বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা এবং দেশপ্রেমিকরা বুঝতে পারেননি গিনেস বুকে নাম ওঠানোর “সাফল্য” “কৃতিত্ব” ইত্যাদি অলিম্পিক বা ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবলে সাফল্যের সাথে কোনোমতেই তুলনীয় নয় এবং সেখানে সাফল্যের মতো সম্মানিতও নয়।
উল্লেখ করা যেতে পারে ছোট দেশ হওয়া সত্ত্বেও কিউবা ও জ্যামাইকা অলিম্পিকে বহু সাফল্য অর্জন করেছে। ছোট দেশ হওয়া সত্ত্বেও উরুগুয়ে ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবলের ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়েছে এবং এবারও তারা ২০১৪-র চূড়ান্ত রাউন্ডে ব্রাজিলে খেলবে।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতামূলক এসব ইভেন্টে বাংলাদেশ কোথায়? উত্তর: এসব ইভেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পতাকা হাতে কিছু স্পোর্টস কর্মকর্তার উপস্থিতিতে।
গণপ্রচারণায় আসক্ত আওয়ামী লীগ
প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন নির্বাচন ‘বিজয়ী’ নির্লজ্জ আওয়ামী লীগ এখন শঙ্কিত চিত্তে অপেক্ষা করছে ২৬ মার্চে প্রতিষ্ঠিত গণসঙ্গীত গাইবার রেকর্ড পাকিস্তান অথবা অন্য কোনো দেশ অচিরেই ভাঙ্গবে কিনা।
মানুষ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের একটি অগ্রণী দেশ। ১৯৪৭-এ এই ভূখন্ডের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে চার কোটি। ১৯৭১-এ ছিল সাড়ে সাত কোটি। এখন ২০১৪-তে ধারণা করা হয় বাংলাদেশের জনসংখ্যা ষোল থেকে আঠার কোটির মধ্যে। সঠিক সংখ্যাটি যাই হোক না কেন, আওয়ামী লীগ সরকার তার আর্থিক ও প্রশাসনিক শক্তি এবং আওয়ামী লীগ তার সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে সবসময়ই চেষ্টা করে যাবে, বাংলাদেশের মানবশক্তিকে প্রচারণার কাজে লাগিয়ে গিনেস বুকে তাদের নাম ওঠাতে।
বিশ্বের সপ্তম জনবহুল দেশ এখন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের চাইতে বেশি জনবহুল ছয়টি দেশ, যথাক্রমে, চায়না, ইন্ডিয়া, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল ও পাকিস্তান। এদের মধ্যে পাকিস্তান বাদে আর কোনো দেশ জনসংখ্যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে মনে হয় না।
আওয়ামী লীগের এই মহান কর্মকাণ্ডে সহায়ক হবার জন্য দুই ধরনের গিনেস রেকর্ড প্রকল্প শুরু হতে পারে। এক. যেসব ক্ষেত্রে অলরেডি গিনেস রেকর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে সেসবের দাবি করে গিনেস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে আওয়ামী সরকার। এবং দুই. নতুন কিছু রেকর্ড প্রতিষ্ঠার জন্য এখন থেকেই কাজে নেমে যাওয়া, অর্থাৎ বিলবোর্ড প্রস্তুত করা এবং টাকা খরচ করা।
যেসব ক্ষেত্রে গিনেস রেকর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে তাদের অন্তত দশটি নিচে উল্লেখ করা হলো :
রানা প্লাজা দুর্ঘটনা : কোনো গার্মেন্টস ভবনে ধসে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ নিহত।
তাজরীন গার্মেন্টস : কোনো গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ নিহত।
ডেসটিনি : কোনো পিরামিড ফাইনান্স ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ সংখ্যক বিনিয়োগকারী প্রতারিত।
শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ : আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ফাসির দণ্ডে দণ্ডিত করার লক্ষ্যে আইন বদলানো দাবিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক জনসমাবেশ এবং তার প্রেক্ষিতে প্রচলিত আইন বদলিয়ে ফাসির দণ্ড দিয়ে সেটা কার্যকর।
শাপলা চত্বরে হেফাজতের মে ২০১৩ সম্মেলন : ধর্মপরায়ণ মানুষের প্রতিবাদ সম্মেলনে সর্বোচ্চ সংখ্যাকের সমাবেশ এবং সেখানে সরকারি বাহিনীর গুলিচালনার পর প্রধানমন্ত্রীর দাবি সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের “পাখি হয়ে ফুরুৎ করে আকাশে উড়ে যাওয়া”।
সারা দেশ জুড়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক গণহুলিয়া জারি করা।
ব্যাপকতম প্রশ্নপত্র ফাস হওয়া।
সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা চুরি ও লুট হওয়া।
৫ জানুয়ারি ২০১৪-র নির্বাচন : নির্বাচন ছাড়াই ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়া এবং বাকি ১৪৭টি আসনে ৩% থেকে ৫% মানুষের ভোটে অংশগ্রহণে বিজয়ী হওয়া।
এবার আপনি আপনার পছন্দ মতো আরো কিছু নাম এই লিস্টে যোগ করতে পারেন। যেমন, সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলা ঝুলে থাকা, সর্বোচ্চ সংখ্যক সরকারি কর্মচারিদের ওএসডি হওয়া। ইত্যাদি।
অন্তত পাচটি নিউ গিনেস প্রজেক্ট আওয়ামী সরকার শুরু করতে পারে। যেমন :
ঢাকার বেড়িবাধের পাশে তুরাগ নদীকে ভূমিদস্যুদের কবলমুক্ত করার জন্য জনসমাবেশ করা।
ঢাকার পাশে চার নদী, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা এবং বালুকে দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে জনকর্মীদের সম্মিলিত করা।
সারা দেশে শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে ঢাকাস্থ ইউনিভার্সিটিগুলোর সর্বোচ্চ সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে তাদের পাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবে মফস্বলে অন্ততপক্ষে ছয় মাস অবস্থান ও মফস্বলের স্কুলে শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করা।
পরিচ্ছন্ন রাজধানী দিবস পালন উপলক্ষে সর্বোচ্চ সংখ্যক জনকর্মীর সমাবেশ ঘটানো।
তিস্তা এবং পদ্মাকে বাচানোর জন্য সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের মিছিল করে ওই দুই নদীর তীরে যাওয়া।
পারবে কি ইনডিয়া ব্র্যান্ড আওয়ামী সরকার এসব করতে?
এসব যদি পারতো তাহলে গিনেস বুকে নাম উঠুক বা না উঠুক, বাংলাদেশের অবস্থার কিছু উন্নতি হতো।
আওয়ামী লীগ সরকার কয়েক কোটি টাকা খরচ করে আবার প্রমাণ করে ইংরেজ চিন্তাবিদ ড. স্যামুয়েল জনসন (১৭০৯-১৭৮৪) ঠিকই বলেছিলেন। তার বিখ্যাত উক্তি Patriotism is the last refuge of a scoundrel (প্যাটৃয়টিজম ইজ দি লাস্ট রিফিউজ অফ এ স্কাউনড্রেল) বা শয়তানের নিরাপত্তার শেষ ভরসা হচ্ছে মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করানো।
@পুরো লেখাটা অনেক বড়। তাই চুম্বক অংশ সংকলিত হলো মাত্র।
=====
শফিক রেহমান- এর
গিনেস বুকে নাম ওঠাতে পরবর্তী আওয়ামী প্ল্যান থেকে সংকলিত।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


