somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাসের ঘর

০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অফিস থেকে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে যখন বেড়িয়ে এলাম তখন বাজে দুপুর একটা। চৈত্র মাসের রোদ মাথার উপর ঝাঁ ঝাঁ করছে। “কিন্তু এই রোদের একটা ঘোর আছে” কথাটা মনে মনে কয়েকবার বললাম। কেন বললাম আমি জানি না আসলেই জানি না। মনের ভেতর এই কথাটা পাঁক খাচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্য হলো আমি বিরক্তও হতে পারছি না। একটু আগেও প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছিলো। এখন মরে গেছে। কিন্তু আমি কখনও নিয়মের বাইরে যাইনি এবারও যাবো না। বাসায় যেতে হবে। ব্যাস্ত হয়ে ট্যাক্সি নিলাম। সেই লাইনটা আবার মাথায় আসবে আমি জানি। কারণ কথাটা বলতো সুহান।


- আচ্ছা তোমার সমস্যা কি বলো তো!
- আমার সমস্যা হলো আমার কোন সমস্যা নাই।
- হেয়ালি কথা বন্ধ করবে?
- তুমি তো হেয়ালি কথা পছন্দ করো তাই বললাম।
অনন্যা কপট রাগের ভান করে। কিন্তু পারে না। সে কখনই পারে না সুহানের উপর রাগ করতে। রাগ রাগ একটা ভাব ফোটাতে গিয়ে সে হেসে ফেলে। এমন মুহুর্তে কি জানি একটা নির্লজ্জ বাতাসে তার ওড়না সরে যায়। ভীষণ লজ্জা পায় অনন্যা একই সাথে ভালোও লাগে! আর সুহান তার বিখ্যাত অট্টহাসি হাসে। সে শুধু অনন্যার লজ্জাটাকেই উপভোগ করে। যেটা দেখে অনন্যা সত্যি রাগে। কিন্তু সুহানের দিকে তাকালেই রাগটা চলে যাবে তাই অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। এই ফাঁকে সুহান রবীন্দ্র আবৃত্তি করে
“কাজ কি আমার মন্দিরেতে আনাগোনায়
পাতবো আসন আপন মনের একটি কোণায়
সরল প্রাণে নিরব হয়ে তোমায় ডাকি”

ট্যাক্সি ড্রাইভারের কথায় আমার ধ্যান ভাঙ্গে। ভাড়া দিয়ে নেমে পড়ি।

পুরোনো স্মৃতি গুলো একেকটা ক্ষীণকায় শাখানদীর মতো। জোছনার আলোয় তারা উদ্বেলিত হয় না। বা অমাবশ্যার আঁধারে মিইয়ে পড়ে না। কুল কুল শব্দ করে বয়েও চলে না। শুধু কখনও খুব বেশী তৃষ্ণার্ত হলে একটু খানি জল পান করি সেখান থেকে। সামান্য ঠোঁট ভেজাই। গলা ভেজে না, শুধু ঠোঁট। ইচ্ছা করেই তৃষ্ণা মেটাই না। থাকুক সেটা বেঁচে।

কত কথা মনে মনে চিন্তা করতে করতে আমি গোছানো ফ্ল্যাটটাকে আবারো গোছাই। ফার্নিচার মুছে চকচক করে ফেলি। নিজেকে ক্লান্ত করে ফেলি। এই ক্লান্তি আমি বড়ই উপভোগ করি।

এই ক্লান্তি মেটানোরও একটা উপায় আছে। বাথরুমে সিডি প্লেয়ার নিয়ে যেতে হবে। বাথটাব ভর্তি করি পানি দিয়ে সাথে একটু গোলাপ জল। রবীন্দ্র গাইবে ইন্দ্রানী সেন। কিন্নরী কণ্ঠ শুনতে শুনতে মোহমগ্ন হয়ে যেতে হয়। একটা সিগ্রেট ধরিয়ে নেমে পড়ি টাবে।
প্লেয়ারে কি বাজছে সেদিকে কোন মনোযোগ দিতে চাইছি না। বাজতে থাকুক! আমি আয়েশ করে ধুম্র শলাকায় টান দিলাম।


- আচ্ছা এই এটি ঘন্টা মাত্র আমার জন্যে সেটাতেও তোমাকে ছবি তোলায় ব্যাস্ত থাকতে হবে?
- ছবি তোলা আমার হবি তুমি তো জানোই।
- তাই বলে এখনও তুলতে থাকবে?
- কে বলেছে? এই তো গোধুলি মিলিয়ে গেলেই তো ক্যামেরা যাবে ব্যাগে। আরেকটু অন্ধকার হোক!
এবার অনন্যা রাগ করে। সুহান জানে অনন্যার রাগ বেশীক্ষণ থাকে না। অনন্যা রাগতে পারে না। কি এক অজানা কারণে রাগটা মায়াতে রুপান্তর হয়ে যায় বার বার।
সন্ধ্যা যখন নামে ব্যাস্ত এই শহরের প্রকৃতি কেন যেন মায়াময় হয়ে ওঠে। কিসের যেন এক আবেশ ছড়িয়ে যায়। প্রকৃতিতে সেই সঙ্গে চলে এক ধরনের অস্থিরতা। সেটা একেক জনের কাছে একেক রকম। আপাতত তাদের কাছে পবিত্র সুধাজলের মতো মনে হয়। যেই জলের নাম অনেকে দিয়েছে প্রেম। সেই সুধাজল পানে তারা অস্থির হয়ে উঠতো। সেই অস্থিরতায় সব কিছু চুরচুর করে দিতে ইচ্ছা হতো। সময়ের সাথে সাথে যা বাড়তো এবং দুজনেই যা উপভোগ করতো।
তাদের খেয়াল থাকতো না কোন পাখিটা গাছে ডাকছে। বা কোন গাছের পাতায় শিরশির শব্দ হচ্ছে। পাতায় টুপটাপ শব্দটা তারা কল্পনা করে নিতো। চোখ বন্ধ করে তারা সেটাকে পুরোপুরি উপভোগ করে নিতো। চোখ মেললেই কি যেন হারিয়ে যাবে সেই ভয়ে চোখ মেলতো না।


কতক্ষণ টাবে শুয়ে ছিলাম জানি না। হঠাৎ করেই ধ্যান ভাঙ্গলো। চুল মুছতে মুছতে বারান্দায় এলাম। হ্যাঁ সেই অস্থির মুহুর্তটা শুরু হতে যাচ্ছে। আফসোস আমি একা। এই মুহুর্তের যে অস্থিরতা, সেটাকে আমার একা মোকাবেলা করতে হবে। আমি চোখ বন্ধ করি ঠিক আগের মতোই।

সন্ধার মুহুর্তটি পার য়ে গেলে সব অস্থিরতা কেটে যায়। অন্যদিন মগ ভর্তি কফি নিয়ে অফিসের কাজ নিয়ে বসতে হতো। এই একসপ্তাহের ছুটি কোথায় কাটাবো সেটাও ভাবতে হবে। বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে প্ল্যান করা যায়। কিনতু কেন জানি ভাবতেই ইচ্ছা হচ্ছে না। একটা আলস্য ছড়িয়ে আছে দেহমন জুড়ে। সন্ধ্যা আটটা বাজে। আচ্ছা বাইরে গেলে কেমন হয়? ঘরে থাকতে ভাল লাগছে না।


অনেক দিন পরে আয়নায় নিজেকে গভীর ভাবে দেখছি আমি। সাদা একটা শাড়ি সাথে বহুদিন আগে কেনা সাদা পাথরের একজোড়া ইয়ারিং যেটা আজ পর্যন্ত পড়ে দেখি নি কি মনে করে সেটা পড়লাম। আয়নাতে যে মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছে সেটা কি আমি? গোলাগাল নিষ্পাপ নিষ্পাপ একটা মুখ, একচিলতে চিবুক। চোখ দুটি টানা নয় কিন্তু মোহ আছে। টলটলে জলাধার যেন ওদুটি। আমি কাজলের সামান্য ছোঁয়া দিলাম ওখানে। ঢলঢলে নদীর মতো দেহটিকে যত্ন নিয়ে ঢাকার চেষ্টা করছি। অবাধ্য আঁচলটিকেও শাসন করলাম। ‍চুলটা খোলা রাখতে ভালো লাগছে না। ওগুলোকে বেধে দিলে কেমন হয়?

বের হলাম। ট্যাক্সি নিবো? ভাবতে ভাবতে কিছুদুর হাটলাম। রাস্তায় কিছু পুরুষ হয়তো অফিস থেকে ফিরছে তৃষ্ণা নিয়ে তাকাচ্ছে আমার দিকে। কিসের এত তৃষ্ণা তাদের? অন্যদিন ভীষন রাগ লাগে কিন্তু আজকে শুধু একবার বিরক্তি প্রকাশ করেই দায়িত্ব পালন করবো।
একটা ট্যাক্সি নিতেই হলো। ড্রাইভারটা দর্শনীয়। ইয়া গামা পালোয়ানের মতো দেখতে একটু জাপানি জাপানি চেহারা। অথচ কণ্ঠস্বর আশ্চর্য মধুর। আমি বললাম কমলাপুর রেলস্টেশনের কথা। কেন বললাম আমি জানি না। এটা কি স্লিপ অব টাং? নাকি অবচেতন মনের একটু চাওয়া? যেটাই হোক আজকে সবই উপভোগ করবো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ট্যাক্সি ছুটে চলেছে। অবধারিত জ্যামে পড়লাম। আজকে জ্যামটাও ভালো লাগছে। একজোড়া তরুণ তরুণীকে রাস্তা পাড় হতে দেখলাম। ওরা পরষ্পরের কোমড় জড়িয়ে আছে। তাদের দুজনেরই চোখে মুখে আশ্চর্য এক প্রশান্তি লক্ষ্য করলাম। কি নির্ভরতা!

এই নির্ভরতা একদিন আমার আর সুহানের মধ্যেও ছিল। রমনার অনেক গুলো গোধুলি লগ্ন যার সাক্ষী। নাহ আমার দীর্ঘশ্বাস বের হয় না। শুধু ভিতরের একটা অংশতে শুণ্যতা অনুভব করি। শুধু মনে হয় আমার কিছু সময় হারিয়ে গিয়েছে আর কিছু নয়। কিন্তু সেই গোধুলি লগ্নে এসে পুরোনো সেই অস্থিরতা আমাকে পেয়ে বসে। যে অস্থিরতায় আমরা পাগল হয়ে যেতাম। পৃথিবীর সবকিছু একপাশে রেখে দিতাম তখন।

সুহান আর আমার জুটিটা বন্ধুদের মাঝে বিখ্যাত ছিলো। দুজনেই ভেবেছিলাম পাঁচটি বছর একটু একটু করে যে পরিমান সুধামৃত জমিয়েছি সেটা দিয়ে তাজমহল না হোক একটা ছোট্ট কুটির তো গড়তে পারবো। যেখানে আমাদের একটি ফুল ঘরময় ছুটে বেড়াবে আশ্চর্য একটি সৌরভ ছড়াতে ছড়াতে। দুজনেই খুব দৌড়াবো তার পেছনে কিন্তু কখনও ক্লান্ত হবো না। কিন্তু আমরা কি জানতাম সেটি ছিল তাসের প্রসাদ? না তো! জানতাম না তো!
সুহানের হেয়ালি কথাগুলোর মোহে আমি আকৃষ্ট থাকতাম। কিন্তু বিয়ের পর সেগুলো কেন ভালো লাগতো না? সুহানকে কেন জানি অসহ্য লাগতো। শুধু একটু খানি নিশিপ্রেমের জন্যেই নিজেকে বিলিয়ে দিতে খুব খারাপ লাগতো। দিনের বেলা নিজেকে অনেক ছোট মনে হতো। আয়নায় নিজের চোখে চোখ রাখতে পারতাম না। এত নীচু মনে হতো নিজেকে!
আসলে জীবনের হিসাব নিকাশের তাপে আমাদের সুধামৃত টুকু বাষ্প হয়ে গিয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই দুজনে অফিস করতাম। বাইরের সকল কাজ করতাম ঘরে এসেই সবকিছুকে অসহ্য লাগতো। আমি তো শুধু ভাবতাম এটা শুধু আমারি হয় কিন্তু যেদিন আবিষ্কার করলাম এই প্রান্তে যা অপর প্রান্তেও তাই, সেদিন কোন দুঃখ বা কষ্ট কিছু হয় নি আশ্চর্য তখন নিজেকে হালকা মনে হচ্ছিল। একটা গ্লানি থেকে মুক্তি পেলে যেমন লাগে তেমনি।
যে একটি কাগজে সাইন করে ঠুনকো অহংকারে তাসের প্রসাদ গড়েছিলাম সেই প্রসাদ আরো একটি কাগজে সাইন করে পাখির পালকের মতো ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিলাম। বাহ! কি আশ্চর্য সমাপ্তি জীবনের একটি পর্বের। নতুন পর্ব শুরু করতে আমি কিছুটা সময় নিয়েছিলাম শত হলেও আমি নারী। একটু মায়াকান্না, কুম্ভিরাশ্রু প্রয়োজন মতো প্রয়োগ করতে হলো। আমার এ পরিবর্তন দেখে নিজেই আশ্চর্য হচ্ছিলাম। আবার খুশি লাগছিল এটা ভেবে যে আমি প্র্যাক্টিক্যাল হতে পেরেছি।

কিন্তু আমি কি জানতাম সেই স্বঘোষিত নতুন জীবনের মধুচন্দ্রিমা শেষে প্রতিটি গোধুলি লগ্নে প্রকৃতি আমার সাথে খেলবে? দোষ দিয়েছি প্রকৃতির কিন্তু আমি জানি দোষ প্রকৃতির নয়। আমি স্বীকার করতে দ্বিধা করছি না কিন্তু যখনই আমি আমার নতুন জীবনে বসে সেই তাসের প্রসাদের জীবনে নিজেকে আবারো কল্পনা করতাম তখনই দম বন্ধ হয়ে আসতো। সেই জীবন আমার জন্যে নয়। আমার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল ভেবে ভালো লাগতো। কিন্তু অস্থিরতার সময়টাতে কেন জানি কষ্ট পেতাম! কিসের কষ্ট? কিছু হারিয়ে যাওয়ার কষ্ট। কিছু সময়, কিছু অনুভুতি, কিছু...... আর একজন মানুষ। হ্যাঁ সুহানকে আমি ভুলতে পারি নি। ভুলার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু আশ্চর্য আমি তার চেহারা মনে করতে পারছি না। অথচ স্পষ্ট তার কণ্ঠ কানে বাজে! কি নিদারুণ খেলা খেলছে আমার মন আমাকে নিয়ে। আর আমিও তো খেলতে দিয়েছি।

অস্থিরতার লগ্নটি কাটাতে নিজেকে অনেকবার বিলিয়ে দিয়েছি। অনেকে আমাকে পেয়ে ধন্য হয়েছে। হ্যাঁ স্বীকার করতে সংকোচ নেই আমার। কিন্তু আমার প্রাণ শুধু সেই রবীন্দ্র সংগীতটি গেয়েছে। ওই যে:
“ফুলে ফুলে ঢোলে ঢোলে বহে কিবা মৃদু বায়
তটিনি হিল্লোল তুলে কল্লোলে চলিয়া যায়
পিকো কিবা কুঞ্জে কুঞ্জে কুহু কুহু গায়
কি জানি কিসেরো লাগি প্রাণ করে হায় হায়!”

কিসের জন্যে আমার প্রাণ হায় হায় করতো আমি জানি না হয়তো বা জানি না জানার ভান করছি। আমি নিজের সাথে খুব ভালো ভান করতে পারি।
ট্যাক্সি ড্রাইভারের কথায় আমার ধ্যান ভাঙলো। ভাড়া মিটিয়ে স্টেশনের ভিতরে ঢুকে গেলাম। আজকে যে কোন একটা ট্রেনে উঠে পড়বো। টিকিট ও কাটবো না। কোথায় যাবো জানি না।

আমি ট্রেনের অপেক্ষা করছি।
প্ল্যাটফরমে অনেক মানুষ কত ব্যাস্ততা! নিজেকে তাদের থেকে আলাদা করতে পেরে ভাল লাগছে খুব! আমি শুধু আমাকে নিযেই ব্যাস্ত ভেবেই ভালো লাগছে।
একটা ট্রেন আসলো কেথায় যাবে আমি জানি না। আমি গিয়ে ট্রেনটায় উঠলাম। সিটও পেয়ে গেলাম। রাতেও এত মানুষ ট্রেনে আসা যাওয়া করে!
আমি কারো দিকে তাকাচ্ছি না। জানালা খুলে তাকিয়ে আছি বাইরে। কিছু দেখা যাচ্ছে না তারপরও তাকিয়ে থাকতে ভাল লাগছে। কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম জানি না। ধ্যান ভাঙ্গলো টিকিট চেকারের সাথে এক ছোকড়ার কথোপকথন শুনে।
- টিকিট কটসি চাচা হারায় ফেলসি!
- সেটা আমার কোন দোষ না। এখন জরিমানা দিতে হবে। দাও।
ছোকড়া বিশ্রী একটা গালি দিয়ে টাকা বের করে দিলো টিকিট চেকারের সেটা গায়ে লাগলো না মনে হলো। আশ্চর্য টিকিট চেকার আমাকে কিছু বললেনই না। দেখলাম বেছে বেছে কয়েকটা ছোকড়াকে ধরলেন শুধু। একবার মনে হলো তাকে ডেকে বলি কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো কি হবে নিয়ম ভঙ্গ করলে? সবসময়েই তো হিসাব নিকাশ করে চলে এসেছি।

পরবর্তী স্টেশনে আমি নেমে পড়ি। এটা কোন জায়গা সেটা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই। সবই ভাল লাগছে। মোবাইলটা অন করে দেখলাম রাত আড়াইটা বাজে। এটা কোন জঙ্গলা টাইপ জায়গা। গোটা বিশেক মেসেজ এলো মোবাইলে। পড়তে ইচ্ছা হচ্ছে না।
আমি হাঁটছি। রাতের বাতাসে কি একটা বুনো গন্ধ। আমি বুক টেনে নিতে লাগলাম সেই বুনো বাতাস। জায়গাটা কোথায় হবে অনুমান করলাম। হয়তো গাজীপুর পার হয়ে ময়মনসিংহের কাছাকাছি। বিপদের ভয় আছে আমার ভয়ও লাগছে। সামান্য শব্দেই চমকে উঠছি বারবার। এই মুহুর্তে কাওকে ফোন করলে এখান থেকে যেতে পারবো। কিন্তু যেতেও ইচ্ছা হচ্ছে না। এই জঙলা যায়গায় কি চোর ডাকাতরা থাকে? সামান্য দুঃশ্চিন্তাও হচ্ছে কেন জানি। কিন্তু সব ছাপিয়ে আমাকে আশ্চর্য রকম অস্থিরতায় পেয়ে বসেছে। খুব পরিচিতো এই অস্থিরতাটুকু। কিন্তু সন্ধার এই অস্থিরতা এই নিশি রাতে কেনো ধরলো আমাকে? সব কিছু চুরচুর করে দিতে ইচ্ছা হচ্ছে। ব্যাগে একটা ধারালো চাকু রাখি সবসময়। আচ্ছা এটা দিয়ে যদি ডান হাতের শিরাটা কেটে ফেলি তাহলে কি হবে? কালকে বা পরশুর খবরের কাগজে হয়তো উঠবে “রহস্যময়ী এক সু্দরীর লাশ উদ্ধার” নাকি “ রহসময়ীর আত্মহত্যা”? কোনটা হতে পারে? আমি একটা গাছের নীচে বসে পড়লাম। গাছটাতে একটা পাখি অবিরাম ডেকেই যাচ্ছে। পাখিটাকে নিশিতে পেয়েছে আমার মতো। আমাকেও নিশিতে পেয়েছে। এককাঠি ধুম্র শলাকা বের করলাম। নিকোটিন চাই।

চারদিকে এক আশ্চর্য নিরবতা নেমে এল হঠাৎ পাখিটাও চুপ। প্রকৃতিতে কিসের যেন একটা হাহাকার ছেয়ে গেল। আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:০৪
৪৬টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×