somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কল্প-গল্প : নিয়ন (শেষ পর্ব)

৩০ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব – নিয়ন- ১ম পর্ব (বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনী )
তিন
লম্বা একটা হাই তুলে চোখ মুখ হাত দিয়ে মলে নিয়ন জেগে চেয়ার থেকে উঠে বসল। পাশে তাকিয়ে দেখল রুও নাসিকা প্রবল গর্জন করে এখনো ঘুমাচ্ছে। নিয়ন সামনে থাকা কম্পিউটার স্কিনের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল সে, এরকম লম্বা ম্যারাথন ঘুম দিয়েছে তা টেরই পায়নি। রুওকে ঢাক না দিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দিল সে। নিয়ন ব্রেইনটাতে লাগানো হেলমেটটাতে থাকা একটা বাটন অন করল সাবধানে। সে হটাৎই উত্তেজনায় ঘামছে, সবকিছু ঠিক থাকলে বিশ্ব প্রথম ব্যক্তি হিসেবে একজন মৃত মানুষের সাথে কথা বলতে যাচ্ছে সে। সামনে থাকা কম্পিউটার এর সফটওয়্যার এ কানেকশন বাটন অন করল। সব কিছু ঠিক থাকলে সফটওয়্যার এর স্ট্যাটাসে সাকসেস দেখানোর কথা। নিয়ন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্কিনের দিকে। সাকসেস বা ফেল দেখানোর কথা কিন্তু কিছুই দেখাচ্ছে না। তারপরও নিয়ন অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করে বামে থাকা 'হাও টু কমিউনিকেট' অপশনে ক্লিক করে চ্যাটিং অপশনে বের করল। তারপর সেখানে 'হাই' লেখল।

রেসপন্স আসার কথা নয় কারণ স্ট্যাটাস অপশনে 'সাকসেস ' দেখায়নি অবশ্য 'ফেল ' লেখাও দেখায়নি! তারপরও সে একটু অপেক্ষা করে চিন্তিত মুখে সফটওয়্যারটা ঠিকমত কাজ করছে কিনা তা দেখার জন্য সেটিং এ গিয়ে প্রোফাইল অপশনে ক্লিক করল। সেখানে ব্রেইনটা বয়স, তাপমাত্রাসহ বিভিন্ন তথ্য দেখানোর কথা। নিয়ন চেক করে দেখতে লাগল। হঠাৎ তার চোখ আটকে গেল একটা লেখা দেখে, রুও বলেছিল ব্রেইনটা ল্যাবরেটরিতে বানানো হয়েছে আর্টিফিশিয়াল গবেষণার জন্য অথচ এখানে জেনেটিক অপশনে দেখাচ্ছে এটা সত্যিকার একজন মানুষের মস্তিষ্ক। এই মস্তিকটা তাহলে কার ? রুও তার কাছে মিথ্যে কথা বলেছিল কেন? নিয়ন জেনেটিকের ডাটা নিয়ে সেন্ট্রাল ডাটা বেসে সার্চ দিল। জেনেটিক কোডের যেই ব্যাক্তির তথ্য মিলবে তাকে দেখানোর কথা। স্কিনে লোডিং দেখাচ্ছে নিশ্চয়ই একটু পরই তথ্য দেখানোর কথা।

কম্পিউটার স্কিনে ছবিসহ ভেসে এলো একজনের সাথে বিস্তারিত তথ্য।
নাম -কিটকিট
বয়স – ৩৫
পেশা – সহকারী বৈজ্ঞানিক

তার নিচে লেখা কিটকিট এই ল্যাবেই কাজ করত। লেখাটা পরে নিয়নের বুকের ভিতরটা হঠাৎ কেমন জানি ধরাস করে উঠল। সে কিছুটা আন্দাজ করতে পারল, সাথে ভয়াবহ একটা বিপদের গন্ধ পেল সে। তাহলে কি এখানে যারা কাজ করে তাদেরকেই এক সময় স্যাম্পল বানানো হয়! নিয়ন আর কিছু ভাবতে পারল না। কিটকিটের প্রোফাইলটার নিচে দেখতে পেল কিছু মেসেজ লেখা আছে, সে আসতে আসতে পরতে লাগল।

৩০১০,১লা আগস্ট
ভয়ানক একটা বিপদে আচ করতে পারছি। আমার বেশ কিছুদিন ধরে সন্দেহ ধানাবাদ ছিল মনের ভিতর। আজ সেটা পাকাপোক্ত হল। অনেকটা বন্ধী জীবন কাটাচ্ছি, যোগাযোগ মডিউল চেক করে দেখলাম, ইনকামিং চালু আছে, আউট-গোয়িং সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ এমনকি বাহিরে যাওয়াটাও অ-লিখিতভাবে বন্ধ। অনেক বড় একটা বিপদে ফেঁসে গেছি, এখান থেকে বের হবার কোন উপায় দেখতে পাচ্ছি না। এখানে আমার আগেও আরও কয়েকজন গবেষণা করত তাদেরও এক পর্যায়ে স্যম্পেল মানে গিনিপিগ বানানো হয়েছে।
মেসেজটা পড়ে নিয়নের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। সে কিটকিটের আরও কয়েকটা মেসেজ দেখতে পেল।

৩০১০, ৭ই আগস্ট
আজ বুঝতে পারলাম রুও এই ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত। রুওকে রাখা হয়েছে মূলত আমার উপর নজর রাখার জন্য। আমি ব্যাপারটা জেনে ফেলেছি এই ব্যাপারে রুও এবং সাওলিন দুজনই আমাকে সন্দেহ করা শুরু করেছে। গবেষণায় ব্রেইন স্যাম্পলটা অকেজো হয়ে গেলে আমাকেই স্যাম্পল করা হবে হয়ত !

নিয়ন তার পর কিছু দেখতে পেল না। সে বড় বড় চোখ করে স্কিনের দিকে তাকিয়ে আছে। শেষ আরেকটা মেসেজ দেখতে পাচ্ছে

৩০১০, ১০ই আগস্ট
আজ হয়ত আমার জীবনের শেষ দিন। ব্রেইন স্যাম্পেল্টা কাজ করছে না। সাওলিন রুওকে নির্দেশ দিয়েছে আমাকে শেষ করার জন্য আমি তা শুনে ফেলেছি। এখান থেকে বের হবার কোন উপায় নেই, কঠিন সিকিউরিটি চারপাশে, পুরো বিল্ডিং এর দায়িত্বে আছে নতুন প্রজন্মের রোবট যার বুদ্ধিমত্তা মানুষের কাছাকাছি, তাকে ফাকি দেয়া নামুমকিন।

আর কোন মেসেজ দেখতে পেল না নিয়ন। আসন্ন বিপদে তার বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে। ১০ই আগস্ট তার মানে সাওলিনের সাথে যেদিন দেখা প্রথম কথা হয়েছিল সেই দিনই! রুও তখন সাওলিনকে বলেছিল "কাজটা ঠিকঠাক মত হয়ে গেছে!" এই ব্যাপারেই কি কিছু বলেছিল ? নিয়ন আর কিছু ভাবতে পারল না।

"তুমি তাহলে সবটা জেনে ফেলেছ ? " গম্ভীর স্বরে গাল চুলকাতে চুলকাতে বলল পিছন থেকে বলল রুও।

নিয়ন মুখটা শক্ত করে হাতের মুঠি দিয়ে রুও এর মুখে জোরে আঘাত হানল। রুও ছিটকে গিয়ে পিছনে থাকা চেয়ারে উপুড় হয়ে পরল। "এখানে কোন গণ্ডগোল আছে সেটা প্রথম দিনেই বুঝতে পেরেছিলাম তবে তুমি যে এতটা নিচে নামতে পার তা ভাবতে পারিনি? " মুখটা শক্ত করে বলল নিয়ন।

রুও চেয়ার থেকে দু হাত পিছনে ঠেলে দিয়ে উঠতে উঠতে বলল "তুমি যে এত তাড়াতাড়ি ব্যপারটা ধরে ফেলবে সেটাও আমি আশা করিনি। এর আগে সবার যেই পরিণতি বরন করতে হয়েছিল তোমাকেও সেই একই পরিণতি বরন করতে হবে।" শীতল কণ্ঠে বলল রুও।
দাতে দাঁত চেপে রুও দু হাত দিয়ে রুও এর বুকে থাবা দিয়ে নিজের কাছে টেনে এনে বলল "তোমাকে আমি ছাড়বো না! এত দিন যত অন্যায় করেছ তার সব কিছুর প্রায়শ্চিত্ত তোমাকে করতেই হবে।"

রুও দু হাত দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মুখে একটা কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলল "তোমার সময় ফুরিয়ে এসেছে নিয়ন। আর কিছু ক্ষন পর তোমার মস্তিষ্ক এই টেবিলের স্যাম্পলের জায়দায় থাকবে। এখান থেকে কেউ কখনও বের হতে পারেনি । প্রতিটা লেয়ারে সিকিউরিটির দায়িত্বে আছে নতুন প্রজন্মের রোবট আলফা-০২৩ । এখান থেকে বাচতে পারবে না।"

নিয়ন এবার দাঁত কিড়মিড় করে রুওকে আঘাত করতে গেলে রুও হাত দিয়ে থামিয়ে জোরে একটা ঘুষি মারে ফেলে দিল নিয়ন কে। তারপর এলোপাথাড়ি ভাবে পাশে থাকা চেয়ারটা নিয়ে পর অর বেশ কয়েকবার নয়নের উপর বারি দিল। নিয়নের চেহারা বেশ কয়েক জায়গা কেটে রক্ত বেরুতে লাগল। সে কোনোমত উঠে দাড়িয়ে হাত দিয়ে চেয়ার নিয়ে রুও এর সাথে দস্তা দস্তি করতে লাগল।এক পর্যায় দুজনেই দু দিকে ছিটকে পরে গেল। দুজনেই বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলতে লাগল।

"তোমার শক্তির প্রশংসা করতে হয় নিয়ন। এর আগে কেউ আমার সাথে মোকাবেলা-তো দূরে থাক নূন্যতম দাড়াতে পারে নাই। তবে তোমার মরণ কেউ ঠেকাতে পারবে না !"

দেখা যাক রুও "কে কাকে হারায়। পাপের শাস্তি তোমদের পেতেই হবে" বলে উঠে দাঁড়াল সে। টেবিলের পাশের চেয়ারটা নিয়ে সজোরে রুও এর মাথায় আঘাত করতে লাগল নিয়ন। রুও হাত দিয়ে ঠেকিয়ে রাখতে পারল না সে মেঝেতে লুটিয়ে পরল।
নিয়ন রুও এর কলারটা নিজের দু-হাত দিয়ে ধরে বলল "এখান থেকে বের হবার পথ কি? "

রুও মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল "আমাকে মেরে ফেললেও তুমি এখান থেকে বেরুতে পারবে না নিয়ন।আমি আগেই বলেছি এই বিল্ডিং-এ ঢুকা যায় বের হওয়া যায় না।"

"তোমার কাছে নিশ্চয়ই অল্টারনেটিভ সিকিউরিটি কার্ড আছে , যেটা দিয়ে বের হওয়া যাবে ।"

"হা হা, না। কারণ আমার রেটিনার তথ্য আছে মূল ডাটাবেইজে, সিকিউরিটি দরজাগুলোতে রেটিনা স্কেকেনিং মেশিন বসানো। রেটিনা স্ক্যানিং করে আলফা-০২৩ মূল ডাটাবেজে-ইজের সাথে মিলিয়ে দেখে ! তাই এখান থেকে তোমার বের হবার কোন উপায়ই নেই।"
নিয়ন সজোরে রুও এর মুখে ঘুষি দিয়ে বলে "দরকার পরে সাওলিনকে ধরে একটা উপায় বের করা যাবে।"

সাওলিন বাহিরে আছে ইতিমধ্যে সে "এখানকার তথ্য পেয়ে গেছে। সে প্রস্তুত হয়েই আসবে, তোমার নিস্তার নেই নিয়ন। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল রুও।"

নিয়ন রুওকে মেঝের উপর দু হাত দিয়ে জোরে আছার মেরে উঠে দাড়িয়ে বের হবার পথ খুঁজতে থাকে। যেভাবেই হোক তাকে একটা উপায় বের করতেই হবে।

চার

সাওলিন ফিরে আসার আগেই কিছু একটা করতে হবে। ইতিমধ্যেই সে হয়ত পুরো ব্যাপারটি জেনে গেছে। পুরো গবেষণাগারের দায়িত্ব থাকা আলফা-০২৩ রোবট সাওলিনের কাছে বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। নিয়নের যেভাবেই হোক কিছু একটা করতে হবে। রুও টেবিলটার পাশে চিৎ হয়ে পরে অজ্ঞান হয়ে আছে। নিয়নকে এখন থেকে একা বের হওয়া চলবে না, কম্পিউটারে থাকা গিটগিটের মেসেজ গুলো প্রমাণ হিসেবে নেয়া দরকার। নিয়ন টেবিলের উপর হয়ে ডিসপ্লেটা চালু করে পুনরায় বের করতে গেল তখনই পিছন থেকে কিছুর একটা শব্দ পেয়ে, গার গুড়িয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখতেই ভুত দেখার মত চমকে উঠল। সাওলিন পিছনে দারিয়ে আছে সাধা একটা ডাক্তারি এপ্রোন পরা, হাতে বড় একটা ইনজেকশন যার ভিতরে সাধা বায়বীয় কিছু একটা আছে।

" কি খুঁজছ নিয়ন ? " শীতল গলায় বলল সাওলিন।

" তোমার পাপের চিহ্ন মুখটা শক্ত করে বলল নিয়ন। তোমার কোন রক্ষা নেই সাওলিন। "

সাওলিন একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে নিজের হাতে দরা ইনজেকশনটার দিকে ইশারা করে বলল " এটা দেখতে পাচ্ছে, এটা তোমার মস্তিষ্ককে এক সেকেন্ডের ভিতরেই শীতল করে দিতে সক্ষম। একটু পরেই তুমি ক্লিনিকালই ডেড হয়ে যাবে, তোমার কথা বলার শক্তি থাকবে না। তুমি আগে নিজে কে রক্ষা কর। তুমি বড্ড দেরি কতে ফেলেছ ব্যাপারটা বুঝতে নিয়ন। কারণ একটু পরেই তুমিও আগের জনদের মত শিকাতে পরিণত হয়ে যাবে।"

সাওলিন উপরের দিকে সেন্সরের ইশারা করতেই অটোমেটিক রবোটিক আরম বের হয়ে এলো টেবিলের নিচ থেকে, সেটা নিয়নের দুই হাত চেপে ধরল যাতে নড়াচড়া করতে না পারে। নিয়ন নিজেকে ছাড়ানোর খুব একটা চেষ্টা করলো বলে মনে হল না। সে সরু দৃষ্টিতে সাওলিনের দিকে তাকিয়ে আছে। সাওলিন ইনজেকশনটা উঁচিয়ে আসতে আসতে নিয়নের কাছে আসতে লাগল। "ডোন্ট ওয়ারী একটু পরই তোমার ব্রেইন শীতল হয়ে যাবে নড়াচড়া করতে পারবে না ।"

নিয়ন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কোন কথা বলছে না। সাওলিন ইনজেকশন নিয়নের বুক বরাবর জোরে পুষ করল। মূহুত্যেই নিয়নের ব্রেইন শীতল হয়ে যাবে। সাওলিন তাকিয়ে আছে নিয়নের দিকে। নিয়ন তখনো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাওলিনের দিকে। সাওলিন একটা ধাক্কা খেল ইনজেকশনটা কাজ করার কথা কিন্তু কি আশ্চর্য নয়নের কিছুই হল না।

"এটা অসম্ভব? " বিস্ময়ের সাথে বলল সাওলিন।

নিয়ন ঠোটের কোনে হাসি রেখে বলল "এটা ভয়ানক একটা ইনজেকশন। যেকোনো মানুষকেই মূহুত্যেই ব্রেইন ডেড করতে পারে তবে আমাকে নয়। "

"তুমি কি ? " আতংকের স্বরে বলল সাওলিন।

"আমি উন্নত প্রযুক্তির আলফা-০০৭, বিশ্বের প্রথম সফল জেনে-রোবট।"

"জেন-রোবট? ভিত গলায় বিলল সাওলিন। এটা হতে পারে না। আমি তোমার জেনে-টিক কোড দেখেছি, এছাড়া তোমার হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে মানুষের মত! "

নিয়ন মুখ শক্ত করে বলল "আমি জেনো-রোবট, আমাকে জেনে-টিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এডভান্স মেকানিক্যাল ডিভাইস দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। যে রক্ত দেখতে পাচ্ছ এটা এক ধরনের বিশেষ তরল যেটা আমার ব্রেইনের সার্কিটটাকে সবসময় ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে। যেহেতু জেনে-টিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাবহার করা হয়েছে তাই মানুষের মত জিনোম সিকোয়েন্স আছে আমার, যা আমাকে মানুষের মত একটা স্বতন্ত বৈশিষ্ট্য দান করে। মানুষের মত আবেগ অনুভূতি সম্পূর্ণ রোবট আমি। "

সাওলিন শুকনো গলায় বলল "তুমি আমাকে ধোকা দিয়েছ। আমার কাছে তোমার পরিচয় গোপন করেছ । "

"আমি পরিচয় গোপন করিনি। আমি তোমাকে বলেছি ল্যাবরেটরিতে সৃষ্টি হয়েছি । তুমি আর আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করনি"
নিয়ন দু হাত জোরে ঝারা দিয়ে নিজেকে রবোটিক হাত দিকে মুক্ত করে নিলো। তারপর দু হাত দিয়ে সাওলিনের কলারটা ধরে টেনে নিজের মুখের কাছে এনে মুখ শক্ত করে বলল "আপনার আর রক্ষা নেই ? তুমি ধরা পরে গেছ।"

"তুমি আমাকে ছেড়ে দাও। তুমি যা চাবে তাই পাবে। তুমি যদি চাও মোংগল গ্রহে তোমাকে একটা বাংলোর ব্যবস্থা করে দিব। টাকা পয়সা যাও চাও সব দিব, আমাকে ছেড়ে দাও ! "

নিয়ন সাওলিনকে ঝাঁকি দিয়ে মুখে এক দলা থুথু ছিটিয়ে বলল "লোভী এবং অমানুষের কথা আমি এত দিন শুনেছিলাম আজ তোমাকে দেখে নিলাম।"

"আমি একজন সম্মানিত বিজ্ঞানী, তুমি আমাকে অপদস্থ করতে পার না। আমাদের এই প্রজেক্টটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যে বড় বড় ডোনাররা এখানে তাদের টাকা ইনভেস্ট করেছে। আমরা সফলতার দ্বারপান্তে , তোমাকে কিছুই করব না। আমাদের সাথে যোগ দাও তুমি !"

নিয়ন চেঁচিয়ে বলল " জাহান্নামে যাক তোমার এই প্রজেক্ট বলেই একটা ঘুষি মারল নাক বরাবর। তোমার সাথে আর কে কে আছে এই প্রজেক্টে। বিজ্ঞান পরিষদের কেউ কি আছে তোমার সাথে ? "

সাওলিন প্রথমে বলতে চাই-ছিলনা তবে নিয়নের ঝেরার মুখে বাধ্য হয়ে বলল "বিজ্ঞান পরিষদের কয়েকজন বিজ্ঞানী এই প্রজেক্টের সাথে জড়িত কিন্তু তুমি তাদের ধরতে পারবে না।"

"আমি গুরুত্ব পূন্য বিজ্ঞানী আমাকে ছেড়ে দাও? " ফ্যাকাশে মুখে আবারো কথাগুলো বলল সাওলিন।

"তোমার লজ্জা করে না নিজেকে বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচয় দিতে। নিরীহ মানুষকে তুমি হত্যা করেছ। এর শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।"

"আমি কোন ভুল করিনি। আমি যা করেছি তা মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে করেছি" কিছুটা দৃঢ়টা সাথে বলল সাওলিন
"নিরীহ মানুষের জীবন নিয়েছ এটা তোমার কোন কিছুই মনে হচ্ছে না ? "

"না। আজ জেনে-টিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে মানুষ তৈরি করা হচ্ছে, প্রাচীন কালের মত মানুষকে আর জ্ঞান অর্জনের জন্য মানুষকে আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয় না বরং বিজ্ঞানীরা জিনোম সিকোয়েন্স টেস্ট করে তার জন্য উপযুক্ত বিশেষায়িত জ্ঞান ব্রেইনের নিউরনে প্রতিস্থাপন করছে। মানুষ রোগমুক্ত হয়েছে, কার অসুখ হয় না । তুমি কি জান এই প্রক্রিয়ায় আসতে আমদের পূব-সরি বিজ্ঞানীরা কত শত ট্রায়াল এন্ড ইরোরের মধ্যে দিয়ে গেছে, কত মানুষের জীবন নিয়ে জুয়া খেলতে হয়েছে। আমরা বিজ্ঞানী আমাদের সবসময় নিতি নৈতিকতার বাধনে বাধা পরলে জ্ঞান বিজ্ঞান আটকে থাকবে। "

"নিকুচি করি তোমার এই অগ্রগতির। পেশাব করি তোমাদের এই গবেষণার। আমাকে নূনুল্যতম রোবোটিয় গুণাবলি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে । আমার ভিতরের জেনো-রোবোটিয় গুণাবলি বলছে কোন মানুষের প্রাণ নেয়া ভয়াবহ অন্যায়। তোমাকে এবং তোমার পিছনে যারা আছে তাদের সবাইকে কঠোর শাস্তি পেতে হবে তৈরি হয়ে নাও। তোমার কি একটুও অনুসূচনা হচ্ছে না এতগুলো প্রাণ তুমি নিয়েছ? "

"যারা তাদের মূল্যবান প্রাণ উৎসর্গ করেছে তাদের প্রতি আমার সমবেদনা আছে নিয়ন কিন্তু অনুসূচনা নেই। আমি বিজ্ঞান সাধনা করি, জ্ঞানের নতুন নতুন জিনিষ আবিষ্কারেই আমার শান্তি। মানব সেবাই আমার ধর্ম সেখানে ছোট ছোট উৎসর্গে বিচলিত হলে আমাকে চলে না।"

নিয়ন এবার সজোরে সাওলিনকে উপুড় করে ফেলে দিল মেঝেতে। তারপর পিছন থেকে দুই হাত বেধে ফেলল শক্ত করে। "কিছুক্ষণের মধ্যেই ওমেগা ০০৭ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী রবোটিক দল চলে আসবে তারা তোমার ব্যাবস্থা করবে।"

***
ওমেগা – ০০৭ রবোটিক দিল রুও এবং সাওলিনকে ধরে নিয়ে গেছে। এই প্রজেক্টের সাথে বিজ্ঞান পরিষদের কয়েকজন বিজ্ঞানীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে তারা প্রত্যেকেই এই প্রজেক্টের সাথে সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেছে। এটা ঘটনা বর্তমানে মিল্কওয়ে ছায়াপথে ছরিয়ে ছিটিয়ে থাকা সমস্ত মানব জাতির কাছে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। ল্যাবরেটরিটা সিল গালা করা হয়েছে। এই ল্যাবরেটরিকে অভিশপ্ত হিসেবে ঘোষোনা করা হয়েছে, এখানে যে কারোরই প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ কর হয়েছে সারা জীবনের জন্য।

***
ল্যাবরেটরি রুমটা ফাকা নিস্তব্ধ কোথাও কেউ নেই। টেবিলের উপর রাখা মস্তিষ্কটা যেভাবে ছিল সেভাবেই পরে আছে । হঠাৎ কম্পিউটার স্কিনটা অন হয়ে গেল । ব্রেইনের কানেকশন সফটওয়্যার ওপেন হল, উপরের কানেকশন স্ট্যাটাসটা সাকসেস ফুল দেখাচ্ছে । ডিস্পেলেটাতে একটা লেখা ভেসে এল "হাই, কেউ আছ এখানে ? "
(শেষ)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×