
মাহ্ফুজ আনাম ইস্যু ধারবাহিকভাবে যদি দেখি-----
১)৪ ফেব্রুয়ারি রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে এক-এগারোর সময় সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের বিচ্যুতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মাহ্ফুজ আনাম তার পত্রিকায়ও এমন ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছিল বলে মুখ ফসকে অথবা সজ্ঞানে স্বীকার করেন।
২)পরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় নিজের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে ডেইলি স্টার-এর সম্পাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তুলে বিচার চান। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে কয়েকজন সংসদ সদস্য ‘ডেইলি স্টার’ বন্ধ করাসহ মাহ্ফুজ আনামের পদত্যাগ ও বিচার দাবি করেন।
৩)এরপর থেকেই মাহ্ফুজ আনামের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়র শুরু হয়।মামলার সাগরে ভাসতে থাকেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। মানহানী মামলার টাকার অঙ্ক দুটি পদ্মা সেতু ও কয়েকটি ফ্লাই ওভারের খরচের সমান হয়ে যায়।
৪)এরপর শেখ রেহানার স্বামী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক মাহ্ফুজ আনামের পক্ষে কিছু কথা বললে মামলা দায়ের ও সমালোচনা কিছুটা স্তিমিত হয়ে আসে।তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও কিছুটা ব্যাকফুটে আসেন।তিনি নিজের ফেসবুক পেজে আরেকটি স্ট্যাটাসে বলেন মামলাগুলো দেওয়ানী মামলা, ফৌজদারী মামলা নয় ।এগুলো স্বাধীন গনমাধ্যমের উপর আঘাত নয়। কিন্তু মানহানী ও রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা কিভাবে দেওয়ানী মামলা হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তি নিজে ছাড়া অন্য কেউ কিভাবে মানহানী মামলা করে ,সেটা অনেক আইনবিদের মাথায় ঢুকে নাই।
যাই হোক, মোটামুটি যখন অনেকটা ইস্যুটি স্তিমিত হওয়ার পথে,তখন গতকাল মাহ্ফুজ আনামের তীব্র সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল, এ দেশের মানুষকে এভাবে নির্যাতনের শিকার করেছিল—যুদ্ধাপরাধীদের যেমন বিচার হচ্ছে, ঠিক সেভাবেই একদিন এদের এই সংবিধান ধ্বংস করার বিচার হবে।’
কিন্তু কেন এই অবস্থা মাহ্ফুজ আনামের।মাহ্ফুজ আনামকে নিয়ে কি করতে চায় সরকার? ব্লগ,ফেসবুক ও বিভিন্নজনের সাথে কথা বলে যেসব মতামত আসছে,তা নিম্নরুপ।
১)সরকার বিরোধীদের মতে, আমার দেশের মাহমুদুর রহমানের মুক্তি নিয়ে সরকার যে নির্লজ্জ কান্ড করলো,সেটা আড়াল করার জন্যই এটা একটা নাটক।৭০টি মামলা থেকে জামিন পাওয়ার পরও ২০১৩ সালের পুরোনো একটি মামলা,যেটাতে তার নাম আগে ছিলো না এবং তিনি তখন অফিসে বন্দি ছিলেন। সেই মামলায় তাকে শ্যোন এরেষ্ট দেখিয়ে তাকে আবার আটকে ফেলেছে। এসব যাতে আলোচনা না আসে,তাই মাহ্ফুজ আনাম ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছে।
২)অনেকের মতে,মাহ্ফুজ আনাম আসলে আওয়ামী লীগের লোক।্তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন,তিনি ভোট আওয়ামী লীগেই দেন।তাই তার কিছু হবে না। সরকার সমস্যাটা আরো বড় করে ,পরে তাকে মাফ করে দেবে।এতে সরকার নিজেকে প্রমান করবেন,তারা অত্যন্ত মিডিয়া বান্ধব। একই সাথে ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
৩) কারো মতে,ব্যাপারটা আসলে ঝি কে মেরে বৌ কে শেখানোর মত।প্রথম আলো ও ডেইলি ষ্টার পত্রিকা গ্রহনযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য সরকারের অনেক দুর্নীতি ও অনিয়ম ফাস করে দিয়েছে। ফলে সরকারের পরোক্ষ চাপে,মোবাইল কোম্পানীর বিজ্ঞাপন এখন প্রথম আলো ও ডেইলি ষ্টারে বন্ধ। তাই অন্য মিডিয়াকে বলা,দেখো,তোমরাও যদি এভাবে বাড়াবাড়ি করো,তোমাদেরকেও ছাড় নাই।
৪)আবার কারো মতে,এর পেছনে আসলে অন্য পত্রিকার কারসাজি ও পরোক্ষ উস্কানি আছে।তারা চায় প্রথম আলো ও ডেইলি ষ্টার বন্ধ হয়ে যাক। যাতে তাদের পত্রিকার সার্কুলেশন বাড়ুক। এখানে প্রসংগত উল্লেখ করা যায়, ২০১৩ সালে ফেব্রু-মার্চ-এপ্রিলে আমার দেশ পত্রিকার সার্কুলেশন যখন অনেক বেড়ে গিয়েছিলো, এমনকি প্রথম আলোর সার্কুলেশন থেকেও কোনো কোনো দিন বেশী ছিলো, তখন বাকী পত্রিকা আমার দেশ পত্রিকার বিরুদ্ধে পরোক্ষ উস্কানী দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিলো। আমার মনে আছে তখন প্রথম আলোর ২৪ পেইজ পত্রিকার দাম ছিলো ৮ টাকা আর আমার দেশ পত্রিকার ১৬ পেইজ পত্রিকার দাম ছিলো ১২ টাকা।
৫)অনেকের মতে,সরকার দুই দিন পর পর একটা ইস্যু বের করে,যাতে অন্য অন্যায় গুলো আড়াল করে, সবাই এটা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এটাও সেরকম আরো একটা ইস্যু।
৬)এছাড়া কারো মতে, ভবিষ্যতে এই সরকার ক্ষমতায় না থাকলে, তখন তাদের সন্ত্রাস,দুর্নীতি প্রকাশ হলে, যাতে মানুষ বিশ্বাস না করে,তাই আগে ভাগেই একটা ব্যবস্থা নেয়া। তখন জনগনকে বলা যাবে,এসব গোয়েন্দা সংস্থার চাপে বলা হচ্ছে।
যাই হোক,আরো অনেক মত হয়তো আছে। অথবা সরকারের অন্য উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। কিন্তু দেখার বিষয়, সরকার এক ঢিলে কয়টা পাখি মারতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




