somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কল্প-গল্প : গামা লেভেল

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক
'তোমার পানিয়?' ইসাই এর দিকে গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল মেয়েটি।

ইসাই নিজের দুর্বল শরীরটি বিছানা থেকে কোনমতে টেনে তুলে হাত বাড়িয়ে গ্লাসটি নিল। তারপর উবু হয়ে বসে আলতো করে হলদে পানীয়তে নিজের ঠোট স্পর্শ করে ঢক-ঢক করে সবটুকু তরল খেয়ে নিল। শরীরের দুর্বল ভাবটি মুহূর্তেই যেন হারিয়ে গেল।

' কেমন লাগছে এখন ইসাই? ' মিষ্টি হাসি দিয়ে তরুণীটি জিজ্ঞেস করল।

ইসাই এতক্ষণ মেয়েটিকে ভালভাবে লক্ষ্য করেনি। গ্রীক দেবীদের মত সু-উচ্চ নাক, সোনালী চুল, সুঠাম দেহ, পড়নে মিনি স্কার্ট, গাঢ় নীল চোখ। কিছুক্ষণ তরুণী মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল।

' তুমি স্বপ্ন দেখছ না ইসাই!' বলেই তরুণীটি নিজের হাত দিয়ে ইসাইকে আলতো করে চিমটি দিল। ' এবার বিশ্বাস হল ? '

ইসাই চোখ জোরা বড় বড় করে মেয়েটির দিকে তাকাল, সে মনে মনে ভেবেছে হয়ত স্বপ্ন দেখছে অথচ মেয়েটি জানল কিভাবে!! স্বপ্ন নয় তাহলে কি সে, ওহ আর কিছুই ভাবতে পারছে না সে।

মেয়েটি এবারো মিষ্টি করে হেসে বলল ' না, তুমি মরেও যাওনি ইসাই। দিব্বি বেচে আছ এবং খুবই সুস্থ এবং স্বাভাবিক আছে। ' মেয়েটির চোখে মুখে এক ধরনের রহস্যের ভাব ফুটিয়ে তুলল।

ইসাই এবার মনে মনে কিছুটা চমকে উঠল কিন্তু চোখেমুখে সেটা প্রকাশ করল না। জিব দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল ' তুমি কে? আমি এখানে কেন? '

' ব্যস্ত হয়ো না। তুমি এখন আর পৃথিবীতে নেই, পৃথিবী থেকে অনেক দূরে আনা হয়ে তোমাকে, মিল্কিওয়ে ছায়াপথ থেকে অনেক দুরের কোন ছায়াপথে আছ তুমি। আমরা তোমাকে নিয়ে এসেছি। '

নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারল না ইসাই। স্মৃতি হাতরে স্পষ্ট মনে পরছে গতকাল রাতে তার কামড়ায় বসে ম্যাগাজিনের জন্য একটা লেখা লিখছিল। সে একজন সৃষ্টিশীল মানুষ, শব্দ কারিগর, বিজ্ঞান সাময়িক ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখে সে, যখন লেখে তখন দিনদুনিয়ার আর কোন খেয়াল থাকে না।

ইসাই ধরা গলায় জিজ্ঞেস করল 'কি বলছ তুমি ? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। তুমি কে? এলিয়েন? আমাকে এখানে কেন এনেছ? '
'শান্ত হও ইসাই। একসাথে অনেকগুলো প্রশ্ন করে ফেলেছ, আসতে আসতে বলছি। তোমার কোন ভয় নেই, আমরা তোমার কোন ক্ষতি করব না। আমরা মানুষ নই, আমরা গামা লেভেল। ' মেয়েটি আরও কিছু বলছিল

ইসাই থামিয়ে দিয়ে বলল 'গামা লেভেল কি? তাছাড়া তুমি দেখতেতো মানুষের মত। '

'মহাজগতের প্রতিটা প্রাণীই জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন পর্যায় দিয়ে যায়, জ্ঞান বিজ্ঞানে সর্বোচ্চ সীমাকে বলে গামা লেভেল, তার উপর আর কিছু নাই। আমরা সব অজানাকে জেনে ফেলেছি, কোন রহস্যই আর আমাদের কাছে রহস্য নেই। এই গ্রহ নক্ষত্র, মহাবিশ্ব সব কিছুর রহস্যই আমরা বের করে ফেলেছি। তোমরা মানুষেরা জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রাথমিক দিকে আছ। '

মেয়েটি একটু থেমে ইসাইয়ের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য অপেক্ষা করল। ইসাই চরম বিস্ময়ে মেয়েটির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে যেন ঠিক নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।

মেয়েটি এবার আবারো যোগ করল 'এই যে আমাকে মানুষের মত দেখছ এটা আমার সত্যিকারের রূপ নয়, আমরা দেখতে অন্য রকম তবে আমরা নিজদের রূপ পরিবর্তন করতে পারি, এখন যেমন মানুষের অবয়বয়ে এসেছি যাতে তুমি অস্বস্তি না অনুভব কর। বুঝতে পেরেছ? '

ইসাই বুঝতে পারছে মেয়েটা কথা বলার সময় যথেষ্ট মোলায়েম এবং আন্তরিকতার সাথে কথা বলছে যাতে ইসাই অস্বস্তি অনুভব না করে।
'হুম বুঝলাম! তবে তোমরা রূপ কিভাবে পরিবর্তন কর? ' মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল ইসাই।

মেয়েটি এবার মৃধু হাসল, তারপর বলল 'প্রতিটা বস্তু ভাঙলেই অণু পরমাণু পাওয়া যায়। আবার এই অণু-পরমাণু ভাঙলে ইলেকট্রন,প্রোটন এবং নিউট্রন পাওয়া যায়। এগুলোকে ভাঙলে আবার ফান্ডামেন্টাল পার্টিকেল কোয়ার্ক, এন্টি-কোয়ার্ক, নেপটন এবং এন্টি-নেপটন পাওয়া যায়। তার মাঝে কোয়ার্ক আবার ছয় প্রকার, যেমন আপ কোয়ার্ক ডাউন কোয়ার্ক ইত্যাদি। তুমি কি বুঝতে পারছি আমি কি বলছি ? '

মেয়েটি কথা বলার মাঝখানে ইসাই হুম, হা এবং মাথা ঝাঁকিয়ে যাচ্ছিল।

মেয়েটা একটু জিরিয়ে নিয়ে আবার বলল 'আমি জানি তুমি বিজ্ঞানের ছাত্র, ধর প্রোটন তৈরি হয় দুটি আপ কোয়ার্ক এবং একটি ডাউন কোয়ার্ক দিয়ে, ঠিক একইভাবে নিউট্রন এবং ইলেকট্রনও ফান্ডামেন্টাল পার্টিকেলের বিভিন্ন মান দিয়ে তৈরি। তুমি যদি বৃহত্তরভাবে চিন্তা কর তাহলে দেখবে যে সব বস্তু সেটা আগুন, পানি এমনকি তোমাদের বায়োলজিক্যাল বডি সবকিছুই এই ফান্ডামেন্টাল পার্টিকেল দিয়ে তৈরি শুধু তাদের ভিতরকার মানের ভিন্নতার জন্য এক একটা জিনিষ দেখতে এক এক রকম। আমরা যেহেতু গামা লেভেলে তাই আমরা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, আমরা যেকোনো বস্তুকেই মনের মত যে কোন বস্তুতে রূপান্তর করতে পারি। যেমন, পানি দরকার হলে হাইড্রোজেন এর দুটি এবং অক্সিজেনের একটু অণু মিশিয়ে পানি তৈরি করি, আবার গ্যাস তৈরি করতে হলে অণুগুলোর মধ্যকার বাধন গুলোকে মুক্ত করে দেই, কোন বস্তু তৈরি করতে হলে বাধন গুলোকে শক্ত করি, আর এভাবেই আমি নিজের ফান্ডামেন্টাল পার্টিকেলের মান পরিবর্তন করে নিজেকে মানুষের আকৃতি দিয়েছি।'

ইসাইয়ের মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সমীকরণগুলো ঠিক মিলতে চাইছে না। 'হুম বুঝলাম কিন্তু তুমি নিজের অণু-পরমাণু বা ফান্ডামেন্টাল পার্টিকেল কিভাবে পরিবর্তন করে নিজেকে পরিবর্তন কর ঠিক বুঝলাম না। এটা কিভাবে সম্ভব ?'

মেয়েটি এবার খুক খুক করে কেশে গলা পরিষ্কার করে বলল 'ইসাই আমি তোমাকে বলেছি আমরা জ্ঞান বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ সীমা গামা লেভেল বাস করি তাই আমাদের চিন্তা শক্তিও প্রখর। তুমি নিশ্চয়ই জান মানুষের চিন্তা তার কর্মকে প্রভাবিত করতে পারে ?'
জিব দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলল 'হুম, জানি। আমাদের চিন্তা আমাদের কর্মকে পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে, এর জন্য সবসময় বি-পজিটিভ থাকতে বলা হয়, তবে আমরা সরাসরি চিন্তা দিয়ে কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।'

'এখানেই তোমাদের সাথে আমাদের পার্থক্য। আমরা গামা লেভেলে তাই চিন্তা দিয়ে যে কোন কিছুই পরিবর্তন করতে পারি, যে কোন বস্তুর ফান্ডামেন্টাল পার্টিকেল শুধু চিন্তা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি আমরা।'

'তোমার কথায় আমার সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। তাহলে রিয়েলিটি কি?'

'রিয়েলিটির কোন সু-নিদিষ্ট সংজ্ঞা নেই, তুমি যা অনুভব কর তাই রিয়েলিটি। কোন ভরহিন বস্তুকে যেটা কিছুই না, যার কোন অস্তিত্ব নেই, নিদিষ্ট কোন আকৃতি নেই, সেই পার্টিকেলের বিভিন্ন কম্বিনেশন থেকে ফান্ডামেন্টাল পার্টিকেল এবং তার থেকে ভরযুক্ত পার্টিকেল এবং সেখান থেকে যে কোন বস্তু যেমন তরল, গ্যাসীয় পদার্থ আমরা বানাতে পারি। তুমি এখন এগুলো বুঝবে না ইসাই, আমরা গামা লেভেল বসবাস করছি তাই আমরা এর সব রহস্য জেনে ফেলেছি।'

'সবই বুঝলাম কিন্তু তোমরা আমাকে কেন নিয়ে আসলে ? '

'ইসাই সব কিছুরই ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক দুটি দিক আছে, যেহেতু আমরা সব রহস্যের সমাধান করে ফেলেছি, তাই আমরা আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি যেমন হাসি, কান্না আবেগীয় গুণাবলি হারিয়ে ফেলেছি, আমরা এখন আর গল্প লেখি না, বই পড়ে হাসি না, মুভি দেখে সময় কাটাই না কারণ আমরা জানি এগুলো সব অহেতুক, গল্প এবং সিনেমা সব কিছুই মিথ্যে করে বানানো , তাই এগুলো দেখে হাসি কান্নার কিছু নেই।'

মেয়েটি একটু থেমে আবার বলল 'ঠিক একই কারণে নর নারীর প্রতি আমাদের চিরন্তন আকর্ষণ আমরা হারিয়ে ফেলেছি তাই আমাদের বংশ বিস্তার থেমে আছে একটি জায়গায়।'

মেয়েটি ঢোক গিলে আবার বলল তোমাদের 'মানুষের ডিএনএ কোন কিছুই ফেলে দেয় না। উদাহারন দিয়ে বলা যায় তোমরা মানুষেরা সাপকে ভয় কর, প্রাচীন মানুষেরা যখন প্রথম সাপ দেখলে যেরকমভাবে শিহরিত হত, এখনকার আধুনিক মানুষেরাও সেরকম শিহরিত হয়। হয়ত মানুষ বনে জংগে থাকার ফলে সাপ নিয়ে তাদের ভয়ংকর কোন অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সেই ভয়কে তার ডিএনএ এখনও সংরক্ষণ করে রেখেছে। তাই এখনও মানুষ সাপ দেখলে ভয় পায়। তোমাদের ডিএনএ কোন তথ্যই ফেলে দেয় না সযত্নে রেখে দেয় অথচ আমাদের ডিএনএ আমাদের আবেগীয় গুণাবলি মুছে দিয়েছে। আমরা আমাদের হারানোগুনাবলি ফিরত পেতে চাই, তাই তোমাকে এখানে এনেছি সেই ব্যাপারটা গবেষণা করে দেখার জন্য।'

ইসাই চমকে উঠল । তাকে আবার কেটে কুটে পরীক্ষা করবে নাতো!! এই ভেবে তার গলা শুকিয়ে এলো।ইসাই ধরা গলায় বলল 'আমাকে নিয়ে তোমরা কি গবেষণা করবে? তাছাড়া তুমি বলছ তোমাদের হাসি কান্নার আবেগীয় গুণাবলী নেই অথচ আমি লক্ষ করলাম তুমি কথা বলার মাঝে প্রায় হাসছ, চেহারার বিভিন্ন এক্সপ্রেশন দিচ্ছ। আমি ঠিক বুঝলাম না ? '

মেয়েটি এবারও একটি রহস্যময় হাসি দিল। 'এগুলো সব কৃত্রিম হাসি ইসাই। তোমাদের মানুষকে অনুকরণ করার চেষ্টা করছি যাতে তুমি অস্বস্তি অনুভব না কর। আর তোমার কোন ভয় নেই, তোমাকে কোন কাটাকুটি করব না, এই যে কথা বলছি এটাই এক ধরনের গবেষণা। আমি কথা বলছি আর আমাদের বিজ্ঞানীরা দূর থেকে তোমাকে অবজার্ভ করছে, তুমি হাসলে, কথা বললে তোমার ডিএনএ এর চেইনে কোন পরিবর্তন হয় কিনা এই ব্যাপারগুলো তারা খুটিয়ে-খুটিয়ে দেখছে।'

ইসাই এবার কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেল। উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করল 'তোমাদের বিজ্ঞানীরা এখানে আসছে না কেন ? '

'ইসাই আমি তোমাকে বলেছি আমরা গামা লেভেলে তাই আমরা অহেতুক কোন কাজ করি না। তারা মনে করছে তোমার সাথে সরাসরি দেখা করার কোন দরকার নেই তাই তারা আসছে না। কিন্তু আমার সাথে কথা বলছে প্রতিনিয়তই'

ইসাই চোখ দিয়ে অনুসন্ধিৎসা প্রকাশ করল 'কিভাবে কথা বলছে ? '

মেয়েটি এক গাল হেসে বলল 'আমরা যখন মুখ দিয়ে কথা বলি বা চিন্তা করি তখন মস্তিষ্কে এক ধরনের কম্পন তৈরি হয় । মুখ দিয়ে জোরে কথা বললে বাহিরে সেই কম্পনের মাত্রাটা জোরে বের হয়, চিন্তা করলে আসতে। কেউ একজন কথা বললে সেই কম্পন কান দিয়ে ঢুকে আমাদের মস্তিষ্কের লিসেনিং অংশে প্রবেশ করে তখনই আমরা শুনতে পাই। আমরা যেহেতু গামা লেভেল তাই আমাদের মুখ দিয়ে কথা বলে জোরে কম্পন তৈরি করতে হয় না, কেউ যখন কোন কিছু চিন্তা করি মনে মনে তখনই সেই কম্পন আরেকজন গামা লেভেল ধরতে পারে। আর এভাবেই তুমি যখন মনে মনে কিছু বল আমি ধরে ফেলতে পারি। বুঝেছ এবার ইসাই? '

ইসাই মাথা ঝাঁকিয়ে বুঝার মত ভান করল।

'তোমার জন্য একটা সু সংবাদ আছে ইসাই ? '

ইসাই চোখেমুখে অনুসন্ধিৎসা প্রকাশ করল।

'ইসাই তুমি বিশেষ কেউ, ইউ আর চুজেন। তোমার মনটা কোমলীয়, মানুষের জন্য তোমার অসীম মায়া মমতা, তুমি একজন মানবিক মানুষ। তোমাকে যখন তোমার পৃথিবীতে ফিরিয়ে দিব, তোমাকে আমাদের গামা লেভেলের এই জ্ঞান দিব। আমরা গামা লেভেলরা যা যা করতে পারি তুমিও সব করতে পারবে । পৃথিবীতে তুমি তোমার ক্ষমতার সঠিক ব্যাবহার করবে, ঘরহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দিবে, ক্ষুধার্তকে খাবার দিবে, রুগীদের সুস্থ করবে। মনে রেখ সুপার পাওয়ার কাম উইথ সুপার রেসপনসিবিলিটি!'

ইসাই এর চোখে মুখে হাসির বলি রেখা ফুটে উঠল।

মেয়েটি একটু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিড় বিড় করে বলল, 'দেয়ার ইজ নো ফ্রি লাঞ্চ! '

'কি বললে তুমি ? ' ইসাই বলল।

না, না কিছু না। 'তুমি পরে বুঝতে পারবে।' মেয়েটি তার কাছ থেকে কিছু একটা লুকালো।
ইসাই আর অনুসন্ধিৎসা প্রকাশ করল না।

'আচ্ছা আমাকে তোমরা কিভাবে আনলে, কোন স্পেসশীপে করে কি, আমি বুঝলাম না কেন ?'

'ইসাই, আমরা গামা লেভেলের তাই কোথাও যেতে হলে আমরা নিজেদের ভেঙ্গে আলোর ক্ষুদ্রতম পার্টিকেল থেকেও ক্ষুদ্র ভরহিন পার্টিকেলে রূপান্তরিত করি, যাতে মূহুর্তেই সব জায়গায় যেতে পারি। আমরা তোমার শরীরকে আনি নাই, টেলি-পোর্টের মাধম্যে তোমার সাব-কনসার্স মাইন্ডকে এনেছি।'

'হুম, আমাদের পৃথিবীর মানুষ টেলিপ্যাথির উপর গবেষণা করছে কিন্তু বিজ্ঞানীরার এর কোন ক্লু পাচ্ছে না!!'

'আমরাও এই সময় পার করেছি কয়েক বিলিয়ন বছর আছে যখন টেলিপ্যাথির কোন ভিত্তি পাচ্ছিল না আমাদের বিজ্ঞানীরা। তোমাদের বিজ্ঞানীরাও এগুলো ধরতে পারবে, চিন্তা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, তবে অনেক সময় লাগবে, তোমরা এখনও অনেক নিচু স্তরে রয়েছ ইসাই।'

'হুম।'

'ইসাই আমাদের কাজ শেষ হয়েছে।তোমাকে বিদায়।তোমার সাথে কথা বলে অনেক ভাল লাগল।'

ইসাই হাসল।

'হাসলে কেন ?'

'তোমার ভাল লাগার অনুভূতি নেই, অথচ তুমি কি সুন্দর করে মিথ্যে বললে, ভাল লাগল, কি সুন্দর আন্তরিক হাসি হাসলে।আমার সাথে কৃত্রিমতার কোন দরকার নেই, তোমাকে হাসির অভিনয় করতে হবে না।'

'ঠিক আছে ।' এবার গম্ভীরভাবে বলল মেয়েটি, কথা বলার সময় মুখের অণু-পরমাণুর কোন পরিবর্তন হল না।

ইসাই কিছুটা ধাক্কা খেল।

দুই
চকচকে রোদের আলো ইসাই এর চোখের উপর পরল।

হাত দিয়ে চোখমলে ঘুম থেকে উঠল। হাই তুলে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল, হঠাৎই তার মেয়েটার সাথে কথা বলার কথা মনে পরল। এতক্ষণ কি তাহলে স্বপ্ন দেখেছে ? বাথ রুমে গিয়ে দেখল ব্রাশ পুরনো হয়ে গিয়েছে, ইসাই পুরনো ব্রাশের দিকে তাকাতেই চমকে উঠল। ব্রাশের ফান্ডামেন্টাল পার্টিকেলগুলো দেখতে পেল চোখের সামনে বড় বড় আকারে, কি আশ্চর্য সেগুলোকে সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে নিজের চিন্তা দিয়ে। চোখের নিমিষেই সবগুলো ফান্ডামেন্টাল পার্টিকেলের মান পরিবর্তন করে নতুন ব্রাশে রূপান্তরীত করল।
তাহলে রাতের ঘটনাটা স্বপ্ন ছিল না।!

সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন লেখালেখি করে ইসাই, আজ বিজ্ঞান ম্যাগাজিনে একটা লেখা পাঠানোর কথা! আশ্চর্য তার লেখতে মন চাইছে না অথচ লেখালেখি তার একটা পছন্দের কাজ, সেখানে নিজের একটা জগত তৈরি করা যায়, শব্দের সাথে শব্দের মিলন ঘটিয়ে যেই আনন্দ সেটা অপরিসীম অথচ এগুলোকে অহেতুক কাজ মনে হতে লাগল তার কাছে, তার মনে হল মিথ্যে মিথ্যে বানিয়ে বানিয়ে গল্প লিখে কি লাভ।

তার চোখটি আয়নায় যেতেই চমকে উঠল সে, লক্ষ্য করল সেখানে কোন অনুভূতি নেই, হাসি, কান্না মানবিক অনুভূতি সে হারিয়ে ফেলেছে! (শেষ)

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৯
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×