somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইডিয়টস জার্নি টু আম্রিকা (দশ)

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের কাহিনীর পর.........।

বাইরে দেখি দালাল মামারা খাড়াইয়া আছে। দৌড়াইয়া আইসা জিগাইল, কি খবর মামা? আমি কইলাম কাইলকা ভিসা আন্তে আইতে কইছে! মামারাও তো খুশি! তারপর ওইখান থেইকা আমার ফ্রেন্ডের বাসায় (মেসে) গেলাম। যাইয়া রাইতটা থাইকা তারপরদিন ভিসা আন্তে আইলাম বারটার মধ্যেই! যাইয়া বইসা আছি আছি কুনু খবর নাই। তবে বেশ অনেকক্ষণ পরে ভিসাটা পাইলাম, তারপর নাচতে নাচতে বাইর হইয়া গেলাম।

বাইরে যাইয়া দেখি আবারো মামারা খাড়ায়া আছে। অগোর কাছে যাইতেই কয়, কই মামা দেখি, ভিসাটা কই? আমি ভিসাটা দেওয়াতেই ওদের একজন ওইটা লইয়া এলাকা ছাড়া হইয়া গেল। অবশ্য ওদের সাথে আমার চুক্তি ছিল, ভিসা হইলে ওরা ওইটা লইয়া যাবে। টাকা দিয়া ওইটা অগোর কাছ থেইকা লওয়া লাগবে। এরপর আমরা এক হোটেলে (খাবার) বইসা ব্যাপারটারে সেলেবেরেট করলাম। এই সময় আমি কইলাম, মামারা আমারে ভিসার তিনটা কালার ফটোকপি দেওয়া লাগবে। ওরা কইল কোন সমস্যা নাই। খাওয়া শেষ হইতে হইতেই ওদের একজন তিনটা কালার কপি আইনা দিল।

এই সময় আমি মোটেও কোন চিন্তা করি নাই যে ওরা আমার ভিসা নিয়া কোনরকম গোলমাল করবে। যেহেতু ওদের সাথে আমার ডিলই ছিল সেরকম, সো আমার কোন মাথাব্যাথাই ছিল না। আর একটা ব্যাপার হইল, এই পর্যন্ত যত খরচ হইছে সবকিছুই ওরা দিছে। পুরা ইনভেস্টমেন্টটাই ওদের। ওরা পাসপোর্ট বানানোর টাকা পর্যন্ত আমারে দিছে। আমি যদি ভিসাটা না নেই তাইলে আমার চেয়ে ওদের বড় লস (আপাতদৃষ্টিতে)।

এরপর আমি ফুন কইরা খবরটা বাড়িতে দিলাম। কে খুশী ছিল আর কে ছিল না এইটা আমার দেখার টাইমই ছিল না। খুশিমনে বাড়ী আইসা খবরটা চাউর করলাম। হলে আমার কিছু ফ্রেন্ড আমারে ম্যারিকা বিপ্লব বইলা খেপাইত সেই খ্যাপানিটাও বন্ধ হইয়া গেল। পড়াশুনা ছাইড়া দিলাম। সেকেন্ড সেমিস্টারের ফাইনালটাও দিলাম না। দেইখা মনে হইতে পারে আমার সুখের সময় শুরু হইয়া গেল। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেই সেরকম ছিল না। আসলে এই সময়টা আমার লাইফের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং এবং কঠিন সময়।

আমার আব্বা হইল হাইস্কুলের একজন স্কুলমাস্টার। আমার দাদার সহায় সম্পত্তি খুব বেশি ছিল না। আমার তিন চাচার মধ্যে একমাত্র আমার আব্বাই পড়াশুনা করে একটা চাকরি জোগাড় করে গ্রামের মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হইছে। আমাদের চারজনের পরিবারে আব্বার চাকরির বেতনটাই ছিল জীবনযাপনের মুল সম্বল, আর সাথে নিজের কেনা কিছু জমি। আমার চাচারা আরও খারাপ অবস্থায় আছে। আমার আব্বা দাদার ভাগের জমিগুলা আমার চাচাদেরকে চাষাবাদ করে খাইতে দিছে। বলে না দিলে ওরা ক্যামনে বাঁচবে? ছোটবেলা থেকে প্রাচুর্য আর বড়লোকির মধ্যে থেকে বড় হই নাই আমি। বেশ স্ট্রাগল করেই বড় হইছি। একটা মজার ব্যাপার হইল, আমি টাকা গোনা শিখছি বাড়িতে জন্মানো লাল শাক বেচে। ছোটখাটো জিনিস বিক্রি করে আম্মার হাতে টাকা আনে দিতাম। আম্মা ওইগুলা টাকা জমা করে সংসারের ছোটখাটো জিনিস কিনত।

বড় হয়ে (আসলে অনেক ছোট ছিলাম) যখন দিনাজপুরে থাকা শুরু করলাম, তখন আমাকে মাসে প্রায় তিন হাজার করে টাকা দেওয়া লাগত সেই টাকা কোত্থেকে আসত সে ব্যাপারটা চিন্তা করলে আমার এখন খারাপ লাগে, যদিও তখন ব্যাপারটা বুঝতাম না। আমাদের ফ্যামিলিকে অনেক কস্ট কাটিং মেজার যে নিতে হইছিল সে ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহই নাই কারণ একজন স্কুলমাস্টারের বেতন সব ব্যাপারগুলা সামলানোর জন্য নেহাতই কম ছিল।

যাই হোক, এখন ব্যাপারটা হইল টাকা জোগাড় করা লাগবে আম্রিকা যাইতে হইলে। আমার আব্বা সব সেভিংস ঝেড়ে টেরে ম্যাক্সিমাম দেড় লাখ টাকা যোগাড় করতে পারবে আর এই দালাল ব্যাটারা চাইছে ছয় লাখ। মোটামুটি দর কষাকষির মাধ্যমে এই জিনিসটা ঠিক হইল যে ওদেরকে তিন লাখ টাকা দেওয়া লাগবে। এই টাকার মধ্যে ওরা ভিসা ফি দিছে, মেডিকেল চেকাপ করার খরচ দিছে, পাসপোর্ট করার খরচ দিছে আর আনুসঙ্গিক কিছু খরচও দিছে। আর ব্যাপারটা হইল তার উপরে টিকেট করা লাগবে আর সাথে করে আম্রিকায় হাত খরচের জন্য কিছু টাকা নেওয়া লাগবে। মুটামুটি পাঁচ লাখ টাকার একটা ধাক্কা!

এত্ত টাকা কোথায় পাওয়া যায়? আমাদের আত্মীয় স্বজনরা অনেকেই উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে পড়ে। আমার খালুরা সবাই ধনী, আমার নানাও বেশ পয়সাওয়ালা মানুষ। আমার আব্বার মামাও তাই। মনে করছিলাম, ব্যাপারটা অতটা কঠিন হবে না। আব্বাও তাই ভাবছিল। আমরা মনে করছিলাম এদের যা অবস্থা তাতে সবার কাছ থেকে কিছু করে ধার নিলে যদি আর কিছু বাকি থাকে তাহলে নাহয় আমাদের কিছু জমি বন্ধক দিয়ে দিলাম। আর একবার আম্রিকায় গেলে নাকি সাত ডলার করে ঘণ্টায় ইনকাম করা যাবে!!! এত্ত টাকা কই রাখব এই চিন্তায় বাঁচি না! কয়েক মাসের মধ্যে সবাইকে সব কিছু দিয়ে দেওয়া যাবে। সো আম্মাকে দিয়ে সিস্টেমে আমার খালাদের কাছে টাকা ধার চাওয়া হইল।

আমার মায়েরা পাঁচ বোন। আমার মা সবার বড়। অর্থনৈতিকভাবে আমরাই সবার চেয়ে দুর্বল ছিলাম। আমার আম্মার ছোট (দুই নাম্বার) বোন মারা গেছিলেন প্রায় বছর খানেক আগে। তাতে অবশ্য আঙ্কেলের সাথে আমাদের সম্পর্কের এতটুকু হেরফের হয়নি। এই ভদ্রলোক বললেন তিনি এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ হাজার টাকা দিবেন। সপ্তাহ কুন্দিক দিয়ে পার হয়ে গেল টাকার আর কোন খোজ পাওয়া যায় না। এই ভদ্রলোক খালি জিজ্ঞেস করত কত টাকা জোগাড় হইছে!

আমার তিন নম্বর খালারা বেশ বড়লোক মানুষ। ওদের ফ্যামিলি বেশ খান্দানি। আমার খালুর জমাজমি আছে অনেক প্লাস উনার দুইটা টিন আর সার-বিষের বেশ বড়সড় ব্যাবসা আছে। কোটি কোটি টাকার বিজনেস তাদের। ধরেই নিয়েছিলাম ওঁদের কাছ থেকে বেশ বড় অঙ্কের টাকা ধার করা যাবে। আর এতে উনাদের কিছু যাবে আসবে না। কিন্তু উনারা বললেন উনাদের হাতে কোন টাকা পয়সা নাই। “বিষ” কেনার টাকা পর্যন্ত নাকি উনাদের হাতে নাই। যদি আমাদেরকে টাকা দেওয়া লাগে তাহলে নাকি দোকানের মূলধন থেকে টাকা আমাদেরকে। তাতে উনাদের দোকানের ব্যাপক ক্ষতি হবে। আমরা কি ওঁদের দোকানের ক্ষতি করে টাকা নিতে চাই? এইটার ডিফল্ট উত্তর হইল না। অথবা কয়েক মাস পরে মাঠ থেকে গম উঠবে। গম ভাল হলে ওরা আমাদেরকে টাকা দিতে পারবে। কিন্তু এইটাও যে সময় ক্ষেপণের একটা উপায় মাত্র, এইটা আমাদের সবার কাছেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল।

আমার চার নম্বর খালারা আবার অনেক বড়লোক মানুষ। ওঁদের প্রায় একশত বিঘার উপর জমি আছে। কয়েক ধরনের ব্যাবসা তাদের। কিন্তু উনাদের কাছেও নাকি টাকা নাই ধার দেবার মত। উনারা নাকি একসাথে পনের-বিশ বিঘা জমি কিনল বেশ রিসেন্টলি, সো তাদের কাছে টাকা নাই। পারলে যেন আমরাই ওদেরকেই টাকা দিয়ে উদ্ধার করি এমন অবস্থা আরকি!

এইবার আমার ছোট খালার পালা! আমার চেয়ে প্রায় পাঁচ-ছয় বছরে বড় হওয়াতে আমার সাথে বেশ আলাদা রকমের সম্পর্ক এর সাথে। আমি যখন হলে ছিলাম, তখন আমার মা এই খালার সাথে আলাপ করছিল পসিবল টাকা ধার করা নিয়ে। তখন আমার খালা নাকি আমার আম্মাকে বলছিল, যে ওঁদের একটা ডিপিএস ম্যাচিউর হয়ে হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি। ওখান থেকে উনারা চাইলেই খুব সহজে আমাদেরকে প্রায় দেড় লাখ টাকা ধার দিতে পারবে। আমরাও মুটামুটি নিশ্চিত ছিলাম যে এই দেড় লাখ টাকার কোন মিস হবে নাহ! কিন্তু যখন টাকার দরকার, তখন আমার খালা বলে কোন কারনে ওরা হিসাবে ভুল করছিল ম্যাচিউর হইতে আরও অনেক সময় লাগবে। আমার আম্মা আগ বাড়িয়ে প্রস্তাব দিছিল যে ইম্ম্যাচিউর অবস্থায় ওটা যদি ওটা ভেঙ্গে ফেলে টাকাটা আমাদেরকে তুলে তাইলে ওঁদের যে ফাইন্যান্সিয়াল লসটা হবে, ওইটা আমরা বেয়ার করবো! কিন্তু নাহ! সেটাও আর ওঁদের পক্ষে করা হয়ে উঠে নাই।

আমার আব্বার মামা আছেন একজন, বেশ টাকা পয়সার মালিক। আমার আব্বার সাথে উনার আলাপ হইলে উনার কাছে টাকা চাওয়ার আগেই উনি নিজে থেকেই নাকি বিশ-ত্রিশ হাজার টাকা দেবার প্রস্তাব দিছিলেন। কিন্তু এই লোকও পুরা পল্টি খাইছে। পরে বলল আমি কোন টাকাই দিতে পারবো নাহ!

এই রকম অবস্থা হবে এইটা আমরা চিন্তাও করি নাই। পুরাই অথৈ সাগরে পইড়া গেল আমাদের আমাদের ছোট্ট পরিবারটা। কাছের লোকগুলার কাছে না পাইয়া এইবার আমার আব্বা তাঁর বন্ধুদের দিকে নজর দিল। বন্ধু হবার সুবাদে মোটামুটি জানা ছিল কার হাতে এক্সট্রা টাকা আছে কার কাছে নাই। ওঁদের কাছে টাকা চাওয়াতে ওরাও নাকি মুখের উপ্রেই বলে দিল টাকা নাই! আবার এই লোকগুলাই আবার পিছনে বলে বেড়াইতে লাগল যে, হুহ…,ওর তো ডায়াবেটিস হইছে। হুট কইরা ও যদি মইরা যায় আমদের টাকা কে দিবে? আমাদের কাছে টাকা আছে মাগার দিমু নাহ!

টাকার জন্য বেশ বিপদে আমরা। শুধুমাত্র টাকার জন্য আমার কি আম্রিকা যাওয়া হবে না নাকি ফ্যান্টাসি হইয়াই থাকবে ব্যাপারটা?


(চলতে থাকপে......।)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৩৩
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×