প্রবাসে সংখ্যালঘু জীব হিসেবে আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সজাগ আর কঠোর থাকে । এই কালো বলে কেউ খোচা দিলো কিনা, এই পুছলিম বলে কেউ 'গো ব্যাক টু ইয়োর কান্ট্রি' বললো কিনা । সামান্য 'না' শুনলেই ভাবি শালা বর্ণবাদী। এক বাস ড্রাইভারের কর্কশ স্বর শুনে ভাবলাম আমার বর্ণ, ধর্ম দেখেই হয়তো চেচাচ্ছে । পরে দেখি না, বেটা চরিত্রগতভাবেই বদ মেজাজি, সবার সাথেই এমনটা করে।
বাংলাদেশের মুখে চুনকালি দিয়ে ভারতে অভিবাসী হওয়া বীর বাঙালিরা একই ধর্ম ও বর্ণের পরেও ভারতে একটা অপবাদের মুখোমুখি হন। বাংলাদেশ স্বাধীন করে দিয়েছি বলেই তোদের মুখে এত বড় বড় কথা! বাঙালির সম্মানবোধ প্রখর বলেই ভিন দেশের দালালি করে অসম্মান হাজির করে।
ওয়াসিম আকরাম যদি ধারাভাষ্যে বলে বসেন তামিম ইকবাল শুড বি রিপ্লেসড --সেটা রক্ত গরম করে দিতে পারে । শত্রু দেশের মুখ কোন প্রকার সমালোচনা শুনতে আমরা রাজিনা। এই কথা গাঙ্গুলি বলতে পারেন, টেন্ডুলকার বলতে পারেন, কিন্তু কোন পাকিস্তানি বলতে পারেনা ।
ফকিরের দেশ বাংলাদেশ এখন ধনী হয়ে গেছে-- সিধুর এ ধরনের কথার জবাব কী? বাংলাদেশকে তো ধনীই বলেছে। ভালই তো বলেছে। আপনি খেলে দেখান আপনি ভাল পারেন । জবাব দিন খেলার মাঠে । জিতবে বাংলাদেশ জিতবে বলে চেচিয়ে কী লাভ?
যারা নিজেদের বাঙালি ভেবে ভেবে শিহরিত হন তারা ভারতের সাথে পরাজয়কে বড়দার কাছে হার মানা ভেবেই শান্ত হন। এপার বাংলা-ওপার বাংলা একই তো দেশ, নিজেদের মাঝে এত ঘৃণা-গন্ডগোল পুষে পাকিস্তান আর মৌলবাদের হাতকে শক্তিশালী করবেন কেন? ভারত নিজেদের অস্ত্র, মাটি, সেনাবাহিনী দিয়ে ঔকান্তিকভাবে সাহায্য করার পরেও বাংলার মাটিতে যে ভারত বিদ্বেষের দানা বাধে সেটাকে পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র বলা যায়।
শক্ত পোক্ত দেশ প্রেমিক বাংলাদেশি হতে হলে নিয়ম করে পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণাটাকে পোক্ত এবং চালু রাখতে হয়, আর পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণাটাকে আরো মজবুত করতে লাগে ভারতের প্রতি নিঃশর্ত বন্ধুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি। আপনি যদি বলেন বাংলাদেশি হেসেবে পাকিস্তান-ভারত দুটোই আপনার অপছন্দ, খাঁটি বাঙালিরা ঘোলা ঘোলা চোখে আপনার দিকে তাকাবে।
খাঁটি বাংলাদেশ বা বাংলাদেশী বলে কিছু নেই ।ঐতিহাসিকভাবে এই দেশটা কোন না কোনভাবে ভারত বা পাকিস্তানের দালালি করেই একটা ভূখন্ড ধারণ করে আছে।