somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ দেশে দুই দলীয় একনায়কতন্ত্র চলে। বিশ্বাস হয় না? পড়ে দেখুন।

৩১ শে মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কিছুদিন আগে রিকশা ঠিক করার সময় পথে এক ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা হল। সেও কলেজে যাচ্ছিল তাই তাকে লিফট দিলাম। দুইজন যাচ্ছি তখন কথায় কথায় তাকে জিজ্ঞেস করলাম কলেজে সে রাজনীতি করে নাকি? সে আমাকে উত্তর দিল করে না তবে মাঝে মাঝে মিছিল করতে হয় হলে থাকতে গেলে। এখন অবশ্য কমেছে কারণ জুনিয়র ব্যাচ এসেছে, এখন তারাই এসব করে। সে আমাকে বলল, "ভাইয়া আপনারা তো বেঁচে গেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ভর্তি হয়েছিলেন, জরুরী অবস্থা ছিল, আপনাদের তেমন মিছিল করতে হয় নি।" আমি তাকে একটু শান্তনা দিতে গেলাম। বললাম, "দেখ যারা রাজনীতি করে, তারা তো পরে কিছু না কিছু সুবিধা তো পাবেই। এই জন্যই তো রাজনীতি করছে এখন।" সে আমাকে উত্তর দেয়, "ভাইয়া তাহলে তো এখন যারা বিরোধী দলে আছে তাদের দল করাটাই ভাল, কারণ আমি যখন পাশ করে বের হব তখন বিএনপি ক্ষমতায় থাকবে!" :P আমি বললাম, "তুমি কিভাবে জান বিএনপি ক্ষমতায় আসবে আগামীবার?" ও বলে, "ভাইয়া এটাই তো নিয়ম! আওয়ামীলীগ যা শুরু করেছে তাতে মনে হয় না আগামীতে কেউ তাদের ভোট দিবে।" B-)



ছোট ভাইয়ের সাথে কথা বলার সময় মনে হল কয়দিন আগেই আমার এক বন্ধুর সাথে এটা নিয়ে কথা বলেছি। দুই দলীয় একনায়কতন্ত্র কথাটা আড্ডা দেয়ার সময় তার কাছে শুনেছিলাম। ব্যাপারটা নিয়ে ভেবে দেখলাম আসলেই এটা সত্য। এরশাদের পরে মূলত আমাদের দেশের সংসদীয় গনতন্ত্রের যাত্রা শুরু যেখানে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। তখন থেকে একবার বিএনপি, একবার আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসছে। বিএনপির খালেদা যখন প্রথম ক্ষমতা ছাড়ে মানুষ অনেক আশা করে আওয়ামীলীগে ভোট দিয়েছিল। আমার মনে আছে তখন আমি ছোট ছিলাম। শেখ হাসিনা হজ করেছিল, একদিন টিভিতে তাকে কাঁদতে দেখেছি। যাইহোক বিএনপি ক্ষমতা ছাড়তে অনেক গড়িমসি করে, একা একা নির্বাচন করে নিজেরা জিতেও যায় একবার। পরে শুরু হয় আন্দোলন। অসহযোগ আন্দোলন, হরতাল এসব করে দেশের অবস্থা একেবারে নাজেহাল। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। আওয়ামীলীগ জয়লাভ করে। তাহলে নিজেদের অধীনের আগের বার বিএনপি কিভাবে জয়লাভ করেছিল! '৯৬ আওয়ামীলীগ শাসন আমলের সন্ত্রাসের কথা কাউকে মনে করিয়ে দিতে হবে না। মানুষের মনে এক ধরণের ভয় ঢুকে গিয়েছিল। সে সময় বাংলাদেশ প্রথমবারের মত দুর্নীতিতে প্রথমস্থান অধিকার করে! মানুষ অনেকটা অতিষ্ঠ হয়ে আবার বিএনপিকে ক্ষমতায় আনল। ২০০১ এ চার দলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পরে দেশে দুর্নীতির মহৌৎসব শুরু হয়। বারবার দুর্নীতিতে প্রথমস্থান! আমি কাগজে কলমের কথা বলছি না, ওই সময়ে আপনি যাই করতে যাবেন আপনাকে ঘুষ দিতেই হবে এমন একটা নীতি চালু হয়ে গিয়েছিল। এমনকি রেট পর্যন্ত জানত জনগণ, কোন কাজ করতে গেলে কত টাকা ঘুষ দিতে হবে! বিএনপি আমলের এসব দুর্নীতির পাশেই ছিল জঙ্গি হামলার ব্যাপারগুলো। অনেক বড় বড় নেতা মারা গেল আওয়ামীলীগের। সারাদেশে বাংলা ভাই আতঙ্ক, আরও অনেক কিছু। যখন নির্বাচন আসল তখন যথারীতি ক্ষমতা হস্তান্তর, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান, নির্বাচন কমিশন নিয়ে ঝামেলা যার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশে প্রায় দুই বছর সংসদীয় গনতন্ত্র ছিল না। অনেক কাটখড় পুড়িয়ে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসল আবার। বরাবরে মত বিএনপি দাবী করল নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। যতবার বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামীলীগও তাই দাবী করেছে, এই জন্য বেশি আশ্চর্য হবার কিছুই নেই।

আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই শুরু হল ছাত্রলীগের তান্ডব। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একের পর এক বন্ধ হতে থাকল। সবখানে তাদের প্রভাব বিস্তার আর হল দখল নিয়ে মারামারি। অনেক ছাত্র মারাও গেল। মজার ব্যাপার হচ্ছে বিএনপি আমলে মারামারি হত ছাত্রদল আর ছাত্রলীগ বা ছাত্রশিবিরের মধ্যে। এখন মারামারির বেশির ভাগ হয় ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে, কাক কখনো কাকের মাংস খায় না এটা মিথ্যা প্রমাণ করেছে তারা। প্রায় সবখানেই থাকে সভাপতির অনুসারী, আর সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী দুটি দল। তারা প্রভাব বিস্তার নিয়ে রক্তারক্তি করে। এই জিনিষটা ভেবে দেখে না, যাকে মারছে সেই ছেলেটাও তো তার সাথে একই জায়গাতে পড়ে! এই ছেলে তো তার ভাইয়ের মতই! তারও তো মা বাবা আছে, তারা তাকে এখানে পড়ালেখা করতে পাঠিয়েছে কোপাকুপিতে মরতে পাঠায় নি। আওয়ামী আমলেও চলছে বিএনপির মতই দুর্নীতি টেন্ডারবাজি। সন্ত্রাস তো আছেই! জিনিষপত্রের দামও বেশি। বিএনপির মতই আওয়ামী মন্ত্রী এমপিরাও দুর্নীতি করে টাকা কামাতে ব্যাস্ত। কারণ তারা ধরেই নিয়েছে আগামীতে তারা হয়ত ক্ষমতায় আসবে না, তাই যতপারো ইনকাম করো। শেয়ার বাজারের এত বড় বিপর্যয়, ভারতের সাথে অসম সব চুক্তি এসব নিয়ে অনেকেই আওয়ামীলীগের উপর খেপা। তারউপর তারা এখন বিচারপতি নিয়ে নানা টাল বাহানা করছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যাবস্থা নাকি পরিবর্তন হবে এইভাবে যে, যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে না পারে তাহলে আগের সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে! কি আশ্চর্য! তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানকে বিএনপির পছন্দ হবে না এটা মোটামুটি জানা কথা। এরপরে নির্বাচন না হলে আওয়ামীলীগের অধীনের নির্বাচন করতে হবে। যারা একসময় বিএনপির অধীনের নির্বাচন করতে চায়নি তারা কেন ভাবছে তাদের অধীনের বিএনপি নির্বাচন করবে? এটা নিয়ে দেশে যে আবার একটা অরাজক অবস্থা সৃষ্টি হবে এই আশঙ্কা করা অস্বাভাবিক হবে না।



আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় দেখে অনেকের মত আমিও একটু খুশি হয়েছিলাম। ভাবলাম দেখা যাক, এবার মনে হয় রাজনৈতিক দলগুলো ঠিক হয়ে যাবে। তথাকথিত ওয়ান ইলেভেন থেকে তারা শিক্ষা নিবে। কিন্তু না! কিছুই ঠিক হয়নি। /:) জানি না দেশে ভবিষ্যতে আবার কি ধরণের বিপর্যয় শুরু হয়। হয়ত আবার বিএনপি ক্ষমতায় আসবে, তারপরে তারা আবার দুর্নীতি করবে, আপনি আমি বিএনপিকে গালি দিব, আর আবার আওয়ামীলীগে ভোট দিব। :P এভাবেই কি এই দেশে চলতে থাকবে বিএনপি, আওয়ামীলীগের দুই দলীয় একনায়কতন্ত্র? আমরা কি কখনো এমন কাউকে পাব না যে দেশের কথা চিন্তা করে কাজ করবে? আমি ব্যাক্তিগত ভাবে কখনই সেনাবাহিনীর শাসন পছন্দ করি না। আমি চাই রাজনৈতিক দলগুলোই দেশের মানুষের জন্য কাজ করুক। আমেরিকাতে সরকার বদল হয় কিন্তু তাদের পররাষ্ট্রনীতি খুব বেশি পরিবর্তন হয় না। ওখানে এক সরকার পরপর দুইবার নির্বাচিত হওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তাদের দেশের মত আমাদের দেশেও কি এমন হতে পারে না? আমার খুব ইচ্ছা আমাদের দেশের একটা রাজনৈতিক দলের শাসনে আমরা সন্তুষ্ট হয়ে তাদের পরপর দুইবার নির্বাচিত করব। জানি না এই আশাপুরণ হবে নাকি আমরা সবসময় আওয়ামী বিএনপি দুঃশাসন চক্রে ঘুরতে থাকব!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১১ রাত ২:৫৮
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×