ছবিঃ ইন্টারনেট
একটা গল্প দিয়া শুরু করি। হাজী দানেশের হলে থাকাকালীন সময়ে সব ফ্রেন্ডরা মিলে টিভি রুমে একসাথে বসে টিভি দেখাটা ছিল একটা বিশাল বিনুদনের উৎস। দেখা গেল সব ফ্রেন্ডরা মিলে টিভি রুমে বইসা আছি আর পিছন থেকে কেউ একজন আমার মাথায় টোকা দিয়া নির্লিপ্তভাবে টিভি দেখতাছে। আমি মাথা ঘুরাইলে দেখা যাইত সবাই ভিজা বিড়াল হইয়া গেছে। কিন্তু সবাই ব্যাপক মজা লইতেছে। আর আমি টোকা প্রদানকারীকে ধরার ব্যারথ চেষ্টা করতেছি। ব্যাপারটারে আপাতদৃষ্টিতে বিরক্তিকর মনে হইলেও এইখানে আমি আর আমার সবকটা ফ্রেন্ডে মিলে ব্যাপক মজা পাইতাম। এই ব্যাপারটারে আমি টিজিং মনে করি। মানে যখন সবাই মিলে মজা লয়, আর কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নাই তখনি কেবল কোন কিছুরে টিজিং বলা যাইতে পারে।
ইভ টিজিং শব্দটা একটা বেশ ইন্টারেস্টিং শব্দ। টিজিং শব্দটা শুনলে আমার মনের মধ্যে টিভি রুমের সেই রকম ফাইজলামি টাইপের কিছু একটা মনে আসে। আর ইভ টিজিং শব্দটা শুনলে মনে হয় ছেপেলেগুলা কোন মেয়েরে টিজ করতেছে (ভার্বালি), এতে মেয়েটাও বেশ মজা পাইতেছে আর ছেলেগুলার কথা না হয় নাই বললাম। কিন্তু সমস্যাটা হইল যে ব্যাপারটা আসলে সেরকম না।
ইভটিজিং জিনিসটা সিরিয়াসলি সেই রকম না। ব্যাপারটা বেশ গুরুতর। জিনিসটা এমন হইছে যে, আন-এক্সেপ্টেবল ভার্বাল কমেন্ট থেকে শুরু করে, ফিজিক্যাল ইম্প্রপার টাচ পর্যন্ত সবকিছুরে ইভটিজিং বলে চালায় দেওয়া হচ্ছে। এইটা ঠিক যে ইভটিজিং শব্দটারে আমরা সামাজিকভাবে একটা খারাপ শব্দ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারছি কিন্তু শব্দটা যদি সমস্যাটাকে ভালোভাবে ডিফাইন করতে না পারে তাহলে এই শব্দটা ইউজ করার কোন মানেই হয় না। ইনফ্যাক্ট এই শব্দটা সমস্যাটাকে হাল্কাভাবে উপস্থাপন কইরা ব্যাপারটার গুরুত্ব কমায় দিচ্ছে।
ইভটিজিং ব্যাপারটার সাথে একটা “কুলনেস” এর ব্যাপারও জড়িত আছে। ভার্সিটির ছেলেপেলেরা যখন একসাথে আড্ডা দেয় আর সামনে দিয়ে যদি কোন মেয়ে হাটে যায় তখন গ্রুপের যেই ছেলেটা ওই মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে একটা বাজে কমেন্ট ছুড়ে দিতে পারে তাকেই সবাই “কুল” মনে করে। আর গ্রুপের সবাই পরবর্তীতে “কুল” হইতে যাইয়া এক একটা ইভটিজার হইয়া যায় (কিন্তু নিজেও জানে না)।
ইভটিজার বলতে আমরা কিছু বখাটে ছেলেপেলেরে বুঝি,যাদের কোন কাজকাম নাই, রাস্তার পাশে বইসা বইসা বিড়ি ফুঁকে আর মেয়েগুলারে উত্যক্ত করে। ব্যাপারটা যদি আসলে সেই রকম হইত তাইলে কোন কথাই ছিল না। আমরা আর আমাদের ক্লোজ ফ্রেন্ডদের মধ্যেইযে বেশ হাই লেভেলের ইভটিজার আছে এইটা আমরা কখনো চিন্তাই করি না।
পহেলা বৈশাখের সময় টিএসসি তে যেই লেভেলের বর্বরতা হইছে সেইটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার মত না। অনেস্টলি বলতেছি, আমার ফেসবুকের হোমপেজ টিএসসির ভিডিওতে ভর্তি হইয়া গেছিল, কিন্তু আমি একটু দেইখা আর দেখতে পারি নাই।সবগুলারে হাইড কইরা দিছি। ভিডিওর অনেকে চিহ্নিত হইছে কিন্তু অনেকে হয় নাই। এখন কথা হইল যে এই শুয়োরের আওলাদ গুলা কারা? এই গুলা আর কেউ না। এইগুলা হয় আমি আপনি অথবা আমার আপনার ফ্রেন্ড। বিশ্বাস হয় না? একটু চিন্তা কইরা দেখেন, কারা গেছিল ওই ইভেন্টে? বুকে হাত দিয়া কন দেখি আপনি যাইয়া “পাখি/মাল” দেখেন নাই? আপনি হয়ত কিছু করেন নাই, আপনার আমার ফ্রেন্ডরাই ব্যাপারটা করছে।
একটা মেয়ে যখন এইরকম একটা অবস্থার শিকার হয় তখন তার মনের অবস্থাটা কেমন থাকে? একটু চিন্তা কইরা দেখেন দেখি। চিন্তা করতে পারতেছেন না/চাইতেছেন না? ব্যাপারটা সহজ কইরা দিচ্ছি। মনে করেন আপনি আর আপনার বোন/ওয়াইফ/গার্লফ্রেন্ড নিউমার্কেটের ভিড়ের মাঝখান দিয়া হাটতেছেন। এইসময় ১০/১২ জন পুলাপাইন সিস্টেমে আপনার বোন/ওয়াইফ/গার্লফ্রেন্ডরে ঘিরা ফালাইল। তারপর তিন চার মিনিট পর যখন ওরা উধাও হইল আপনি অসহায়ের মত দেখতেছেন যে আপনার বোন/ওয়াইফ/গার্লফ্রেন্ডের ওড়না উধাও হইয়া গেছে (ধরেই নিলাম মেয়েটা লাকি, ওরা নাঙ্গা কইরা ছাইড়া দেয় নাই)। আপনি ওর চোখের দিকে তাকাইতে পারবেন? আপনার কি মনে হবে তখন? ওরে কি বলবেন? চুপচাপ থাকবেন?
এইবার সেই মেয়েটা কথা বলি। ওর কি হবে জানেন?ও সারাজীবন ভিড়ের মধ্যে যাইতে ভয় পাবে। কোন ছেলে মানুষকে সহজে বিশ্বাস করতে পারবে না। নিজেরে মূল্যহীন মনে করবে সারা জীবন। আর এরচেয়ে খারাপ কি হইতে পারে জানেন? ওর এই ট্রমাটা পিটিএসডি হইয়া যাইতে পারে। সে ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখবে সারাজীবন। এমনকি ওরে আপন কেউ যদি দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যও টাচ করে সে ভয়ে চমকাইয়া উঠবে। আর মেয়েটা যদি আত্মহত্যা করে তাইলে তার জন্য দায়ী কে? ওই ছেলেগুলা না? বেজন্মাগুলা কোনদিন জানবেও না ওদের একটু“মজা” নেওয়ার কারণে একটা মেয়ে আত্মহত্যা করছে অথবা সারাজীবন কষ্ট পাইতেছে।
এখন কথা হইল ব্যাপারটারে ক্যামনে সামাল দেওয়া যায়? এই সমস্যাটার আসলেই কোন ম্যাজিক সমাধান নাই। সামাজিক সচেতনতা তৈরি ছাড়া কোন রাস্তা নাই। একটা ব্যাপার করা যাইতে পারে, ব্যাপারটা হইল “ইভ টিজিং” শব্দটারে বাদ দিয়া (কেন বাদ দেওয়া লাগবে ওইটা প্রথমেই বলছি) “যৌন হয়রানি/নির্যাতন” শব্দটা ইউজ করা যাইতে পারে। আমাদের সমাজে “যৌন” শব্দটা বেশ কার্যকর হবে কারনএই শব্দটা স্টিগমাটাইজড। আমাদের মিডিয়াগুলা যদি ইফেক্টিভেলি এই শব্দটা ব্যাবহারের পাশাপাশিএই ছেলেপেলেগুলাকে হাইলাইট করে তাইলে অনেক কিছু অর্জন করা সম্ভব। আর পুলিশ মামারা যদিএদেরকে ধইরা ধইরা ভালমত ডলা দিতে পারে তাইলে কাজটা আরেকটু সহজ হইয়া যাবে।
কারো কাছে বাস্তব সম্মত বেটার সমাধান থাকলে বলতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৫ সকাল ৮:১৮