somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার প্রবাস থেকে স্বদেশ ভ্রমণ

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রায় দু বছর হয়ে এল ভাবলাম দেশে যাওয়া ফরজ হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া পি,এইচ,ডি শুরু করার পর আর দেশে যাওয়া হয়নি মাঝে তার উপর গত বছর দেশের বাহিরে বাচ্চার বাবা হলাম!ভাবলাম দেশে ঘুরে আসি সাথে বাচ্চাকেও দেখিয়ে আনি সবাইকে । আমার অবশ্য খুব একটা হোম সিকনেস নেই তবে আমার বউ দেশে যাবার জন্য অনেক দিন ধরে অস্থির করে তুলেছে। পি,এইচ,ডি তে খুব একটা ছুটিছাটা নেই, তবে যেখানে থাকি সেখানে বাচ্চা-কাচ্চা উতপাদন করলে ইহ-জিন্দেগিতে ফায়দা অনেক পাওয়া যায়। এখানে পেইড পেটারনিটি লিভ প্রায় ছয় মাস থেকে বছরখানেক সাথে পি,এইচ,ডিও এক্সটেন্ড হবে। বাচ্চার বয়স নয় বছর হবার আগ পর্যন্ত ভেঙে ভেঙে এই ছুটি নেয়া যায়, ভাবলাম এই সুযোগ কাজে না লাগালে গুনা হয়ে যাবে না!!

দেশে অবশ্য আসতে চেয়েছিলাম গত জুন-জুলাইতেই তবে তখন দেশে প্রচন্ড গরম ছিল তার উপর চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাবের কথা নাই বললাম। আমার স্বাস্থ্য নিয়ে আমি খুশি তাই চিকুনগুনিয়ার কবলে পরে চিকুন হবার কোন ইচ্ছাই আমার ছিল না, শুধু শুধু দেশে এসে ধরা খাবার কোন মানে হয় না তাই তখন দেশে আসার চিন্তা বাদ দিয়েছিলাম। গরম কমলে দেশে যাব এই চিন্তায় গত মাসে পেটারনিটি লিভ নিয়ে দেশে এসে বিরাট ধরা খেলাম। আমার ধারনা মিথ্যে প্রমান করে গত মাসেও দেশে অতিরিক্ত গরম ছিল, আমি পুরানা পাপি বিদায় কোন রকম গরম সহ্য করতে পারলেও ছেলে গরম একদম সহ্য করতে পারে না! ছেলেকে নিয়ে বাহিরে কোথাও বের হতে পারি না, তবে আশার কথা হল গত কয়েকদিন ধরে গরম কিছুটা কমেছে বিদায় একটু আরামে আছি!

দেশে এসে আপাদত শ্বশুরালয়ে উঠেছি, আমাদের বাড়ি আর শ্বশুর বাড়ি বেশী একটা দূরে নয়। যেহেতু দেশের বাহিরে থাকি পরিবারসমেত ভাবলাম বউ নিজের পরিবারের সংগে কাটাক ছুটির সময়টা। আমি প্রায় প্রতিদিনই নিজের বাসা আর শ্বশুর বাড়ি যাওয়া আসার মধ্যে আছি!

কথায় আছে শ্বশুর বাড়ি মধুর হাড়ি, এই হাড়ির খোজ যারা পেয়েছেন তারা নিশ্চই ওয়াকিবহাল আছেন এই বাক্যের শানেনজুল কি! তাছাড়া আমাদের সংস্কৃতিতে জামাই আদর বলে একটা কথা আছে, একের পর এক খানাদানায় জিব সামলানো মুশকিল হয়ে পরেছে আজকাল, অতি খানাদানার ফলে ভুরি না আবার সামনের দিকে দশ ইঞ্চি বেড়ে সিজদা দিয়ে বসে সেই চিন্তায় আছি ! যাইহোক, শ্বশুর বাড়ি নিয়ে আমাদের দেশে মুখরোচর অনেক মজার গল্প আছে এখানে কিছু শেয়ার করছি, আমার উদ্দেশ্য ব্লগের অনেক অবিবাহিত নওজোয়ান আছে তাদের বিয়েতে উদ্ভুদ্ধ করা, তাতে কিছু মেয়ের কপাল খুলে আরকি!

আমাদের এলাকায় শ্বশুরবাড়ি নিয়ে এক গল্প প্রচলিত আছে। এক জামাই শ্বশুরবাড়ি গেছে বেড়াতে। শ্বশুর শ্বাশুড়ি, শালি শালী অত্যন্ত আনন্দিত নতুন জামাইকে মেহমান হিসেবে পেয়ে। খাতির যত্নের কোন কমতি করছে না কেউ! জামাই না চাইতেই সবকিছুই হাজির। খাবার সময় গলা ছিলা মোরগের রান থেকে শুরু করে আট দশ প্রকারের খাবারের আইটেম হাজির। সমস্যা হল জামাই খানা-দানা খুব একটা খেতে পারে না, জামাই শুদু বেছে বেছে দুই এক প্রকার তরকারীই পেটের ভিতর চালান করে বাকিগুলো চেখেও দেখে না! কয়েকবেলা শ্বাশুড়ি ব্যাপারটা পর্যবেক্ষন করার পর ভাবল এত আইটেম করে লাভ নেই জামাই যেগুলো খায় এখন শুধু সেগুলোই করব।

জামাই যেহেতু খেতে পারে না এবার খাবারের সময় জামাইকে তার পছন্দের আইটেমই সামনে খেতে দিছে! জামাইতো আর কিছুই মুখে দেয়না। বাড়ির লোক সব হাজির, সবার এক প্রশ্ন জামাই খায় না কেন। জামাই গম্ভীর হয়ে বলে আইটেম এত কম কেন! আমি খাই বা নাখাই চোখের সামনে সব আইটেম থাকতে হবে! গল্পটা খুব একটা মজার নয় তবে গল্পটা দিয়ে হয়ত গ্রাম বাংলার শ্বশুরবাড়িতে জামাইয়ের স্পেশাল খাতির যত্নের দিকটা বুঝানো হয়েছে!

যাইহোক, দেশে আসার পর থেকে ঘুরাঘুরি, আত্নিয়স্বজনের বাসায় দাওয়াতের উপর আছি! এমনি দাওয়াতের খুব একটা সমস্যা হয় না তবে শ্বশুরবাড়ির আত্নীয়দের বাসায় দাওয়াত হলে খানাদানা একটু বেশী পরে যায়! শেষ দুটো দাওয়াতে এরকম অবস্থা হয়েছে। খেতে বসেছি সবাই কিন্তু সবার নজর আমার দিকে। ভোজনরসিক আদমি হিসেবে আমার একটু কু-পরিচিতি আছে সেই আমাকেই প্লেটে একের পর এক আইটেম তুলে দিচ্ছে আর বলছে জামাইতো কিছুই খেতে পার না। আমি মনে মনে বলি জামাইয়ের পেটেকি রাক্ষস ঢুকছে! অনুরোধের ঢেকি গিলে টপাটপ খানাদানা পেটের ভিতর চালান করছি আর ওদিকে পেটের ভিতর নাড়িভুঁড়ি আমার ‘ছেড়ে দাও মা, কেধে বাচি' বলে আন্দোলন করছে। পাইপ লাইনে আরো কিছু দাওয়াত আছে আপাদত বলেছি এখন আর না,কয়েকদিন পরে আসব। কাল আবার ঢাকার বাহিরে যাচ্ছি এক বন্ধুর বিয়ের অনুষ্টানে যোগ দিতে!

দেখতে দেখতে দেশের আসছি মাস পেরিয়ে গেছে। হাসি আনন্দে কেটে যাচ্ছে সময়। আশাকরি ব্লগের নওজোয়ানেরা বিয়েতে উদ্ভুদ্ধ হয়েছে লেখাটা পরে। ব্লগে বিরহী কবিতার সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বেড়ে গেছে, আমি চাই বিরহি কবিরা বিয়ে শাদি করে শ্বশুরবাড়ির মুরগির রান টেনে পেটের ভিতরে রোমান্টিক কবিতা উতপাদন করুক।

আজ এই পর্যন্তই। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক! (এই কথাটা জানি কারা বলত?)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:৫১
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×