somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রবীন্দ্রসঙ্গীত – জাতীয় সঙ্গীত প্রসংগ নয়; প্রসংগ সোহিনীর জাতীয়তায়

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের জাতীয় সঙ্গীত যতটুকুঃ

Click This Link
Click This Link
আমার সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালবাসি|
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস
আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে
ঘ্রাণে পাগল করে--
মরি হায়, হায় রে
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা খেতে,
আমি কী দেখেছি মধুর হাসি।।
কী শোভা, কী ছায়া গো,
কী স্নেহ, কী মায়া গো,--
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে,
নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী
আমার কানে লাগে সুধার মতো-
মা তোর বদন খানি মলিন হলে
আমি নয়ন
ও মা আমি নয়ন জলে ভাসি
সোনার বাংলা,
আমি তোমায় ভালবাসি|

কমেন্ট করতে গিয়েই এত্তসব লেখা। আমি মানুষের জাতীয়তার অজ্ঞানতার এত অভাব দেখে অবাক হলাম।

১। রবীন্দ্রনাথ গানটি লিখেছেন; তাই ওটা রবীন্দ্রসংগীত। ১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথ মারা যান - ওনার জানার কুদরত নাই যে ১৯৭১ সালে (উনার মরার ৩০ বছর পর) একটি স্বাধীন দেশ হবে আর তার লেখা এই "আমার সোনার বাংলা" হয়ে যাবে এই জাতীর জাতিয় সংগীত।

২। রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে উল্টা পাল্টা করতে গেলে শান্তি নিকেতন আছে, কারণ শান্তিনিকেতনকে রবীন্দ্রনাথ নিজেই অথরিটি দিয়ে গেসেন। এখন রবি ঠাকুর মারা যাবার ৭২ বছর পর সেটার কপিরাইট প্রসংগ বা তার সংরক্ষণ বা পরিবেশন (সেটা অমিতাভ বচ্চন জ্যাজ দিয়ে গাইবেন না মকসুদ ব্লউজ দিয়া গাইবেন) তা শান্তি নিকেতন বিচার করবে। যদ্দিন বিচার করবে না হয়ত তদ্দিন এগুলাই চলবে।

৩। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ এবং তার নিজস্বতার জন্যই সে আলাদা জাতি পরিচয় নিয়ে ১৯৭১ সালে আত্মপ্রকাশ করেছে। জাতীয় সংগীত 'আমার সোনার বাংলা' কে তাই সে ধারণ করেছে জাতীয় পরিচয় হিসেবে। বংগ ভংগ এর বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের অনস্থানের কারণে এই গানটি ছিল বিপ্লবী, তাই এটা নতুন বাংলাদেশ বিপ্লবী চেতণায় ধারণ করেছে। আর তারজন্য সংরক্ষণ আইন ও করেছে। তাই এদেশের জাতীয় পরিচয় যে দেবে,(এদেশের বংশ উদ্ভুত এর আওতায় পরে কি না জানি না।) তাদের জন্য এটি জাতিয় সঙ্গীত এবং তার ব্যক্তিগত পরিচয় হল জাতীয় সঙ্গীতের পরিচয়ের তুলণায় নগন্য ও তুচ্ছ। অর্থাৎ আমার ব্যাক্তিগত ভাল লাগাও জাতীয় সঙ্গীত অবমাননায় স্থান পায় না।

৪। তাই সোহিনী যদি না গেয়ে বারাক ওবামা বা মান্না দে গাইতেন - 'কি শোভা' থেকে --- তাহলে আমরা কেউ চিক্কুর দিতাম না। চিক্কুর দেওয়া তখন শান্তিনিকেতনের ব্যাপার। কারণ - আমার সোনার বাংলার মুল পরিচয় রবীন্দ্রসংগীত, অন্য জাতীর কেউ গাইলেই তা রবীন্দ্রসংগীত। আমাদের রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে কথা কওয়ার অথরিটী নাই। ওটা তাই শান্তি নিকেতন জানে।

৫। কিন্তু সোহিনী গাওয়াতেই আমরা প্রতিবাদ করলাম। কারণ সে বাংলাদেশী (যদ্দুর শুনেছি), আর তাই অন্যায় সুন্দর হলেও পরিত্যাজ্য। যত সুন্দর করে গাক না কেন - সে বাংলাদেশী হয়েই রাষ্ট্রদ্রোহীতার আওতায় পড়েছে।

৬। কিন্তু সোহিনী যদি ভিন্ন নাগরিক ও জাতীয়তার হয় তাহলে সে রবীন্দ্রসঙ্গীতই গেয়েছে, এটা নিয়ে কথা বলাটা তাহলে অর্থহীন হল। কিন্তু সে বাংলাদেশী বংশীয় হলে জাতীয় সংগীত অবমাননার দায় কদ্দুর পড়ে জানি না। কিন্তু বাংলাদেশী হলেই দায় মাথা পেতে নিতেই হবে – এটা কেউ কষ্ট পেলেও কিছু করার নেই।

৭। আরো বিষয় হল একজন পাকিস্থানী - আসিফ মহীয়েদ্দিন ওই গানে তবলা বাজিয়েছেন আর গানটিতে সাঊন্ড এডিটিং করেছেন তার স্টুডিওতে। তাহলে ব্যাপারটা তো আরো অবমাননাকর কি দাড়ালো না?

৮। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ বাংলাদেশের হয়েছিল পাকিস্থানের সাথে - তারা এখনো কোন রাষ্ট্রীয় ক্ষমা চায় নাই। যুদ্ধাপরাধীর বিচারটাও তাদের বিরুদ্ধে যায়। তার মানে জাতিগত ভাবে তারা আমাদের শত্রু। অথচ অনেক হাম্বাবলদ বলে যে - এসব ভুলে তাদের ক্ষমা করতে। আরে ভাই তারা তো ক্ষমা চায়ই নাই, আমরা কেন ভুলে যাবার জন্য ক্ষমা করবো? আর ক্ষমা না চাইলে কি ওটা ক্ষমা হয় কি?

৯। আবারো সোহিনীর জাতিয়তা প্রসংগ আসে, যদি বাংলাদেশী না হয়ে অন্য জাতীর হয় তাহলে পাকিস্থানী না ইন্ডিয়ান না ব্রিটিশ – যাকে দিয়ে ইচ্ছে যেমনি গাক – তা রবীন্দ্রসঙ্গীত। কিন্তু বাংলাদেশী হলেই ইচ্ছেকৃত অবমাননায় পড়বে। অনেকেই বলেছে সোহিনী হলেন ফেরদৌসী আরার ভাগ্নী – এটা কিন্তু পারিবারিক পরিচয়, জাতিগত দিক থেকে ভিন্ন হতেই পারে। অর্থাৎ ভাগ্নী ব্রিটিশ হয়ে গেলে আর জাতীয় সঙ্গীত বিষয়ক কথাটা এখানেই শেষ করতে হবে। অন্যদেশের নাগরিকের ভুল শুদ্ধ নিয়ে ফাউল প্যাচাল করি না। কিন্তু আবারো বলতেসি – সোহিনী বাংলাদেশী পাসপোর্ট ব্যবহার করে এই গান গাইলেই শুদ্ধতা রক্ষা করতে হবে।

১০। আমাকে অনেকেই বলেছে - জাতীয় সঙ্গীত আর জাতীয় পতাকা সমান। তাই জাতিয় পতাকা নিয়ে ভালবাসা প্রদর্শন যে কোন ভাবেই হয়। তাই জাতীয় সংগীত নিয়ে ক্ষ এর উল্টা পাল্টা গান আর জাতীয় পতাকা নিয়ে ব্রা প্যান্টি ও বানানো যাবে। আমেরিকা বানায় --- তারা কি আমাদের চাইতে উন্নত জাতি না? আমি অবাক হই জাতির এইসব বিষ্ঠাদের কথায়।

৯। আমরা ১৯৭১ সালের মহান বিজয় অর্জন করেছি - আমেরিকা করেনি। আমেরিকা ব্রিটিশ অস্ট্রেলিয়ান রা উপনিবেশ করেছে - তাই তাদের পতাকা কতকটাই এক, তারা দেয়া। তারা জাতীয় পরিচয় কি দেবে তার চেয়ে আমি আমার জাতীর পতাকাকে যে আমার মায়ের শাড়ী মনে করি তা বোধহয় অনেকেই ভাবেন। কারণ ওটা আমাদের সম্মান। ওটা কোনদিন অন্তর্বাসের কথা ভাবাটাই অন্যায় ও বিকৃতরুচীর পরিচয় মনে হয়েছে।

১০। শেষ কথা, প্রথমেই আমরা আমাদের দেশ ও জাতীয় পরিচয় কে নিজের ভাললাগার উর্ধে স্থান দেই। রক মিউজিকে জাতীয় সংগীত গাওয়া যাবে যদি তা আমার সোনার বাংলা দিয়ে শুরু হয় এবং তা আমরা চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজের এক প্রোগ্রামে আইয়ুব বাচ্চুর সাথে গেয়েছিও এবং সেদিন সবাই দাঁড়িয়ে বুকে হাত রেখে এত সুন্দর করে পুর্ণ সম্মান দেখিয়ে গেয়েছিলাম তা আজো মনে আছে। ওটাতে নাচানাচি ছিল না , এবং সম্পুর্ণ গাওয়া হয়েছিল সেদিন, আর এরপর প্রোগ্রাম শেষ হয়েছিল। আমি মনে করি এলআরবি যে সম্মানটা দেখিয়েছে তা অনুকরণীয়।

শেষ কথা হল, এটা সোহিনীর জাতীয়তা প্রসংগ তর্ক বলা যেতে পারে। রবীন্দ্র সঙ্গীত ও জাতীয় সঙ্গীত গুলানোর বিষয় নয় – আমি যত জনের সাথে কথা বলেছি বা পোস্ট পড়েছি সবাই জাতীয় চেতণায় এক, অবমাননা কোনভাবেই মানবে না এমন; আর রবীন্দ্রসংগীতের নতুনত্ব কি হবে না হবে তা নিয়ে কোন প্রশ্নও নেই। তাহলে এত কথা আসছে কেন? ওটা শুধুমাত্র সোহিনীর জাতিয়তা প্রসঙ্গে। সোহিনী বাংলাদেশী হলেই সে “কি শোভা কি ছায়া গো” থেকে গাইতে পারবে না; জাতীয় সংগীতের জন্য সংরক্ষিত লাইন ছাড়া বাকী গুলো দিয়ে গাইতে পারে, তাহলে তা রবীন্দ্রসঙ্গীতই হবে, আর কোরাস পার্টটাতে আমার সোনার বাংলা কথাটা আসবেই, তাও হয়ত মেনে নেয়া যেতে পারে। ধন্যবাদ।
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×