somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইডিয়টস জার্নি টু আম্রিকা (নয়)

০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের কাহিনীর পর.........।

ঢাকারে আমি একদমই ভালা পাইনা (নো অফেন্স টু এনিবডি)। বাধ্য না হইলে আমি অবশ্যই ঢাকা এড়াইয়া যাই। ঢাকা আমার কাছে পুরা অপরিচিত একখানা শহর। ওইখানে সেই দালাল মামাদের একজন আমাকে ঢাকায় রিসিভ করতে আইছিল। কাকডাকা ভোরেই ওইখান থেইকা ফরেন মিনিস্ট্রিতে গেলাম। ওই পুলিস ক্লিয়ারেন্সটা নাকি ফিরেন মিনিস্ট্রি থেইকা এটেস্টেড করাও লাগবে! যাইয়া দেখি অফিস তখনো খুলে নাই। সো তাইরে নাইরে কইরা সময় কাটাইতেছি! ওইখানে দেখি আমাদের মতো আরও অনেকে আইসা বসছে। একটু পর এক পুলিস মামা আইসা কয় মামা বাড়ী কই? উত্তর দেওয়াতে মামা খুশি হইয়া কয় অকি! আমিও তো ওই এলাকার। মামায় আনন্দিত হইয়া কয়, কি কামে আইছেন? মামারে খালি কইলাম এই আইটেমখানা এটেস্টেড করন লাগবো। মামায় কয় এমনি তে আপনাদের কাম আইজকে হইবে না, কয়েকদিন লাইগা যাবে। আমি আর দালালের প্রতিনিধি জিগাইলাম তাইলে এখন উপায়? মামায় কয় আমি আপনাদের কামটা কইরা দিতে পারি মাগার টাকা দেওন লাগবো কিছু। আমরা কইলাম কত? মামা কয় ষোলশ টাকা!!!

শুইনাই মনটা তিতা হইয়া গেল! মনে করছিলাম এলাকার এক ভাইরে পাইছিলাম, আর এই ব্যাটা নাকি বোয়াল মাছের মতন কইরা হা কইরা ফান পাইতা বইসা আছে! এই চুলের জিনিসটা আমারে যেই পরিমাণ পেইন দিছে তাতে আম্রিকা যাওয়ার ইচ্ছাটাই আস্তে আস্তে কইরা মন থেইকা উইঠা যাইতেছিল।

যাইহোক, একটু পর অফিস খুলল। আমার পেপারটা জমা দিলাম দুই নম্বরে। ওইখান থেইকা কইল দুইটার পর থেইকা কাজগপত্র ব্যাক দেওয়া শুরু হইবে। ঠিকঠিকই প্রায় আড়াইটার মদ্যে পেপারটা এটেস্ট কইরা আমারে ব্যাক দিয়া লাইল!!!

তাঁর পরের দিন হইল বহুল প্রতীক্ষিত ইন্টারভিউ (এমব্যাসি ফেইস)।

আর একটা ব্যাপার এইখানে বইলা রাখা ভাল, ব্যাপারটা হইল আমি যে আম্রিকায় মেইল করতেছিলাম এইটা কিন্তু দালাল মামারা জানতো না। ওরা লাস্ট মোমেন্টে জানছে ব্যাপারটা। আম্রিকা থেইকা মেইলের উত্তরে যখন ওরা আমারে এপয়েনমেন্ট ডেট আর লেটারটা পাঠাইছে তারপর দালাল মামারাও মেইল পাঠাইছিল। মাগার ওদেরকে নাকি আম্রিকা থেইকা রিপ্লাই দিছে যে লেটার অলরেডি মেইলে পাঠাই দিছে আর দিব না! তাঁর পর ওরা আমারে ফুন দিয়া কইছে যে আপনে কি অগোরে মেইল টেইল দিছিলেন নাকি? যখন শুনছে হ্যা, তখন ঠাণ্ডা হইয়া গ্যাছিল আরকি। ওরা টের পাইছিল ওদের হাতে আমারে কন্ট্রোল করার মত রিয়াল কুনো কিছু ছিল না। আমারে ফুসলাইয়া যা কামাই করা যায় আরকি।

ওই রাতটা মনে হয় আমার এক ফ্রেন্ডের কাছে ছিলাম। মনে মনে চিন্তায় আছিলাম যে কি না কি জিজ্ঞেস করে ইন্টারভিউয়ে। রাইতে আমাদের হলে ফুন দিয়া একজনরে জিগাইলাম ভেটেরিনারি সাইয়েন্সের ডেফিনিশনটা কইয়া দে তো, ভুইলা গেছি! হ্যায়ও আমার মতন ভুইলা গ্যাছে ডেফিনিশনটা। নুটপত্র খুইল্লা আমারে কইয়া দিল আর আমি রিভাইজ দিয়া মুখস্ত কইরা নিলাম। রাতটা কুনমতে পার হইতেই সক্কালেই উইঠা এমব্যাসি গেলাম। ওইখানে যাইয়া দেখি দালাল মামারা আগে থেইকাই হাজির! আমারে এক বলক দুরে টাইনা আইনা হাতে একখান ব্যাগ ধরাই দিল। ব্যাগ খুইল্লা দেখি ওইখানে এক বান্ডিল টাকা আর আমার মুল কাগজপত্রগুলা সুন্দর কইরা সাইজ করা আছে। তারপর ওরা আমারে কইয়া দিল কি কি করা লাগবে। একটা কথা বারবার কইরা কইয়া দিছে ওইটা হইল, আপনারে যদি কয় কুনো দালাল ধরছ নাকি? তাইলে কইবেন না। যদি হ্যাঁ কইছেন তাইলে আপনেরে ভিসা দিব না (আমি কিন্তু বিশ্বাস করছিলাম)।

যাইহোক এরপর আবার যাইয়া লাইনে দাঁড়াইলাম। দেখি অকি!! লাইনটা এত্ত বড় হইয়া গ্যাছে ক্যামনে? এত্ত লোক আম্রিকা যাইবে? আমি তো মনে করছিলাম, খালি আমিই যামু!!! এরপর আস্তে আস্তে কইরা ভিত্রে ঢুকলাম আরকি। ভিত্রে যাইতে যাইতে মনে হয় দুইবার মেটাল ডিটেক্টর পার হইলাম দেইখা আম্রিকান সিকিউরিটি সম্পর্কে আমার ধারনাটা বেশ উঁচা হইয়া গেল (অবশ্য এর আগে আমি কখনো এই অদ্ভুত যন্ত্রটার ভিত্রে দিয়া পার হই নাই)।

আস্তে আস্তে কইরা বুকে বল বাইন্দা লোকজনের পিছা কইরা একটা ঘরে পৌছাইলাম। ওইখানে দেখি বেশ সুন্দর বসার জন্য বেঞ্চি পাতা আছে। যাইয়া ভয়ে ভয়ে বইলাম! একটু পর লাউডস্পিকারে নাম ডাকা শুরু হইল। আমার নামটা বাদ দিয়া আশেপাশের সবাইর নাম ডাইকা ফালাইল দেইখা আমি তো মনে মনে দর দর কইরা ঘামতেছি আর মনের মদ্যে হাজারো রকম কুচিন্তা ভর করতেছে। ব্যাটারা আমার নাম ভুইলা যায় নাই তো?

এইরাম আজগুবি চিন্তা করতে করতেই একবার আমার নাম ধইরা ডাকল। আমি তো আতংকগ্রস্তভাবে এক্সাইটেড!!! যাইয়া আমার একবারে কাগজপত্র জমা দিলাম, একবারে টাকা দিলাম আর একবারে আমারে মেডিকেল রিপোর্টের এক্সরের ফিল্মটা ফেরত দিল। এর মধ্যে দুইজন ডিভি পাওয়া ভদ্রলোকের (ছেলের) সাথে পরিচয় হইল। একজনের ইন্টার্ভিউ ছিল আগের দিন মাগার কোন কারনে উনি মিস করছেন। উনি আজকে আসছেন যে আজকে উনার ইন্টারভিউ নিবে কিনা এইটা জানতে। একটু পর উনার কাছ থেইকাই শুনলাম উনারে বাতিল কইরা দিছে। উনারে একটু সান্ত্বনা দিলাম যে কি আর করবেন, কপালটাই খারাপ আপনার। লোকটা একটু পরে চইলা গেল।

আর এক ভদ্রলোক বললেন উনিও ডিভি পাইছেন। উনার সাথে উনার ওয়াইফও আছে মাগার উনার কাগজপত্রে নাকি নামের বানানে সামান্য ভুল আছে। উনি নাকি ডিভি পাইয়া বিয়া করছেন আম্রিকা যাইয়া সুখের সংসার করবেন বইলা। একটু পরে উনার ইন্টারভিউ হইয়া গেল। বাইরে আইসা লোকটা বিধ্বস্ত অবস্থায় আমার পাশে আইসা বসলেন। আমি ভয়ে ভয়ে উনারে জিগাইলাম, ভাই কি হইছে? লোকটা কাঁদো কাঁদো হইয়া কইল, ভাই রিফিউজ করছে। লোকটার কথা শুইনা তো আমার দুঃখ হইল। অনারেও সান্তনা দিবার চেষ্টা করলাম আরকি সাধ্যমত। একটু পরেই লোকটা উনার ওয়াইফরে লইয়া চইলা গেলেন।

একটু পর আমারে ডাক দিছে। আমি মনে করছি এইবারও মনে হয় রুটিন কামে ডাক দিছে। উইন্ডোর ভিত্রে যাইয়া দেখি, অকি!!! এক কালা মহিলা আর সাথে এক অপরূপা সুন্দরি মহিলা বসে আছে। আমারে কালা মহিলা নাম জিগাইল, কি করি জিগাইল। আমি ইংরেজিতে উত্তরগুলা দিতে পাইরা নিজেই নিজের উপ্রেই ব্যাপক গর্বিত। ওই মহিলা লাস্ট প্রশ্ন জিগাইল, ভেটেরিনারি সায়েন্স কাকে বলে? আমার মুখ থেইকা তো মেশিনগানের গুলির মত কইরা সংজ্ঞাটা বাইর হইল। আমার মেন হইল ভয় পাইয়াই মনে হয় মহিলা কইয়া বসল, “ কংগ্রাচুলেশনস! ইউ গট ইউর ভিসা। পিলিজ কালেক্ট ইট টুমোরো এট টু পিএম। ডোন্ট বি লেইট”! আমি তো কথাটা ইমিডিয়েটলি বুঝি নাই। কয়েক সেকেন্ড সময় লাগছে জিনিসটা বুঝতে যে এইটাই আমার ইন্টারভিউ ছিল আমি আমি ভিসা পাইয়া লাইছি!!! বুঝলাম আমার মুখে নির্ভেজাল একটা হাসি খেইলা গেল। ব্যাপারটা কত সহজে হইয়া গেল। আর আমি কতটা স্ট্রেসডই না আছিলাম! যাইহোক ওঁদের কাছ থেকে একটা প্রিন্টেড রিসিট লইয়া একটা আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ দিয়া বাইর হইয়া পরলাম।

(চলতে থাকপে......।)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৩২
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×