তত্বাবধায়ক সরকার নারীদের বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছে ।
১. সম্পদ, কর্মসংস্থান, বাজার ও ব্যবসায় নারীকে সমান সুযোগ ও অংশীদার করা৷
২. রাষ্ট্রদূত, বিশ্ববদ্যালেয়র উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, পরিকল্পনা কমিশন ও বিচার বিভাগের শীর্ষপদে নারীদের নিয়াগে উদ্যগ নিতে বলা হয়েছে৷
আমার কথা,
করুণা বা দয়ার ভিত্তিতে নয়, সমযোগ্যতার ভিত্তিতে সমানাধিকার নিশ্চিত করুন।
নারী অধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয় ও বক্তব্য গুলো তর্কের অতীত বলেই ধরে নেয়া হয়। অধিকাংশ লেখাতে করুণার সুর তুলে নারীদের অধিকারের পক্ষে গতানুগতিক ও অনাবশ্যক যুক্তি প্রদর্শন, যেগুলো ঘুরে ফিরে বহুবার বলা বা লিখা হয়েছে।নারী ক্ষমতায়ণ প্রসঙ্গে এক বিজ্ঞজনের লেখার অংশ বিশেষ তুলে ধরা হল।
লেখক বলেছেন, "ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে আরম্ভ করিয়া 1971 সালে নারীর অংশগ্রহণ শ্রদ্ধার সহিত স্বীকৃত। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হইতেছে, রাজনীতিতে নারীরা সর্বদাই কোণঠাসা পর্যায়ে রহিয়াছে।"
আমার মতে সকল আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল পরিমিত পর্যায়ে, এখন সে তুলনায় রাজনীতি ও প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায় বেড়েছে কয়েকগুণে। তুলনামূলক বিচারে কোন যুগেই ঘরের বাইরে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখ করার মত সন্তোষজনক কিছুই ছিলনা।
"দুজন নারীকে মনোনয়ন দিয়াছিল। তাহারা উভয়েই হারিয়া যান।"
হারলে গণতন্ত্র কি করুণা করে তাদের ক্ষমতায় বসাতে পারে?
তিনি উল্লেখ করেছেন, রাজনীতিতে নারীর অংশ গ্রহণ ক্ষেত্রে শীর্ষ তিনটি দেশ হলো, রুয়ান্ডা (48.8%), সুইডেন (45.3%), নরওয়ে (38.2%)।
তা দুর্ভিক্ষ আর গৃহযুদ্ধ হতে উঠে রুয়ান্ডা নারী সমানাধিকার দিয়ে কতটুকু অগ্রসর হতে পারবে বলে আশা করেন?
তিনি আরো উল্লেখ করেছেন যে উগান্ডা, তানজানিয়া, ভিয়েতনাম বা কিউবার মত উন্নয়ণশীল দেশের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ব্রিটেন , আমেরিকা, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্সের তুলনায় অনেক বেশি।
তাতে ব্রিটেন আমেরিকার মতো উন্নত দেশে উন্নয়ণে কি কোন ভাটা পড়েছে? আর উগান্ডার মত দেশে উন্নতির কি চিত্র পাওয়া গেছে নারী ক্ষমতায়ণ দিয়ে?
তাহলে এরপরই তিনি কি কারণে লিখলেন, "আমরা যদি নারীর রাজনৈতিক শক্তি, সামাজিক শক্তি ও অর্থনৈতিক শক্তির স্বতঃস্ফ্থর্ত বিকাশকে সমর্থন জানাইতে ব্যর্থ হই, তাহা হইলে ভবিষ্যতে একটি অনগ্রসর ও পশ্চাৎমুখী জাতি হিসাবে পরিগণিত হইব।"
আমার প্রশ্ন নারী ক্ষমতায়ন কি উন্নয়ণ আর অগ্রসর জাতির পূর্বশর্ত? তাহলে দুই যুগের বেশি সময় ধরে যে দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, সে দেশ শীর্ষ দুনীতিগ্রস্থ হিসেবে বহাল থাকে কি করে? আর নারী অধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ব্রিটেন, ফ্রান্স এত উন্নত হয় কি করে?
তিনি লিখেছেন, "নারীর ক্ষমতায়নে আরেকটি মূল বাধা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি না পাওয়া, চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্য...."
আমার মনে হয় তিনি পনের বিশ বছর আগের কথা বলেছেন। স্বজনপ্রীতির স্থান ছাড়া এখন চাকুরি ক্ষেত্রে নারীদের বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দিচ্ছে প্রায় সব প্রতিষ্ঠান। চাকুরি ক্ষেত্রে স্মার্টনেসের অভাবকে দায়ী করা হয়, এ বিষয়ে ও নারীরা আজ সচেতন। গ্রামীণ ফোনের রুবাবা দৌলা মতিনকে দেখলেই বুঝতে পারবেন, তারা এ বিষয়ে কতটা সচেতন ও অগ্রসর। আমার জানা ও হিসেব মতে, অফিসের পি এ , রিস্পেসনিস্ট থেকে শুরু করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিকতা , প্রকৌশল ফার্মে যোগ্যতা অনুযায়ী নারীদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এসব জায়গায় শিক্ষিত প্রগতিশীল লোকেরাই থাকেন, মধ্যযুগীয় ধ্যান ধারণার লোক থাকেনা, যে মহিলা বলে প্রাথর্ীকে কম বেতন দেন বা বৈষম্য করেন। শিক্ষিত মানুষ এ বিষয়ে এখন অনেক সচেতন।
সমস্যা হচ্ছে , নারী শিক্ষার হার যত বাড়ছে, তাদের উচ্চ শিক্ষার বা চ্যালেঞ্জিং কাজ করার মানসিকতা উন্নত বা বৃদ্ধি পাচ্ছেনা। আমেরিকা, কানাডার মতো দেশের নারী শিক্ষা ও সর্বস্তরে অংশগ্রহণের সুযোগ অবারিত। কিন্তু দেখা গেছে, প্রকৌশল, মেডিক্যাল, আইন, কৃষি প্রভৃতি বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে উচ্চ শিক্ষার আগ্রহ ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের খুবই কম। সেক্ষেত্রে মেয়েদের পছন্দ ফ্যাশন ডিজাইন, ফাইন আর্টস, রিলিজিয়ন, সোস্যালজি, পলিটিক্যাল সাইন্সের মত কলা ভিত্তিক বিষয়গুলো, যাতে চাকুরির সুযোগ তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
বাংলার শিক্ষিত সচেতন মেয়েরা স্বেচ্ছায় এসব বিষয়ে পড়াশোনা করে যখন বেকার বা কম বেতনের চাকুরি পায়, তখন আমার নারী অধিকার নিয়ে তোলপাড় শুরু করি, অথচ সমস্যাটা দেশের চাকুরি বাজারে আর নারীদের দুর্বল মানসিকতার। মেয়েরা যদি প্রকৌশল যদি পড়তে না চায়, বা না পারে, তবে প্রকৌশল ক্ষেত্রে নারী শূণ্যতার দোষ কি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের উপর চাপিয়ে কৃত্রিম আত্মগ্লানি তৈরি করতে হবে? আইন , প্রকৌশল, ডাক্তারি পাশ করা কজন নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ দেখাতে পারবেন এ কালে? তাদের কজন বেকার বসা দেখাতে পারবেন? বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আর দেশে ছড়িয়ে থাকা এনজিও গুলোতে কি নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তি ব্যাপক কর্মসংস্থানের দৃষ্টান্ত কারো চোখে পড়েনা?
লেখকের নিচের কথাটি তাই যতনা বাস্তব সম্মত তার চেয়েও বেশি সেকেলে আর আবেগ ও বিশ্বাস নির্ভর ।
"প্রতিবছর কয়েক হাজার নারী চিকিৎসাবিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষি ও সাধারণ শিক্ষায় উচ্চতর ডিগ্রি লাভের পরও যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরি লাভে বঞ্চিত হয়।"
লেখক আরো লিখেছেন, "যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মতে দেশে বেকারের সংখ্যা 3 কোটি। তাহাদের এক তৃতীয়াংশ নারী......কিন্তু সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় তাহাদিগকে শেষ পর্যন্ত অন্তঃপুরে ঢুকিতে হইতেছে।"
চাকুরির সুযোগ না থাকায় শুধু নারী নয়, পুরুষরাও তার চেয়ে বহুগুণে ভুক্ত ভোগী। নারীদের জন্য কোটাভিত্তিক চাকুরি বা কোন ব্যবস্থাকে লেখক তার লেখার শুরুতেই গণতন্ত্র বিরোধী বলেছেন। বেকারত্বের ক্ষেত্রে আমার মত নিম্নরূপঃ
ধরা যাক সারা বাংলাদেশে দুই লক্ষ চাকুরির পদ শূণ্য আছে। এর জন্য সমযোগ্যতা সম্পন্ন তিন ল উচ্চশিক্ষিত পুরুষ বেকার এবং দুই ল নারী বেকার আছে। নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অথবা গতবার সব পুরুষ নিয়োগ দেয়া হয়েছিল এ অজুহাতে এবছর যদি দু লক্ষ পদে দুই লক্ষ নারীকে নিয়োগ দেয়া হয়- তা হবে চরম বাড়াবাড়ি ও মূর্খতা চূড়ান্ত নিদর্শন।
সমানাধিকারের ভিত্তিতে এক লক্ষ পুরুষ ও এক লক্ষ নারীকে নিয়োগ দেয়াটা অনেকেই সাধুবাদ দিবেন। পুরুষের জীবনের প্রাপ্তি অথবা বিয়েটা নির্ভর করে তার চাকুরি প্রাপ্তির উপর, নারীদের ক্ষেত্রে মোটেও তা নয়। এক্ষেত্রে দুলক্ষ উচ্চশিক্ষিত পুরুষকে বেকারত্বের ঘানি টানতে হবে। আর এক লক্ষ বেকার নারী চাকুরি না পেলেও বিয়ে সংসার করে সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখতে পারে।
বেকারত্ব বলতে আমরা শিক্ষিত পুরুষের বেকারত্বকেই বুঝি। চাকুরিজীবী নারী কোন দিনও বেকার পুরুষকে বিয়ে করবেননা অপরদিকে চাকুরিজীবী পুরুষ পারলে তার স্ত্রীকে চাকরি করা থেকে অব্যহতি দেন।
চাকুরির চরম সংকটের দিনে সমানাধিকারের কথা বলে নারীদের কর্ম ক্ষেত্রে প্রবেশ করানোর পরিণতিটা হচ্ছে আরো বেকার পুরুষ, মানসিক ও শারীরিকভাবে যোগ্যতর প্রাথর্ীকে বঞ্চিত করা, বিয়ের বাজারে যোগ্যতর পাত্রের ঘাটতি বৃদ্ধি, হতাশাজাত সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি যেটা নারী বেকারদের দ্বারা কখনই ঘটতোনা।
তাই বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারী বেকার কথাটি তাৎপর্যহীন ও অবান্তর।
লেখকের এক বিষয়ে আমি একমত, "আমি মনে করি নারীর ক্ষমতায়ন হইতেও জরুরি বিষয় নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা।"
আমেরিকার মত দেশে সমানাধিকার ও উচ্চশিক্ষা থাকলেও সেখানে নারীরা সর্বাধিক নির্যাযিত। নির্যাতন বন্ধে পুরুষের ক্ষমতায়ন রোধ, শিক্ষা প্রসারের কথা বলে লাভ হবেনা। এজন্য পুরুষের দৃষ্টি ভঙ্গি, নীতি ও মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। নারীদের চাকুরির কথা বলে পি এ, রিসেপশনিস্ট আর এনজিও করে দিয়ে গোপনে নারী নির্যাতন করা আর পণ্য ও প্রসাধন হিসেবে নারীকে উপস্থাপনা বন্ধ করতে হবে।
জাতীয় কবি নজরুলের প্রতি শত ভাগ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি যে, লেখকে উলি্লখিত কবির পক্তিদ্বয়ের যৌক্তিকতা বাস্তবতার নিরিখে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মহান সৃষ্টি আর কল্যাণকর যা কিছু আছে এ পৃথিবী, ভালো ভাবে খুজে দেখুন কজন নারীর অবদান পাবেন? কতজন নারী আছেন এ তালিকায় ? নোবেল বিজয়ী, প্রফেসর, ডাক্তার, প্রকৌশলী, দার্শনিক, সাহিত্যিক মহাপুরুষের তুলনায় মহানারীদের সংখ্যাটা কী অতি নগন্য নয়?এমনকি সেরা বাবুর্চি, দর্জিও পুরুষ! কাজ না থাকলে লেখকের ভাষায় স্বীকৃতি আসবে কোথা হতে? করুণা আর ন্যায়বিচার এক নয়। সম যোগ্যতার ভিত্তিতে সমানাধিকারের প্রসঙ্গ আসতে পারে। এর আগে কোন কোটা ভিত্তিক প্রচেষ্টা বাড়াবাড়ি ও বৈষম্য।
14 কোটি (বিশাল ও যথেষ্ট) লোকের ছোট এ দেশেকে আর দুর্নীতি মুক্ত করতে পারলে, উন্নতির জন্য নারী ক্ষমতায়ন ইসু্যটি নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন হবেনা। আর নারী ক্ষমতায়ন অর্জনের লক্ষ্যে চাকুরি নামের মুষ্টিমেয় কিছু সোনার হরিণ আর ক্ষমতার আসন গুলো নারীদের মাঝে ভাগাভাগি করে দেয়ার সুফলটা এদেশের জন্য কি হবে, বারবার ভেবে দেখা দরকার। নারী নির্যাতনের বিষয়গুলোতে পুরুষের কুৎসিত মানসিকতার হেতু পুরুষের আত্মগ্লানি আসা উচিৎ, তাই বলে ক্ষমতার আসন গুলোতে নারীদের বসিয়ে না দিতে পারার জন্য কখনই নয়। কারণ, এর জন্য দায়ী নারীর শক্তিশালী, উদ্যমী ও আগ্রহী মানসিকতার অভাব এবং সেই সাথে দেশের আর্থ সামাজিক সীমাবদ্ধতা, যা কাটিয়ে উঠার চিন্তা না করে নারীদের ব্যাপক ক্ষমতা আর কর্মের সংস্থানের ব্যবস্থা করাটা সুচিন্তা প্রসূত নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০০৮ সকাল ৮:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



