somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনার জীবন মেটাল না মেলোডি ?

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


৮০-৯০ এর দশকর উঠতি বয়সের ছেলে পেলেদের ক্রেজ ছিল গানস এন রোজেস , মেটালিকা , নির্ভানার মতো হেভী মেটাল ব্যান্ড গুলো । ওই সময় কনসার্ট বলতে বোঝানো হতো হাই ভোল্টেজ মেটাল পারফরমেন্স । সমসাময়িক দেশজ ব্যান্ড গুলোও মারাত্মক মেটাল মুখী ছিল । তখন স্টেডিয়াম গুলোতে যখন কনসার্ট হতো তা হতো মেটাল বা হেভী মেটাল ব্যান্ড গুলোর হাই ভোল্টেজ পারফরমেন্স । এই সময়েই জন্ম জেমস , আইয়ুব বাচ্চু , মাইলস বা সোলসের মতো ব্যান্ড গুলোর । যাদের আদর্শিক মূর্ছনা ছিল ট্র্যাশ মেটাল বা সপ্তম সুরের গান । শরীরে শিহরণ জাগিয়ে তোলা ওই দশকটি যাদের জন্ম দিয়েছে তারা এখনো ঠিক আগের মতোই আছে ।

আপনার সংগীত সাধনের ধারা আপনার পরিবেশের উপর নির্ভর করে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে নানা অসঙ্গতি আর অন্যায়ের প্রতিবাদের ভাষা হয় মেটাল সংগীত ধারা । অস্থির পৃথিবীতে তরুণরা নিজেদের চিৎকারকে বদলে দেয় মেটাল গানে ।নব্য সৃষ্টি হওয়া পাঙ্ক সমাজ বদলে দিতে চায় পৃথিবী । গানের মাধ্যমে তাদের প্রতিবাদ । সমাজ অনেক বদলে গেছে । মানুষের না পাওয়ার লিস্টি ছোট হয়ে এসেছে । সবাই নিজেদের জীবনকে মেলোডিয়াস করে রেখেছে । যেখানে আপনি পাবেন প্রেম ভালোবাসা আর এর পর না পাওয়ার লিস্টটা বড়ো করতে গিয়ে যোগ হয়ে গেলো সমকামিতা ধর্মীয় মৌলবাদিতার মতো বিষয় গুলো ।কারণ আপনার চাওয়া পাওয়ার চাহিদা পত্রের অনেক নিচে আছে এই সব জিনিস পত্র । যেহেতু আপনার অন্যান্য সব চাওয়া প্রায় পূরণ হয়ে গেছে বা পূরণীয় আপনি নিচের দিক থেকে অপ্রয়োজনীয় চাহিদা গুলো টেনে নিলেন উপরের দিকে । অহেতুক সমস্যার জন্ম দিলেন আপনি।

সমস্যার শুরুটা হয় এই দশকে । এই দশকটি ঠিক কি কারণে শরীরে শিহরণ জাগানো মেটাল ব্যান্ড এর জন্ম দিতে পারেনি আমার জানা নেই । তবে আমার লেখার বিষয় মেটাল বা হেভী মেটাল নয় । আমি এই দশকের ছেলে পেলেদের লাইফ স্টাইল নিয়ে কথা বলবো । ৮০ এর দশকের হিপ-হপ স্টাইলের মধ্যে পরতো ছেড়া বা জোড়া তালি দেয়া ডেনিম প্যান্ট , বুট , মাথায় বা পায়ে রুমাল পেঁচানো , গলায় চেইন চোখে কালো গ্লাস আর রঙের ব্যাপারে সব সময় কালো । এটা ছিল তখনকার কলেজে ভার্সিটিতে যাওয়া যে কোন ছেলের স্বপ্নের পোশাক । আমি মেয়েদের কথা বলছি না কারণ লেখাটি একান্তই ছেলেদের নিয়ে ।



এই দশকের শুরুতে বয় ব্যান্ড এর যাত্রা শুরু হয় । মানে একসাথে বেশ কয়েকজন ছেলে বা মেয়ে মেলোডি টাইপের গান গাইবে নাচতে নাচতে। এটা নিতান্তই ব্রিটিশ আবিষ্কার আর ফ্রাঞ্চাইজি । যার ফলে জন্ম হয় স্পাইস গার্লস এর মতো ব্যান্ড এর । ব্রিটিশরা সব সময় মেলোডি গানের প্রতি অনুরাগী । এরপর ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসলো মেটাল আর হেভী মেটাল গানের ধারা গুলো । ছেড়া প্যান্ট এর জায়গায় আটো সাটো আর টাইট প্যান্ট আর পরিপাটি চুলের একটা জেনারেশন । যারা তাহসানের গানের মাঝে নিজেদের ভালোবাসা খুঁজতে থাকে । তাহসান নিজের ভালোবাসা খুঁজে পেলেও তার ভক্তরা এখনো খুঁজে ফিরছে । প্রচন্ড হেভী মেটাল একটা জেনারেশন রাতারাতি বদলে গেলো ।

আমাদের দেশের সংগীত নিয়ে একবার ভাবুন । দেখবেন নজরুল নেই। কারণ নজরুলের আর দরকার নেই । শরীর এমনিতেই উত্তেজিত । চল চল বলে আর উত্তেজনার প্রয়োজন নেই । এমন কোনো গান শুনতে পাবেন না এখন যা শুনলে আপনার শরীর কেঁপে উঠে । ঝিমিয়ে পড়া এই জেনারেশন এর শরীরে শিহরণ জাগাতে নেশার ধরণ পর্যন্ত বদলে গেলো । এক সময় শরীর নিস্তেজ করার নেশা এখন শরীরকে জাগিয়ে রাখার "ইয়াবা" । বুজতেই পারছেন জিমিয়ে পড়া এই সব ছেলে পেলেদের থেকে আমি বা আপনি কি আশা করতে পারি ।

এযুগের ছেলেদের রোল মডেল কে বলতে পারেন ? আপনার সন্তানের পড়ার টেবিলের উপর কার পোস্টার লাগানো ? দেখবেন এদের কোনো রোল মডেল নেই । এদের পড়ার টেবিলের উপর কারো পোস্টার নেই । আপনার সন্তান এর সব চাহিদা পূরণ করছে ডিজিটাল চেক লিস্ট । আর আমাদের ৮০ - ৯০ এর দশকের মেটাল গুরুরা এখনো তেমন ডিজিটাল হতে পারেনি । বরং অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাই বদলে গেছে । শুধু ধরে রেখেছে কালো রঙের পোশাক আশাক ।

শেষ কবে আপনি দল বেঁধে রাস্তায় কিছুর জন্য আন্দোলন করেছে বা করতে দেখেছেন ? মনে করতে পারবেন না ।এখন প্রায় সব আন্দোলনই হয় ফেসবুকে । বড় জোর টিভির টক্ শোতে । নেতিয়ে পড়া সমাজে আর কী বা করতে পারেন আপনি । কারণ আপনার বেঁচে থাকার অসীম আশা । এতো আনন্দের জীবন আপনি ছেড়ে যাবেন কেন ?হোক না মায়ানমারে অন্যায় হোক না সিরিয়ায় বোমা হামলা। ফেইসবুক তো আছে । আর সকালে অফিস ? কোনো ভাবেই কামাই করা যাবে না । এ মাসের গাড়ির ইনস্টলমেন্ট টা নাইলে বাদ পরে যাবে ।আপনার গাড়ির ইনস্টলমেন্ট এর চিন্তা থাকলেও আপনার সন্তানের তা নেই । স্বভাবতই ওর চাহিদা অপার্থিব । সর্বোচ্চ কোনো মেয়ের ভালোবাসা ।

চরিত্রগত এবং নেশাগত পরিবর্তন আর না পাওয়া ভালোবাসার এই প্রজন্ম নিজেদের শেষ ভরসা হিসেবে দেখে ধর্ম কর্মকে । যদি এর মাধ্যমে শান্তি খুঁজে পাওয়া যায় । কিন্তু বিধী বাম । সৃষ্টিকর্তাও টগবগে শরীরের অনুরাগী । নিস্তেজ শরীর আরো নিস্তেজ হতে থাকে । ধীরে ধীরে এক সময় নিজেকে আত্নঘাতী করে তুলে এই প্রজন্ম । জন্ম হয় আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত সচ্ছল এক আত্মঘাতী মৌলবাদী প্রজন্মের । যাদের জিমিয়ে পড়া শরীর উত্তেজক দিয়ে শিহরিত করতে হয় । যারা নির্ভানার গান কি জানে না । যাদের মনে স্ল্যাশ এর গিটার নেই ।

তাকিয়ে দেখুন এখনো আইয়ুব বাচ্চু, মাইলস ভাইয়েরা কালো রঙের স্বপ্ন পরে আমাদের চার পাশে ঘুরে । এখনও এরা গিটার হাতে নিস্তেজ শরীরে শিহরণ জাগাতে পারে । যারা আমি- তুমি বা প্রেম- ভালোবাসার বাইরেও গান করতে পারে । কারণ এখনো ৮০ এর দশকের মেটালিকা লক্ষ্য মানুষের ভিড়ে স্টেজ মাতায় । কিভাবে একটা প্রজন্ম হটাৎ করে নিজেদের গায়ে সমকামিতার স্টিকার লাগিয়ে গর্ভবোধ করে আর নিজের নিস্তেজ শরীর নিয়ে অহংকার করতে পারে ? আমার জানা নেই।

তবে আপনাকে আর বেশী দিন অপেক্ষা করতে হবে না । পৃথিবী আবার অস্থির হচ্ছে । আপনার চাহিদার লিস্টিটা আবার বড়ো হতে শুরু করছে । খুব বেশী দিন আর নিস্তেজ থাকতে পারবেন না । চিৎকার আপনাকে করতেই হবে। হয়তো আবার মেটাল আসবে আমাদের জীবনে । শুরুটা করলো গানস এন রোজেস এই মাসে তাদের কনসার্ট এ ডোনাল্ড ট্রাম্প এর পুতুল পুড়িয়ে ।



আমি বাজি ধরে বলতে পারি এই যুগের আধুনিক একটা ছেলেকে নির্ভানা বা পারল জামের গানের সামনে বসিয়ে দিলে মাথা ঘুরে পরে যাবে । কিভাবে আপনি এদের নিয়ে স্বপ্ন দেখবেন যারা নিজেরা নিজেদের নিয়ে স্বপ্ন না দেখে অজানা ভালোবাসার স্বপ্ন দেখে । ৮০ এর দশকে কি প্রেম ভালোবাসা ছিল না ? নাকি সবাই তখন সমকামী ছিল ? ব্যাক্তিত্ব নিজস্ব স্বকীয়তা । অন্যের মাঝে নিজের স্বপ্ন খুঁজলে নিজের ব্যাক্তিত্ব হারানোর ভয় তো থেকেই যায় ।

আসুন না একটা নির্ভানা বা গানস এন রোজেস এর গান শুনি । দেখি ক্ষতক্ষন শুনতে পারি ? বুজতে পারবো আমি বা আপনি সেই কাঙ্খিত ব্যাক্তিত্ববান কিনা ? হয়ে যাক একটা হেভী মেটাল ??
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:১০
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×