাবে কত বছর চলবে? রুমাকে নিয়েও যাবে না। ভালো বেতনের কারণে চাকুরিও ছেড়ে আসবেনা। তাহলে রুমার প্রাপ্তি কী? শুুধুই অপেক্ষা আর অপেক্ষা। এই জীবন তো রুমা চায়নি। রুমা এবার চাপ দেয় মিজানকে ফেরত আসার জন্য। মিজান জানিয়ে দেয় - আবেগ দিয়ে জীবন চলেনা। রুমা 'সাইলেন্ট ট্রিটমেন্ট'(কারো সাথে কথা না বলে রাগ দেখানো) প্রয়োগ করে মিজানের উপর। সব যোগাযোগ বন্ধ। মিজান তার মামা, চাচাদের প্রবাস জীবনের সাথে মিল খুঁজে পায়! যখন একটা চিঠি যেতে লাগতো ১৫ দিন আর উত্তর আসতে লাগতো আরো ১৫ দিন। কোন কথা নেই, কোন দেখা নেই। রুমা চিঠিও লিখবে না। ভাবা যায় এই ২০১৭ তে এসেও ঠিক যেন ২০ বছর আগের মত...
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৪৬