somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাজগৎ, সৃষ্টি এবং স্রষ্টা ( ৩য় পর্ব ) : বিগ ব্যাং কি আমাদের মহাবিশ্ব সৃষ্টির ব্যাখ্যা দিতে পারে ? ষ্টিফেন হকিং এর সাথে আমার দ্বিমত ।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ষ্টিফেন হকিং নিঃসন্দেহে বর্তমানে এই গ্রহের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী । আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে । তিনি বলেছেন বিগ-ব্যাং থেকে আমাদের এই মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে এতে পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মগুলোই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এখানে স্রষ্টার কোন ভূমিকা নাই । সত্যিই কি তাই ? বিগ-ব্যাং আমাদের এই মহাবিশ্ব তৈরির ব্যাখ্যা দিতে পারে কিনা সেটা আমি এই লেখায় তুলে ধরব ।

অনেকেই মনে করেন বিগ ব্যাং থেকে আমাদের এই মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে আসলে তা নয় । বিগ ব্যাং এই মহাবিশ্ব তৈরির অনেকগুলো প্রক্রিয়ার ভিতর একটি প্রক্রিয়া মাত্র ! বিগ ব্যাং এর আগে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশোন ঘটে যা থেকে বিগ ব্যাং সংগঠিত হয় ।

কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশোন এবং বিবর্তনবাদ এই দুটি জিনিষই মূলত অবিশ্বাসীদের ধর্ম থেকে সরে যাবার মূল কারণ । বিবর্তনবাদ তত্ব অনুসারে বানরকে আমাদের পূর্বপুরুষ হিসেবে মেনে নেয়াতে আমার কিঞ্চিত আপত্তি আছে । আমি এখানে বিবর্তনবাদ নিয়ে আলোচনা করব না এটা হয়ত এই সিরিজের অন্য কোন পর্বে লেখব । এখানে মূলত কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশোন এবং বিগ ব্যাং নিয়ে আলোচনা করব ।

প্রথমেই কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশোন কি তা সংক্ষেপে বলে নেয়া যাক ।

বিজ্ঞানীদের ধারনা অনুসারে পরম শূন্য বলতে কিছু নেই কারণ প্রকৃতি শূন্যতা পছন্দ করে না । এই পরম শূন্য স্থানে মূহুত্যেই এক বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ সময়ের ভিতর কণা এবং প্রতিকণা তৈরি হচ্ছে এবং সাথে সাথেই নিজেদের মাঝে সংঘর্ষে তা বিলীন হয়ে যাচ্ছে । কোন কারণে হয়ত এই পজিটিভ এবং নেগেটিভ এনার্জি নিজেদের ধ্বংস করতে পারে না । যার ফলসরূপ কিছু কণা থেকেই যায় , ইনফ্লেশনারি থিওরি অনুসারে তা থেকে বিগ ব্যাং হয় ।

এখানে মৌলিক একটা প্রশ্ন দেখা যায় প্রকৃতি কেন শূন্য পছন্দ করে না , প্রকৃতি কেন নিজের মাঝে ইচ্ছা অনিচ্ছা-ধারন করে ? প্রকৃতি কি কোন ব্যক্তি ? সেই ব্যক্তিটি তাহলে কে ?

বিগ ব্যাং থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি

যাইহোক মূল প্রসঙ্গে আসা যাক । বিজ্ঞানী এডউইন হাবেল ১৯২৭ সালের আমাদের এই মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে বলে পরীক্ষা করে পান । যেহেতু প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে এর মানে বলা যায় সকল পার্টিক্যল এবং মৌলিক বল তথা এই মহা জগৎ সবকিছুই একসময় পঞ্জি-ভুত অবস্থায় ছিল , এর ঘনত্ব ছিল প্রায় অসীম । মূলত অসীম ঘনত্বের এই বস্তুটিই বিগ ব্যাং বা মহা বিস্ফোরণ হয়ে আমাদের এই মহা বিশ্বে পরিণত হয় ।

উপরের আলোচনা থেকে বুঝা গেল কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশোন থেকে বিগ ব্যাং সংঘটিত হয়ে আমাদের মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে । এখানে উল্লেখ্য করা প্রয়োজন কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন নিজে নিজে সম্ভব নয় কারণ কণা এবং প্রতিকণাগুলো পরস্পর সংঘর্ষের জন্য বল প্রয়োজন , গ্রাভিটির ভূমিকা আছে এতে। এই বল হঠাৎ কোথা থেকে নাযিল হল ? বিজ্ঞানের কাছে এর কোন উত্তর নাই ।


ডার্ক এনার্জি

যাইহোক এবার আরেকটা ফ্যাক্ট নিয়ে আলোচনা করা যাক । আমাদের মহাবিশ্ব প্রতি মূহুত্যে সম্প্রসারিত হচ্ছে , বিজ্ঞানীদের ধারনা ছিল এই সম্প্রসারণের হার প্রতিনিয়ত কমছে । ১৯৯০ সাথে বিজ্ঞানীরা পুনরায় পরীক্ষা করে পান আমাদের এই মহা বিশ্ব সম্প্রসারণের হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে ! এর মানে অন্য একটা এনার্জি বা শক্তি এই মহা বিশ্বকে টেনে বড় করছে । এই বল মধ্যাকর্ষনের বিপরীতে কাজ করছে । এই বল বা শক্তিকে বিজ্ঞানীরা নাম দেন ডার্ক এনার্জি ।

আমাদের এই মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের ৬৮ শতাংশ ভূমিকা এই ডার্ক এনার্জির । বিজ্ঞানী আইনস্টাইন অনেক আগে এই সম্পর্কে বলে গেছিলেন যেই শূন্য স্থান এখনও আমাদের এই মহা বিশ্বের অধীনে আসে নাই তার একটা নিজস্ব এনার্জি বা শক্তি আছে । এই ডার্ক এনার্জিই বা কোথা থেকে উদয় হল বিজ্ঞানীরা আজও তা বের করতে পারে নাই ।

ষ্টিফেন হকিং আরেক জায়গায় বলেন মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে গ্রাভিটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেছে, গাভীটি না থাকলে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হত না ! চমৎকার বলেছেন নিঃসন্দেহে তবে প্রশ্ন হল গ্রাভিটি মাঝখানে কোথা থেকে উৎপাদিত হল , এর ব্যাখ্যা তিনি দেননি !

হকিং এর মহাবিশ্ব নিয়ে আরেকটা উক্তি আমাকে ধোঁয়াশার মধ্যে ফেলেছে ! তিনি বলেন সৃষ্টিকর্তা হয়ত সৃষ্টি জগতের পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মগুলো ঠিক করেছেন কিন্তু তিনি এর মাঝে আর হস্তক্ষেপ করবেন না ! তার এই উক্তি অনেকটা স্ববিরোধী কারণ তিনি নিজেই বলেছেন মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে ঈশ্বরের ভূমিকা নেই, পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মগুলোই মহাবিশ্ব তৈরিতে গুরুত্বপূর্নভূমিকা পালন করেছে । জগত বিখ্যাত বিজ্ঞানী ষ্টিফেন হকিং কিভাবে এতটা সিওর হলেন যে সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্টিতে আর হস্তক্ষেপ করবেন না!

পরিশেষে এতটুকু পরিষ্কার যে বিগ-ব্যাং আমাদের এই মহাবিশ্ব তৈরির একটা ধারনা দিয়েছে মাত্র কিন্তু এর সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে পারেনি ।

উপরের আলোচনা থেকে কয়েকটা বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায় ।

১। কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশোনের জন্য যেই বল প্রয়োজন সেটা কোথা থেকে আসল ? কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশোনের মাধ্যমে কোন কিছু নাই থেকে কিছু সৃষ্টি হওয়া ! এটা কিভাবে সম্ভব ? ম্যাথম্যাটিকস দিয়ে এটা পরমান করা অসম্ভব !
২। বিগ-ব্যাং এর সময় যে অসীম ঘনত্বের সৃষ্টি হয়েছিল সেটা কি আসলে সম্ভব ! অসীম মানে যার কোন শেষ নেই !
৩। ডার্ক এনার্জি কোথা থেকে উদয় হল ?

উপরের প্রশ্ন-গুলোর উত্তর বিজ্ঞানীরা দিরে পারে নাই । ষ্টিফেন হকিং এবং ওনার সাহাবীরা হয়ত বিশ্বাস করে অলৌকিকভাবে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন সৃষ্টি হয়েছে, অলৌকিকভাবে প্রায় অসীম ঘনত্বের সৃষ্টি হয়েছিল এমনি ডার্ক এনার্জিটাও একটা অলৌকিক ব্যাপার । তারা অলৌকিক ব্যাপারে বিশ্বাস করেন ।

তবে আমি ধীরভাবে বিশ্বাস করি বিগ ব্যাং এ মহান সৃষ্টিকর্তার প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে নইলে এটা সম্ভব হত না । ষ্টিফেন হকিং এর সাথে আমার পার্থক্য হল আমি বিগ ব্যাং এ স্রষ্টার প্রত্যক্ষ ভুমিকা বা নির্দেশে হয়েছে বলি ঈমান এনেছি আর তিনি ঈমান এনেছেন অনেকগুলো অলৌকিকতায়।

আগের পর্ব
মহাজগৎ, সৃষ্টি এবং স্রষ্টা ( ১ম পর্ব ): স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করল, নাস্তিকেরাই কি অন্ধ বিশ্বাসী নয় !
মহাজগৎ, সৃষ্টি এবং স্রষ্টা (২য় পর্ব) : ধর্ম এবং উন্নয়ন কি সাংঘর্ষিক বিষয় !
মহাজগৎ, সৃষ্টি এবং স্রষ্টা ( ৩য় পর্ব ) : মানব মস্তিষ্কের আকার ছোট হয়ে আসছে ! বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি আমাদের পিছনে নিয়ে যাচ্ছে নাতো ?

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:২৬
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×