(আগের কাহিনীর পর.........।)
এই কাহিনীর শুরুটা হইছিল ২০০৭ সালে! এস এস সি দিনাজপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হবার পর শহরের রেলবাজারে সম্প্রীতি ছাত্রাবাস নামে একটা মেসে উঠছিলাম! ওইখানে আমিই ছিলাম সবচেয়ে জুনিয়র আর বাকি সবাই সিনিয়র! মানে সবাইরে বাইয়া/বাই কইরা ডাকা লাগছে আরকি! মেসে দুইজন বড় ভাই ছিল এপ্লিক্যান্ট (ভরতি পরীক্ষা দিয়া বেড়াইত!), তেনারা বেশ টেনশিতই থাকত সবসময়। একদিন দুপুরের দিকে দেখি ওরা সবার কাছ থেইকা দুয়া নিতেছে আর বড় ভাইগোরে কইতেছে ভাই দুয়া কইরেন!!! আমি শুইনা চিন্তা করলাম, কাহিনিডা কি? দ্বিচক্রযান লইয়া আবার কোথাও ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাইতেছে নাকি?!!!
একটু ঘাটাঘাটি করতে যাইয়া শুনলাম, অকি!!!! ওনারা নাকি ডিভি লটারি কাটতে যাইতেছে! আমি তখন এক বড় ভাইরে জিগাইলাম এইডা আবার কি জিনিস? খায় না মাথায় মাখে? তখন উনি আমারে কষ্ট কইরা প্রথম আলোর আর্টিকেল দেখাই দিল। পইড়া টইরা আমি বুঝলাম, আম্রিকা আসার লটারি! আমি মনে মনে কই লটারি... হুহ!!! গেবনেও আমি একটা লটারি লাগাইতে পারি নাই! এলাকায় বৈশাখী মেলাগুলাতে টিকেট কাইটা কত্ত টাকা নষ্ট করছি (আর আমার ফ্রেন্ডরা রেডিও/ঘড়ি পাইছে!!!)! কেউ আমারে ফিরি দিলেও ডিভি লটারি কাটতাম না!!!
কিন্তু ফ্যাঁকড়াটা লাগলো অন্য জাগায়। টিকিট কাটতে নাকি ইন্টার পাশ হওয়া লাগবে! এইখানে ধরা খাই গেলাম! সেন্টিমেন্টে লাইগা গেল! আমি তো ইন্টার পাশ না! চাইলেও কাটতে পারতাম না। ওনাদের হই-হল্লা আর লটারি কাটার আনন্দ দেইখা আমার মিজাজটাই বিলা হইয়া গেল! সেই দিনই মনে মনে টাইমার সেট কইরা লাইলাম যে, খালি ইন্টার পাশটা কইরা লাই, তারপর অবশ্যই ডিভি লটারি কাটমু! যা থাক কপালে চুলামার!!!
এরপর ক্যামনে ক্যামনে কইরা টাইম পার হইয়া গেল।ফেল করতে করতে মুটামুটি ভালো কইরা পাশ কইরা লাইলাম! তক্কে তক্কে আছিলাম কবে লটারি ছাড়বে আর কবে টিকিট কাটমু! একদিন প্রথম আলোতে দেখি, লটারি ছাড়ছে!!!!! একটু ঘাইটা দেখি অকি! ব্যাপারটা আলাদা! কুনো টিকিট নাই! জাস্ট ইন্টারনেটে বইসা এপ্লাই করলেই হয়! মাগার সমস্যাটা হইল অন্য জাগায়। ইন্টারনেট কি জিনিশ ওইটাই বুঝতাম না!
আগের বড় ভাই দের কাছ থেইকা জানলাম আসলে ওইটা কুনু ব্যাপার না, গুলশান মার্কেটের ওইখানে একটা সাইবার ক্যাফে আছে (এইবার যাইয়া দেকছি ওইটা আর নাইক্কা) ওইখানে তুমার ট্রান্সক্রিপ্ট আর এক কপি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের ছবি লইয়া যাইবা, ওরাই যা করার কইরা দিবে!
আমি পাবলিকটা একটু মুখচোরা আছিলাম! ছবি টবি তুলতামনা। হাজার খুইজাও যখন একখান ছবি পাইলাম না তখন বাধ্য হইয়া ফডু প্যালেস থেইক্কা ঝকঝকা চাইর কপি ছবি তুইল্লা ছাইবার ক্যাফেতে হুড়মুড় কইরা ঢুইকা পড়লাম! যাইয়া দেখি অকি! বিশাল লাইন! লোকে দলে দলে ডিভি করতাছে! সবার চোখে মুখে ইদের আনন্দ! এক লোকের আম্রিকা যাওনের খুব শখ! ব্যাডায় চাইর ফেমিলি মেম্বার দিয়া চাইরটা ডিভি করতাছে! আমার তো আর হাসি থামে না! আমি আইছি মজা লইতে আর এই ব্যাটারা আইচে আম্রিকা যাইতে! কেউ আমারে ভুতা দাঁও দিয়া কাইট্টা মাইরালায় না কিয়েরে?
অনেকক্ষণ বইয়া থাকনের পর আমার পালা আইল, আমি ছবি দিলাম, ট্রান্সক্রিপ্টের ফুডুকপি দিলাম আর পঁচিশ টাকা দিলাম ওরা কি না কি চাপাচাপি কইরা একটু পর আমারে একটা কাগজ দিয়া কয় হইয়া গ্যাছে! এই কাগজটা যতন কইরা রাইখেন! আমিও ইডিয়ট নাচতে নাচতে বাসায় আইয়া বইয়ের র্যাকের ভিত্রে জিনিসটা হান্দাই দিলাম! আমি তো জানি আমার লটারি কপালডা ফাটা! গেবনেও আমার লটারি লাগত না! লটারি কাটা হইয়া গ্যাছে, শখও মিট্টা গ্যাছে আর কি লাগে! সো ব্যাপারটা পুরাপুরিই ভুইলা গেলাম!
(চল্পে......।)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৪৭