somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বর্তমান রাজনীতি ও মাশরাফি!

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাশরাফি আগামী নির্বাচনের জন্য আওয়ামীলীগের নমিনেশন কিনেছে। মাশরাফির মত মানুষের রাজনীতিতে আশা উচিত সেটা আমরা সবাই বিশ্বাস করি কিন্তু কথা হচ্ছে এটা কি তার নির্বাচনে আসার সঠিক সময়? জানি, অনেকে অনেক রকম উদাহরণ টানবেন। সিধু, রানাতুঙ্গা এবং সাম্প্রতিক কালে ইমরান খান। তারা কেউ কিন্তু খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় নির্বাচন করেন নি। আর রাজনীতি করলেই যে নির্বাচন করতে হবে এমন কোন কথা আছে? সবার একটা রাজনৈতিক ক্যারিয়ার থাকা উচিত। কেউ কোন এলাকায় নির্বাচন করলে তাকে অবশ্যই ওই এলাকায় একটিভ রাজনীতিতে ৫ বছর সময় দেয়া উচিত, এ ছাড়া কাউকেই নমিনেশন দেয়া উচিত না। এভাবে রেডিমেড কাউকে এনে যদি বলা হয় এই লোক তোমাদের নেতা, আগামী নির্বাচনে তাকে দলের পক্ষ থেকে নমিনেশন দেয়া হয়েছে, তোমরা তাকে নির্বাচনে জয়ী করার জন্য চেষ্টা করবে, তখন অন্য সব নেতা, তারা দিনের পর দিন এলাকায় রাজনীতি করেছে, তাদের প্রতি একটা অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়।


যারা সরকারি চাকরি করেন বা যাদের মন্ত্রি এমপিদের সাথে উঠা-বসা আছে, তারা সবাই জানেন যে আমাদের দেশে কোন রাজনৈতিক নেতা ফোন দেয়া মানে সেই কাজ করে দিতেই হবে। এমনকি সেই নেতা ফোন না দিলেও তার চ্যালা-চামুন্ডাদের নানান কাজ বাধ্য হয়ে করে দিতে হয়। এখন আসেন মাশরাফি এমপি হয়ে যাবার পরের কথা চিন্তা করি। মাশরাফি যদি এবার এমপি হয়, তাদের সে ক্রিকেটের একাদশ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না? আপনার কী মনে হয় আমাদের দেশের মানুষ এতই ভাল!


আমাদের দেশ একটা গরীব দেশ। এ দেশের মানুষের কাছে ক্ষমতার সর্বোচ্চ অবস্থান হচ্ছে এমপি/ মন্ত্রি হওয়া। এই জন্য দেখবেন সবাই মন্ত্রি/ এমপি হতে চায়। কেউ ব্যবসা করে একটু টাকা ইনকাম করল, সে চায় এমপি হতে। কেউ ভাল পরিচিত ডাক্তার, সে চায় এমপি হতে। কেউ ইঞ্জিনিয়ার, সেও চায় এমপি হতে। কেউ ব্যরিস্টার, সেও চায় এমপি হতে। কেউ সরকারে আমলা ছিল, সেও চায় এমপি হতে। কেউ আর্মিতে ছিল, সেও চায় এমপি হতে। আসলে সবাই চায়, ক্ষমতা। আর ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখর এখন মন্ত্রি/ এমপি হওয়া। আমাদের দেশে সরকারি চাকরিজীবি, জজ, আর্মি অফিসার বা অন্য কোন রাষ্ট্রীয় পদে নিয়োজিত থাকা অবস্থায় কেউ নির্বাচন করতে পারে না। এর কারণ হল, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে নির্বাচন করলে আপনি পরে সে সম্পর্কীয় বিষয়গুলোতে আপনার প্রভাব খাটাতে পারেন যেটা শোভনীয় হবে না। কিন্তু দেখা গেল মাশরাফি এবং সাকিব ক্রিকেটের জাতীয় দলে থাকা অবস্থাতেই নমিনেশন কিনতে চাইল! মাশরাফিকে তো নমিনেশন দিয়ে দেয়াই হয়েছে।


রাজনীতি করে নেতা হবার সব পথ বাংলাদেশে বন্ধ হয়ে গেছে। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। ডাকসু নির্বাচন হয় না কত বছর? ডাকসু মানে কী অনেকে তাই জানে না! আগে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হত। সেখান থেকে নেতা উঠে আসত, সেই পথ তো বন্ধ। নেতা তৈরি হবে কিভাবে? এখন যেটা হয় সেটা হল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় হলে সিট পাবার জন্য আপনাকে ক্ষমতাশীন দলের ছাত্র সংগঠন করতে হবে, বর্তমান সময়ে যেটা ছাত্রলীগ। সমস্যা হল, আপনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী নাও হতে পারেন, তবুও আপনাকে ছাত্রলীগ করতে হবে হলে থাকতে গেলে। এমনকি ঠিকমত পা চাটার অভ্যাস থাকলে অনেক বড় পোস্টেও চলে যাবেন। অথচ যে ছেলেটা সত্যিকার অর্থ বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসে সে হয়ত রাজনীতিতেই আসল না বা আসলেও পা-চাটাদের ভিড়ে হারিয়ে গেল! এ জন্য নেতা হবার পরে সবাই ছাত্রদের জন্য রাজনীতি না করে উপরের নির্দেশ পালন করতেই ব্যস্ত থাকে। ছাত্রদের দাবি-দাওয়া আদায়ে তাদের আগ্রহ থাকে না, উলটা ছাত্রদের যে কোন আন্দোলনে তারা সরকারের পক্ষ নিয়ে সাধারণ ছাত্রদের উপর নির্যাতন চালায়। মুখ ফুটে কিছু বলার কোন সুযোগ নেই তো! একবার ব্ল্যাক লিস্টেড হয়ে গেলে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ! একবার এক ছাত্রনেতাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচন দাও না কেন? তার উত্তর ছিল, ছাত্র সংসদ যা করতে পারবে, ছাত্রলীগ তা করতে পারবে না কেন? তার মানে হচ্ছে সে সিলেকশনে বিশ্বাসী, ইলেকশনে নয়! এই যে তার মাঝে একটা ধারণা ঢুকে যাওয়া যে সাধারণ ছাত্রদের মতামত দেয়ার কী দরকার, ছাত্র সংসদের কী দরকার, আমাকে উপরের লেভেল থেকে নেতা বানিয়ে দেয়া হয়েছে, তাই সবাই আমাকে মানতে বাধ্য! এটা আসলে ভয়ঙ্কর ব্যাপার। সবাই বুঝে গেছে যে টিকে থাকতে হলে চামচামি করতে হবে, সাধারণ ছাত্রদের পক্ষে কথা বলে লাভ নাই! ভবিষ্যতে মন্ত্রি/ এমপি তারাই হবে যাদের টাকা আছে, যাদের উপরের লেভেলের নেতাদের সাথে ভাল খাতির আছে। তৃণমূল রাজনীতি, ছাত্র রাজনীতি এসবের কোন ভ্যালু আদৌ নেই। নির্বাচনের আগে একজনকে রেডিমেড এনে বলা হবে এটা তোমাদের নেতা, তাকে তোমরা নির্বাচনে জয়ী করাবা!


বাংলাদেশ আপনি কোন কিছু নিয়ে কোনদিন গঠনমূলক আলোচনা করতে পারবেন না। আপনি যেটা নিয়েই কথা বলতে যান শেষ পর্যন্ত মানুষ দুইভাগ হয়ে যাবে এবং তর্কে জেতার জন্য উদ্ভট কথা-বার্তা শুরু করবে। সে নিজেও জানে যে সে যা বলছে সেটা সত্য না, তারপরেও সে তর্ক করে যাবে। গত কয়েকদিন ফেসবুকে মাশরাফি সম্পর্কিত পোস্ট দেখে সেটাই মনে হল। যারা আওয়ামীলীগ করে তারা এটাকে স্বাগত জানিয়েছে, যদিও তারা জানে ক্রিকেট একাদশে থাকা অবস্থায় জাতীয় নির্বাচন করা নজিরবিহীন এবং এটা সমীচীনও হবে না। তারপরেও তারা এটার পক্ষে নানান যুক্তি দেখাচ্ছে। মাশরাফির মত সৎ মানুষের নাকি রাজনীতিতে আসার দরকার আছে! তার মানে কি আপনারা বলতে চাচ্ছেন, আপনাদের দলের বাকি এমপিরা অসৎ! যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে এমন দল সমর্থন করেন কেন? এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দলের বাজে পারফর্মেন্সের সময় কয়েকজন মাশরাফির সমালোচনাও করেছে কিন্তু শুধুমাত্র আওয়ামীলীগের নমিনেশন কেনার কারণে তারা এখন মাশরাফির অনেক বড় সমর্থক। অন্য দিকে বিএনপি সমর্থকরা দেখা যাচ্ছে মাশরাফিকে যাচ্ছে তাই বলে যাচ্ছে, যেসব তার প্রাপ্য না।


মাশরাফি দেশের জন্য একটা বড় সম্পদ। আমরা মাশরাফিকে ভালবাসি। এমপি মাশরাফি থেকে আমাদের দেশে খেলোয়াড় মাশরাফিকে আরো বেশি দরকার ছিল। দেশে রাজনীতিবিদ অনেক আছে কিন্তু খেলোয়াড় মাশরাফি কিন্তু একটাই আছে। সে রাজনীতিতে আসাটা কোন সমস্যা না। সে আসুক এটাই চেয়েছিলাম কিন্তু এখন না! তার হাতে অনেক সময় ছিল, সে রিটায়ার করার পরে নির্বাচন করতে পারত। সেটাই তার জন্য উপযুক্ত হত এবং সব মানুষের সমর্থন না পেলেও তার প্রতি তাদের আগের ভালবাসা অটুট থাকত। এই বিতর্কিত সময়ে দলে থাকা অবস্থায় নির্বাচনের নমিনেশন নিয়ে মাশরাফি আরো বেশি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৫৮
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×