somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজয় ইতিহাসের সংস্কার দাবী

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শেষ কবে আপনি আপনার সন্তানের সাথে আমাদের স্বাধীনতা বা বিজয়ের অথবা মুক্তিযুদ্ধের গল্প করেছেন ? মনে করতে পারছেন না ? হয়তো কখনোই করেননি । আপনাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই । কারণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রথম যে কথাটি দিয়ে গল্প শুনতে হয় সেটাই সমস্যা । ৩০ লক্ষ শহীদ আর অসংখ মা- বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা । ৩০ লক্ষটা মেনে নিলেও পরের অংশটা খুব সহজে আপনি আপনার সন্তানের সাথে আলোচনা করতে পারবেন না ।আর ঠিক এই জায়গাতেই আপনি কবি নীরব থাকেন ।

বিসর্জন ছাড়া পৃথিবীর কোন দেশেই স্বাধীনতা পায়নি । যখন কোন দেশে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বাধে তখন শুধু জীবনের বিসর্জন হয় না । সাথে আরো অনেক কিছুর বিসর্জন দিতে হয় । আমেরিকানরা ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাবার জন্য আমাদের মতো রক্ত আর নারীর সম্ভ্রম বিসর্জন দিয়েছে । স্কটিশরা ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাবার আশায় যে যুদ্ধ করেছিল তাতে ব্রিটিশরা স্কটিশ নারীদের সাথে যা করেছিল তা এখনো স্কটিশরা ভুলতে পারিনি । কিন্তু এই সব দেশের স্বাধীনতার গল্প শুনলে আপনি দেখবেন সেখানে বিসর্জনের কথা নেই আছে শুধু অর্জনের কথা । প্রতিটি দেশই নিজেরদের প্রজন্মকে নিজেদের বীরত্ব গাঁথা গল্প শুনাতে চায় । সেখানে থাকে না পরাজিত রাষ্ট্রের কথা । এর কারণ খুব সহজ । আপনি নিজেকে যতটা সহজে সুপারম্যান ভাবতে পারবেন ততটা সহজে অন্যকে নিয়ে প্রচন্ড বাজে কিছু ভাবতে পারবেন না । এটা মানবিক একটা ব্যাপার । হত্যা ধর্ষণ এই সব কথা বোজার জন্য একটা বয়স দরকার ।আপনি ঢালাও ভাবে টিভি সিনেমা আর পাঠ বইয়ে হত্যা ধর্ষণ সম্পর্কে না লিখে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব নিয়ে লিখলে আমাদের সন্তানরা খুব সহজে গল্পটা পড়ে নিবে । আর আমি বা আপনি হয়তো এ নিয়ে দুটো কথা বলতে পারবো আমাদের সন্তানদের সাথে ।আজ হোক কাল হোক এই সব নিয়ে সে জানবেই । কিন্তু ছোটবেলাটা হোক না বীরত্ব দিয়ে শুরু ।

আমেরিকা বা ইংল্যান্ডের প্রতিটি স্কুলে এদের ইনডিপেনডেন্স ডে এর প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে থেকে বাচ্চাদের নিয়ে একটিভিটি শুরু করে। এক্ষেত্রে অন্য দেশের পড়ুয়াদেরকেও একই ভাবে এই বিজয়ের গল্প মুখুস্ত করতে হয় । আঁকতে হয় আমেরিকান বা ব্রিটিশ পতাকা । আরো অনেক কিছু । পুরো আমেরিকান রেভুলেশন এর গল্প খুব ছোট বেলা থেকে এদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয় । যেসব বাংলাদেশী ছাত্র ছাত্রী এই দেশের স্কুল গুলোতে পড়ছে এরা সবাই আমেরিকান রেভুলেশন বা আমেরিকার বিজয়ের গল্প মুখুস্ত বলতে পারবে । একদিন দুইদিন নয় পুরো একটা মাস এখানকার স্কুল স্কুলের টিচাররা বাচ্চাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয় আমেরিকা বা ব্রিটিশ বিজয় গাঁথা ।



আরো মজার ব্যাপার আমেরিকানরা তাদের স্বাধীনতা পায় ব্রিটিশদের কাছ থেকে । আর বর্তমানে এই দুই দেশ বন্ধু প্রতিম । এবার ভাবুন এদের স্কুলে নিজেদের স্বাধীনতা নিয়ে কি ইতিহাস বর্ণনা আছে ? ব্যাপারটা খুবই আপেক্ষিক । ব্রিটিশ স্কুলগুলোতে সাধারণত আমেরিকান বিজয়ের তেমন কোন ইতিহাস নেই । থাকলেও অপশনাল ।জার্মানির স্কুলের সিলেবাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস বলতে কিছু নেই । জার্মানরা চায় না তাদের হেরে যাবার ইতিহাস তাদের স্কুলে পড়ানো হোক ।এভাবে প্রত্যেক দেশেই তাদের নিজেদের মতো করে নিজেদের সুপারহিরো করে গল্প বানিয়ে স্কুলের পাঠ বইয়ে ছাপিয়ে দেয় । যদিও জানে বড়ো হবার সাথে সাথে এরা সবাই আসল কাহিনী জানবে । আর ঠিক এই কারণেই যে হিটলারকে আপনি ঘৃণা করেন জার্মানরা তাকে অন্তর থেকে ভালোবাসে ।

আমাদের স্বাধীনতা বা বিজয় নিয়ে আপনি যদি গুগল এ সার্চ দেন তাহলে প্রথমে যা ভেসে উঠবে তা হলো নির্যাতিত নারী আর কিছু মৃত মানুষের ছবি । অথচ অন্য যে কোনো দেশের স্বাধীনতা নিয়ে খুজুন দেখবেন নানা রকম পতাকা নিয়ে নিজেরদের বিজয় উদযাপনের ছবি । ঠিক কি কারণে আমাদের বিজয় এখনো এতো রুগ্ন আর অবহেলিত ডিজিটাল জগতে তার ব্যাখ্যা আমার জানা নেই । তবে খুব সম্ভবত আমরা নিজেরা নিজেদের ঠিক মতো বিজয়ী ভাবতে পারছি না এই কারণে । আমরা যতনা নিজেদের বীরত্ব নিয়ে কথা বলি তার চেয়ে বেশী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর অত্যাচার নিয়ে কথা বলি । পাকিস্তানের মতো অকার্যকর একটা রাষ্ট্রকে নিয়ে কথা বলাও এদের সম্মান দেয়ার মতো । কারণ এই রাষ্ট্র নিয়ে আমরা ছাড়া মনে হয় না পৃথিবীর অন্য কোন দেশ এতো কথা বলে ।

আমাদের বিজয়ের গল্পের উপস্থাপন আমাদের সন্তানদের কাছে আকর্ষণীয় হচ্ছে না কেন ? স্বাধীনতার ইতিহাস এই প্রজন্মের কাছে এদের মতো করে উপস্থাপন করতে না পারার দায় কাওকে না কাওকে তো নিতে হবে ।কেন এখনো স্বাধীন বা বিজয় দিবসের নাটক মানে অত্যাচার আর নারী নির্যাতনের গল্প হবে ? আর কেনই বা এই নাটক বা সিনেমা আমি আমার সন্তানের সাথে বসে দেখতে পারছি না ?

৯/১১ এর পর আমেরিকার বুশ প্রশাসন টুইন টাওয়ার নিয়ে সব রকম মুভি বা কল্পকাহিনী বানানোর উপর ডিক্রি জারি করে । যার ফলে টুইন টাওয়ার নিয়ে হলিউড এখনো কোন ছবি বানাতে পারেনি । এর কারণ খুবই সহজ । আমেরিকা নিজের হেরে যাবার ইতিহাস ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য রেখে যাচ্ছে না । পৃথিবীর কোন দেশেই নিজেদের উপর অত্যাচার বা নিপীড়ণের ইতিহাস আমাদের মতো করে এভাবে ধারণ করে রাখেনি ।



অন্তত বিজয়ের দিনে কি আমরা নিজেদের বীর ভাবতে পারি না ? নয় মাসের ক্ষয় ক্ষতির কথা না বলে নয় মাসে আমরা কিভাবে সাহসের সাথে যুদ্ধ করেছি শুধু তাই কি বলা যায় না ? আর আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা কি সবাই লুঙ্গি পরে যুদ্ধ করেছিল ? যখন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পোশাক পরা পেশাদার সেনাবাহিনী দেখান আপনারা তখন আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের নিজের অজান্তেই আপনারা মিলিশিয়া বানিয়ে দেন । অন্তত এই প্রজন্মের কাছে । সরকার কি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিজয় এই সব নিয়ে নাটক সিনেমা বানানোর একটা রূপরেখা বানাতে পারে না ? যদি পৃথিবীর অন্য সব দেশ পারে আমরা পারবো না কেন ?

খুব সম্ভবত আমাদের বেশির ভাগ সন্তানেরা বিজয় দিবস আর স্বাধীনতা দিবস গুলিয়ে ফেলে । এর কারণ স্বাভাবিক । তারা যখন পৃথিবীর অন্য দেশের ইনডিপেনডেন্স ডে এর গল্প শুনে তখন তা একটা নির্দিষ্ট দিনে হয়ে থাকে । যেমন আমেরিকার ৫ ই জুলাই । কিন্তু আমাদের দেশে স্বাধীনতা দিবস ২৬ সে মার্চ আর বিজয় দিবস ১৬ ই ডিসেম্বর । মানলাম ঐতিহাসিক কিছু ব্যাপার আছে এই ইতিহাসের পেছনে । কিন্তু এর সহজ উপস্থাপন কি হয় না ? এই প্রজন্ম যখন এই দুই দিবসের মধ্যে পার্থক্য বুঝেনা তখন আপনি এদের দিকে আঙ্গুল তুলছেন । ভেবে দেখুন কাল আপনি না থাকলে এরা এমনিতেই সব ভুলে যাবে । এর চেয়ে আমাকে আপনাকে এদের মতো করে এই দুই দিবসকে বোজাতে হবে । ভালো কথা আপনি নিজে কতটুকু পার্থক্য বুঝেন স্বাধীনতা আর বিজয় দিবসের মাঝে ? যদি বুঝে থাকেন তবে এর প্রয়োজনীয়তাও আপনাকে বোঝাতে হবে এই প্রজন্মকে । কারণ নতুন এই প্রজন্ম কন্ট্রভারসিয়াল যে কোন কিছু খুব সহজে মেনে নিচ্ছে না । আপনি জোর করলেও এরা ভুলে যাবে। সুতরাং এদের সাথে জোর খাটিয়ে খুব একটা লাভ হবে না । বরং এদের মতো করে বুজবার আর বোঝাবার নিয়ম জেনে নিন তাড়াতাড়ি ।

ভারতে স্বাধীনতা দিবস আর রিপাবলিক দিবস দুইটা ভিন্ন দিনে আর এর কারণও ভিণ্ণ । একদিন তারা স্বাধীন হয় আর এক দিন তারা প্রথম নিজেদের দালিলিক রিপাব্লিক রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা দেয় । স্পষ্টত যে কেও এই দুটি ভিন্ন দিবসের ভিন্ন তাৎপর্য বুজতে পারবে নামকরণ থেকে । আমাদের সরকার কি এই রকম সহজভাবে আমাদের স্বাধীনতা দিবস আর বিজয় দিবসের ব্যাখ্যা দিতে পারে না ? আমরা কখনোই চাই না ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের মূল ভিত্তি স্তম্ভ নিয়ে প্রশ্ন করুক । ব্যাপারটা আমার বোঝার না । ব্যাপারটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বোঝানোর ।আশা করি বুজতে পারছেন ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৫৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×