somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের স্টার্টআপ মোস্টমর্টেম

১৫ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তখন আমরা সবাই স্কুল পড়ুয়া । কথার আগে হাসতাম । বুঝে না বুঝেই । পাড়ার মোড়ে আড্ডা আর ইন্টারনেট হীন দিন গুলোতে কিছু একটা করার ইচ্ছে থেকে আমরা শুরু করি আমাদের প্রথম স্টার্টআপ । বিয়ে বাড়ি বা গায়ে হলুদের স্টেজ বানানোর কাজ । শুনতে খারাপ শোনালেও ১৭ বা ১৮ বছরের বালকদের জন্য খুব একটা খারাপ ছিল না এই উদ্যোগ । অন্তত তখনকার দিনে । সবাই বেশ উৎসাহ দিলো । সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দিলেন ফরিদা আন্টি । উনার বাসার সামনেই আমরা রাতভর আড্ডাবাজি করতাম । খুব সম্ভবত উনি আমাদের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে উৎসাহ আরো বাড়িয়ে দিলেন । স্টার্টআপের নাম ঠিক করা হলো সাফদাস । আমাদের ৬ বন্ধুর নামের প্রথম অক্ষর । আর আমাদের প্রথম বিজনেস কার্ড ছাপিয়ে দিলেন পাড়ার সাফা মামা । উনিও আমাদের যন্ত্রনায় ভুক্তভুগি একজন ।

প্রবল উৎসাহে আমরা আমাদের বিজনেস কার্ড বিলি করা শুরু করলাম । কার্ডে আমার বাসার ঠিকানা আর দুইটা ল্যান্ড ফোন নম্বর । তখন মোবাইল ফোন দেশে আসে নি । সকালে কার্ড বিলি করতাম আর বিকালে থেকে রাত পর্যন্ত ফোন কলের অপেক্ষা করতাম । অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমরা আমাদের প্রথম কল পেলাম । ডাকসেইটে এক ছাত্র নেতার বিয়েতে স্টেজ করতে হবে । ওপেন বাজেট । মানে যত খুশি টাকা আমরা খরচ করতে পারবো । কিন্তু স্টেজ যেন মেয়েদের স্টেজ থেকে সুন্দর হয় । প্রথম কাজটা একটু বেশিই মনে হলো আমাদের জন্য । কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের কারো মাথায়ই আসছিলো না আমাদের কি করা উচিত । কারণ এর আগে আমরা কেওই এই ধরণের কাজ করিনি । দিনরাত প্রচন্ড ব্রেইনস্টর্মিং চলতো । হাতে সময় খুবই কম । কিভাবে ক্রিয়েটিভ কিছু একটা করা যায় তাই নিয়ে চিন্তা চলতো ।

হঠাৎ করে আমাদের এক বধূ ফাহাদ ফেরদৌস একটা আইডিয়া দিলো । যে কিনা বর্তমানে নামকরা এক সাংবাদিক এবং যার বেশির ভাগ সময় কাটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে । বরের স্টেজ এর পেছনে থাকবে মশারির নেট দিয়ে করা একটা বাক্স আর এর ভেতর থাকবে বেলুন । নিচে থেকে বাতাস দিয়ে বেলুন গুলোকে সারাক্ষন উড়িয়ে রাখা হবে । অসাধারণ ।আমাদের কচি কাচার মন আনন্দে নেচে উঠলো । আমরা আমাদের এই বন্ধুটিকে নিয়ে রীতিমতো গর্ববোধ শুরু করলাম । মশারির ভিতর বেলুন দিয়ে কি অসাধারন আইডিয়া । আমরা ঘূর্ণাক্ষরেও টের পাচ্ছিলাম না আমাদের সাথে কি হতে চলছে এরপর । ক্লাস নাইন এ পড়া আমাদের থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা বোকামি ।এর মধ্যে ক্লায়েন্ট থেকে অ্যাডভান্স নিয়ে আমাদের মজা মাস্তি করাও শেষ ।

গল্পের শেষের অংশের ঘটনা বেশ করুন । শেষ দৃশ্যে দেখা যায় আমরা অনেকটা হাফ ছেড়ে পালিয়ে এলাম বিয়ে বাড়ি থেকে । আমাদের যিনি ঠিক করেছিলে সেই ছাত্রনেতা আমাদের অত্যন্ত ভদ্র ভাবে রেহাই দেন । আমরা আসলে ওই দিন স্টেজটা বানাতে পারেনি । বানাতে পাড়ার কথাও না । কারণ আমরা নিজেরাই জানতাম না আমরা কি করছিলাম । শুধুমাত্র ধারণার উপর নির্ভর করে আর নিজেদের অদম্য সাহস এর জোরে কাজটা নিয়ে ফেলি ।নিতান্তই বালকসুলভ আচরণের কারণে ওই দিন আমাদের গায়ে কেও হাত তোলেনি । না হলে বিয়ে বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানের আগ মুহূর্তে স্টেজ রেডি না হওয়াটা কোনো বিয়ে বাড়ির মানুষ জন সহজে মানত না ।

আমাদের প্রথম স্টার্টআপ প্রথম কাজের পরই শেষ হয়ে গেলো ।

প্রায় ২৫ বছর পর আজকের বালকদের উদ্যোগও অনেকটা আমাদের মতো রয়ে গেলো । আমরা হয়তো ঐদিন আমাদের স্বপ্নের বেলুন কিভাবে উড়াতে হয় বুজতে পারিনি । তবে আজকের দিনেও যখন দেখি অনেকে একই রকম বেলুন উড়ানোর স্বপ্ন্ন দেখছে তখন বেশ খারাপ লাগে । ভাসা ভাসা ধারণায় ভালোবাসায় মেতে উঠা তরুণদের উদ্যোগ অনেক অবাস্তব । শুধু বেলুন উড়ানোর স্বপ্ন দেখলে হয় না বেলুন উড়তে হলে যে বাতাস লাগে তা সব জায়গায় থাকে না । অদম্য তরুণরা নিজেদের একটা ওয়েবসাইট বা এপপ্স বানিয়ে জুকারবার্গের সাথে ভাবতে পারে । কিন্তু সরকার তাদের এই ভাবনায় উৎসাহ না দিয়ে তাদের সঠিক স্বপ্ন দেখার ব্যবস্থা করে দিলে অনেক উপকার হয় । অল্প বয়সে স্বপ্ন ভাঙার কষ্ট কি তা আমরা ৬ বন্ধু জানি । বাস্তব আর অবাস্তবের মাঝে বারো হাজার মাইলের দূরত্ব । এটুকুন দুরুত্ব পারি দিতে পারলেই কেবল জুকারবার্গ হবার স্বপ্ন হয়তো দেখা বাস্তব হতেও পারে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৭:০৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×