somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিউক্লিয়ার পাকিস্তানঃ ক্যামনে কি??? (এক/চার)

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবিঃ টাইম ম্যাগাজিন

১৯৬৫ থেকে ১৯৭১ এই ছয় বছরের মধ্যে ইন্ডিয়ার হাতে পরপর দুইবার যুদ্ধে হাইরা (পড়তে হবে বলাৎকার হইয়া) পাকিস্তান টের পায় যে ইন্ডিয়ার সাথে তারা কনভেনশনাল আর্মি দিয়ে পারবে না। তাদের অবশ্যই একটা নিউক্লিয়ার ডিটারেন্ট দরকার। তার উপ্রে ইন্ডিয়া যখন ১৯৭৪ এ “স্মাইলিং বুদ্ধা” কোডনামে তাদের প্রথম নিউক্লিয়ার টেস্টটা চালাইয়াই ফালাইল, তখন পাকিস্তানের ইন্ডিয়ার বিচ হইয়া যাওয়ার মত একটা অবস্তা তৈরি হইয়া গেল। রাইগা মাইগা ভুট্টো কইল আমরা নিউক্লিয়ার বোমা বানামুই, “দরকার হইলে ঘাস খাইয়া থাকমু” কিন্তু বোমাটা আমরা মাস্ট বানামু। এই সময় মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মত করেই নিউক্লিয়ার সায়েন্টিস্ট আব্দুল কাদির খান ভুট্টোর কাছে চিঠি দিয়া হেল্প করার প্রস্তাব করে। মাগার কে এই আব্দুল কাদির খান?

আব্দুল কাদির খানের জন্ম হইছিল ইন্ডিয়ার ভূপালে। ভারত উপমহাদেশ ভাগের সময় ইন্ডিয়ায় অবস্থিত মুসলমানদের উপর আসলেই ভয়াবহ রকম অত্যাচার নির্যাতন করা হয়। এগার-বার বছরের কাদির নিজের চোখে হিন্দুদের হাতে মুসলমানদের গা-শিউরানো নির্যাতন দেখে-দেখে তার মনে ভয়াবহ রকম হিন্দু/ভারত বিদ্বেষ তৈরি হয়। এই বাচ্চা কাদিররে একাই ট্রেনে করে ভূপাল থেকে লাহোর জান হাতে নিয়া ইন্ডিয়া থেইকা পালাইতে হয়। রাস্তায় সে যে পরিমাণ ভায়োলেন্স দেখে তাতে সে তখনই ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবার প্রতিজ্ঞা করে।

পাকিস্তান তখন বেশ গরিব দেশ ছিল/কোন মেজর ইউনিভার্সিটি ছিল না। পাকিস্তান সরকার স্কলারশিপ নিয়া ছাত্রদের বাইরে যাওয়াটা এনকারেজ করত। কাদির কলেজ শেষ কইরা এইরকম একটা স্কলারশিপ লইয়া বাইরে যায়। সে বেলজিয়ামের একটা ইউনিভার্সিটি থেকে পি এইচ ডি নেয়। তারপর সে সেন্ট্রিফিউজ বানানোর কাজে ব্যাবহৃত হাই-স্ট্রেন্থ মেটাল নিয়া একটা রিসার্চ ল্যাবে কিছুদিন কাজ করে। ওইখানে কাজ করা অবস্থাতেই সে ইউরেঙ্কো নামের একটা সেন্ট্রিফিউজ/ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্ট করার প্রতিষ্ঠানে কাজ পায়। এরই মধ্যে সে ডাচ আর জার্মান দুই ভাষাতেই মুটামুটি দক্ষ হয়ে উঠে।

এই সময় সেন্ট্রিফিউজ/রেডিওএক্টিভ ম্যাটেরিয়াল নিয়ে সহজে বাইরের কাউকে কাজ করতে দেওয়া হইত না। ইউরেঙ্কোর সেই ফ্যাসিলিটিতে কাজ করতে ডাচ সরকারের স্পেশাল সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স লাগত। কিন্তু প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের এটমস ফর পিস প্রোগ্রামের আন্ডারে নিউক্লিয়ার প্রোগ্রাম এক্সপান্ড হৈতে থাকায় নিউক্লিয়ার সাইন্টিস্টদের সরটেজ হইয়া যায়। ফলাফলঃ ইউরেঙ্কো ওইসব সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স বাদ দিয়া সরাসরি কাদিরকে কাজে লাগায় দেয়।

ঠিক তখনই ১৯৭১ এ ইন্ডিয়ার হাতে পাকিস্তানের সেকেন্ড বলাৎকারের পর তারা নিউক্লিয়ার প্রোগ্রাম শুরু করে দেয়। কাদির খান খবর শুইনা ভুট্টো হেল্পের প্রস্তাব পাঠায়। ভুট্টো কাদিরের নামে খোঁজখবর নিয়া দেখে যে কাদির আসলেই একটা কাজের জিনিস। তারপর সিস্টেমে ওরে পাকিস্তানে আইনা হাল্কা এসপিওনেজ ট্রেইনিং দিয়া বলে আপাতত তোমার পাকিস্তানে দরকার নাই, তুমি ওইখান থেইকা ডিজাইন/প্রজেক্ট চুরি কইরা আন।

এর কিছুদিনের মধ্যে ডাচ ইউরেঙ্কোতে জার্মান সাইন্টিস্টদের ডিজাইন করা কাটিং-এজ একটা সেন্ট্রিফিউজের ডিজাইন আইসা পৌছায়। ডিজাইনগুলা লেখা ছিল জার্মান ভাষায়। কিন্তু সমস্যা হইল ডাচ ইউরেঙ্কো ফ্যাসিলিটিতে অন্য কেউ জার্মান জানত না। কাদিরই ছিল একমাত্র লোক যে টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলার সাথে ভাষাটাও বুঝত। কিন্তু সমস্যা হইল ভেরি হাই সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স ওয়ালা কয়েকজন ছাড়া এই ডকুমেন্টগুলায় কারো এক্সেস নাই। আর কাদির আবার কোন আবাল। যেহেত ওই ফ্যাসিলিটিতে ওই একমাত্র জার্মান প্লাস ডাচ জানত, ডাচ ইউরেঙ্কো সব রেগুলেশন বাদ দিয়া কাদিররেই এই ট্রান্সলেশনের কাজ করতে দেয়। আর সে এক্সিডেন্টলি পাইয়া যায় হিরার খনি!!! কাদিরের নাকি আবার ফটোগ্রাফি শখের জিনিস! সে এই ডকুমেন্টগুলারে জার্মান থেকে ডাচে অনুবাদের পাশাপাশি উর্দুতেও অনুবাদ করত। তার উপ্রে আবার ছবিও নিত। লোকে কিছু বললে তারে বলত উর্দুগুলা হইল নোট! কেউ কিচ্ছু মনে করে নাই, মনে করত দিস ম্যান ইজ ওয়ার্কিং হার্ড!!!

এইভাবে কিছুদিন পর যখন মুটামুটি সব ডিজাইন চুরি করা ডান, তার এক কলিগ ব্যাপারটা টের পাইয়া যায়, সে কাদিররে ডাচ সিক্রেট সার্ভিসে বি ভি ডি'র কাছে রিপোর্ট করে। তারা ফলো কইরা দেখে ঘটনা সত্য। ওরে এরেস্ট করার আগে তারা সি আই এ রে জানায় যে কাহিনী এই। মাগার সি আই এ আম্রিকান পলিটিক্যাল রিয়েজনে মানা কইরা দেয় যে তারে গ্রেপ্তার করার দরকার নাই। ওরে আপাতত অবজারভ কর। পুরা রিংটারে ধরা লাগবে বইলা ডাচদেরকে সান্ত্বনা দেয়।

কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই কাদির কাহিনী টের পাইয়া যায় যে তার পিছনে ফেউ লাগানো হইছে, তারপর রুটিন ভ্যাকেশনের নাম কইরা পাকিস্তানে যাইয়া আর ফেরত যায় নাই। এর মধ্যে অবশই যত প্লান/ব্লু-প্রিন্ট লাগে সব পাকিস্তানে পাচার কইরা সারা…।।

তথ্যসুত্রঃ "The Nuclear Jihadist: The True Story Of The Man Who Sold The World's Most Dangerous Secrets And How We Could Have Stopped Him" - By Douglas Frantz and Catherine Collins

চলবে...।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:১২
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×