বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০৮ কোটি টাকা লুটের ঘটনায় গভর্নর আতিউর রহমান গত ১৬ মার্চ পদত্যাগ করেছেন। সারা বাংলাদেশের মানুষ তাঁর এ সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য বাহ্ বাহ্ দিয়েছেন। ৮০৮ কোটি টাকা হারানোর দুঃখ সকলে নিমিষেই ভুলে গেছেন। আমরা এমনি আবেগপূর্ণ জাতি, দেশের এত বড় ক্ষতি হয়েগেল অথচ আমরা গভর্নরের পদত্যাগেই খুশি !! কিন্তু পদত্যাগ কি তিনি নিজ ইচ্ছায় করেছেন ?? এটাও আমরা জানিনা অনেকে ।
আতিউর রহমানকে গভর্নর না রাখার ব্যাপারে সরকারের উপর থেকে কথা চলছিল অনেক আগ থেকেই । অর্থমন্ত্রী যখন বলেন গভর্নর পদত্যাগ না করলে তিনি নিজেই মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিবেন, তখন এটা আর কারোরই বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা নয় । গত ১৪ মার্চ বিকেলে গভর্নর দিল্লি থেকে দেশে ফিরে রাতে গোপনে অর্থ মন্ত্রীর বাসায় দেখা করেন । সেখানেই অর্থমন্ত্রী রূঢ় ভাবে গভর্নর কে পদত্যাগ করতে বলেন । আতিউর রহমান প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ পত্র প্রদান করলে প্রধানমন্ত্রী মর্মাহত হলেন, কিন্তু পত্রটি গ্রহণ করলেন যা তিনি না করলেও পারতেন।
যাইহোক, এসব বিষয় থেকে স্পস্ট আতিউর রহমান নিজ ইচ্ছায় পদত্যাগ করেন নি । এটা তার সাহসী সিদ্ধান্ত ছিলনা । অনেকটা অঘোষিত গোপন চাপ থেকেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন ।
রাখাল বালক থেকে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, এটা অনেক বড় অনুপ্রেরণার সত্যি । আর তাই তিনি আমাদের আবেগের একটা বড় জায়গা দখল করে আছেন । আমি তার গুণ নিয়ে সন্দেহ করছি না; নিঃসন্দেহে আতিউর রহমান বাংলাদেশের সম্পদ । কিন্তু কথা হচ্ছে রিজার্ভ ব্যাংকে টাকা চুরি হয়েছে তাতে পদ ত্যাগ করে লাভ কি ? পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করা মানে কি তাকে দায় মুক্তি দেয়া নয় ? যদি তিনি অপরাধী হন তা হলে তাকে কেন দায় মুক্তি দেয়া হবে ?? আর যদি অপরাধী না হন তাহলে কেন তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে অথবা পদত্যাগ করবে ? পদ তো তিনি ত্যাগ করলেনই ; ৮০৮ কোটি কিন্তু ফেরত আসেনি। এমনকি নতুন যিনি গভর্নর নিয়োগ হবেন, তিনি নিয়োগ হলেও নিশ্চই সাথে সাথে টাকা ফেরত আসবে না !! একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করতেই হবে।
যে আতিউর রহমান ৭ বছর যাবত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এতদ্রুত এত উপরে নিয়ে এসেছেন, কেন তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে অথবা কেনইবা তিনি পদত্যাগ করছেন ?? নতুন যিনি গভর্নর নিয়োগ পাবেন তার চেয়ে আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের পথঘাট নিশ্চই ভালো চিনবেন । চলমান সমস্যার সমাধানসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রুটিগুলো আতিউর রাহমানই ভালোভাবে চিহ্নিত এবং সমাধান করতে পারতেন । তাহলে পদত্যাগ কেন ?
পদত্যাগ কোন সমাধান নয় ; কেবল চক্ষু ঘোল করা । আতিউর রহমানকে বহালরেখে, চলমান সমস্যা সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে, টাকা ফেরত আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টার সাথে সাথে তদন্ত চলতে থাকলে এবং তদন্ত শেষে দোষীদের শাস্তির নিশ্চয়তা করলেই হয়ে যেত। আতিউর রহমান পদ ত্যাগ করলেন আর নতুন গভর্নর পদ গ্রহণ করবেন, টাকা কিন্তু আগের চেয়ে দ্রুত ফেরত আসবে না। বরঞ্চ আতিউর রাহমানের যে সময় লাগতো এখন তার চেয়ে বেশী ছাড়া কম লাগার কোন সুযোগ নেই । তাহলে লাভ কী হলো ? লাভ যা হবে তা হচ্ছে আতিউর রহমান যাদের চক্ষুশূল ছিল তারা নতুন পছন্দের গভর্নর পাবেন। । আর যা লাভ হবে তা আমি না বড়রা বলবেন............. ....।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:০২