somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরিচয় দিলে যদি সন্তানের সম্মান যায়! !!!! বাবা দিবসে বাবার করুন কান্নার কাহিনী!!

১৫ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাবা।

মনভরা ডাক। পরাণ জুড়ানো ডাক। আহা একজন বাবা কিনা করে এই বাবা বলে আধোবোলে ডাক শুনে! তারপর ধীরে ধীরে আধো বোলে পুরা বোল ফোটে।
বাবা অপত্য স্নেহে তার সমস্ত আয়, স্বপ্ন ছেলে-মেয়েকে ঘিরে বুনতে থাকেন। তাদের মানুষের মতো মানুষ করা, উচ্চ শিক্ষিত করা। সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা।

অনেকেই সন্তান গর্বে সূখি। কিন্তু তাদের সংখ্যা যেন দিন দিন কমে যাচ্ছে।

আজ তেমন দু:খি কিছু বাবার কাহিনী শেযার করছি। যারা পরেছেন,তারা জানেন, যারা পরেন নি তাদের জন্য...............

সাবেক উপ-সচিব আব্দুল মান্নান। জন্মস্থান চট্টগ্রামের মিরেরসরাই। বয়স ৮০ ছুঁইছুঁই। ১৯৯৭ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিবের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

জীবনের সব পরিশ্রম, ঘাম ও মেধা দিয়ে এক ছেলে ও দুই মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ কর‍ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ১৪ বছর ধরে একাকী সময় পার করছেন আগারগাঁওয়ের প্রবীণ নিবাসের ৪১৩ নম্বর কক্ষে।

আব্দুল মান্নান চট্টগ্রাম কলেজ থেকে পড়ালেখা শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। উপ-সচিব থেকে অবসর নেওয়ার কিছু দিন পরেই তার ঠিকানা হয় নগরীর এই প্রবীণ নিবাসে।

সারা জীবনের অর্জিত সম্পদ দিয়ে ছেলেমেয়েদের মানুষ করার চেষ্টা করে গেছেন। হয়তো ভেবেছিলেন সন্তানদের পড়াশুনা করিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই জীবনের বাকিটা সময় সুখ স্বাচ্ছন্দেই কাটবে তার। জীবনের শেষ সময়ে অসহায় পিতার সহায় হবে সন্তানেরা।

কিন্তু বিধি বাম। বৃদ্ধের শেষ ঠিকানা হয় প্রবীণ নিবাসেই। শেষ সময়ে পেনশনে পাওয়া টাকা দিয়ে কোনোমতে খেয়ে পরে নিঃসঙ্গ জীবন পার করছেন আব্দুল মান্নান।

প্রবীণ নিবাসে থাকা প্রসঙ্গে অভিমানি আব্দুল মান্নান জানান, আমি স্বতন্ত্রভাবেই থাকতে পছন্দ করি। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে থাকলে এক কথা, দুই কথা করে অনেক কিছুই হবে। জীবনের কোনো স্বাধীনতা থাকবে না।

ছেলে মেয়েরা কি করে এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মান্নান জানান, আমি সচিব ছিলাম এখন প্রবীণ নিবাসে আছি। ওদের পরিচয় দিতে পারবো না। ওদের পরিচয় দিলে ওদের মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে। ছেলে মেয়েদের পরিচয় দেওয়া যাবে না।

তিনি আরো জানান, বড় ছেলে অস্ট্রেলিয়ান এক গ্যাস কোম্পানিতে চাকরি করে। মেঝ মেয়ে ও তার জামাই বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করে এবং ছোট মেয়ে মিরপুরের একটি ইংলিশ মিডিয়াম কলেজের লেকচারার।

ছেলে মেয়েদের আপত্তি থাকার কারণে ছেলে মেয়েদের নাম বলতে চাননি আব্দুল মান্নান। একাকী থাকতে কেমন লাগে এমন প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে গাল বেয়ে গড়াতে থাকে নোনা জল।

ছেলে মেয়েরা না আসলেও বাবা বলে কথা। সন্তানদের প্রতি ভালোবাসার কোনো কমতি নেই। ছেলে মেয়েরা পিতাকে না দেখলেও দেওয়ালে টানানো ফ্রেমে বন্দি তাদের ছবিগুলো দ্যাখেন সারাক্ষণ।

এখন সময় পার করেন ইসলামী বই, কবিতা, উপন্যাস ও খবরের কাগজ পড়ে। আব্দুল মান্নান যে একজন বইয়ের পোকা তার রুম দেখলেই তা আর মুখে বলে দিতে হবে কাউকে। প্রায় দুই শতাধিক বই রুমে সাজিয়ে রেখেছেন তিনি। অধিকাংশ সময়ই এসব বই পড়ে সময় পার করেন আব্দুল মান্নান। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের এক বন্ধুকে গবেষণার কাজে সাহায্য করছেন তিনি প্রবীণ নিবাসে বসেই।

এভাবেই প্রতিদিন জানালার দিকে অপলক দৃষ্টিতে কার যেনো পথ চেয়ে সময় পার করেন তিনি। নিঃসঙ্গ জীবনে গল্প করার সঙ্গী পেলে তাকে আর সহজে ছাড়তে চান না।

২০০৬ সাল থেকে একই প্রবীণ নিবাসের ৪১৭ নম্বর কক্ষে আছেন জাহাঙ্গীর হোসেন (প্রতীকী নাম)। জাহাঙ্গীর হোসেনের জীবনের গল্পটা আরো করুন।

৩৫ বছর বিদ্যুত বিভাগে চাকরি করেছেন। যাবতীয় সম্পদ ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার জন্য খরচ করেছেন, নিজের জন্য কিছুই সঞ্চয় করেননি। জীবনের শেষ সময়েও এসে একটা ভুল করেছেন জাহাঙ্গীর হোসেন। চট্টগ্রামের সোসাইটিতে অবস্থিত ৫ কাঠা প্লটের ওপর একটি বাড়ি সন্তানদের নামে লিখে দিয়েছেন। তাই এখন ঠিকানা বলতে এই প্রবীণ নিবাস।

তার জন্মস্থান চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহরেই। বিয়ে করেন সিলেটে। তিন সন্তানের জনক জাহাঙ্গীর হোসেন। বড় মেয়ে সিলেট মেডিকেল কলেজের কর্মকর্তা। ছোট মেয়ে ও তার জামাই কানাডায় থাকে। দুই সন্তান মাঝে মধ্যে ফোনে যোগাযোগ রাখলেও বড় ছেলে কোনো যোগাযোগ রাখে না। বড় ছেলে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের লেকচারার।

জাহাঙ্গীর হোসেন ১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকা পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা করে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডে ৩৫ বছর চাকরি করেন। চাকরি শেষে তার ঠিকানা হয়েছে আগারগাঁও প্রবীণ নিবাসের ৪১৭ নম্বর কক্ষে।

শেষ বয়সে জীবনের এই করুণ পরিণতি হবে ভাবতে পারেন নি জাহাঙ্গীর হোসেন।

শেষ বেলায় প্রবীণ নিবাস থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৩৫ বছর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে চাকরি করেছি। ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা কর‍াতে গিয়ে এক টাকাও সঞ্চয় করিনি। জীবনের শেষ বেলায় এসে চট্টগ্রাম শহরে ৫ কাঠা জমি ছিল সেটাই ছেলের নামে লিখে দিয়েছি।

একাকী জীবন কেমন লাগছে এমন প্রশ্নের জবাবে, কাঁধে রাখা গামছা দিয়ে চোখের নোনা জল মুছতে থাকেন জাহাঙ্গীর।

জীবনের শেষ মুহ‍ূর্তেও ছেলে-মেয়েদের জন্য ভালোবাসার কোনো কমতি নেই বৃদ্ধের। তাইতো ছেলে মেয়ের কোনো পরিচয় দিতে চাননি। যদি ছেলে মেয়েদের সম্মান যায়! জন্মের পর থেকে তিল তিল করে যে ছেলে মেয়েদের মানুষের মতো মানুষ করার চেষ্টা করেছে সেই তাদেরই যেন বোঝা এই বৃদ্ধ।

তাই রোববার বাবা দিবসে এসব বাবাদের জীবনের মিল খুঁজে পাওয়া যায় শিল্পী নচিকেতার সেই চিরচেনা সুরে...

ছেলে আমার মস্ত মানুষ মস্ত অফিসার
মস্ত ফ্লাটে যায় না দেখা এপার ওপার
নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামি দামি
সবচে কমদামি ছিলাম একমাত্র আমি

ছেলের আমার, আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম।।

সূত্র: Click This Link

৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×