somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চরম সাম্প্রদায়িকতার মাঝে কাজী নজরুল ইসলামের পারিবারিক জীবন: কিছু অজানা তথ্য

২৬ শে জুন, ২০১২ রাত ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন ফারসি কবি বলেছিলেন, দুরাচার স্ত্রী স্বামীকে ভিখারী করে রাখে, পূণ্যবতী স্ত্রী বানিয়ে রাখে বাদশাহ। কাজী নজরুল ইসলামের জীবনেও ঘটেছিল এরূপ। তিনি মুসলিম সাইয়্যিদ বংশের নারীকে ছেড়ে বিয়ে করেছিলেন এক হিন্দু নারীকে, যাকে বিয়ে দেয়ার জন্য মেয়েটির পরিবারকেও তৎকালীন হিন্দুসমাজে তিরস্কৃত হতে হয়েছিল।

কিন্তু কবি ছিলেন আবার তার খান্ডার শ্বাশুড়ী আর স্ত্রী নিকট নিতান্ত অসহায়। তাকে বাড়িতে জল এবং ভগবান বলতে হতো, বাইরে প্রাণ খুলে বলতে পারতেন ‘আল্লাহ’ এবং ‘পানি’। কবি ইসলামের জন্য গজল লিখবেন, এটার প্রচণ্ড বিরোধিতা করত কবির শ্বাশুড়ী। নানা নির্মম পরিহাসের মাঝেও কবি ইসলামের জন্য লিখে যেতেন, কবির স্ত্রী ও শ্বাশুড়ী এতই জালেম ছিল যে তাদের সামনে তিনি তার দুই ছেলের খতনার কথাও তুলতে পারতেন না। শুধু তাই নয়, যে হিন্দুসমাজ নজরুলের স্ত্রীর পরিবারকে তিরস্কৃত করেছিল তাদেরকেই নজরুলের শ্বাশুড়ী ঘরে এনে ধুমধাম করে খাওয়ার আয়োজন করত।

মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করেছে’ এই অভিযোগে যারা কবির স্ত্রী ও শ্বশুর পরিবারকে দূর দূর বলে তাড়িয়ে দিয়েছিল, কবির নাম যশ প্রচার হলে এরাই আবার দলে দলে এসে কবির বাড়ীতে দীর্ঘদিন ধরে থাকতো, খেতো, আমোদ ফূর্তিতে মত্ত থাকতো।

এ প্রসঙ্গে একটি কথা উল্লেখ করা যায়,

সাহিত্যিক কাজী আব্দুল মান্নান মীর মশাররফ হোসেন লিখিত গল্পগ্রন্থে’র মুখবন্ধে লিখেছেন, মশাররফ হোসেন তার ‘আমার জীবনী’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘১৩০৫ সালে বস্তানী প্রকাশ হয়েছে।’ তিনি বস্তানীর ৪টি নথি ১৩১৫ সালে প্রকাশিত ‘আমার জীবনী’ গ্রন্থে সন্নিবেশিত করেছেন। এর কারণ তিনি বলেছেন, আমার জীবনীর সাথে গাজী মিয়ার বস্তানীর শেষ অংশে বিশেষ সংশ্রব আছে বলে জীবনীর সঙ্গেই প্রকাশ হবে।

বস্তানীর মধ্যে মশাররফ হোসেনের অসাম্প্রদায়িক চিত্ত বিচলিত হয়েছে। তার অভিজ্ঞতার দ্বারা তিনি দেখেছেন, হিন্দুরা মুসলমানদের সর্বনাশ করে নিজেদের স্বার্থ হাছিল করেছে। বস্তানীর মধ্যেই তার বহু নিদর্শন আছে। তার প্রিয়তমা স্ত্রী বিবি কুলসুম হিন্দু সমাজের মেয়ে। মশাররফ হোসেনের সঙ্গে প্রণয়ের ফলে, ধর্ম পরিবর্তন করে তিনি মুসলমান হয়েছেন। জীবনের অভিজ্ঞতাও তার ব্যাপক। তিনি দেশকে ভালবাসতেন, স্বদেশানুরাগমূলক কবিতা আবেগ ভরে আবৃত্তি করতেন। কিন্তু গাজী মিয়ার বস্তানীতে মাঝে মাঝে তিনিও হিন্দু মধ্যবিত্ত সমাজের লোকদের সম্পর্কে তিক্ত অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আমোদপ্রিয় মশাররফ হোসেন হিন্দু বন্ধুদের নিজের বাসায় মাঝে মাঝে আপ্যায়ন করতেন। বন্ধুরা ‘সময়ে সময়ে আসিয়া খুব এক পেট, রোস্ট, কাবাব মারিয়া যান। ব্র্যান্ডি হুইসকিও যে না চলে তা নয়।’ লেখকের স্ত্রী এসব ‘আমোদ আহ্লাদের’ আয়োজন নিপুণভাবেই করে দিতেন, কিন’ অত্যন্ত রাগ করতেন এবং বলতেন, ‘এ সকল গ্লাসের বন্ধু। এ সকল মালাধারী, পৈতেধারী বন্ধু-বান্ধব আমার চিনতে বাকি নেই। খেয়ে মুখটি পুঁচে, গেট পার হয়েই বলে যে, বেটাকে খুব ফাঁকি দিয়েছি। হাজার হোক নেড়ে কিনা।’

উল্লেখ্য, মীর মশাররফ হোসেন কোন ধার্মিক মুসলমান ছিলেন না। শিয়া আক্বীদা ছাড়া চারিত্রিক দুর্বলতা সবই তার মাঝে ছিলো। কিন্তু তারপরেও সে সময়ে সমাজে হিন্দুরা মুসলমানদের যেভাবে ঘৃণা ও লাঞ্ছনার শিকার করতো তথা মুসলমানদের নিগৃহীত ও নির্যাতিত করতো তার ছিটেফোঁটা প্রতিফলন তার রচনায় ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় এসেছে বৈকি।

এমন ঘটনা ঘটেছে নজরুলের জীবনেও। জুলফিকার হায়দার তার প্রত্যক্ষ বর্ণনায় লিখেছেন, কবির শ্বাশুড়ী যেন তার প্রতি আরোপিত অপবাদ ও ঘৃণার জবাব দিতে তার বাড়ী থেকে আগত অতিথিদেরকে দু হাত ঢেলে আপ্যায়ন করতেন। কখনো কখনো দু একজনের খাবার ব্যবস্থা করতে গিয়ে তিনি কবির পকেট থেকে তৎকালের দশ বিশ নয়, একেবারে চল্লিশ টাকা পর্যন্ত খরচ করাতেন। নিজেদের আত্মঅহমিকা আর ভাব দেখানোর এতসব আয়োজনের সব দায় মেটাতে হতো একা কবি নজরুলের। ফলে অর্থ অভাব আর টানাটানি লেগেই থাকতো তার সংসারে। মুন্সী জুলফিকারের কাছে একসময় কবি বলেই ফেললেন কথা প্রসঙ্গে, “তুমি তো আমার শ্বাশুড়ীকে চেন না। ওরা হচ্ছেন যেন রাঘব বোয়াল, কিছুতেই আমি ওদের পেট ভরাতে পারলাম না।’’

কাজী নজরুল ইসলাম মানুষ হিসেবে যে কতটা নিঃসঙ্গ ছিলেন, তার মনের অবস্থা কতো বেদনাময় ছিলো, এর প্রমাণ মিলে তার বিভিন্ন চিঠি থেকে। এজন্যই হয়তো তিনি ঘুরে বেড়াতেন নানা জায়গায়। কয়েকবার তিনি এসেছেন আমাদের এই ঢাকায়, এসেছেন কুমিল্লায়, ফরিদপুরে, যশোরে, খুলনায়, চট্টগ্রামে, সিরাজগঞ্জে, ঠাঁকুরগায়ে।

বেগম মাহমুদ নাহারকে লেখা চিঠির এক জায়গায় কবি লিখেছেন, তোমরা ভালবাস আমাকে নয়, আমার সুরকে, আমার কাব্যকে। তোমরা কবিকে জানতে চাও না নজরুল ইসলামকে জানতে চাও?”

কাজী মোতাহার হোসনকে লেখা এক চিঠিতে কবি নিতান্ত দুঃখের সাথে লিখেছেন, “বন্ধু আমি পেয়েছি- যার সংখ্যা আমি নিজেই করতে পারবো না। এরা সবাই আমার হাসির বন্ধু, গানের বন্ধু। ফুলের সওদার খরিদ্দার এরা। এরা অনেকেই আমার আত্মীয় হয়ে উঠেছে, প্রিয় হয়ে ওঠেনি কেউ। আমার চোখের জলের বাদলা রাতে এরা কেউ এসে হাত ধরেনি।”

জীবনের শেষ প্রান্তে যখন নজরুল নির্বাক হয়ে যান, কলকাতার কায়েমী হিন্দুত্ববাদী সম্প্রদায় তার রোগকে সিফিলিস বলে অভিহিত করে তাকে চরিত্রহীন প্রমাণ করার অপচেষ্টা করে। এই তো স্বাভাবিক, যাদের দূর্গাপুজা বেশ্যার দরজার মাটি ছাড়া হয় না , তারা মুসলমান ও ইসলামকে অপমান করার ক্ষেত্রে ঘুরেফিরে সেই যৌনতার দরজায়ই কড়া নাড়বে। তবে আমরা যারা মুসলমান তাদেরও দোষ কম নয়। শিয়ালের কাছে মুরগি তো আমরাই বর্গা দেই। (সংগৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১২ রাত ১১:৪৪
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×