আহা আজি এ বসন্তে,
কত ফুল ফোটে, কত বাঁশি বাজে,
কত পাখি গায়।
সবাইকে ফাগুনের ১ম দিনে রক্তঝরা কৃষ্ণচূড়ার শুভেচ্ছা। বসন্তের আগমনের বার্তা নিয়ে আসা কোকিলের কুহু ডাকের মতই অপূর্ব কাটুক আপনা জীবন। সত্যিই কোকিলের ডাক শুনলেই মনে বেজে ওঠে,
বাতাসে বহিছে প্রেম
নয়নে লাগিল নেশা
কারা যে ডাকিল পিছে
বসন্ত এসে গেছে
মাঝে মাঝে মনে হয় যদি কোকিলের ডাকের মতই কোমল হত আমাদের মন, অপরের প্রতি আবেগ থাকত, নিজের কর্মের প্রতি এতটুকু হলেও অনুশোচনা থাকত, যদি থাকত সকলের প্রতি ন্যায়বিচার, যদি বসন্তের ফুলের মতই রঙিন হত আমাদের জীবনটা। তাহলে হয়ত আজকে এই পৃথিবীতে চিরবসন্ত নেমে আসত। কিন্তু তা আর হয়ে উঠে না। মূল্যবোধহীন মানুষের ভিড়ে আজ অনেকেই ক্লান্ত। এমনই এক ক্লান্তিকর ঘটনা ঘটেছে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে। ঘটনাটি আমার ভাই মোঃ জাহিদুজ্জামান শিমুল কর্তৃক বর্ণিতঃ
সকালবেলা। শীতের ইতি ঘটেছে। বসন্তের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সকলেই ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে কর্মক্ষেত্রে বেরিয়েছে। পথের সেই রিকশাচালকটিও এর ব্যতিক্রম নয়। দৈনন্দিন কাজ শুরু করেছে। নিত্যদিনের মতই রিকশা করে সকলকে পৌঁছে দিচ্ছে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে। গফুর মিয়াঁ (নামটি আমার দেওয়া) নামের সেই বৃদ্ধও পেটের টানে রিকশা চালায়। পরিবারকে হয়ত তার আয়কৃত টাকার আশায় থাকতে হয়। হতেই পারে। নাহয় এত বৃদ্ধ বয়সে রিকশা চালাবে কেন?
অন্যদিকে মূল্যবোধে ভরপুর ব্যক্তি, শার্ট-প্যান্ট পরিধান করা, চুলটাও ফ্যাশনেবল রাকিবুল ইসলাম (এই নামটাও আমার দেওয়া)। থাকে ঢাকার রামপুরাতে। হতে পারে ছাত্র। নাও হতে পারে। আসলে পরিচয় জানা নেই। রামপুরা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওনা হবেন এই মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তি। বাসা থেকে নেমেই দেখা হল গফুর মিয়াঁর সাথে। ১৫০টাকা-তে সে যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অতি কষ্ট সহ্য করে হলেও সে চলে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যে লোকটি ঠিকমত হাঁটতে পারছে না সে রিকশা চালাচ্ছিল। নিদারুণ দৃশ্য হলেও এটাই বাস্তবতা।
ঠিকঠাক চলে আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এবার ভাড়া দেবার পালা। কিন্তু কেই বা জানত মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলতে জানে রাকিব। গফুর মিয়াঁ-কে বলল আপনি এইখানে দাঁড়ান আমি টাকা ভাংতি করে নিয়ে আসছি। কিন্তু হায়! রাকিবের যেন টাকা ভাংতি শেষই হয় না। হঠাৎই অদৃশ্য সেই ছেলেটি। অসহায় রিকশাচালককে বোকা বানিয়ে চলে গেল সে। অসহায়ের মত ১ ঘন্টা যাবৎ এখানে ওখানে খুঁজেছে রাকিবকে। কিন্তু কপট রাকিব কি আর ধরা দেয়? কপটতার চরম পর্যায় কিরুপ হতে পারে তা রাকিব দেখিয়ে দিল। ঘৃণা... শুধুই ঘৃণা। শব্দটাও কপট ব্যক্তির সাথে বেমানান।
অতঃপর বাতাসে উড়তে লাগলো ধুলো। গাছ থেকে ২-১টি করে পাতা ঝরছে। অসহায়ের মত গফুর মিয়াঁ তার রিকশাটি নিয়ে এ কষ্টকর জীবনে চলতে লাগল।
আমার ব্লগ: Bipul Hf - Be Simple, Make Simple
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৪৩