ভীষন মন খারাপ দিয়েই ঈদ শুরু............
ঈদের আগের দিন রাগারাগি করে দুপুরবেলা বাসা থেকে বের হই। এরপর থেকে বাসার শুধু পানি ছাড়া আর কিছু এখন পর্যন্ত খাইনি। সেদিন রাত ১০টায় বাসায় আসি। বাসার কিছু খাবো না, তাই বাইরে থেকে টুকটাক স্ন্যাকস কিনে আনি।
ঈদের আগের দিনই নিয়ত করেছিলাম, ঈদের দিন বাসার কোন খাবারই খাবো না এবং সারাদিন বাসায়ও থাকবো না, বাসার কারো সাথে ঈদ করবো না। এখন পর্যন্ত বাসার কোন খাবার খাইনি....................
চাঁদরাতে, সারারাতই জেগে ছিলাম। কাজ, পড়া সারতে সারতে ভোর প্রায় সারে চারটা বেঁজে যায়। এরপর সোয়া পাঁচটায় ঘুমুতে যাই। মরার মত ঘুমাতে থাকি.....................
সকাল সাড়ে ১০টায় ঘুম ভাঙে এক জিগির দোস্তের ফোন পেয়ে---
> দোস্তোওওওওওওও ঈদ মোবারক..............
> ঐ ক্যাডারে? [ঘুমে তখন পুরোপুরি নিমজ্জিত]
> হারামজাদি ওঠ। কত্ত আর ঘুমাবি..........!!! ঈদ তো গেলো গা...........
> এ্যা কি কস.....!!! কয়ডা বাজে?
> সাড়ে দশটা
> আয় হায় কস কি.......!!! ঐ ছেমড়ি ফোন রাখ। আমার এখন দৌড়ানি লাগবো...............
ফোন রাখার পরও ১০/১২ মিনিট ফিনিশিং ঘুম দিলাম। এরপর বহু কষ্টে বিছানা থেকে নেমে ঢুলতে ঢুলতে ওয়াশরুম পর্যন্ত গেলাম। ঐখানে গিয়েও ৫ মিনিট বেসিনের সামনে দাঁড়ায় দাঁড়ায় ঢুলতে থাকলাম....................
অবশেষ ফ্রেশ হয়ে বের হলাম।
এবার ঈদে একজন মহান সেলিব্রেটি ব্লগার আমাকে খুব সুন্দর একটা ড্রেস গিফট দিয়েছে
ভাবলাম এটা পড়েই বের হই। তাছাড়া কাপড়টা বেশ আরামদায়ক।
রেডি হয়ে, সাজুগুজু করে বের হলাম
বাসা থেকে বের হয়েই রিক্সা নিয়ে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত গেলাম। ততক্ষনে স্টোমাক বাবাজি বেশ ভালোভাবেই সিগনাল দেয়া শুরু করলো, "খাদ্য চাই, খাদ্য চাই"..............
কোন খাবারের দোকান খোলা পেলাম না। উপায় না পেয়ে চা এর কথা চিন্তা করতে করতে টি.এস.সি. তে গেলাম। গিয়ে দেখি কেউ দোকান খুলে নাই। কোনার দিকে পিচ্চি শুধু দোকান খুলেছে। পিচ্চিকে চা দিতে বললাম।
সেই চা মুখ দিতেই মেজাজ গেলো চরম বিগরে। চায়ের বদলে যেন শুধু গরম পানি আর সামন্য লিকার................
কিছুক্ষন পর "কাউয়া দ্যা গ্রেট দাড় কাক" ফোন করলো---
> ঐ ঈদ মোবারক। কই তুই?
> টি.এস.সি. তে চা খাই।
> মানুষ হইলি না। এইসময় মাইনষে টি.এস.সি. তে বইয়া থাকে...........!?!
> তুই তো জানিসই। আচ্ছা বাদ দে, তোর কোপাকোপি শেষ হইছে?
> আমার কোপাকোপি করা শেষ। অন্যরা করতেছে। শুক্রাবাদে বড় আপুর বাসায় আছি, চলে আয়। একটু পর বাইর হমু।
> উক্কে আইতাছি।
গেলাম বড় আপুর বাসায়। ওখানে কিছুক্ষন বসলাম, বাচ্চাদের সাথে একটু বাচ্চামি করলাম
এরপর মাংসের পুটলা নিয়ে উত্তরায় ছোট আপুর বাসার উদ্দেশ্যে আমি আর কাউয়া রওনা হলাম।
ছোট আপুর বাসা পর্যন্ত যেতে যেতে আমাদের অবস্থা পুরা হালুয়া টাইট.............!!!
পিচ্চুর সাথে সারাক্ষনই তিরিং বিরিং করলাম
খালাম্মার (ছোট আপুর শাশুড়ী) রান্না করা মজার মজার খাবার গুলো আয়েশ করে খেলাম
এরপর বিকাল চারটায় কাউয়ার বাসায় গেলাম। সেখানে গিয়ে নুডুলস, চা রান্না করে খেলাম। এরপর ব্যাপক জমিদার স্টাইলে আরাম-আয়েশ করে ৭টায় বের হলাম।
বাসা থেকে বের হবো এমন সময় বড় আপু ফোন করে কাউয়াকে বড় আপুর বাসায় যেতে বললো।
রাস্তায় নামার পর ট্রান্সপোর্ট পেতে গিয়ে জান কয়লা হওয়ার অবস্থা...!!!
তারপর কি আর করা। কাউয়া আপুকে ফোন করে বললো, আপুর বাসায় যেতে খানিকটা দেরি হবে।
এরপর গেলাম টি.এস.সি. তে। উদ্দেশ্য চা পান করা, এরপর কি করবো জানি না......................
গিয়ে দেখি তখনো সেই সকালের পিচ্চির দোকানই আছে। সেই পঁচা মার্কা চা ই পান করলাম। এরপর রোকেয়া হলের সামনে ফুচকার দোকানে গিয়ে বসলাম। আড্ডা মারা, চটপটি খাওয়া আর আইসক্রিম খাওয়া চলছিল।
রাত পৌনে ১০টার সময় দ্যা গ্রেট হিমেল ভাইয়া উপস্থিত হলো। এসে বলতে থাকলেন---
> রাত ১০ টা বাজে প্রায়। তুমি এখনো বাইরে কি করো?
> মেজাজ খারাপ। বাসায় রাগারাগি করছি, দেরি করে ফিরবো।
> তোমাকে পিট্টি দেয়া দরকার। পাজি মেয়ে একটা। এখন ওঠো, তোমাকে বাসায় দিয়ে আসবো।
> এ্যঁ এ্যঁ এ্যঁ এ্যঁ এ্যঁ............ আরেকটু পরে যাই।
> কোন কথা না। ওঠো এখন।
কি আর করা, উঠলাম অবশেষে। তারপর তিন জন মিলে রিক্সা খুজতে লাগলাম। বহু কষ্টে একটা রিক্সা পেলাম। সেটাতে করে আমি আর হিমেল ভাইয়া বাসার দিকে রওনা দিলাম। কাউয়া আরেক টা রিক্সা নিয়ে বড় আপুর বাসার দিকে রওনা দিল.....................
বাসায় আসার কিছুক্ষন পর আব্বুর সাথে দেখা হলো। আব্বু বললো---
> ঈদ মোবারক বাবা। সারাদিন কই ছিলি?
> ঘুরাঘুরি করলাম।
> সন্ধ্যায় টি.এস.সি. তে ছিলি নাকি?
[আমি তো পুরাই টাশকি খেলাম!!! ওল্ড ম্যান এটা জানলো কিভাবে....!?!]
> একটু ছিলাম আরকি.......
> বাবা রাত করে এসব জায়গায় যাওয়া ভালো না। আর এত রাত করে বাসায় ফিরিস কেন?
> মেজাজ খারাপ।
> আচ্ছা যা, হাত-মুখ ধুয়ে ড্রেস চেন্জ কর।
ফ্রশ হয়ে ৩টা পাউরুটি, এক কাপ চা আর একটা বিস্কিট (অখাদ্য) খেলাম। এরপর বিছানায় শুয়ে শুয়ে কিছুক্ষন ফ্রেন্ডদের সাথে মোবাইলে মেসেজ বিনিময় করলাম। এরপর ফেবু তে বসলাম..........................
ভোর সারে ৪টায় ঘুমুতে গেলাম......................
এভাবেই কাটলো ঈদের দিন...................