কিছুদিন আগে রিকশা ঠিক করার সময় পথে এক ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা হল। সেও কলেজে যাচ্ছিল তাই তাকে লিফট দিলাম। দুইজন যাচ্ছি তখন কথায় কথায় তাকে জিজ্ঞেস করলাম কলেজে সে রাজনীতি করে নাকি? সে আমাকে উত্তর দিল করে না তবে মাঝে মাঝে মিছিল করতে হয় হলে থাকতে গেলে। এখন অবশ্য কমেছে কারণ জুনিয়র ব্যাচ এসেছে, এখন তারাই এসব করে। সে আমাকে বলল, "ভাইয়া আপনারা তো বেঁচে গেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ভর্তি হয়েছিলেন, জরুরী অবস্থা ছিল, আপনাদের তেমন মিছিল করতে হয় নি।" আমি তাকে একটু শান্তনা দিতে গেলাম। বললাম, "দেখ যারা রাজনীতি করে, তারা তো পরে কিছু না কিছু সুবিধা তো পাবেই। এই জন্যই তো রাজনীতি করছে এখন।" সে আমাকে উত্তর দেয়, "ভাইয়া তাহলে তো এখন যারা বিরোধী দলে আছে তাদের দল করাটাই ভাল, কারণ আমি যখন পাশ করে বের হব তখন বিএনপি ক্ষমতায় থাকবে!"
ছোট ভাইয়ের সাথে কথা বলার সময় মনে হল কয়দিন আগেই আমার এক বন্ধুর সাথে এটা নিয়ে কথা বলেছি। দুই দলীয় একনায়কতন্ত্র কথাটা আড্ডা দেয়ার সময় তার কাছে শুনেছিলাম। ব্যাপারটা নিয়ে ভেবে দেখলাম আসলেই এটা সত্য। এরশাদের পরে মূলত আমাদের দেশের সংসদীয় গনতন্ত্রের যাত্রা শুরু যেখানে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। তখন থেকে একবার বিএনপি, একবার আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসছে। বিএনপির খালেদা যখন প্রথম ক্ষমতা ছাড়ে মানুষ অনেক আশা করে আওয়ামীলীগে ভোট দিয়েছিল। আমার মনে আছে তখন আমি ছোট ছিলাম। শেখ হাসিনা হজ করেছিল, একদিন টিভিতে তাকে কাঁদতে দেখেছি। যাইহোক বিএনপি ক্ষমতা ছাড়তে অনেক গড়িমসি করে, একা একা নির্বাচন করে নিজেরা জিতেও যায় একবার। পরে শুরু হয় আন্দোলন। অসহযোগ আন্দোলন, হরতাল এসব করে দেশের অবস্থা একেবারে নাজেহাল। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। আওয়ামীলীগ জয়লাভ করে। তাহলে নিজেদের অধীনের আগের বার বিএনপি কিভাবে জয়লাভ করেছিল! '৯৬ আওয়ামীলীগ শাসন আমলের সন্ত্রাসের কথা কাউকে মনে করিয়ে দিতে হবে না। মানুষের মনে এক ধরণের ভয় ঢুকে গিয়েছিল। সে সময় বাংলাদেশ প্রথমবারের মত দুর্নীতিতে প্রথমস্থান অধিকার করে! মানুষ অনেকটা অতিষ্ঠ হয়ে আবার বিএনপিকে ক্ষমতায় আনল। ২০০১ এ চার দলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পরে দেশে দুর্নীতির মহৌৎসব শুরু হয়। বারবার দুর্নীতিতে প্রথমস্থান! আমি কাগজে কলমের কথা বলছি না, ওই সময়ে আপনি যাই করতে যাবেন আপনাকে ঘুষ দিতেই হবে এমন একটা নীতি চালু হয়ে গিয়েছিল। এমনকি রেট পর্যন্ত জানত জনগণ, কোন কাজ করতে গেলে কত টাকা ঘুষ দিতে হবে! বিএনপি আমলের এসব দুর্নীতির পাশেই ছিল জঙ্গি হামলার ব্যাপারগুলো। অনেক বড় বড় নেতা মারা গেল আওয়ামীলীগের। সারাদেশে বাংলা ভাই আতঙ্ক, আরও অনেক কিছু। যখন নির্বাচন আসল তখন যথারীতি ক্ষমতা হস্তান্তর, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান, নির্বাচন কমিশন নিয়ে ঝামেলা যার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশে প্রায় দুই বছর সংসদীয় গনতন্ত্র ছিল না। অনেক কাটখড় পুড়িয়ে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসল আবার। বরাবরে মত বিএনপি দাবী করল নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। যতবার বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামীলীগও তাই দাবী করেছে, এই জন্য বেশি আশ্চর্য হবার কিছুই নেই।
আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই শুরু হল ছাত্রলীগের তান্ডব। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একের পর এক বন্ধ হতে থাকল। সবখানে তাদের প্রভাব বিস্তার আর হল দখল নিয়ে মারামারি। অনেক ছাত্র মারাও গেল। মজার ব্যাপার হচ্ছে বিএনপি আমলে মারামারি হত ছাত্রদল আর ছাত্রলীগ বা ছাত্রশিবিরের মধ্যে। এখন মারামারির বেশির ভাগ হয় ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে, কাক কখনো কাকের মাংস খায় না এটা মিথ্যা প্রমাণ করেছে তারা। প্রায় সবখানেই থাকে সভাপতির অনুসারী, আর সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী দুটি দল। তারা প্রভাব বিস্তার নিয়ে রক্তারক্তি করে। এই জিনিষটা ভেবে দেখে না, যাকে মারছে সেই ছেলেটাও তো তার সাথে একই জায়গাতে পড়ে! এই ছেলে তো তার ভাইয়ের মতই! তারও তো মা বাবা আছে, তারা তাকে এখানে পড়ালেখা করতে পাঠিয়েছে কোপাকুপিতে মরতে পাঠায় নি। আওয়ামী আমলেও চলছে বিএনপির মতই দুর্নীতি টেন্ডারবাজি। সন্ত্রাস তো আছেই! জিনিষপত্রের দামও বেশি। বিএনপির মতই আওয়ামী মন্ত্রী এমপিরাও দুর্নীতি করে টাকা কামাতে ব্যাস্ত। কারণ তারা ধরেই নিয়েছে আগামীতে তারা হয়ত ক্ষমতায় আসবে না, তাই যতপারো ইনকাম করো। শেয়ার বাজারের এত বড় বিপর্যয়, ভারতের সাথে অসম সব চুক্তি এসব নিয়ে অনেকেই আওয়ামীলীগের উপর খেপা। তারউপর তারা এখন বিচারপতি নিয়ে নানা টাল বাহানা করছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যাবস্থা নাকি পরিবর্তন হবে এইভাবে যে, যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে না পারে তাহলে আগের সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে! কি আশ্চর্য! তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানকে বিএনপির পছন্দ হবে না এটা মোটামুটি জানা কথা। এরপরে নির্বাচন না হলে আওয়ামীলীগের অধীনের নির্বাচন করতে হবে। যারা একসময় বিএনপির অধীনের নির্বাচন করতে চায়নি তারা কেন ভাবছে তাদের অধীনের বিএনপি নির্বাচন করবে? এটা নিয়ে দেশে যে আবার একটা অরাজক অবস্থা সৃষ্টি হবে এই আশঙ্কা করা অস্বাভাবিক হবে না।
আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় দেখে অনেকের মত আমিও একটু খুশি হয়েছিলাম। ভাবলাম দেখা যাক, এবার মনে হয় রাজনৈতিক দলগুলো ঠিক হয়ে যাবে। তথাকথিত ওয়ান ইলেভেন থেকে তারা শিক্ষা নিবে। কিন্তু না! কিছুই ঠিক হয়নি।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১১ রাত ২:৫৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





