somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিপ স্টেট : রাষ্ট্রের ভেতরে রাষ্ট্র

৩০ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডিপ স্টেট’ কে বাংলায় ‘ছায়া রাষ্ট্র’ বা ‘গুপ্তরাষ্ট্র’ বলা যেতে পারে।

ডিপ স্টেট কী?
রাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটি সমান্তরাল রাষ্ট্র, সমসাময়িক রাজনীতি বিজ্ঞানে একে “deep state” নামে অভিহিত করা হয়। এ ধরনের রাষ্ট্রে পর্দার অন্তরালে একগুচ্ছ রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি সক্রিয় থাকে যারা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। সাধারণভাবে বোঝানো হয়, এটা হলো দৃশ্যমান সরকারের বাইরের বা পেছনের সরকার। এই অদৃশ্য সরকার নির্বাচিত প্রতিনিধি সরকারের প্রদত্ত হুকুম, পরামর্শ বা বক্তব্য শোনে। কিন্তু বাস্তবায়ন করে নিজেদের হিসাব অনুসারে।

উইকিতে ডিপ স্টেট’ কে ছায়া সরকার (ষড়যন্ত্র) বলে অনুবাদ করা হয়েছে।



ছায়া সরকার হচ্ছে এক গুচ্ছ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব যা এই ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় যে, বাস্তব ও প্রকৃত রাজনৈতিক ক্ষমতা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধির দ্বারা গঠিত হয় না (যেমন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস), বরং বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারা গঠিত হয় যারা পর্দার আড়ালে থেকে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের নজরের বাইরে থেকে ক্ষমতার চর্চা করেন। এই বিশ্বাস অনুসারে, আনুষ্ঠানিক নির্বাচিত সরকার এই ছায়া সরকারের অনুগত হয় যেখানে এই ছায়া সরকার সকল নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী হয়।

ছায়া সরকার তত্ত্ব প্রায়ই প্রস্তাব করে যে, সরকারকে গুপ্তভাবে বৈদেশিক সত্ত্বা (যেমন এলিয়েন, দ্য ভ্যাটিকান এবং জেস্যুটস), আভ্যন্তরীন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় (যেমন ইহুদি, করপোরেট সমাজ ও সেন্ট্রাল ব্যাংক বা ফ্রিম্যাসোন) বা কোন বৈশ্বিক অভিজাত ও রাষ্ট্রাতিগ প্রতিষ্ঠান (নিও ওয়ার্ল্ড অর্ডার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব অনুসারে সুপ্রান্যাশনাল অরগানাইজেশন) দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয় যারা রাষ্ট্রের নীতিতে হস্তক্ষেপ করতে চায় বা বিশ্বকে জয় করতে চায়।

এর পেছনের কারন বা সম্ভাব্য সুত্র, বিষয় বা নিয়ামক হিসেবে যে সব শব্দ, নাম বা তত্ত্ব বেশি আলোচিত তেমনি কিছু বিষয় হল
• পঞ্চম বাহিনী, নব্য বিশ্ব ব্যবস্থা (রাজনীতি), সিংহাসনের পেছনে ক্ষমতা, পুতুল রাষ্ট্র, স্মোক-ফিলড রুম, হলি সি, জেসুইট
ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, দ্য প্রোটকল অব দ্য এল্ডারস অব জায়ন,
• করপোরেটতন্ত্র, • ম্যাসোনিক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, • নব্য বিশ্ব ব্যবস্থা (ষড়যন্ত্র তত্ত্ব), • বিশ্ব কর্তৃত্ব

ছায়ারাষ্ট্রের আধুনিক স্থপতি ডেভিড রকফেলার ১৯৭৩ সালে ৮৭ জন ধনী, ক্ষমতাবান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নিয়ে ট্রাইলেটারাল কমিশন তৈরি করেছিলেন। নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এরা কাজ শুরু করেন। এরা ইউরোপ-আমেরিকার বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং এই কমিশনের সদস্যদের কেউ-না-কেউ আমেরিকা-ইউরোপে ক্ষমতায় গেছেন। যেমন জিবনিউ ব্রেজিনস্কি, যিনি প্রেসিডেন্ট ওবামার শিক্ষক ছিলেন। ব্রেজিনস্কি ট্রাইলেটারাল কমিশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা। এই কমিশনের সদস্য লুকাস পাপাডোমস এবং মারিও মন্টি যথাক্রমে গ্রিস ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এই কমিশনের সদস্যরা বিশ্বব্যাংকে প্রেসিডেন্টদের বেশির ভাগ। বুশ, ক্লিনটন, ডিক চেনি, আল গোরও এই কমিশনের সদস্য হিসেবে বিশ্বঅর্থনীতি এবং রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন; এখনো করছেন।


ইতিহাস
ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত রচনাগুলো একটি গুপ্ত সরকারের অস্তিত্বকে ধরে নেয়া হয় যা আপাত সরকারের পেছনে আসল ক্ষমতার অধিকারী। এরকম রচনার মধ্যে ড্যান স্মুট, উইলিয়াম গাই কার, জিম মারস, ক্যারল কুইংলি, গ্যারি অ্যালেন, অ্যালেক্স জোনস, ডেস গ্রিগিন, জি. এডোয়ার্ড গ্রিফিন, ডেভিড আইক এবং দ্বিতীয় মাইকেল এ. হফম্যান এর রচনা রয়েছে। এই লেখকদের মধ্যে কেউ কেউ বিশ্বাস করতেন, এই গুপ্ত সরকারের সদস্যরা কাউনসিল অব ফরেইন রিলেশনস, রয়াল ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল এফেয়ারস, দ্য ট্রাইলেটারেল কমিশন, দ্য বিল্ডারবার্গ গ্রুপ, সিআইএ এবং এমআই৬ এর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে বা এদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে এরা আন্তর্জাতিক ব্যাংক এবং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্ব ব্যাংক এবং ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্ট এর সহায়তা নিতে পারে। এই ধারণাটি যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় টেলিভিশন শো দ্য এক্স-ফাইলস দ্বারা জনপ্রিয় হয়।

মিল্টন উইলিয়াম কুপার দাবী করেন, ছায়া সরকার বহির্বিশ্বের এলিয়েনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ১৯৯১ সালে তার প্রকাশিত গ্রন্থ বিহাইন্ড এ পেল হর্স "ইউএফও এবং মিলিশিয়া সারকেলে" প্রভাবশালী ছিল। বইটিতে "গুপ্ত বিশ্বের সরকারের কার্যাবলি" এবং "যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের উপর ইলুমিনেটির যুদ্ধের ঘোষণা সংক্রান্ত বিভিন্ন গুপ্ত কার্যাবলি" সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হয়। কুপার দাবী করেন তিনি যখন নেভিতে কাজ করেন তখন একটি গুপ্ত নথি দেখেন যেখানে এলিয়েনদের সাথে সরকারের বিভিন্ন চুক্তির বিষয়ে বর্ণনা ছিল। কুপার ইলুমিনেটির ধারণাকে তার বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত করেন এবং দাবী করেন, বহির্বিশ্বের এলিয়েনরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাথে গুপ্তভাবে জড়িত। তিনি ১৯৫৪ সালে ডিউইট ডি. আইজেনহাওয়ারকে এলিয়েনদের সাথে মধ্যস্থতা করা, ইলুমিনেটির একটি অভ্যন্তরীন চক্র প্রতিষ্ঠা করে তাদের সাথে সম্পর্কের ব্যবস্থাপনা এবং জনগণের কাছ থেকে এসব গোপন রাখার জন্য অভিযুক্ত করেন। কুপার বিশ্বাস করতেন, এলিয়েনরা বিভিন্ন গুপ্ত সংগঠন, ধর্ম, জাদু, উইচক্রাফট এবং কাল্টের দ্বারা মানবজাতিকে শাসন ও প্ররোচিত করে। এমনকি ইলুমিনেটিও নিজেদের অজান্তেই এলিয়েনদের দ্বারা প্রভাবিত হয়।



কুপার ইলুমিনেটিকে গুপ্ত আন্তর্জাতিক সংগঠন হিসেবে বর্ণনা করেন, যাকে দ্য বিল্ডারবার্গ গ্রুপ দ্বারা ন্নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এটি নাইটস অব কলম্বাস, মেসনস, স্কাল এবড বোন্স এবং অন্যান্য সংগঠনের সাথে মিলে ষড়যন্ত্র করে। তার কথায় এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে, নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার বা নব্য বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। কুপারের মতে, ইলুমিনেটি ষড়যন্ত্রকারীরা কেবল তাদের নিজেদের স্বার্থ অর্জনের জন্যই এলিয়েন হুমকি আবিষ্কার করে নি, বরং বিশ্বকে দখল করতে সক্রিয়ভাবে এলিয়েনদের সাথে মিলে (বা এলিয়েন দের নামের আড়ালে নিজেদের বিশ্ব ক্ষমতার গোপন লিপ্সাকে লুকানোর) ষড়যন্ত্রে জড়িত। কুপার বিশ্বাস করতেন জেমস ফরেস্টালের বেথেসডা হাসপাতালের ষোল তলার জানালা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি ম্যাজেস্টিক-১২ নামের একটি গুপ্ত কমিটির কারসাজি ছিল এবং জেসন এডভাইজরি গ্রুপের বিজ্ঞনীরা ট্রাইটেরিয়াল কমিশন এবং কাউন্সিল অব ফরেইন রিলেশন এর নির্বাহী কমিটি মেম্বারদেরকে সবসময় রিপোর্ট করে যারা ইলুমিনেটির উচ্চপদস্থ সদস্য।

এর চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মাইকেল লোফগ্রেন তার ‘দি ডিপ স্টেট : দি ফল অব দি কনস্টিটিউশন অ্যান্ড দি রাইজ অব শ্যাডো গভর্নমেন্ট’ এ তিনি বলেছেন, "এই ছায়ারাষ্ট্রের সদস্যরাই নির্বাচনে সাহায্য করে; নির্বাচিতদের তথ্য দিয়ে তাদের নীতি ও কর্মপন্থা এমনভাবে নির্মাণ করিয়ে নেয় যেন অবশেষে তারাই এর ভোক্তা হতে পারে। অর্থাৎ এরা শাসন-শোষণ-নির্বাচন করে থাকেন নিজেদের জন্য, তবে অপরের নামে।
এরা কিন্তু পেছনের দরজা দিয়ে আসেননি। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার তৈরি করে আইন প্রণয়ন করে এই গোষ্ঠীর সৃষ্টি করেছেন। এরা প্রতিষ্ঠান বা এসটাবলিশমেন্ট বলে পরিচিত, যার ওপর ভর করে থাকতে হয় সবাইকে।

লেখক জর্জ ফ্রিডম্যান এই স্টেটের ইতিহাস বর্ণনা করে বলেছেন, এর জন্ম সরকার এবং ক্ষমতা ব্যবস্থার উদ্ভবের সাথে সাথে। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতরা তাদের বশংবদদের দিয়ে যে প্রশাসনব্যবস্থা নির্মাণ করে, তারাই ছায়ারাষ্ট্র।

এই প্রশাসন ব্যবস্থা গঠন করার প্রস্তাব দেন জার্মান অর্থনীতিবিদ-আইনজ্ঞ কার্ল সুজ। তিনি বলেন, সরকার পরিচালনার জন্য অরাজনৈতিক কর্মীবাহিনীর প্রশাসন থাকা উচিত। এরা রাজনৈতিক নির্দেশে চলবে। তবে তাদের মেধাবী হতে হবে। পরে পরীক্ষার মাধ্যমে সিভিল সার্ভিসের আবির্ভাব ঘটে এবং ধাপে ধাপে তাদের অবস্থানকে সংহত-সুদৃঢ় করে। ফলে ইচ্ছে করলেই এদের সরানো সহজ নয়। দৃশ্যত সিভিল সার্ভিস রাজনৈতিক ইচ্ছার অনুগত হলেও তারা নিজেদের এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করে থাকে। এ জন্য এখন প্রায়ই দেখা যায়, প্রাক্তন সিভিল সার্ভিসের সদস্যরা রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন এবং ক্ষমতাসীন দলসহ সব রাজনৈতিক দল তাদের সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। এর প্রধান কারণ, এদের মাধ্যমে ডিপ স্টেটকে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

এই এসট্যাবলিশমেন্ট সরকারি-বেসরকারি এবং অন্য সব সংস্থার সর্বস্তরে অবস্থিত। এসব প্রতিষ্ঠানের নীতি, কর্মপন্থা বা কর্মকাণ্ড প্রস্তুত এবং বাস্তবায়ন তারাই করে থাকেন; যদিও এগুলো প্রচারিত হয়ে থাকে জনপ্রতিনিধি বা জনগণের সেবকদের নামে। এ জন্য দেখা যায়, কোনো এক সময়ে এসব কর্মকাণ্ডের দায়ভাগ নিতে হয় জনপ্রতিনিধিদের। ফলাফল বিরূপ হলে দায়ভার পুরোটাই প্রতিনিধিদের ওপর চাপানো হয়।

এই ছায়ারাষ্ট্রই নির্ধারণ করে কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী ক্ষমতায় যাবে। এই নির্ধারণের মূল মাপকাঠি হলো কতটুকু সুবিধা বা সুযোগ এই ক্ষমতা প্রত্যাশি দল ক্ষমতায় গিয়ে তাদের দিতে পারবে। অতীতে এই প্রশ্নটি ছিল সরাসরি শক্তির । শক্তিমানেরা ক্ষমতা সরাসরি দখল করে অস্ত্রের সাহায্যে তা রক্ষা করত। প্রতিপক্ষ তাদের চেয়ে শক্তিশালী হলে তারা ক্ষমতাচ্যুত হতো বলপ্রয়োগের মাধ্যমে। এখন এটা হয় বুদ্ধিচর্চার মাধ্যমে। যার নাম কখনো নির্বাচন।, কখনো সংস্কার, কখনো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। আবার স্বার্থ যখন রক্ষিত হয় তখন রাজতন্ত্রেও তাদের আপত্তি থাকেনা। যেমন সৌদি আরব!

এই ছায়া রাষ্ট্র নিজেদের প্রয়োজনীয় তথ্য-সূত্র সুবিধাগুলো আহরণ বা নির্মাণ করে রাষ্ট্রের অর্থ, উপযোগিতা ও সেবা ব্যবহার করেই। কখনো কখনো এই সেবা ব্যবহারের আকার বিস্ময়কর। সেজন্য এসব ব্যবহারের প্রয়োজনও তারা তৈরি করে। এসব উদ্দেশ্যে তারা নানা অভাবিত ঘটনা পেছন থেকে ঘটিয়ে থাকে। যেমন, নাইন ইলেভেন, লিবিয়ার গাদ্দাফি, ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের পতন। ঘটনাগুলো ঘটানো হয় তখন, যখন ঋণগ্রস্ত মার্কিন সরকার প্রায় অচল হয়ে পড়ে; বা সরকার ভীষন রকম অজনপ্রিয় হয়ে পড়ে। বা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে; তখন জনগণের অসন্তোষকে, দৃষ্টিকে অন্য পথে চালানোর জন্য এ ধরনের আক্রমণ চালানো হয়, ঘটনা ঘটানো হয়।

তারা মনে করলো তাদের স্বার্থ সংরক্ষনের জন্য প্রয়োজন সারা বিশ্বের তথ্য সংগ্রহ করা, তারা জনগণকে বোঝাল, বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সবার তথ্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এ জন্য ১৭০ কোটি ডলার খরচ করে ইউটাহতে ১৭টি ফুটবল মাঠের সমান একটি দালান নির্মাণ করেছে ২০০৭ সালে। এই ভবনে যে কম্পিউটার আছে তাতে এক ইওটাবাইট তথ্য আছে। অর্থাৎ ৫০০ কোটি লাখ পাতায় যে তথ্য থাকে, তার সমান। অন্য কথায়, এখানে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের তথ্য পাওয়া যাবে। এই ছায়ারাষ্ট্র ওয়াশিংটনে ৩৩টি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছে। এক কোটি ৭০ লাখ বর্গফুটে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৮,৫৪,০০০ বেসরকারি গোয়েন্দা কাজ করে যাচ্ছে। তারা দেশের এবং বিশ্বের প্রয়োজনীয় সব প্রতিষ্ঠান ও মানুষের তথ্য অনুসরণ করে।



এই ছায়া সরকার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে অত্যন্ত প্রাধান্য দেয়। মনোবিজ্ঞানী ড. আয়ারভিং এল জানিস বলেছেন, এই কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে গিরগিটির রঙ পাল্টানোর মতো প্রার্থিত জনগোষ্ঠীকে এক কাতারে আনা যায়। এর নাম দিয়েছেন ‘গ্রুপ থিংক’। তখন এদের যা বলা হয়, তাই মেনে নেয়। তাই দেখা যায়, এই কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে সরকার এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী নানা দিন পালন করে, অনেক স্মৃতিসভা করে, অযথাই মিছিল, আনন্দের আয়োজন করে। ড. আয়ারভিং বলেছেন, এসব ভড়ং এক দিকে জনগণের চিন্তা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে, অপর দিকে এক বিরাটসংখ্যক অনুসারী সৃষ্টি করা এবং খুশি করা সম্ভব।

এই ডিপ স্টেট কিন্তু পুরো সরকার নয়। লোফগ্রেন দেখিয়েছেন, এরা মূলত জাতীয় প্রতিরক্ষা, গোয়েন্দা সংস্থা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিচার বিভাগ এবং অর্থ বিভাগের একাংশের সমন্বয়ে গঠিত। এরা বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেদের মাঝে গোপন ও স্বতঃস্ফূর্ত যোগাযোগ রক্ষা করে। বৈদেশিক মন্ত্রণালয়কে হাতের পাঁচ আঙুলের মতো ব্যবহার করা হয়। যদি কোনো রাজনীতিবিদ ভুলে যান তার লাইনটি, এ সংস্থাগুলো তড়িৎগতিতে তা স্মরণ করিয়ে দিতে ভোলে না।

লোফগ্র্রেনের একটি তথ্য অত্যন্ত মূল্যবান। ডিপ স্টেট দু’টি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। তা হলো অপরিহার্য জাতীয় নিরাপত্তা এবং বাণিজ্যিক সংস্থার আধিপত্য।

জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে ডিপ স্টেট জনগণের সাধারণ অধিকারটুকুও ছিনিয়ে নেয় এবং তাদের একটি ভীতির রাজ্যে নীত করে। নিরাপত্তার নাম বলে তারা রাষ্ট্রকে নানা সঙ্ঘাতে জড়িয়ে ফেলে আর্থিক সুবিধা লুটে নেয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট এই ডিপ স্টেট সম্পর্কে এক প্রণিধানযোগ্য মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রকাশ্য সরকারের পেছনে সিংহাসনে আসীন থাকে এক অদৃশ্য সরকার যার জনগণের প্রতি কোনো দায়িত্ব নেই ও আনুগত্যও নেই।’

অ্যাটর্নি ও লেখক জন ডাবলু হোয়াইটহেড তার ‘ব্যাটলফিল্ড আমেরিকা : দি ওয়্যার অন আমেরিকান পিপল’ বইতে দেখিয়েছেন এই ডিপ স্টেটের সদস্যরা- মিলিটারি, পুলিশ, সংগঠিত অপরাধী সংস্থা, সরকারি কর্মচারীরা ক্ষমতাবান হচ্ছেন এবং ধনসম্পদের মালিক হচ্ছেন। সংবিধানে বিধৃত জনগণের ‘উই দি পিপল’ বলে অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই ডিপ স্টেট আসলে পুলিশি রাষ্ট্র বলতে যা বোঝা যায়, সত্যিকারভাবে তাই সৃষ্টি করেছে। অধিকারহীন জনগণ অসহায় এবং প্রায় অনুপস্থিত। তিনি বলেছেন, ‘এ অবস্থা বিরাজ করছে বিশ্বের সব দেশে এবং এটা অপরিবর্তনীয়।’

এটা অপরিবর্তনীয় এ জন্য যে, বিশ্বে এখন ‘নির্বাচিত’ সরকারের পরিবর্তনের সময় একটি স্বল্পকালীন সরকার থাকে। তারা এই স্টেট। এরাই নির্বাচন পরিচালনা করে এবং দৃশ্যত ক্ষমতা বদল করে। আসলে আড়াল থেকে এরাই সব কলকাঠি নাড়ছে। হোয়াইটহেড বলেছেন, ‘অবস্থা অপরিবর্তনীয় হওয়ার আর একটি কারণ এই স্টেটের শাসনে ধনী আরো ধনী হয়, গরিব হয় আরো গরিব, মিলিটারি আরো যুদ্ধবাজ হতে পারে। অশান্তি জিইয়ে রেখে তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে।’



ডিপ স্টেট নিজেদের আরাম-আয়েশ-নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। হোয়াইটহেড তথ্য দিয়েছেন, ‘যদি আণবিক যুদ্ধ হয় তার ফলাফল থেকে প্রেসিডেন্সিকে বাঁচানোর জন্য ব্লুমন্টের কাছে মাউন্ট ওয়েদারে মাটির নিচে এক বিশাল শহর তৈরি রাখা হয়েছে। বিপদের সময় ডিপ স্টেটের অধিবাসীরাই সেখানে থাকবে, জনগণ নয়।



ডিপ স্টেটের প্রধান অঙ্গ হলো গোয়েন্দা বাহিনী। এর বিস্তৃত ও বিশাল বর্ণনা পাওয়া যায় ট্রেভর আরনসনের বই ‘দি টেরর ফ্যাক্টর’। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডের চমৎকার বর্ণনা রয়েছে এ বইটিতে। বিশেষ করে এফবিআই এবং সিআইএ’র কর্মপন্থার একাংশের বর্ণনা। সংস্থাদ্বয়ের আছে বিশাল বাজেট ও লোকবল এবং এদের কর্মপরিধি বিশ্বজুড়ে। বিশ্বের সব দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে বা সাথে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। বইটিতে ‘ম্যানুফ্যাকচারিং টেররিস্ট’ আলোচনায় ট্রেভর দেখিয়েছেন, কাউন্টার টেরোরিজমের নামে অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড করা হয়ে থাকে।

আরনসন অনুসন্ধানে পান ‘এফবিআই সন্ত্রাস দমন বা প্রতিরোধের পরিবর্তে প্রান্তিক, হতাশাগ্রস্ত, বেপরোয়া, মানসিক অসুস্থ বা অপরিপক্বদের মাঝ থেকে মানুষ সংগ্রহ করে সন্ত্রাসী বানায়। অন্য কথায় এফবিআই যে শত্রু দমনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত, তারা বরং সেই শত্রু নির্মাণে পটু।’ দেখা গেছে, তাদের চিহ্নিত সাজাপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীরা তাদেরই একসময়ের কর্মী। এবং এই কর্মকাণ্ড নিরবচ্ছিন্নভাবে সারা বিশ্বে, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বে চলছে।

ডিপ স্টেটের একটি প্রিয় কর্মকাণ্ড হচ্ছে যুদ্ধ। তারা নানা বিষয়ের উদ্ভাবন করে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মাঝে যুদ্ধ, অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাত, সামাজিক অশান্তি উসকে দেয় এবং এর ফলের জন্য অপেক্ষা করে। ফল হলো, তাদের অর্থ ও ক্ষমতা লাভ। হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আর জে রুমেল তার ‘ডেথ বাই গভর্নমেন্ট’ বইতে আধুনিক কালের বিভিন্ন সঙ্ঘাত-যুদ্ধে ১৯০০ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে ১৬ কোটি লোক নিহত হয়েছে বলে এক অনুসন্ধানী তথ্য প্রকাশ করেন। এদের মাঝে সবচেয়ে বেশি মানুষ নিহত হয় চীনে, এরপর রাশিয়ায় এবং জার্মানিতে। চীনে মৃতেরে সংখ্যা উল্লেখ করেছেন সাত কোটি ৭০ লাখ, রাশিয়ায় ছয় কোটি ১৯ লাখ, জার্মানিতে দুই কোটি ৯ লাখ। তবে তিনি উল্লেখ করেছেন- ধর্মীয় বিবাদ, জাতিগত বৈষম্য, অর্থনৈতিক টানাপড়েন, শিক্ষাগত অসুবিধার কারণে এ মৃত্যুগুলো ঘটেনি।

হোয়াইটহেডের বক্তব্য, অনির্বাচিত ছায়া সরকার থাকবেই এবং লোফগ্রেনের মতে- এ রাষ্ট্র আড়িপাতা, অস্ত্রশক্তি, অর্থ এবং স্বার্থবাদীদের সহায়তায় এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত যে, এর কোনো পতন সম্ভব নয়। জনগণকে এর ভার সইতেই হবে এবং এর কর্মকাণ্ডেও কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। আর সুযোগসন্ধানী, ক্ষমতালোভীদের অভাব কখনো হবে না। জনগণ কখনো জানতে পারবে না- তাদের অজান্তে তাদের সব অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে এবং তাদের শাসন-শোষণ করছে এক ক্ষুদ্র গোষ্ঠী, যারা সরকারের মধ্যে লুকিয়ে থাকে।


ডিপ স্টেট নিয়ে কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিদের উক্তি উল্লেখ করে শেষ করছি -

"আমাদের রিপাবলিকের ভীতি হচ্ছে অদৃশ্য সরকার, যা একটি বিশালাকার অক্টোপাস এবং আমাদের শহর, রাজ্যসমূহ ও জাতির উপরে তার পাগুলো নাচাচ্ছে।" - জন হাইলান, নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র, ১৯২২
"প্রকাশ্য সরকারের পেছনে একটি অদৃশ্য সরকার আছে যার জনগণের প্রতি কোন আনুগত্য ও দায়বধ্যতা নেই" -রাষ্ট্রপতি থিওডোর রুজভেল্টের প্রোগ্রেসিভ ("বুল মুজ") পার্টির প্লাটফর্ম থেকে।[১০]
"গণতান্ত্রিক সমাজে জনগণের থেকে আসা সংগঠিত মতামতের একটি সচেতন ও বুদ্ধিদীপ্ত হস্তক্ষেপ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যারা সমাজের এই অদৃশ্য কৌশলকে হস্তক্ষেপ করে তারা অদৃশ্য সরকার, যারা দেশের প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী। আমরা সকার, আমাদেরকে শাসন করা হয়, আমাদের মনকে গঠন করা হয়, স্বাদকে তৈরি করা হয়, আমাদের ধারণা হচ্ছে নির্দেশিত, আর এগুলোর বেশিরভাগই তাদের দ্বারা হয় যাদের সম্পর্কে আমরা কখনও শুনিই নি।" - এডওয়ার্ড বারনেস, দ্য "ফাদার অব পাবলিক রিলেশনস", তার ১৯২৮ সালের প্রভাবশালী বই প্রোপাগান্ডা -তে এটা লেখেন।[১১]
"কিন্তু অকপটে বলতে গেলে একটি বাইরের সূত্র আছে যাকে আমরা "ডিপ স্টেট" বা "ছায়া সরকার" বলি। জনগণ এদে দ্বারা খুবই প্রভাবিত হয়, যারা আমাদের সরকার, আমাদের রাষ্ট্রপতির চেয়েও বেশি ক্ষমতাশালী।" - রন পল, প্রাক্তন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি, নভেম্বর ২০১৬ তে বলেন (ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজয়ী হবার পর)।[১২]

এ বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে তৃতীয় বিশ্বের অবস্থা সহজেই অনুমেয়!

উৎসর্গ : ভ্রমরের ডানা
সংকলনে কৃতজ্ঞতা :
ভ্রমরের ডানা: উনার কবিতা থেকেই লেখার অনুপ্রেরণ
ব্যবচ্ছেদ- ২৬- ডিপ ষ্টেট
উইকি
ডিপ স্টেটের শাসন: আলমগীর মহিউদ্দিন
বিভিন্ন অনলাইন জার্নাল
ছবি কৃতজ্ঞতা: গুগল

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৮:৫২
৩৭টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×