somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বোধ - জীবনের নতুন মানে

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুদিন আগে একটা ওয়েব সাইটে চমৎকার একটা লেখা পড়েছিলাম। লেখাটা ভালো লেগে যাওয়ায় ভাবলাম অনুবাদ করে ফেলি। যথারীতি অনুবাদটায় লেখাটির মূল ভাব পুরোপুরি ফুটিয়ে তোলা যায়নি। তারপরও যদি এটা পড়ে কেউ উপকৃত হন ভেবে অনুবাদটা করে ফেললাম!

মূল ইংরেজীটি পাওয়া যাবে এখানে

===========================================

জীবনে একটা সময় আসে যখন তোমার সত্যিকারের একটা বোধ জন্ম নেয়, যখন তুমি জীবনকে সত্যিকারভাবে বুঝতে পারো। তীব্র হতাশা আর দুঃখের একটা পর্যায়ে একসময় তোমার ভেতরের "আমি" জেগে ওঠে এবং চিৎকার দিয়ে বলে - যথেষ্ট হয়েছে! নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করতে করতে একসময় তুমি শান্ত হয়ে আসো, তোমার কান্না থেমে যায়, তুমি আয়নায় তোমাকে দেখো, তুমি জানালা খুলে বাইরের আকাশটাকে দেখো। আর তখন আস্তে আস্তে তুমি জীবনকে আবিষ্কার করো একটু অন্যরকমভাবে, পৃথিবীটাকে দেখো একটু অন্য চোখে।

এটা হচ্ছে তোমার নতুন জীবন বোধঃ

তুমি বুঝতে পারো তোমার চারপাশের সবকিছু বদলে যেয়ে তোমার সব আশা আর স্বপ্নগুলি সত্যি করে দিবে এটা কখনোই হবার নয়। তুমি যে সুখ, শান্তি, আর নিরাপত্তা চাচ্ছো সেটা এমনি এমনি তোমার কাছে ছুটে আসবেনা। তুমি মেনে নিতে শেখো যে তুমি কোন রাজপুত্র কিংবা রাজকন্যা না এবং বাস্তব জীবনে "দি এন্ড" সবসময় সুখকর হয়না। "অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বাস করিতে লাগিলো" এই ব্যাপারটা শুরু করতে হবে তোমার নিজের কাজের মাধ্যমে এবং এটা মেনে নেওয়ার মাধ্যমেই শান্তি ও সুখ আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

তুমি আনুধাবন করতে পারো যে তুমি নিজে পারফেক্ট না এবং সবাই সবসময় তোমাকে পছন্দ নাও করতে পারে, তোমার সব কাজে খুশি নাও হতে পারে - এবং এতে দোষের কিছু নেই। সবার নিজস্ব দৃষ্টিকোন এবং মতামত থাকতে পারে। তখন তুমি নিজের অবস্থানকে শক্ত করার জন্য, নিজেকে আরো পরিপূর্ণ করার জন্য কাজ শুরু করো। এভাবে তোমার মধ্যে তৈরি হয় এক নতুন আত্মবিশ্বাস।

অন্যরা তোমার জন্য কী করলো কিংবা কী করে নাই সেটা নিয়ে তুমি অভিযোগ অনুযোগ করা বন্ধ করো। এবং তুমি বুঝতে পারো জীবনে অনিশ্চয়তার উপর ভর করেই তোমার এগিয়ে যেতে হবে। তুমি আবিষ্কার করো যে মানুষ সবসময় যা বুঝাতে চায় তা বলেনা এবং যা বলে তা বুঝাতে চায়না এবং তোমার প্রয়োজনের সময় সবাই তোমার পাশে নাও থাকতে পারে। সবার নিজের জীবনে ব্যস্ত থাকার অনেক জিনিস আছে, অতএব তোমাকে নিজের উপর নির্ভর করা শিখতে হবে। আর স্বনির্ভর হওয়ার মাধ্যমে তোমার নিজের জীবনে নিরাপত্তাবোধ আসবে।

তুমি মানুষের দিকে আঙ্গুল তাক করা বন্ধ করো এবং তাদের দুর্বলতা ও ভুলত্রুটি মেনে নিতে শেখো। আর এভাবে মানুষের ভুলত্রুটি ক্ষমা করার মাধ্যমে তোমার মনে একধরণের প্রশান্তি জন্ম নেয়।

তুমি বুঝতে পারো যে তুমি নিজেকে এবং তোমার চারপাশের পৃথিবীকে যেভাবে মূল্যায়ন করো সেটা এসেছে তোমার মনের মধ্যে চারপাশ থেকে ঢুকানো অসংখ্য তথ্য ও তত্ত্বের মাধ্যমে। তুমি তখন তোমার মগজে ঢুকানো এইসব হাজার হাজার তথ্য ও তত্ত্বের যাচাই বাছাই করতে থাকো। তোমার নিজের সম্পর্কে মূল্যায়ন, তোমার কী পরা উচিৎ কী পরা উচিৎ না, তোমার কী ভালো লাগে কী ভালো লাগেনা, তোমার কী বিশ্বাস করা উচিৎ কী বিশ্বাস করা উচিৎ না, তুমি কোথায় থাকবা কোথায় থাকবানা, কী পেশা হবে তোমার, কাকে বিয়ে করবে, বাব-মা কিংবা সন্তানের সাথে তোমার সম্পর্ক কেমন হবে - এই সবকিছু নিয়ে তুমি নতুন করে ভাবতে বসো। তুমি তোমার চিন্তাভাবনার বদ্ধ পৃথিবীকে খুলে দাও এবং নতুন ধরণের, ভিন্ন ধরণের দৃষ্টিকোন এবং মতামতকে গুরুত্ম দিতে শেখো। তুমি জীবনের মানেকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করো।

জীবনে তোমার কী লাগবে এবং তুমি কী চাও এটা তুমি আরো ভালোভাবে বুঝতে পারো, এবং পুরনো, ভুল বিশ্বাস এবং তত্ত্ব থেকে তুমি বের হয়ে আসো। আর এভাবেই তুমি অন্যের মতামত ও কন্ঠ থেকে বের হয়ে এসে তোমার সত্যিকারের সত্ত্বার কথা শুনো।

তুমি শেখো যে দানের মধ্যে বড় প্রাপ্তি থাকে এবং সৃজনশীলতা এবং অন্যদের সাহায্য করা একটা চমৎকার মর্যাদাকর ব্যাপার।

তুমি শেখো যে সততা এবং সত্যবাদিতা পুরনো যুগের নীতিকথা নয় শুধু। জীবনের মূল ভিত্তি হতে হবে সততা এবং সত্যবাদিতা।

তুমি বুঝতে শেখো যে সবকিছু তোমাকে জানতে হবে এমন কোনো কথা নেই; পৃথিবীকে বাঁচানো তোমার একার দায়িত্ব নয়, এবং গাধা পিটিয়ে মানুষ করাও তোমার পক্ষে সম্ভব নয়। তুমি দোষ এবং দায়িত্ব এর মধ্যে পার্থক্য করতে শেখো, বিভিন্ন জিনিসের সীমারেখা টানতে শেখো, এবং অন্যকে প্রয়োজনে "না" বলতে শেখো।

এরপর তুমি ভালোবাসা সম্পর্কে জানতে পারো - রোমান্টিক ভালোবাসা এবং পারিবারিক ভালোবাসা। তুমি শেখো কতোটুকু ভালোবাসা উচিৎ, কতোটুকু স্যাক্রিফাইস করা উচিৎ, কখন স্যাক্রিফাইস বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ, কখন ভালোবাসাবাসি বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ।

তুমি সম্পর্ককে যেমন আছে তেমনই দেখতে শেখো, কল্পনায় তুমি কী চাও তেমনভাবে নয়। তুমি মানুষকে নিয়ন্ত্রণ না করা শেখো। তুমি শেখো যে মানুষ সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়, তাদের ভালোবাসাও কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। তুমি তোমার মতো করে, শুধু মাত্র নিজেকে সুখী করার জন্যে নিজের মতো করে ভালোবাসা দাবী করতে পারোনা।

তুমি বুঝতে শেখো নির্জনতা মানেই একাকীত্বতা নয়। আয়নার দিকে তাকিয়ে তুমি অনুধাবন করো তুমি কখনোই তোমার মনমতো সুন্দর হতে পারবেনা; অতএব তুমি তোমার মাথার ভেতরে থাকা তোমার মডেল চেহারাটি সরিয়ে ফেলো।

তুমি তোমার শরীরের মূল্য বুঝতে শেখো। তুমি স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে শুরু করো, ব্যায়াম করা শুরু করো। তুমি বুঝতে শেখো যে ক্লান্তি আমাদের প্রানশক্তি কমিয়ে দেয় এবং আমাদের মনে দূর্বলতা এবং ভয় ঢুকিয়ে দেয়। অতএব তুমি প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নেয়া শুরু করো। খাবার যেমন শরীরকে চালু রাখে, হাসি তেমনি আত্মাকে চালু রাখে। তাই তুমি আরো বেশি বেশি হাসো এবং খেলাধুলা করো।

তুমি বুঝো যে নিজেকে যতোটা যোগ্য মনে করো ঠিক ততোটাই তুমি পাও। জীবনে পরিশ্রম না করলে কিছু পাওয়া যায়না, অতএব তুমি চাওয়া এবং পাওয়ার মধ্যে পার্থক্য বোঝ এবং চাওয়াগুলিকে পাওয়ার জন্যে সত্যিকারের পরিশ্রম করো। সফলতার জন্যে সঠিক লক্ষ্য ঠিক করে কাজ করে যেতে হয় এবং দরকার হলে অন্যের কাছে সাহায্য চাওয়া যায়।

তুমি জানতে পারো পৃথিবীতে যদি কিছুকে ভয় করতে হয় সেটা হবে ভয়কে। যে মুহুর্তে তুমি কোনো কিছুকে ভয় পাওয়া শুরু করবে সেই মুহুর্তে আসলে তুমি নিজের মতো করে বেঁচে থাকার সুযোগ হারাচ্ছো। তোমাকে ভাবতে হবে যে যাই ঘটুকনা কেনো তুমি এটা সামলে নিতে পারবে এবং তুমি যা সিদ্ধান্ত নিবে তোমার জীবনে তাই ঘটবে।

তুমি জীবনে যুদ্ধ করতে এবং জীবনটাকে দুশ্চিন্তা এবং ভয় এর মধ্য দিয়ে পার না করে দিতে শেখো। তুমি মেনে নিতে শেখো যে জীবন সবসময় ফেয়ার না এবং মাঝে মাঝেই সবচেয়ে ভালো মানুষগুলোকে অনেক দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এর জন্যে তুমি ভাবো না যে ঈশ্বর তোমাকে শাস্তি দিচ্ছে অথবা তিনি তোমার প্রার্থনা শুনছেন না। এই ঘটনাগুলো জীবনেরই অংশ।

তুমি এ জীবনের ছোটখাট সুখগুলোর জন্যে কৃতজ্ঞ হতে শেখো। তোমার জন্ম আফ্রিকার কোনো যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বা দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশে হয়নি এটা ভেবে তুমি শান্তি পাও। ধীরে ধীরে তুমি নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নেয়া শুরু করো। তুমি কান পেতে তোমার মনের কথা শুনো এবং মন যা চায় তাই পাবার জন্যে পরিশ্রম করতে শুরু করো। তুমি জানালা খুলে বুক ভরে শ্বাস নাও এবং মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলো। তুমি জীবনকে নতুন করে শুরু করার প্রস্তুতি নাও এবং সবসময় পজিটিভ চিন্তাভাবনা করার সিদ্ধান্ত নাও।

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:৩৪
৩০টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×