somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাজী সাহেব সমাচার (রম্যরচনা)

০৬ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মিয়া বিবি রাজিতো কিয়া করেগা কাজী ! সত্যিই কি তাই ! কথাটা সত্যি মিথ্যা যাই হোক বিয়ে প্রসঙ্গ আসলেই অবধারিতভাবে কাজীর নামটা এসে যায়। বিয়ে বাড়ির খানা-দানা সবসময় রসাল হয় আর এই খানাদানা আমরা সবাই অনেক পছন্দ করি। তবে সব চেয়ে বেশী বিয়ের খাবার খাওনে-ওয়ালাদের যদি র‍্যাংকিং করা হত তাহলে কাজী সম্প্রদায়ের নাম গিনেস-বুকে অনেক আগেই উঠে যেত। তাদের-মত বিয়ে বাড়ির মুরগীর ঠ্যাং টানলে-ওয়ালা খুব কমই আছে!কাজী টেবিলে খেতে বসছে, হয়ত খাওয়ার মাঝখানে তার আরেকটা গলা ছিলা মোরগের রান টানতে মন চাইছে। দ্বিতীয় রান নিতে লজ্জা লাগছে তাই এবার পাশে বসা হাজী সাহেবকে ইশারা করে কৌশলে বলবে ‘‘ঐ বড় রানটা হাজী সাহেব নেন।’’ মতলব হাজী সাহেব যেন বিনয়িভাবে উল্টো বলেন ‘‘আরে না না আপনি নেন কাজী সাহেব।’’ আর তখনি কাজী সাহেব মুচকি হাসি দিয়ে হাতির সমান রানটা চিকুনে পেটের ভিতর চালান করে দিবে ! আমি অবশ্য বিয়ে বাড়িতে একটার বেশী রান খেতে পারি না, একটু বেশী খেলেই পেটের ভিতরের নাড়ি ভুঁড়ি ‘‘ছেড়ে দাও বাবা কেঁদে বাঁচি বলে আন্দোলন শুরু করে দেয়।’’

তখন আমি স্কুল বালক।এক বিয়েতে গেলাম বর যাত্রী হিসেব। আমাদের ভোজন কর্ম শেষ, বিয়ে পড়ানো বাকি আছে শুধু, তারপরই পাত্রী নিয়ে ফিরার পালা।কাজী সাহেব লেখালেখির কর্ম শেষ করে মেয়ের কাছে গেল কবুল বলাতে। খুব নরম সুরে কাজী বললেন ‘‘বল মা কবুল।’’ মেয়ে-তো আর কবুল বলে না!কাজী বেচারা নিরলস-ভাবে চেষ্টা করে চলেছেন কবুল বলাতে কিন্তু মেয়ের মুখ থেকে আর কবুল বের হয় না!বাড়ির মুরুব্বী এবং মেয়ের অভিভাবক হাজির হয়ে মেয়েকে বুঝাচ্ছে কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না।মনে হচ্ছে পেটে বোমা মারলে পেট ফেটে যাবে কিন্তু কবুল বের হবে না!আমি মনে মনে ভাবলাম প্রেম প্রীতির কেইস নাকি, আমি ধারনা মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়ে মেয়ে হঠাৎ গানের সুরে কুওও(কবুল) বলে চিৎকার দিয়ে পরে গেল। এক কুওও(কবুল)বলে আধা ঘণ্টা পার, আধা ঘণ্টা পরে আরেক কুওও (কবুল) বলে আরও আধা ঘণ্টা। এভাবে প্রায় দের ঘণ্টা দারিয়ে থেকে কাজী সাহেব সফলতার সাথে বিয়ের কর্ম সম্পাদন করলেন।তবে এখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ,এখনকার মেয়েরা আর কুওও(কবুল) বলে অজ্ঞান হয় না বরং এক সেকেন্ডেই তিন কবুল বলে ফেলে !

বাংলা সিনেমার ইতিহাসে মিশা সওদাগরের হাতে কাজী সম্প্রদায় সবচেয়ে বেশী হেনস্তার শিকার হয়েছেন! মিশা কাজী সাহেবের মাথায় হাতিয়ার তাক করে তুলে নিয়ে আসত যাতে নায়িকাকে জোর করে বিয়ে করা যায়।বিয়ে পরানোর আগে নায়িকাকে বাধ্য করত দুই মণ ওজনের শরীর নিয়ে বেলি ড্যান্স দিতে, নাচের চোটে মনে হত সাত মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে।নাচন পর্ব শেষে অসহায় কাজী প্রাণ ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বিয়ে পরানোর কাজ শুরু করত কিন্তু আফসোস এই বিয়ে পড়ানো কখনই সুন্দর সমাপ্তি হতনা কারণ বিয়ের মাঝখানে নায়ক এসে বাগরা দিত।

যাইহোক আমাদের দেশে বাংলা সিনেমায়, গল্প বা নাটকে কাজী সম্প্রদায়কে যেভাবে খুব নিরীহ ভোলা-বালা প্রাণী হিসেবে উপস্থাপন করা হয় বাস্তবে আসলে তা নয়, তার ভুক্ত ভোগী আমি! সেই গল্পই এখানে তুলে ধরছি। বিদেশ বিভূঁইয়ে জীবনের সমাপ্ত করে দেশে ফিরেই বাসায় হুশিয়ারি উচ্চারণ করে জানিয়ে দিলাম অবিবাহিত এর বদনাম ঘুচাতে চাই।বাসা থেকেও নেমে পরল পাত্রী খোজার ধান্ধায়।খোজ দ্যা সার্চ করে মাস খানেকের মধ্যেই পছন্দমত পাত্রী খুঁজে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলা হল।আমাকে জানিয়ে দেয়া হল আমার কিছুই করতে হবে না শুধু বিয়ের আসরে তসরিফ এনে কষ্ট করে তিন কবুল বলতে হবে,তাহলেই কেল্লা ফতে। অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত(বিবাহিত) হাতে যাচ্ছি তাই খুশিতে আমি দন্ত কেলাচ্ছি।

বর যাত্রী নিয়ে বিয়ের আসরে হাজির হলাম। কাজী সাহেব আমার কাছে এলেন , তিন আমাকে কবুল বলতে অনুরোধ করার আগেই আমি এক নি:শ্বাসে ধানারধান তিন কবুল বলে ফেললাম।বিয়ে পর্ব শেষ করে সকলে মিলে আমীন নিলাম।গল্পটা এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত কিন্তু না গল্পের টুইস্ট এখানেই । হঠাৎ কে যেন চিৎকার দিয়ে বলল এই বিয়ে আমি মানিনা!আমি হচচকিয়ে উঠলাম, কেইসটাকি বিয়ে শেষ হতে নাহতেই বাংলা সিনেমার মত এটা আবার কোন কাহিনী! আমার আশেপাশেই তখন কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব ছিল, আমি একজনকে ইশারায় ডেকে বললাম ইয়া হাবীবি(ওহে বন্ধু) দেখতো কেইসটা কি? বলার সাথে সাথে সামনে দেখি দরজা খুলে গেল, বাংলা সিনেমার-মত স্লো মোশনে আরেক লোক হেটে হেটে আসছে। দেখতে নূরানি চেহারা , মুখ-ভর্তি দাড়ি। পরিচয় ? ঝি আমি এই এলাকার কাজী , এই বিয়ে আমি মানি না।আমি মনে মনে বলি মিয়া বিবি রাজিতো কিয়া করেগা কাজী, পাত্রী রাজি আমি রাজি কাজীর ব্যাটার মানা না মানার কি? ‘‘সরকারি নিয়ম যেই এলাকায় বিয়ে হয় সেই এলাকার কাজী দিয়ে বিয়ে পরাতে হয়’’ ঝাঁঝালো ভাষায় বলল কাজী! শুনে আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। নতুন কাজী আবার তিন কবুল পরিয়ে আবার বিয়ে সম্পূর্ণ করল। সবাই তিন কবুল বলে বিয়ে করে আমার বেলায় হল সর্বমোট ছয় কবুল।

গল্পের কাহিনী এখানেও শেষ হয়ে যেতে পারত কিন্তু না পিকচার আবি বাকি হে মেরি দোস্ত । দেশে বছর দুয়েক থাকার পর বউ একদিন আবদার করল বিদেশে থাকার জন্য! আমাদের তখন প্রথম সন্তান হবে, বউ বিদেশে থাকার ফযিলত সম্পর্কে আমাকে বিভিন্ন ধরনের নছিয়ত করল। আমিও ভাবলাম প্রথম সন্তান দেশের বাহিরে উৎপাদন করতে পারলে ইহকালের জিন্দেগীতে ফায়দা অনেক। ওদিকে আবার আমার পি এইচ ডি করারও খায়েশ হয়েছে, গবেষণা করে পৃথিবীকে উদ্ধার করাও দরকার।অল্প দিনের মধ্যেই পি এইচ ডি এর স্কলারশিপ যোগার করলাম, পি এইচ ডি কমিটির সাথে স্কাইপ ইন্টার্ভিউ এর সময় জানিয়ে দিলাম আমি বউ পাগল পাবলিক, বউ নিয়ে আসতে চাই। কমিটির লোকজন হাত দিয়ে মশা তাড়ানোর-মত ভাবকরে জানিয়ে দিল কোয়ি বাত নেহি।

ভিসা এপ্লাইয়ের জন্য মেরিজ সার্টিফিকেট দরকার তাই কাজী সাহেবের সিগনেচার প্রয়োজন। হাতে মাত্র একদিন সময় আছে।আমি লোক পাঠালাম কাজীর নিকট যাতে দুই কপি মেরিজ সার্টিফিকেট নিয়ে আসে। কাজী সাহেব জানিয়ে দিলেন প্রতি সিগনেচার সাড়ে তিন হাজার টাকা লাগবে কারণ উকিলের থেকে কি সাইন-ফাইন নাকি তিনি জোগাড় করে দিবেন!আমি কাজী অফিসে গিয়ে দেখি কাজী সাহেব নেই, তার সাগরেদ আছে। আমি বললাম উকিলের কাজ আমি করব আপনি আমাকে সাইন নিয়ে দেন। কাজী সাহেবের সাগরেদ গড়িমসি করতে শুরু করছেন,তিনি বলেন আগে উকিলের কাজ করিয়ে আনেন তারপর। আমি কোর্টে গিয়ে দু-তিনশ টাকা দিয়ে সব কাজ করিয়ে আনলাম। কাজীর সাগরেদ আহত হলেন । তার সাফ জবাব সাইন তিনি দিবেন না । আমি বললাম কাজী সাহেবের নাম্বার দিন? না দেয়া যাবে না স্যার বিজি লোক, কোন মন্ত্রী-মিনিস্টারের সাথে হয়ত এখন লাঞ্চ করছে আর আপনি তাকে ডিস্টার্ব করবেন। আমার চান্দি গরম হয়ে গেল।সারাদিন এদিক সেদিক করিয়ে বলল রাতে আসেন কাজী সাহেব আসবেন। রাত দশটায় দিয়ে দেখি কাজী নাই। এবার আমার চান্দি আরও গরম কারণ সকালে এম্বাসিতে দাঁড়াব। অনেক দেন দরকার করে সাগরেদ বলে কিছু দিনার অনন্ত দেন কাজটা সে করে দিবে। আমি বললাম কাজী কোথায়, সাগরেদ বিলেনের হাসি হেসে বলে আমিই কাজী বলে সাইন করে দিল! পকেট থেকে দেড়শ টাকা দিয়ে দিলাম। কাজী যে এমন পাজি হবে তা আমি ইহ-জিন্দেগিতে কল্পনাও করি নাই।

যাইহোক সব কাম কাজ ভাল ভাবে শেষ করে দুজনে দেশের বাহিরে এলাম, গতবছর আমরা দুইজন থেকে বিবর্তিত হয়ে তিনজন হলাম। যারা শুভ কর্ম সম্পাদন করতে চলছেন, তারা পাত্রী নির্বাচনের পাশাপাশি কাজী নির্বাচনের প্রতি যত্নবান হোন! সবচেয়ে ভাল হয় বাংলা সিনেমারমত আকাশ-বাতাস নদী নালা সাক্ষী রেখে শুভ কর্মটা যদি সারা যায়, না রাহেগা বাস না বাজেগা বাঁশি। আর যদি আমারমত ভুল কাজীর পাল্লায় পরেন তাহলে লাইফটা তামা তামা হয়ে যাবে।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ২:৫৫
২৪টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×